জন্ম তারিখ: ১২ এপ্রিল, ১৯৯৭
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: খুলনা
পেশা : গার্মেন্টস কর্মী, শাহাদাতের স্থান : গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল, সাভার ঢাকা
আর কত অন্যায় করলে শেখ হাসিনাসহ তার দোষররা শান্তি পাবে। আর কত প্রাণ নিলে তারা তাদের রাক্ষুসে মনোভাব দূর করবে। কত রক্ত দরকার তাদের পিপাসা মিটানোর জন্য। ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান এভাবেই বুঝি সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার করেছে। তার থেকে এই শিক্ষা নিয়ে তার সন্তান শেখ হাসিনা এখন ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে, জেল জুলুম দিয়েছে, ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়েছে এবং তার পোষা সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ দ্বারা হাজার হাজার বোনকে ধর্ষণ গণধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে। এত অন্যায় দেখে হামিদ শেখ আর সহ্য করতে পারল না। সে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করল স্বৈরাচার পতনের জন্য ছাত্রদের সাথে রাজপথে অগ্রণী ভূমিকা পালন করল। অবশেষে বাংলাদেশের ভাগ্য আকাশে উজ্জ্বল সূর্য উঠিয়ে চির বিদায় নিলেন। শহীদ মো: হামিদ শেখের সংক্ষিপ্ত জীবনী খুলনার তেরখাদা পানতিতা গ্রামে ১৯৯৭ জন্মগ্রহণ করেন মো: হামিদ শেখ। বাবার নাম মো: জাফর শেখ। মা রাশিদা বেগম। তিন ভাই বোনের মধ্যে মো: হামিদ শেখ সবার বড়। তার ছোট এক বোন আর একজন ভাই আছে। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে অনেক সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও পারিবারিক অভাবের কারণে তা পায়নি। হত দরিদ্র পরিবার। বাবা ভ্যান চালক। ভ্যান চালক পিতার আয়ে সংসার চলে। বাড়িতে যেই ঘর আছে তার মাত্র দুইটা বেড়া আছে, বেড়া দুটি জড়োসড়ো। তিনবেলা খাবার জোটাতে বাবার হিমশিম খেতে হয়। বাবা খেটে খাওয়া মানুষ হিসেবে লেখাপড়ার সুযোগ সুবিধা দিতে না পারলেও ছেলের মধ্যে যথেষ্ট সততা তৈরী করে দিতে পেরেছিলেন। চার সদস্যের পরিবারের অভাব অনটন যখন মারাত্বক পর্যায়ে আসে তখনই ছেলে মোঃ হামিদ শেখ পরিবারের সাহায্যের জন্য গার্মেন্টেসে এসে কর্মী হিসেবে টাকা আয় করতে থাকেন। বাবা জানান, ‘আমার ছেলে প্রথম বেতনের সব টাকাই আমার হাতে তুলে দেয়। বাড়িতে আসার সময় ও আমার আর ওর মায়ের জন্য নতুন কাপড় কিনে আনতো। এছাড়াও ছোট ভাই বোনদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নতুন জামা-কাপড় কিনে দিতো। সেদিনের মর্মান্তিক ঘটনা তিনি খুব সাদাসিদা ও সরল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। আন্দোলনের শুরুতে তিনি বন্ধুদের সাথে ছাত্রজনতার মিছিলে যোগ দেন। তিনি অমায়িক ব্যবহারের অধিকারী ছিলেন, প্রতিবেশীদের খোজখবর রাখতেন নিয়মিত। দায়িত্ববান ভাই হিসেবে তিনি তার ছোট ভাইকে পড়াশোনার খরচ চালাতেন। সংসার চালানোর পাশাপাশি বাবা-মার সকল দিক তিনি খেয়াল রাখতেন। তিনি মাকে বলেছিলেন, ‘মা আমি একটা মহৎ কাজে যাচ্ছি, তুমি কি চাও না আমি শহীদ হই? তুমি আমার জন্য দোয়া করো। আর আমাকে ক্ষমা করে দিও আমি ফিরে নাও আসতে পারি। কারণ দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে থাকা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা বিদায় নিচ্ছে। এই সময় হয়তো সে তার সর্বশক্তি ব্যবহার করবে। সাধারণ মানুষকে নির্দ্বিধায় হত্যা করবে। তবুও আমরা তার রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে এই আন্দোলনকে সফল করব ইনশাআল্লাহ। ‘মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন খোকা তুই এমনটা করিসনে। তুই ছাড়া আমার সংসার চালানোর আর কেউ নেই। তুই হারিয়ে গেলে আমরাও হারিয়ে যেতে পারি। আন্দোলন করার তো অনেক মানুষ আছে তারা করুক না। তুইতো গরিব মানুষের ছেলে বিজয় আসলেই কি, না আসলেই কি। দেশ স্বাধীন হলে গরিবদের কোনো লাভ নেই স্বাধীনতার স্বাদ শুধু ধনীরাই ভোগ করে। হামিদ বললেন না মা, লাভ লোকসানের হিসাব তো হবে ওপর আল্লাহর কাছে। আমি তো যাচ্ছি আমার নৈতিক দায়িত্ব পালনের জন্য। আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন সৎকাজে আদেশ করার আর অসৎ কাজে বাধা দেওয়ার। আমি অসৎ কাজে বাধা দিতে যাচ্ছি আমি গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে যাচ্ছি। দীর্ঘ ১৫ বছর শেখ হাসিনা তার দলীয় ক্যাডারদের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। আমাদের দেশের সুনামধন্য সেনাবাহিনীকে পঙ্গু করেছে। আমাদের দেশে অর্থনীতিকে অচল করেছে। এই দেশটাকে বাঁচাতে হবে তা না হলে ফ্যাসিবাদী সরকার বাংলাদেশের নাম গন্ধ পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলবে। তখন মায়ের কান্না ছাড়া কিছুই করার থাকলো না। মা বললেন, ‘আল্লাহ তোর ভালো করুক।‘ ৫ আগস্ট সোমবার। বিজয়ের আনন্দে সবাই ঘর ছাড়া। নারী, পুরুষ, ছোট, বড় সবাই আনন্দ মিছিল বের করেছে। মো: হামিদ শেখ সবার সাথে দুপুর ১২ টায় সেই আনন্দ মিছিলে বের হয়েছিলেন কিন্তু তিনি তখনও বোঝেননি এটাই আমার বাসা থেকে শেষ বের হওয়া, আর ফেরত আসা হবে না। মোঃ হামিদ শেখ সবার সাথে বিজয় মিছিলে গিয়ে আশুলিয়া থানার সামনে এসে পৌছান। তিনি মিছিলের প্রায় সম্মুখভাগে ছিলেন। হঠাৎ গুলির শব্দ শুনতে পায় হামিদ শেখ, সাথে মানুষের দ্বিকবিদিক ছোটাছুটি। অবস্থা দেখে হামিদ নিজেও ছোটাছুটি শুরু করেন। আশেপাশের মানুষকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখে তাদের ফেলে রেখে পেছন ফিরে আর আসতে মন চাইলো না। তিনি এগিয়ে গেলেন আহতদের সহায়তা করার জন্য যদিও পরিবেশ অনুকূলে ছিল না। এমতাবস্থায় তার ঘাড়ে এবং বুকে দুইটা গুলি লাগে। যদিও পরে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় বাচিয়ে তোলার উদ্দেশ্যে কিন্ত মো: হামিদ শেখ ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। কেউ চিন্তাই করতে পারিনি এইভাবে পুলিশ গুলি করবে। পুলিশ তো আমাদের দেশেরই কোনো মায়ের সন্তান। এরা তো আমাদের পরিশ্রমের টাকায় বেতন পায়। তাদের হাতের বুলেট আমাদের ট্যাক্সের টাকায় কেনা। তাদের হাতে অস্ত্র দেওয়া হয়েছে সন্ত্রাসীদের নির্মূল করার জন্য। তারা অস্ত্র নিয়েছে এই ওয়াদা করে যে, ‘আমরা দেশের শান্তিরক্ষা করব, আমরা অন্যায়কে দূর করব। কিন্তু তারা অন্যায়ের পক্ষ নিয়ে, জালিম সরকারের পক্ষ নিয়ে সাধারণ মানুষকে এভাবে নির্দ্বিধায় হত্যা করবে এটা কেউ কল্পনা করেনি।‘ আহ! একটি আঙ্গুল দিয়ে ট্রিগার চেপে বুলেট বের করতে বোধ হয় এদের কোনো কষ্টই হচ্ছে না কিন্তু একটি বুলেটের আঘাতে একটি প্রাণ শুধু যাচ্ছে না, একটি প্রাণ চলে যাবার সাথে সাথে অনেক মানুষের মুখের আহার চলে যাচ্ছে। যে সন্তানের উপর পরিবারের অনেকগুলো সদস্য নির্ভরশীল ছিল তারা হয়তো আজ সেই সন্তানকে হারিয়ে ভিক্ষার ঝুলি কাধে তুলে নিবে। এক সহকর্মীর অনুভূতি বন্ধু, পরিবার আর প্রতিবেশীদের সাথে ছিল তার দারুণ সম্পর্ক। সাহায্য, সহানুভূতি প্রকাশ করার মন- মানসিকতা ছিল অনন্য। পরিবারের সাহায্যের জন্য পড়াশোনা বাদ দিয়ে গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। এরই পরিপেক্ষিতে আশুলিয়ার ধামরাইতে বসবাস শুরু করেন। যেই গার্মেন্টস কর্মীদের সাথে কাজ করতেন তাদের সাথে সব সময় হাসি মুখে কথা বলতেন। সহকর্মী হিসেবে তার প্রশংসা আছে যথেষ্ট। বাবার অনুভূতি: হত দরিদ্র পরিবার। বাবা ভ্যান চালক, ভ্যান চালক পিতার আয়ে সংসার চলে। বাড়িতে যেই ঘর আছে তার মাত্র দুইটা বেড়া আছে, বেড়া দুটি জড়োসড়ো। তিনবেলা খাবার জোটাতে বাবার হিমশিম খেতে হয়। চার সদস্যের পরিবারের অভাব অনটন যখন মারাত্বক পর্যায়ে আসে তখনই ছেলে মোঃ হামিদ শেখ পরিবারের সাহায্যের জন্য গার্মেন্টেসে এসে কর্মী হিসেবে টাকা আয় করতে থাকেন। বাবা জানান ু‘আমার ছেলে প্রথম বেতনের সব টাকাই আমার হাতে তুলে দেয়। বাড়িতে আসার সময় আমার আর ওর মায়ের জন্য নতুন কাপড় কিনে আনতো। এছাড়াও ছোট ভাই বোনদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নতুন জামা-কাপড় কিনে দিতো নিজের জীবনের চাইতেও সে তার পরিবারকে বেশি ভালোবাসতো। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা দায়িত্ববান ভাই হিসেবে তিনি তার ছোট ভাই, বোনের পড়াশোনার খরচ চালাতেন। সংসার চালানোর পাশাপাশি বাবা-মার সকল দিক তিনি খেয়াল রাখতেন। তিনি তার মাকে বলেছিলেন ‘মা আমি একটা মহৎ কাজে যাচ্ছি, তুমি কি চাও না আমি শহীদ হই? তুমি আমার জন্য দোয়া করো। আমাকে ক্ষমা করে দিও। ‘মো: হামিদ শেখ এর বাবা এখন একজন ভ্যান চালক। বেচে থাকা চার সদস্যের পরিবার নিয়ে তিনি এখন খুব কষ্টে জীবনযাপন করছেন। পরামর্শ ১। শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা। ২। শহীদের বোনটি বিবাহযোগ্য। তার বিয়ের ব্যবস্থা করা। সমুদয় খরচ বহন করা। ৩। শহীদের ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ চালানো এবং পড়াশোনা শেষ এ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। একনজরে শহীদের পরিচয় পূর্ণাঙ্গ নাম : মো: হামিদ শেখ পিতা : মো: জাফর শেখ(৫৫) ভ্যান চালক মাতা : মোসা: রাশিদা বেগম (৫০) গৃহিণী জন্ম তারিখ : ১২-০৪-১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: পানতিতা, ইউনিয়ন ২নংবারাসাত, থানা: তেরখাদা, জেলা: খুলনা বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: পানতিতা, ইউনিয়ন ২নংবারাসাত, থানা: তেরখাদা, জেলা: খুলনা পেশা : গার্মেন্টস কর্মী। স্নোটেক্স স্পোর্টস ওয়ার লিমিটেড। লাকুড়িয়া পাড়া ধামরাই, ঢাকা বৈবাহিক অবস্থা : অবিবাহিত আক্রমণের স্থান ওই সময় : আশুলিয়া থানা, সাভার ঢাকা ০৫-০৮-২০২৪, দুপুর ১২:০০টা শাহাদাতের সময় : আশুলিয়া থানা, সাভার ঢাকা ০৫-০৮-২০২৪, দুপুর ১২:০০টা আক্রমণকারী : পুলিশ দাফন : রহিমনগর, খুলনা কলোনি কবরস্থান