Image of মো: আশরাফুল ইসলাম

নাম: মো: আশরাফুল ইসলাম

জন্ম তারিখ: ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৭

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: খুলনা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : আতিয়ার বেঙ্গল মেটাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেড, শাহাদাতের স্থান : থানা: রোড, বক চত্বর, কুষ্টিয়া সদর

শহীদের জীবনী

মো: আশরাফুল ইসলামের পরিচয় বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর একে একে অনেকগুলি সরকার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু কোন সরকারই দেশ, জাতি, সাধারণ জনগোষ্ঠীর মনের ভাষা বুঝতে পারেননি। ফলে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে তারা জনগণের খাদেম না হয়ে অত্যাচারিত শাসকে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রে বৈষম্য বাড়তে বাড়তে অনেকটা অকার্যকর সংস্থায় পরিণত হয়। এটার বিরুদ্ধে লড়তে যেয়ে মো: আশরাফুলের মত নিরীহ জনগণকে জীবন দিতে হয়েছে। তিনি ১৩ ই সেপ্টেম্বর ১৯৮৭ সালে পিতা কফিল উদ্দিন ও মাতা মোসা: নাজমা খাতুনের কোল আলোকিত করে জন্ম নেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়া সদর থানাধীন শালদাহ গ্রামে। বাবা মায়ের অপার স্নেহে বাল্যকাল অতিবাহিত হয়। দরিদ্র বাবা মায়ের ঘরে জন্ম নেওয়া মো: আশরাফুল লেখা পড়ায় বেশিদূর অগ্রসর হতে পারেননি। চার ভাই ও এক বোন সহ সাত জনের সংসারে বাবার আয়ের সামান্য অর্থ দিয়ে কোন রকম চলছিল। পরিবারটিকে একটু সুখ দেওয়ার জন্য আতিয়ার মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কোম্পানিতে চাকুরী নেন। যৌবনের শুরুতে লাবনী আক্তার ইতি নামে একটি মেয়ের সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তীতে শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রীর জমির উপরে ছোট্ট একটা ঘর করে সেখানে বসবাস করতেন। তাদের নয় বছরের একটি ছেলে ও চার বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। অভাব অনটন থাকলেও তিনি ধর্মের প্রতি খুবই অনুরাগী ছিলেন। তিনি সবসময় শহীদি তামান্না পোষণ করতেন। যেভাবে শহীদ হলেন শহীদ মো: আশরাফুল ইসলাম নম্র, ভদ্র স্বভাবের হলেও অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করেননি। সমাজ থেকে সকল ধরণের বৈষম্য দূর হোক এটা তিনি কামনা করতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে তিনি এটাকে স্বাগত জানান। কিন্তু এ আন্দোলন দমনের জন্য প্রথমে খুনি ছাত্রলীগ এবং পরবর্তীতে পুলিশ ও বিজিবি মাঠে নামান। তারা নির্বিচারে গুলি করে এ আন্দোলন দমাতে চেয়েছিলন। ০৪/০৮/২০২৪ ইং তারিখের আন্দোলনে অংশ নেয়া এক বাচ্চার মৃত্যু দেখে তিনি মেনে নিতে পারেননি। ঐ দিন অফিস থেকে বাসায় এসে তার স্ত্রীকে বললেন, ‘পুলিশ এই বাচ্চাটাকে মারলো কিভাবে? আমি পুলিশের সমুচিত জবাব দেব।‘ এই কথা বলে একটি লাঠি নিয়ে বাড়ি থেকে তিনি বের হতেই স্ত্রী সামনে এসে বললো, ‘তুমি যেও না। তোমার কিছু হলে আমাদের কি হবে।‘ স্ত্রীর বাধা আর কান্নাকাটিতে তিনি ৪ তারিখ আর যেতে পারেননি। পরের দিন ৫ তারিখ স্ত্রীর রান্নার কাজে সহযোগিতা করতে গিয়ে বলেন, ‘আমি আন্দোলনে গিয়ে যদি শাহাদাত বরণ কর, তাহলে তুমি অন্য জায়গায় বিয়ে করবে না তো?’ স্ত্রী বললেন, ‘না।‘ ‘তাহলে সন্তান দুটি দেখে দেখে রেখো।‘ এ কথা বলে, স্ত্রীর নিষেধ উপেক্ষা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগদান করেন। আন্দোলন চলাকালীন সময়ের সদর থানার দারোগা সায়েব আলীর নেতৃত্বে আলফা নির্বিচারে ছাত্র জনতার উপর গুলি বর্ষণ করে। বেলা ১ টার দিকে ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পুলিশের কিছু ছররা গুলি আশরাফুলের পেটের নিচে লাগে। মুহূর্তেই তিনি সেখানে লুটিয়ে পড়েন। তাকে উদ্ধার করে দ্রুত সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে ৩ টার দিকে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। অতঃপর সেদিনেই গোসল ও জানাজা নামাজের পর হটস হরিপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। সারা জীবনের লালিত স্বপ্ন বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার এক অগ্রসৈনিককে হারালো তার সাথীরা। দেশ হারালো এক বুদ্ধিদীপ্ত তরুণকে। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশীর বক্তব্য শহীদ মো: আশরাফুল ইসলাম ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। ছোটবেলা থেকেই তিনি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন। প্রতিবেশীদের সাথে সবসময় সুসম্পর্ক রাখতেন। প্রতিবেশী কুলসুম বেগম শহীদ আশরাফুল সম্পর্কে বলেন, আমার বাড়ির সাথেই তার বাড়ি। তিনি ভালো মানুষ ছিলেন। কথা বলতে বলতে এক পর্যায় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্ত্রী লাবনী আক্তার ইতি বলেন, আমাকে আমার স্বামী খুবই ভালোবাসতেন। আমার দেখা পৃথিবীর ভালো মানুষগুলোর মধ্যে সে ছিল অন্যতম। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা শহীদ মো: আশরাফুল ইসলাম বাবার বাড়ি থেকে এসে শশুর বাড়িতে স্ত্রীর জায়গায় ছোট একটি ঘর করে বসবাস করতেন। আর্থিকভাবে দুর্বল ও অসচ্ছল একটি পরিবার। দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে কোন রকম দিন পার করতেন। ছোট একটি চাকুরিতে যে টাকা পেতেন তা দিয়ে সংসারের নূন্যতম চাহিদা পূরণ করতেন। আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে পরিবারটা একেবারে অসহায় হয়ে গেল। বর্তমানে পরিবারের উপার্জনের আর কেহ রইল না। দুই সন্তানকে নিয়ে স্ত্রী বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এক নজরে শহীদ পরিচিতি নাম : মো: আশরাফুল ইসলাম জন্ম : ১৩/০৯/ ১৯৮৭ পিতা : কফিল উদ্দিন মাতা : মোসা: নাজমা খাতুন স্থায়ী ঠিকানা : বাসা: শালদাহ, এলাকা: হটশ হরিপুর, থানা: হটশ হরিপুর, জেলা: কুষ্টিয়া বৈবাহিক অবস্থা : বিবাহিত স্ত্রী : লাবনী আক্তার ইতি সান্তান : এক ছেলে এক মেয়ে পেশা : আতিয়ার বেঙ্গল মেটাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেড ঘটনার স্থান : থানা: রোড, বক চত্বর, কুষ্টিয়া সদর আহত হওয়ার সময়কাল : ০৫/০৮/২০২৪ সময় বেলা ১.০০টা শাহাদাতের সময়কাল : ০৫/০৮/ ২০২৪ সময় বিকাল ৩.০০টা আঘাতের ধরণ : পেটে ছাররা গুলি লাগে আক্রমণকারী : পুলিশ শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : হটশ হরিপুর, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ কবরস্থান প্রস্তাবনা ১. একটি সেলাই মেশিন ও ব্যবসা শুরুর জন্য কিছু কাপড ক্রয় করে দেয়া যেতে পারে। ২. বাচ্চাদের পর্যায়ক্রমে এতিম প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: আশরাফুল ইসলাম
Image of মো: আশরাফুল ইসলাম
Image of মো: আশরাফুল ইসলাম
Image of মো: আশরাফুল ইসলাম
Image of মো: আশরাফুল ইসলাম

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

আলিফ আহমেদ সিয়াম

মো: সুমন মিয়া

মো: সেলিম  মন্ডল

মো: আবুল বাশার আদম

মো: হাফিজ উদ্দীন

মো: বাবলু ফরাজী

মো: রিয়াদ শেখ

 মো: শাহারিয়ার

মো: ফজল মাহাদী

এম এম তৌহিদুর রহমান

মো: জামাল উদ্দীন শেখ

 মো: ইউসুফ শেখ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo