জন্ম তারিখ: ১ এপ্রিল, ২০০৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: খুলনা
পেশা :গার্মেন্টস কর্মী, শাহাদাতের স্থান :আজমল হাসপাতাল।
শহীদ বিপ্লব শেখ বাগেরহাট জেলার মোল্লার হাট থানাধীন বুড়ি গাংনি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দরিদ্র ভ্যানচালক বাবা মোঃ পারভেজ শেখ ও মা এলিজা বেগমের বড় ছেলে তিনি। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় তিনি তার ছেলেকে খুব বেশি পড়াতে না পারলেও অক্ষরজ্ঞানহীন রাখেন নাই। তার চরিত্রের নৈতিকতার ভিত্তি তার বাবার কাছ থেকেই তিনি পান। মানুষের আনন্দে আনন্দিত হওয়া, অন্যের দুঃখে ব্যাথিত হওয়া এসব মানবিক গুনের প্রস্ফুটন তার ছেলেবেলায়ই ঘটে। পরিবারের সবার জন্য কষ্ট করে টাকা উপার্জন করে তা পরিবারের কল্যাণে খরচ করতে হয় তা তিনি তার বাবার কাছ থেকেই শিক্ষা লাভ করেন। শাহাদাতের ঘটনা ১৯-০৭-২০২৪ শুক্রবার সকাল। পবিত্র জুম্মার দিন। ভোর থেকেই ঢাকা সহ পুরো বাংলাদেশের অবস্থা ছিল থমথমে। অন্যান্য দিনের মতো পুলিশের সাথে ছাত্রজনতার ঝামেলা তৈরি হয়নি এখনো। শুক্রবার হওয়ায় ছাত্রজনতা জুম্মার নামাজের পরে আন্দোলনে নামার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের, মাদ্রাসা ছাত্রদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। তারাও এই আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। বিপ্লব শেখ ছিলেন একজন গার্মেন্টস কর্মী এবং তিনি তার বন্ধুদের সাথে আন্দোলনে নামবেন অন্যান্য দিনের মতো, এটাই ছিল তার সেদিনকার পরিকল্পনা। সে অনুযায়ী বিপ্লব শেখ জুম্মার নামাজ শেষ করে বন্ধু এবং সাধারণ জনতা ও ছাত্রদের সাথে মিরপুর ১০ এ নেমে পড়েন। ইতোপূর্বে ১৬ জুলাই আবু সাঈদ, ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, ওয়াসিম আকরাম সহ মোট ৬ জনকে শহীদ করে দেওয়ার মাধ্যমে সরকার শুরু করেছে আন্দোলন দমনের নামে হত্যাযজ্ঞ। ১৯ জুলাই ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে পুলিশের সাথে সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষ হয়। ঢাকার অন্যান্য জায়গার তুলনায় মিরপুর-১০ এ সংঘর্ষ একটু বেশিই হয় কারণ সেখানে পুলিশের সাথে ছত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ একসাথে ছাত্রজনতার ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। নামাজের পর পরই দুই গ্রুপে ধাওয়া পালটা শুরু হয়। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সাথে সমান তালে চলে পুলিশের থেমে থেমে গুলিবর্ষণ। একই সাথে সেদিন সরকারের পক্ষ থেকে আকাশ পথে হেলিকপ্টার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় গরম পানি। পুলিশ আর ছাত্রজনতার ধাওয়া পালটা ধাওয়ার এক পর্যায়ে পরপর দুটি গুলি এসে বিধে বিপ্লব শেখের মাথার পেছনে একটা এবং পিঠে এবং তিনি ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন। পরে তার সাথীরা তাকে আজমল হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক বিপ্লব শেখকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিবার হাসপাতাল থেকে তার লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তার পিতাকে বলেছিল-লোকজনকে বলবে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গিয়েছে। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা বিপ্লব শেখের বাবা একজন ভ্যান চালক। মা অন্যদের বাড়িতে গিয়ে কাজ করে যা আয় করেন তাও বাবার পাশাপাশি সংসার চালাতে খরচ করেন। বিপ্লব শেখ ছাড়াও এই বাবা মায়ের আরও তিন জন ছেলে মেয়ে রয়েছে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে সংসার চালানো তাঁর জন্য অতি কষ্টের বিষয়। দিন এনে দিন খাওয়া এই পরিবারের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা অতি নাজুক। ইচ্ছে ছিল বড় ছেলে বিপ্লব শেখ গার্মেন্টস এ কাজ করে পরিবারের হাল ধরার পাশাপাশি ছোট ভাই বোনদের পড়াশোনার খরচও বহন করবে। ছেলে বিপ্লব শেখেরও এমনই ইচ্ছে ছিল। পরিবারের বড় সন্তানকে হারিয়ে বিপ্লব শেখের বাবা ও মা পাগল প্রায়। ছেলে কেন্দ্রিক তাদের আশা আকাঙ্খার আর কিছুই বাকি রইলো না। গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে পরিবারের হাল ধরা ছেলেটিকে হারিয়ে পরিবারে নেমে এসেছে অভাব আর অনটন। একনজরে শহীদের পরিচয় নাম : বিপ্লব শেখ জন্ম তারিখ : ০১-০৪-২০০৫ পিতা : মোহাম্মদ পারভেজ শেখ মাতা : এলিজা পারভীন স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: বুড়ি গাংনি, ইউনিয়ন: গাংনি, থানা: মোল্লারহাট, জেলা: বাগেরহাট বৈবাহিক অবস্থা : অবিবাহিত পেশা : গার্মেন্টস কর্মী ঘটনার স্থান : মিরপুর ১০ গোল চত্বর আহত হওয়ার সময়কাল : ১৯ জুলাই ২০২৪, সন্ধ্যা ছয়টা শাহাদাতের সময়কাল : ১৯ জুলাই ২০২৪, সন্ধ্যা ছয়টা আঘাতের ধরন : মাথার পেছনে ও পিঠে গুলি আক্রমণকারী : পুলিশ শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : বুড়ি গাংনি প্রস্তাবনা ১. ছোট ছোট তিনজন ভাই বোন রয়েছে। তাদের পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়া যেতে পারে ২. ভ্যানচালক বাবাকে ব্যাবসার পুঁজি দেওয়া যেতে পারেএকনজরে শহীদের পরিচয়তিনি খুব সাদাসিদা ও সরল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। ছিলেন পিতামাতার খুব অনুগত ও শান্ত। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে অল্প বয়সে গার্মেন্টসে আয়রণ ম্যান হিসাবে চাকরিতে যোগদান করেন। ছোট ভাই বোনদের পড়াশোনার খরচের জোগান তার চাকুরির বেতন থেকেই আসতো।