Image of মো: রুহান ইসলাম

নাম: মো: রুহান ইসলাম

জন্ম তারিখ: ২৯ ডিসেম্বর, ২০০৬

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: খুলনা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : শিক্ষানবিশ, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন। শাহাদাতের স্থান : জাবের হোটেল, চিত্রার মোড়, যশোর।

শহীদের জীবনী

২৪ এর বিপ্লব কোনো নির্দিষ্ট পেশার মানুষের আন্দোলন ছিল না। দল মত, জাতি, পেশা নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষ এতে শরিক হয়েছিল। শহীদ রুহান ইসলাম অল্প বয়সে জীবনসংগ্রামে লিপ্ত এক যুবকের জীবনালেখ্য। আমাদের আলোচ্য শহীদ হলেন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী শ্রেণীর মানুষের মধ্য হতে শহীদের এক প্রোজ্জ্বল উপাখ্যান। শহীদ মোঃ রুহান ইসলাম ২০০৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর যশোর জেলার সদর পৌরসভার ব্রাহ্মনপাড়া এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই একজন কৌতূহলী এবং দায়িত্বশীল ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার বাবা মোঃ মোখসেদুর রহমান এবং মা রিনা খাতুনের সংসারে তিনি ছিলেন অত্যন্ত আদরের। ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত রুহান ঢাকার গোপীবাগে অবস্থিত নুরানী মাদরাসায় পড়াশোনা করেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষাতেও দক্ষতা অর্জন করেন। মাদরাসা জীবন শেষ করার পর, রুহান যশোরে ফিরে আসেন এবং জাগরনী চক্র ফাউন্ডেশনের জবপড়াবৎু ধহফ অফাধহপবসবহঃ ড়ভ ওহভড়ৎসধষ ঝবপঃড়ৎ ঊসঢ়ষড়ুসবহঃ (জঅওঝঊ) প্রোগ্রামে রেফ্রিজারেশন এবং এয়ার-কন্ডিশনিং (জঅঈ) কোর্সে ভর্তি হন। সেখানে তিনি প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি সফল কর্মজীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। হাতে কলমে কাজ শিখে নিজে একটি এসি রিপেয়ারিং দোকান খোলার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তার ইচ্ছা ছিল নিজস্ব ব্যবসার মাধ্যমে পরিবারকে আর্থিক স্বচ্ছলতা প্রদান করা এবং নিজের পায়ে দাঁড়ানো। রুহানের পরিবার একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার। তার বাবা মোখসেদুর রহমান একটি ছোট মুদি দোকান পরিচালনা করেন, যা তাদের পরিবারের মূল আয়ের উৎস। তবে বাবার কিডনি, লিভার এবং হার্টের জটিল রোগের কারণে পরিবারটি চরম আর্থিক সংকটে ছিল। তার বড় ভাই রাতুল মিজি উপশহর ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এবং তিনিও পরিবারের আর্থিক দায়িত্ব ভাগ করে নিচ্ছিলেন। তবুও, পরিবারের চাহিদা পূরণের জন্য রুহান ছিল আশার আলো। ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ ইতিহাসের সকল ন্যারেটিভ ভূল প্রমাণ করে দিয়েছে জুলাইর বিপ্লব। ফিনিক্স পাখির মতো বাহুভেজা পিচ্ছিলপথে নেমে এসেছিল ছাত্রজনতা। এই বিপ্লবে যেমন উঁচুশ্রেণী, মধ্যশ্রেণী, ছাত্রদের সরাসরি অংশগ্রহণ ছিল, ঠিক তেমনি বিরাট একটা অংশ নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের আত্মত্যাগ ছিল। উঁচুশ্রেণী কিংবা শহুরে মধ্যশ্রেণীর সংগ্রামের কথা আলোচনা হলেও বিপ্লব থেকে আড়ালে পড়ে গেছে নিম্ন-মধ্যবিত্তের অকুতোভয় সংগ্রামের কথা। এ সংগ্রাম ছিল রিক্সাওয়ালা, মুদি দোকানদার সহ সকল পেশাজীবী মানুষের সংগ্রাম। এমন মানুষও এই আন্দোলনে শরীক হয়েছেন, যাদের পরিবার চালাতে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। কারণ একটাই, দীর্ঘ সাড়ে-পনেরো বছরের ফ্যাসিবাদের জুলুম অসহনীয় অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল । আর তাই ছাত্রজনতার এক দফার দাবিতে পুরো দেশ উত্তাল হয়ে উঠে। এ লড়াই বয়সও মানে নি। এখানে যেমন পনেরো বছরের যুবক ছিল , তেমনি ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ ও ছিল। বিপ্লবের এ বারুদ হৃদয়ে জেগে উঠেছিল যে একটি ছোট মুদির দোকান চালায়, আঠারো বছরের এক যুবক। নাম তার রোহান ইসলাম। বাবা লিভার সমস্যায় আক্রান্ত পুরো সংসারের দেখভাল ছিল শহীদ রোহানের উপর অর্পিত। এতো সমস্যায় জর্জরিত থাকার পড়েও দেশ রক্ষার্থে, মুক্তি ও বিপ্লবের প্রয়োজনে রাজপথে নেমে আসেন শহীদ রোহান ইসলাম। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই শহীদ রোহান সক্রিয় ছিলেন। ৫ আগস্ট ছাত্র জনতা যশোররে রাজপথ দখলে নিয়ে স্বৈরাচার পতনের এক দফা দাবিতে শ্লোগনে মুখর হয়ে হয়ে উঠে। দুপুর ২ টায় কিছু দুর্বৃত্ত ছাত্র জনতার উপর হামলাকারী যশোরের ত্রাস আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের প্রিন্টিং প্রেস ও জাবির হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। মিছিলে অংশগ্রহণকারী ছাত্ররা হোটেলে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারের জন্য হোটেলের ভিতর ঢুকে পড়েন। শহীদ রোহান তার বন্ধুদের সাথে চিত্রার মোড়ে জাবির হোটেলে উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করেন। রাত ৮টার দিকে রুহানের পরিবারের কাছে একটি ফোন আসে, যেখানে ফায়ার সার্ভিসের পরিচয় দিয়ে বলা হয়, "আপনার ভাইকে জাবির হোটেলের ৮ম তলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।" রুহানের পরিবার দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারে, তাদের প্রিয় সন্তানকে তারা চিরতরে হারিয়েছে। তার নিথর দেহটি যখন পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়, তখন পুরো পরিবার শোকে স্তব্ধ হয়ে যায়। রুহানকে স্থানীয় কারবালা গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। নিকটাত্মীয় ও বন্ধুদের অভিব্যক্তি রুহানের স্মৃতিকাতরতায় শহীদ রুহার সহায়তা করা।” তিনি আরও বলেন, “রোহান ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ঢাকার গোপীবাগ জামে মসজিদ সংলগ্ন নুরানী মাদরাসায় পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে বাড়িতে এসে সংস্থা এর একটি রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ার কন্ডিশনিং ট্রেনিং (জাগরণী চক্র) কোর্সে ভর্তি হয়ে কোর্স সম্পন্ন করেন। তিনি লালদিঘীয়া পাড় এলাকায় এসির দোকানে হাতে কলমে কাজ শিখেন এবং নিজে একটি এসি রিপেয়ারিং দোকান খোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাঁর ভবিষ্যতে ব্যবসায়ী হওয়ার ইচ্ছে ছিল । শহীদের স্মৃতি ও আমাদের করণীয় ছোট জীবন, অনেক স্বপ্ন। সে স্বপ্ন কুরবান করেছিলেন দেশের জন্য, নিজ জাতির জন্য।শহীদ রুহান যে বারুদ জালিয়ে গেলেন বৈষম্যবিরোধী ও স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে, সে স্পিরিট আমদের ধরে রাখত হবে। শহীদ রুহানদের মতো সংগ্রামী বীরদের ত্যাগকে বাদ দিয়ে কোনোভাবেই এ বিপ্লবের ইতিহাস রচিত হতে পারে না। আমাদের উচিৎ শহীদ রুহানের মতো শহীদদের ত্যাগ ও তাঁদের জীবনদানকে জুলাই বিপ্লবের ইতিহাসে প্রতিটি পাতায় যথাযথ ভাবে তুলে ধরা। শহীদ রুহানের পরিবারের পাশে দাড়ানো আমাদের দায়িত্ব। একনজরে শহীদের পরিচয় পূর্ণনাম : রুহান ইসলাম জন্ম তারিখ : ২৯/১২/২০০৬ পেশাগত পরিচয় : শিক্ষানবিশ, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন (জঅওঝঊ) প্রোগ্রাম স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: ব্রাহ্মণপাড়া রোড, ইউনিয়ন: পৌরসভা, থানা: সদর, জেলা: যশোর সর্বশেষ ঠিকানা : ঐ পিতার নাম : মো: মোখসেদুর রহমান পিতার পেশা ও বয়স : মুদির ব্যবসায়, ৪৮ বছর মাসিক আয় : ১০,০০০/- প্রায় মাতার নাম : রিনা খাতুন মাতার পেশা ও বয়স : গৃহিণী, ৩৩ বছর পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ০৬ (ছয়জন) বড় ভাইয়ের নাম : রাতুল মিজি বড় ভাইয়ের পেশা : শিক্ষার্থী, ডিগ্রী ২য় বর্ষ, উপশহর ডিগ্রি কলেজ, যশোর ঘটনার স্থান : জাবের হোটেল, চিত্রার মোড়, যশোর মৃত্যুর কারণ : জাবের হোটেলে আক্রান্তদের উদ্ধারকালে পুড়ে মারা যান আহত ও মৃত্যুর সময় : ৫ আগস্ট, ২০২৪ বিকেল ৩:০০ টা থেকে ৮:০০ টার মধ্যে শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : কারবালা কবরস্থান, যশোর কবরের গুগল লোকেশন : যঃঃঢ়ং://সধঢ়ং.ধঢ়ঢ়.মড়ড়.মষ/১৭ঊঢধঅ৯৪ঘএর৫য়নঋই৯ পরামর্শ ১। শহীদ পরিবারের জন্য এককালীন ভাতার ব্যবস্থা করা। ২। বাবার মুদির দোকানে পুঁজি দিয়ে সহায়তা করা। ৩। বাবার চিকিৎসায় সহায়তা করা।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: রুহান ইসলাম
Image of মো: রুহান ইসলাম

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

আলম সরদার

আব্দুল্লাহ আল মুস্তাকিন

মো: সাকিবুল হাসান মাহি

সোহান শাহ

মো: আলমগীর সেখ

মো: আহাদ আলী

মো: মেহেদী হাসান

মো: হামিদ শেখ

 মো: শাহারিয়ার

মো: নবী নুর মোড়ল

মো: ইয়াসিন আলী শেখ

মো: কালাম

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo