Image of মো: ছাব্বির ইসলাম সাকিব

নাম: মো: ছাব্বির ইসলাম সাকিব

জন্ম তারিখ: ২৭ এপ্রিল, ২০০৪

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: খুলনা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ছাত্র, শেরেবাংলা ডিগ্রী কলেজ, চিতলমারী, বাগেরহাট শাহাদাতের স্থান: বিএনএস সেন্টার, ৭নং সেক্টর, উত্তরা, ঢাকা

শহীদের জীবনী

বাগেরহাটের হিজলায় ২০০৪ সালের ২৭ এপ্রিল মো: ছাব্বির ইসলাম সাকিব জন্মগ্রহণ করেন। সেনা কর্মকর্তা বাবা ও গৃহিণী মায়ের অতি আদরের মোঃ ছাব্বির ইসলাম সাকিব ছোট বেলা থেকেই ভালো ছাত্র ছিলেন। তিন বোনের অতি আদরের একমাত্র ছোট ভাই হিসেবে বড় হতে থাকেন এবং তিনি তার বোনদের খুব ভালবাসতেন। বাবা মায়ের শাসনের সাথে বোনদের কাছ থেকে আদর্শের শিক্ষা লাভ করেন। এলাকায় নামাযী ছেলে হিসেবে প্রতিবেশিরা তাকে খুব ভালো জানতো এবং তাকে সবাই খুব ভালবাসতো। দেশপ্রেম, নামাজী এবং ভদ্র হওয়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল। তিনি শেরে বাংলা ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণীতে পড়তেন। স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা করে অনেক বড় হবেন। বাবা মা এবং বোনদের জন্য জীবনে কিছু করবেন। অবশেষে মহান রব তাকে সমগ্র জাতির মুক্তির জন্যই কবুল করে নিলেন। ১৯ জুলাই ২০২৪ সালের সন্ধ্যা ছয়টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শাহাদাত বরণ করেন ২৪ এর এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। শাহাদাতের বর্ণনা বুঝ হওয়ার পর থেকেই শহীদ ছাব্বির বাংলাদেশে আওয়ামী দু:শাসনই দেখে বড় হয়েছেন। যেই বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ ও তার সহযোগীরা ছাড়া সমগ্র বাংলাদেশ দ্বিতীয় শ্রেণী নাগরিক। বিরোধী দল ও মতের যে কাউকেই যেকোনো সময় যেকোনো অজুহাতে নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া, গুম-খুন-ক্রসফায়ার দিয়ে দিন দুপুরে মানুষ হত্যা, বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে "সরকারবিরোধী" ট্যাগিং এর মাধ্যমে ছাত্রলীগ কর্তৃক সাধারণ ছাত্র পিটিয়ে মারা যেন নিত্যদিনের সংবাদ। একজন আওয়ামী সাংসদের গাড়িবহরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের অজুহাতে ৬ জন বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীকে রাতারাতি হত্যার নিউজ যেন সংবাদপত্রের সর্বশেষ পাতার ৮ম কলামের শেষ প্যারাগ্রাফ। গত প্রায় দেড়যুগ ধরে সরকারের অসংখ্য অবিচারের বিরুদ্ধে গড়ে উঠা বিভিন্ন আন্দোলন ও প্রতিবাদকে সরকার কঠোরভাবে দমন করে এসেছে। তাই গত জুন মাস থেকে শুরু হওয়া সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক কোটাপ্রথা সংস্কারের দাবিতে আপামর ছাত্রজনতার আন্দোলনকে দমাতেও সরকার একই পদ্ধতি অবলম্বন করে। প্রথমদিকে সরকার আন্দোলনকারীদের দমাতে লাঠিচার্জ টিয়ারশেল সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করলেও পরবর্তীতে তা সরাসরি আন্দোলনকারীদের বুক, মাথা ও চোখ লক্ষ্য করে বুলেট নিক্ষেপে গিয়ে থামে। ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ এর শাহাদাতের মাধ্যমে শহীদের এই মিছিল শুরু হলে পরবর্তীতে তা ছাড়িয়ে যায় হাজারের ঘর। আহত হয় অগণিত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। পঙ্গু ও অন্ধত্বের শিকার হওয়া মানুষের সঠিক হিসেব আজও নেই। বাবা-মা কখনো চাননি ছাব্বির আন্দোলনে যোগ দিয়ে মিছিল, মিটিং করুক। এদিকে তিনি চিন্তা করেছিলেন আমাকে এই আন্দোলনে যোগ দিতেই হবে। ছাব্বির সব সময় অন্যায় আর অত্যাচারের বিপক্ষে ছিলেন। যেহেতু বাগেরহাটে ছাব্বির আন্দোলনে যোগ দিতে পারছিলেন না তাই বাগেরহাট থেকে ঢাকায় আসেন ছাত্রজনতার সাথে মিছিলে যোগ দেওয়ার জন্য। তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রথমে ঢাকায় বোনের বাসা টঙ্গীতে আসেন। টংগী থেকে উত্তরার বিএনএস সেন্টারে আসেন ১৯ তারিখ, শুক্রবার। দেশব্যাপী ছাত্রজনতার বিক্ষোভ মিছিলের অংশ হিসাবে তিনি ৭ নং সেক্টরের বিএনএস সেন্টারের সামনে অবস্থান নেন। মিছিলের সম্মুখ ভাগে ছিলেন তিনি। মিছিলের সম্মুখ ভাগে থাকায় ছাব্বির পুলিশের সামনা সামনি অবস্থান নেন। এদিকে পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। পুলিশের সেই গুলি প্রচন্ড গতিতে আঘাত করে মো: ছাব্বির ইসলাম সাকিব কে। পর পর পাচ টা গুলি এসে লাগে তার শরীরে। দুটি গুলি মাথায় আর বাকী তিনটি গুলি লাগে বুকে। মূহুর্তেই ছাব্বির রক্তাক্ত হয়ে ঢলে পড়েন রাস্তায়। অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে তার সাথীরা তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু ততক্ষণে মহান রবের দরবারে সাড়া দিয়েছেন শহীদ ছাব্বির। ডাক্তার প্রাথমিক অবস্থা যাচাই করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সেদিন রাতেই লাশ নিয়ে যায় পুলিশ। রাত তিনটায় প্রায় ৫০ জন পুলিশ গ্রামের বাড়ীতে এসে লাশ মাটিচাপা দিয়ে চলে যায়। মো: ছাব্বির ইসলাম সাকিব এর মৃত্যুতে বাবা মা গভীর শোকাহত। সন্তান হারিয়ে বাবা মা এখন পাগল প্রায়। বোনদের একমাত্র আদরের ভাই হওয়ায় বোনেরাও শোকে মুহ্যমান। পরিবারের হাল ধরতে চাওয়া ছেলেটার ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে বাবা মায়ের সকল অভাব দূর করে দিব, বর্তমানে পরিবারের তেমন কোনো আয় নেই, পিতা সাবেক সেনাসদস্য, পেনশনের সামান্য যা কিছু টাকা পান তা দিয়েই কোনো রকমে সংসার চলে। একনজরে শহীদের পরিচয় নাম : মো: ছাব্বির ইসলাম সাকিব জন্ম তারিখ : ২৭-০৪-২০০৪ পিতা : মো: শহিদুল মন্ডল মাতা : কাকলী বেগম স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: হিজলা, ইউনিয়ন: হিজলা, থানা: চিতলমারী, জেলা: বাগেরহাট বৈবাহিক অবস্থা : অবিবাহিত পেশা : ছাত্র, শেরেবাংলা ডিগ্রী কলেজ, চিতলমারী, বাগেরহাট ঘটনার স্থান : বিএনএস সেন্টার, ৭নং সেক্টর, উত্তরা, ঢাকা আহত হওয়ার সময়কাল : ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা শাহাদাতের সময়কাল : ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা, বিএনএস সেন্টার, ৭নং সেক্টর, উত্তরা, ঢাকা আঘাতের ধরন : বুলেটের আঘাত (৫টি), মাথায় ও বুকে আক্রমণকারী : পুলিশ শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : চিতলমারী, হিজলা, বাগেরহাট প্রস্তাবনা ১. পিতা অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য। পেনশনের টাকায় চলে পরিবার। এককালীন সহযোগিতার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

শহীদ সম্পকির্ত কুরআনের আয়াত

তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত ও সন্তুষ্টি লাভ করবে এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী জান্নাত। (সুরা আল-ইমরান ৩:১৫)

শহীদ সম্পকির্ত হাদিস

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে শহীদ হতে চায়, আল্লাহ তাকে শহীদের সাওয়াব দেন।” (সহীহ মুসলিম ১৮৮৮)

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image
Image
Image
Image
শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo