জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ১৯৫৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: খুলনা
পেশা : চাকুরীজীবী, শাহাদাতের স্থান :কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে
পুরো নাম মো: ইউসুফ শেখ। ১৯৫৮ সালের ১ জানুয়ারি কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। চাকরি করতেন কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে। তাঁর পিতা ছিলেন এমদাত আলী এবং মাতা ছিলেন মোসা: ভানুমতি। পরিবার বলতে ছিল তাঁর স্ত্রী। এছাড়া একটি মেয়ে ছিল যার বিয়ে হয়ে গেছে। থাকতেন কুষ্টিয়া সদরের চড়থানা পাড়াতে। পরিবারের মধ্যে তিনিই ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ব্যবহারিক জীবন একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়ে নিজের কাছেই রেখেছিলেন। চরপাড়া থানা বেড়িবাঁধের পাশে বসবাস করতেন। মাত্র দুটি রুমের ভাঙ্গা একটি ঘরে তাঁর স্ত্রী, মেয়ে, জামাই ও নাতিকে নিয়ে তিনি বসবাস করতেন। কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংকে তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। শহীদ ইউসুফ শেখ জীবনের প্রায় পুরোটি সময় কাটিয়ে দিয়েছেন হাসপাতালে। ব্যক্তি হিসেবে অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। খুব সততার সাথে নিজের দায়িত্ব পালন করতেন। সমভাবে পালন করার চেষ্টা করতেন ধর্মীয় দায়িত্বসমূহ। নিজের কোনো রোগের জন্য নয় বরং মানুষের সেবার জন্য তিনি কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে কাটিয়েছেন। নরপিশাচ পুলিশের ছোঁড়া বুলেট তাঁর মানব সেবার কাজ চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দেয়। শহীদ হওয়ার দিন ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন একসময় রুপ নেয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন আন্দোলনে। সারা দেশের ন্যায় কুষ্টিয়াও একদফার আন্দোলনে ফুঁসে ওঠে। হাজার হাজার ছাত্র জনতা খালি হাতে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ৫ আগস্ট আন্দোলন চুড়ান্ত রূপ ধারণ করে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন যায়গা থেকে জনগণ গণভবনের উদ্দেশ্যে মিছিল বের করে। ঐ দিন তাঁর কর্মস্থল কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে বের হলে জানতে পারেন তাঁর নাতি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে। নাতিকে খুঁজতে ২.৩০টার দিকে বের হন। খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। বিকাল ৩.৩০ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের সামেন গুলিবদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে শহীদ হন। মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য যিনি রক্ত নিয়ে হাসপাতালে ছোটাছুটি করতেন তাঁকেই মানুষরূপী পশুর হাতে মরত হলো। এর চেয়ে পৈশাচিক ঘটনা কি হতে পারে! যিনি মানুষের জন্য সারাটা জীবন কাজ করলেন তার স্ত্রীকে অসহায়ভাবে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। এলাকাবাসী সহ হাসপাতালের লোকজনেরর জন্য এটা মেনে নেয়া কষ্টকর। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়দের অনুভূতি শহীদের জামাই রিক্সাচালক মো: সোহেল বলেন, “আমার শ্বশুর আমাদের সাথেই থাকতেন। তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন।’’ শহীদের মেয়ে সীমা খাতুন বলেন, “আমার আব্বা যে পাঞ্জাবী পরে নামাজ পড়ত, যা পরে অফিসে ডিউটি করত সবই আছে শুধু আব্বা নেই। আমি সরকারের নিকট আমার আব্বার হত্যাকারীদের সুষ্ঠু বিচার চাই।” স্বজন হারানোর তীব্র বেদনার সাথে অনিশ্চিত হয়ে গেছে তাদের ভবিষ্যত। দেশের মানুষ এ দুঃসময়ে তাদের পাশে দাঁড়াবে এমনটাই আশা করছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এক নজরে শহীদ পরিচিতি নাম : মো: ইউসুফ শেখ জন্ম : ০১-০১-১৯৫৮, কুষ্টিয়া পিতার নাম : মৃত এমদাত আলী মাতার নাম : মোসা: ভানুমতি পেশা : চাকুরীজীবী কর্মস্থান : কুষ্টিয়া সদর হাসপাতাল শহীদ হওয়ার তারিখ : ০৫-০৮-২০২৪ ঠিকানা : গ্রাম: চরথানা পাড়া, উপজেলা: কুষ্টিয়া সদর, জেলা: কুষ্টিয়া পরামর্শ ১। শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা