Image of মো: সাব্বির হোসেন

নাম: মো: সাব্বির হোসেন

জন্ম তারিখ: ১৫ এপ্রিল, ২০০২

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৮ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: খুলনা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : নির্মাণ শ্রমিক, শাহাদাতের স্থান : উত্তরা-বিএনএস-আজমপুর পয়েন্টে

শহীদের জীবনী

শহীদ সাব্বির হোসেন একজন নির্মাণ শ্রমিক। তার রক্ত উজ্জীবিত করেছে এই আন্দোলনকে এবং এনে দিয়েছে বিজয়। দরিদ্র পরিবারের সন্তান সাব্বির হোসেন পিতা-মাতার তিন সন্তানের মাঝে প্রথম। ১০ পারা কোরআনের হাফেজ। তার আগে পড়েছেন ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত। সংসারের হাল ধরতে লেখাপড়া বাদ দেন। হেঁটে যান আয়ের পথে। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট জুলাই বিপ্লব ছিল সর্বস্তরের সকল নিপীড়িতের চূড়ান্ত সম্মিলিত বিক্ষুব্ধ বিস্ফোরণ। এই গণবিপ্লবের পথ দেখিয়েছেন দিয়েছেন আমাদের শহীদেরা। খোদা প্রদত্ত জানকে কোরবানি করে তারা সাম্য ও ইনসানিয়াত ভিত্তিক একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার জিম্মাদারি আমাদের হাতে অর্পণ করে গেছেন। ৫ আগস্ট আমাদের বিজয় হয়েছে। এই বিজয় অর্জনে আছে বহু ত্যাগ তিতিক্ষা। প্রাণ গিয়েছে বহু বহুজনের। দীর্ঘ ষোল বছরের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন এবং কর্তৃত্ববাদী সরকারের কারণে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ছিল ভিক্টিম, তারা ছিল বিক্ষুব্ধ। দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে কমবেশি প্রত্যেক শ্রেণীপেশার মানুষ এ বাকশালী শাসনে নিপীড়িত-নির্যাতিত হয়েছে। ফ্যাসিস্ট কর্তৃক ভিক্টিম হওয়া থেকে বাদ যায়নি খোদ (জ্ঞাত/অজ্ঞাতসারে) ফ্যাসিবাদের ভিত্তি স্থাপনকারীরাও। এই আন্দোলন শহীদ আবু সাঈদের রক্তের উপর দাঁড়ানো আন্দোলন, শহীদ মীর মুগ্ধের স্মৃতির উপর দাঁড়ানো আন্দোলন। যে রিকশাওয়ালা ভাই ক্রমাগত দুঃশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দিতে শহীদ হয়েছেন তার কুরবানির উপর দাঁড়ানো আন্দোলন। সহস্রাধিক শহীদ আমাদের পথ দেখিয়েছেন এক নতুন মঞ্জিলে-মাকসুদ এই আন্দোলনে যেমন অবদান ছিল সমাজের উঁচুতলার মানুষের, আবার আন্দোলনের ভ্যানগার্ড ছিল সমাজের সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীরাও। ইংলিশ মিডিয়ামের টেক স্যাভি কিড থেকে শুরু করে কওমি-আলিয়ার তালেবে এলেম, শাহবাগ-ধানমন্ডি-মিরপুর-উত্তরা-সাভার থেকে শুরু করে বাংলার স্টালিনগ্রাদ হয়ে ওঠা যাত্রাবাড়ি, শহর-নগর, গ্রাম-গ্রামান্তরে এই বিপ্লব ছিল আপনার, আমার, সবার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনা থেকে বিপ্লবের আওয়াজ ছড়িয়ে পড়েছিল প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় -স্কুল-কলেজে। এ আওয়াজ আরও উজ্জীবিত করেছিলো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হয়ে উঠেছিল গণমানুষের কন্ঠস্বর। এই বিপ্লব ছিল শ্রমিক, দিনমজুরের। সাব্বির উত্তরায় থেকে কাজ করতেন। ১৮ জুলাই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীরা তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলে। ইতোমধ্যে সরকার আন্দোলন দমন করতে খুন করে বহু তাজা নিষ্পাপ বনি আদম। ১৮ জুলাই মানুষ হত্যার প্রতিবাদ নেমে আসে রাস্তায়। প্রতিটা ইনসান রাস্তায় নেমে এসেছিল, ‘আমার ভাই মরলো কেন?’ এই প্রশ্নের প্রতিউত্তরে যখন তাদের উপর হায়েনার মত হিংস্রভাবে ঝাঁপিয়ে পড়া হয়েছে, তখনই আমাদের শহীদেরা দাঁড়িয়ে গেছেন লড়াইয়ের ভ্যানগার্ড হিসেবে। উত্তরা-বিএনএস-আজমপুর ছাত্র-জনতার লড়াকু সম্মিলন। নিরীহ, নিরপরাধ ছাত্র জনতার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সশস্ত্র খুনে বাহিনী। এলাকা হয়ে পড়ে রণক্ষেত্র। সাব্বির দুপুরের খাবার খেয়ে ওষুধ কিনতে বের হন। সংঘর্ষে আটকা পড়েন।আনুমানিক ৩ টায় পুলিশের একটি বুলেট সাব্বিরের গলা বিদীর্ণ করে। আন্দোলনরত ছাত্ররা দ্রুত তাকে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তাকে গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯ জুলাই ১০ টায় জানাজাবাদ মির্জাপুর স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। আত্মীয় ও বন্ধুদের অনুভূতি তার বাবার বক্তব্য, 'আমি প্রথম বাবা ডাক শুনেছি তার কণ্ঠে। আমার প্রথম সন্তান। তার মৃত্যু আমি কীভাবে মেনে নেই? আমি সহ্য করতে পারছিনা।‘ বন্ধু অতুল কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা এক সাথে বড় হয়েছি। কত জায়গায় এক সাথে ঘুরেছি। কত কাজ করেছি। সাব্বির হোসেন খুব ভাল মানুষ, ভাল বন্ধু ছিল।‘ বোন সুমাইয়া বলেন, ‘আমার ভাইতো কোনো দল করতো না। নিরপরাধ ভাই আমার। আমার ভাই কোনো দিন কারও সাথে কোনো রকম ঝগড়াঝাঁটিতে যেত না। চাকরি করে সংসার চালাত। আমরা কার কাছে যাব? কার কাছে বিচার চাইব? আমার ভাইকে যারা হত্যা করেছে আমরা তার বিচার চাই।‘ মামাত ভাই তন্ময় আহমেদ তরুর ভাষ্যমতে, ‘সাব্বির ছিল নম্র, ভদ্র, শান্ত মেজাজের মানুষ। সে কারও ক্ষতি করতো না।‘ তারা দুজন ভালো বন্ধুও ছিল। তার হত্যার বিচার দাবী করেন তিনি। পারিবারিক অবস্থা সাব্বিরের বাবা একজন দরিদ্র কৃষক। সংসারের ভার বহন করতে তার কষ্ট দেখে ছেলে সাব্বির লেখাপড়ায় ইস্তফা দেন। তিনি উপার্জনে মনোনিবেশ করেন। নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করে পরিবারকে সহায়তা করেন। তার মৃত্যুতে পরিবারটির সামনে এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। তারা চরম অর্থ কষ্টে আছেন। অতিবাহিত করছেন সংকটময় জীবন। সংক্ষিপ্ত শহীদ প্রোফাইল নাম : মো: সাব্বির হোসেন জন্ম তারিখ : ১৫-০৪-২০০২ পিতা : আমোদ আলী মাতা : মোছা: রশিদা খাতুন স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: মির্জাপুর, ইউনিয়ন: ২নং মির্জাপুর, থানা: শৈলকুপা, জেলা: ঝিনাইদহ বর্তমান ঠিকানা : বাসা: মির্জাপুর পশ্চিমপাড়া, এলাকা: চরিয়ারবিল, থানা: শৈলকুপা জেলা: ঝিনাইদহ সদস্য : বাবা, মা, ১ ভাই, ১ বোন পেশা : নির্মাণ শ্রমিক শিক্ষা : ৬ষ্ট শ্রেণী ও দশ পারার কোরআনে হাফেজ কবর : মির্জাপুর স্থানীয় কবরস্থানে শাহাদাতের তারিখ : ১৮ জুলাই বিকাল ৩ টা শাহাদাতের স্থান : উত্তরা-বিএনএস-আজমপুর পয়েন্টে আঘাতের ধরন : পুলিশের ছোঁড়া গুলি গলায় বিদ্ধ হয় পরামর্শ ১। শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা। ২। শহীদ সাব্বিরের বোনটি বিবাহযোগ্য। তার বিয়ের ব্যবস্থা করা। সমুদয় খরচ বহন করা। ৩। শহীদের ভাইয়ের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: সাব্বির হোসেন
Image of মো: সাব্বির হোসেন
Image of মো: সাব্বির হোসেন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: ইউসুফ আলী

মো: ইয়াসিন আলী শেখ

 মো: শাহারিয়ার

এম এম তৌহিদুর রহমান

মো: সোহানুর রহমান (শিহাব)

সৈয়দ মিথুন মোর্শেদ

মো: রকিবুল ইসলাম

মো: মেহেদী হাসান রাব্বি

সাকিব রায়হান

মো: উসামা

আল আমিন হোসাইন

ফরহাদ হোসেন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo