জন্ম তারিখ: ১০ অক্টোবর, ১৯৮৩
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: খুলনা
পেশা : গার্মেন্টস কর্মী, শাহাদাতের স্থান : সাভার মুক্তির মোড়, ঢাকা
“বাবা, আমি যদি শহীদ হয়ে যাই আমাকে দাদার কবরের পাশে কবর দিও” কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ভাড়রা গ্রামের মৃত আজগর আলী শেখের ছেলে তিন সন্তানের জনক জামালউদ্দীন শেখ। তিনি ১০ অক্টোবর ১৯৮৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পেশায় একজন গার্মেন্টস কর্মী ছিলেন। তাঁর মাতা মোছা: রুপজান; ৭০ বছর বয়সী গৃহিণী। পারিবারিক জীবন শহীদ মো: জামালুদ্দিন শেখ এর দুই ছেলে বিবাহ করে নিজ নিজ পরিবারসহ আলাদা জীবনযাপন করতেন। ছোট ছেলে মো: রাব্বি শেখ এনাম স্কুল এন্ড কলেজের ১ম শ্রেনিতে অধ্যয়ন করে। অভাব অনটনের কারণে ছোট সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে দুই থেকে আড়াই বছর আগে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকার সাভারে এনাম মেডিকেলের পাশেই ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। শুরুতে তিনি ইটভাটায় চাকরি করতেন। এরপর কুলফি আইসক্রিম বিক্রি করে সংসারের খরচ চালাতে না পেরে শহীদ হওয়ার আগের মাসে তিনি পাকিজা গার্মেন্টসে চাকরী নেন। স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে তিনি ভালোই দিন পার করছিলেন। যেদিন শহীদ হন, ৫ আগস্ট সকালে খাওয়ার সময় স্ত্রীর সাথে অনেক গল্প হয়। আন্দোলনের পটভূমি দীর্ঘ ১৫ বছরে আওয়ামী দুঃশাসন, ভোটচুরি, দুর্নীতিন, খুন, অন্যায়, অত্যাচার জনমনে ফেলেছিল বিরূপ প্রতিক্রিয়া। কোটা প্রথা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আবার ষড়যন্ত্র শুরু করে আওয়ামী সরকার। ২০১৮ সালে ছাত্রছাত্রীদের প্রবল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সকল দাবী মেনে নিলেও তার অন্তরে ছিল হিংসার অগ্নিগিরি। তাই ২০২৪ তালে একটি বিরোধী দলহীন নির্বাচনে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর আবার কোটা ফিরিয়ে আনতে চাইল হাসিনা সরকার। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে টানা আন্দোলন শুরু হয়েছিল গত ১ জুলাই থেকে। অহিংস এই আন্দোলন ১৫ জুলাই থেকে সহিংস হয় । আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র জনতার ওপর সশস্ত্র ঘাতক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও পুলিশ, সদস্যরা হামলা চালাতে থাকে। রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাতের পর থেকেই আন্দোলন গণমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমেই জনসাধারণের আন্দোলনে রূপ নেয়। এটি বৈষম্যবিরধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন হিসেবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে সাধারণ ছাত্রদের অহিংস আন্দোলন ধীরে ধীরে ফ্যাসীস্ট সরকার বিরোধী অভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; হয়ে উঠে দেশের আপামর জনতার এক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এ অভ্যুত্থানে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজপথে বেরিয়ে আসে। ক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু পদত্যাগের পূর্বে তিনি রেখে যান তার ঘৃণ্য ও বিকৃত মস্তিষ্কের অজস্র কুকীর্তি। এরই অংশ হিসেবে আন্দোলনকারী সহ অনেক নিরীহ জনতার উপর লেলিয়ে দেয়া হয় সশস্ত্র বাহিনী। তাদের গুলিতে শহীদ হয় নিরস্ত্র নিপীড়িত জনতা। যেভাবে শহীদ হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনে সারা দেশের ন্যায় সাভারেও উত্তাল হয়ে উঠে। ৫ আগস্ট সকাল থেকেই কারফিউ উপেক্ষা করে ছাত্রজনতা সাভারের বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্ষোভ করে। এই পরিস্থিতিতে দুপুরের দিকে ছেলেকে বাসায় এবং আশেপাশে না পেয়ে তাকে খুঁজতে বাসা থেকে বের হন তিনি। জামাল শেখ সরাসরি স্মমুখ সমরে অংশ নিতে না পারলেও মুক্তিকামী মনোবল ছিল তেজোদ্দীপ্ত ।সাভার মুক্তির মোড় চেয়ারম্যান বাড়ির পাশে ছোট ছেলেকে খোঁজাখুঁজির সময় তিনি আন্দোলনরত ছাত্র জনতার সাথে মিশে যান। আন্দোলনের তীব্রতায় বিকেল তিনটায় স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে আন্দোলনরত জনতা আনন্দ মিছিল করতে শুরু করে। এই বিজয় মিছিলেও ফ্যাসিস্ট সরকারের ঘাতক পুলিশ ছাত্রজনতার উপরে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। বিকাল ৪.৩০-৫.০০ টার দিকে দুর্ভাগ্যবশত দুটি বুলেট জামালউদ্দীনের শরীরে লাগে; একটি বুকে এবং অন্যটি পায়ের হাটুর উপর। সাথে সাথে স্থানীয়রা উদ্ধার করে এনাম মেডিকেল নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। খবর পেয়ে রাতেই স্বজনরা তার লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন। ময়না তদন্ত ছাড়াই ৬ আগস্ট সকালে স্থানীয় ভাড়রা পূর্ব পাড়া জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে দাফন করেন। ভাগ্যের এমন নির্মম পরিহাসে শহীদের পরিবারের সদস্যরা গভীর শোকে আচ্ছন্ন। এই নিরীহ পিতার মৃত্যু কেবল তার পরিবারের জন্য নয়, সমাজের জন্যও একটি বড় ক্ষতি। শহীদ সম্পর্কে স্বজনদের বক্তব্য মন্টু আলী শেখ শহীদের চাচাত ভাই বলেন, ভাই অনেক ভালো মানুষ ছিল। উনি সবসময় সাদামাটা জীবন যাপন করতেন। কারও সাথে বিবাদ করে নাই। এগুলো সে অপছন্দ করত। বাবাকে হারিয়ে বড় ছেলে রুদ্ধ কন্ঠে বলেন, ‘পুলিশ কেন আমার বাবাকে মারল। বাবা হত্যার বিচার চাই।‘ একনজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : মো: জামাল উদ্দীন শেখ জন্ম : ১০-১০-১৯৮৩ পিতা : আজগর আলী শেখ, মৃত মাতা : মোছা: রুপজান, গৃহিনী-৭০ বছর পেশা : গার্মেন্টস কর্মী স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: ভাড়রা, ইউনিয়ন: চাপড়া, থানা: কুমার খালি, জেলা: কুষ্টিয়া আহত হওয়ার সময় : ০৫ আগস্ট, ২০২৪, বিকাল ৪.৩০টা ঘটনার স্থান : চেয়ারম্যান বাড়ির পাশে, সাভার মুক্তির মোড়, ঢাকা মৃত্যুর তারিখ : ০৫ আগস্ট, ২০২৪, বিকাল ৫.০০ টা, সাভার মুক্তির মোড়, ঢাকা আক্রমণকারী : স্বৈরাচারী সরকারে যাত্রাবাড়ীর ঘাতক পুলিশ বাহিনী কবরস্থান : ভাড়রা পূর্ব পাড়া জান্নাতুল বাকী কবরস্থান প্রস্তাবনা ১। ছোট সন্তানকে ইয়াতিম প্রতিপালন প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা ২। এককালীন আর্থিক অনুদান ও নিয়মিত মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা