জন্ম তারিখ: ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৯১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: খুলনা
পেশা : ব্যবসায়ী, শাহাদাতের স্থান : মাগুরা সদর হাসপাতাল
শহীদ মেহেদী হাসান রাব্বি ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ সালে মাগুরা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। প্রাকৃতিক প্রাচুর্যে ভরা গ্রামের নাম বরুনাতৈল, গ্রামটি মাগুরা জেলা সদরের মাগুরা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। এই গ্রামেরই মৃত ময়েন উদ্দিন বিশ্বাস ও মোছা: সালেহা বেগমের সন্তান তিনি। ছোট থেকে খুব শান্ত স্বভাবের ছিলেন তিনি। এলাকার সবার সাথে ছোট থেকেই সুসম্পর্ক তাঁর। শহীদ মেহেদী হাসানের আরও তিন সহোদর ভাইয়ের ও দুই বোনের সাথে বেশ আনন্দঘন শৈশব কেটেছে তাঁর। এছাড়াও তাঁর আরও দুই বোন রয়েছে। পিতা কৃষি কাজের সাথে জড়িত থাকলেও মধ্যবিত্ত সংসারটিতে সুখের কমতি ছিল না। অসীম সাহসী মেহেদী হাসান রাব্বির, সেদিনের বীরত্বগাঁথা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা বৈষম্য মূলক কোটা সংস্কারের দাবিতে '২৪ এর জুলাই মাসের শুরু থেকেই ধীরে ধীরে সংগঠিত হতে থাকে। অল্প দিনের মধ্যেই কোটা সংস্কার আন্দোলন সারা দেশের বৈষম্যের শিকার সাধারণ মানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়। রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকায়, শহীদ মেহেদী হাসান রাব্বি এলাকার মানুষদের সংগঠিত করে মিছিলে অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন। প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন এবং তাদের রাষ্ট্র সংস্কারের যৌক্তিকতা বুঝাতেন। পাশাপাশি ছাত্র-জনতার স্বৈরাচার বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল সহ সকল কর্মসূচিতে শহীদ মেহেদী হাসান রাব্বি নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন। ৪ আগস্ট, ২০২৪। সেদিন সারা দেশের মতো মাগুরার সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার একদফা দাবির সাথে একাত্ম হয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। উত্তাল হয়ে উঠে মাগুরার রাজপথ। সমগ্র জেলার সংগ্রামী মানুষ সংগঠিত হয়ে মিছিল সহকারে মাগুরা শহরে দিকে অগ্রসর হয়। বিপুল সংখ্যক ছাত্র জনতার এই মিছিল সকাল ১১ টায় স্থানীয় পারনান্দুয়ালী এলাকায় ঢাকা-মাগুরা সড়কে উঠে শহরের দিকে আসতে থাকে। শহীদ রাব্বি এই বিক্ষোভ মিছিলের সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব প্রদান করছিলেন। বেলা তখন সাড়ে ১২টা, পুলিশ সাধারণ ছাত্র-জনতার বিশাল মিছিল দেখে প্রথমে পিছু হটে যায় তখন সমগ্র এলাকা আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার দখল। ঠিক এই সময় স্বৈরাচারী সরকারের যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা পুলিশকে সাথে নিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় নিরীহ ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ-মিছিলে হামলা চালায় আর মুহুর্মুহু গুলি বর্ষন করতে থাকে। গুলিতে অনেক মানুষ আহত হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়তে থাকেন। শহীদ রাব্বি, তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে সেসব আহত ছাত্র-জনতাকে হাসপাতালে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করে। এমনই এক সময় পুলিশের গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হন শহীদ মেহেদী হাসান রাব্বির ভাতিজা কলেজ পড়ুয়া খালিদ৷ তাকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন তিনি। পাশাপাশি আন্দোলনরত একজনের মাথায় ইটের আঘাতে জখম হলে, শহীদ রাব্বি নিজেই তাকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যান। আর ঠিক তারপর পরেই, মাগুরার দুই কুখ্যাত সাংসদ সাইফুজ্জামান শিখর ও বীরেন সিকদারের পালিত সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হামিদুলের নেতৃত্বে করা একটি গুলি এসে লাগে তাঁর পেটের বাম দিকে। তখনো ঘটনার ভয়াবহতা আঁচ করতে পারেননি তিনি, তবুও নিজ শরীরের রক্তক্ষরণ আর ব্যথার তীব্রতায় আহত অবস্থায় ঢাকা-মাগুরা মহাসড়ক থেকে ওয়াপদা ব্রীজ এলাকায় নিজেই হেঁটে আসার পর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। এরপর স্থানীয়রা তাঁকে দ্রুত মাগুরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই শাহাদতের সুধাপান করেন তিনি। আর সেই সাথে রচিত হয় অসীম সাহসী মেহেদী হাসান রাব্বির, শহীদ হিসেবে নতুন বীরত্বগাঁথা। “বীরত্বগাঁথা লিখতে গিয়ে বিস্মিত হই আমি, শহীদ তোমার আত্মত্যাগ বড্ড ভীষণ দামী।” জানাযা ও দাফন পরবর্তীতে নিজ গ্রামে শহীদ মেহেদী হাসান রাব্বির জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা শেষে তাঁকে বারুনাতৈল পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। শহীদ পরিবারের বর্তমান আর্থিক অবস্থা শহীদ মেহেদী হাসান রাব্বির নিজস্ব ইন্টারনেট সরবরাহের ব্যবসা ছিল। সেখান থেকেই উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংসার চলে তাঁদের। আগে তাঁর বাবা পরিবারে কিছুটা আর্থিক সহযোগিতা করলেও, বছর দুয়েক আগে বাবা মারা যাওয়ার পর তিনিই ছিলেন এই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর পরিবারে এখন শুধু রইল মা মোসা: সালেহা বেগম আর নববিবাহিতা স্ত্রী মোসা: রুমি খাতুন। শহীদ মেহেদীর স্ত্রী এখন অন্ত:সত্তা, তাই অনাগত সন্তানকে নিয়ে সীমাহীন দুঃশ্চিন্তায় আছেন তিনি। মেহেদীর স্ত্রীর কাছে পরিবারের বর্তমান আর্থিক অবস্থার কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, "মেহেদির ইন্টারনেট সরবরাহের ব্যবসা এখন ওর ছোট ভাই দেখাশুনা করছে। সেখান থেকে অল্প কিছু সহযোগিতা পাই।" শুধু জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অন্যান্য সকল শহীদ পরিবারকে দেয়া দুই লক্ষ টাকা আমরাও পেয়েছি। আমার স্বামী জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক ছিল, প্রায় দুই মাস হতে চলল অথচ এখন পর্যন্ত কেউ ফোন করে খোঁজ-খবরও নিলো না।" পাশাপাশি সন্তান হারিয়ে শোকে কাতর হয়ে থাকা শহীদ জননী জানান, "আমার মেহেদী আমার খুব যত্ন করতো, আমার সব ওষুধের খরচ দিতো। আমার কখন কি লাগবে, তা শুনতো। আমাকে দেখার আর কেউ থাকলো না।" একনজরে শহীদের পরিচয় শহীদের পূর্ণনাম : মো: মেহেদী হাসান রাব্বি জন্ম তারিখ : ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ পেশা বা পদবী : ইন্টারনেট সংযোগ সরবরাহকারী, ব্যবসায়ী পিতার নাম : মৃত মো: মইনুদ্দিন বিশ্বাস মাতার নাম : মোসা: সালেহা বেগম মাতার পেশা ও বয়স : গৃহিণী, ৫৫ বছর স্ত্রীর নাম : মোসা: রুমি খাতুন স্ত্রীর পেশা ও বয়সা : গৃহিনী, ২২ বছর, (স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা) পরিবারের মাসিক আয় : ২০০০০ টাকা পরিবারের বর্তমান সদস্য সংখ্যা : ৩ জন আহত হওয়ার স্থান : ঢাকা-মাগুরা মহাসড়ক নিহত হওয়ার স্থান : মাগুরা সদর হাসপাতাল আহত হওয়ার সময়কাল : ৪ আগস্ট, ২০২৪ নিহত হওয়ার সময়কাল : ৪ আগস্ট, ২০২৪, দুপুর ১.৩০টা শহীদের কবরের অবস্থান : বারুনাতৈল পারিবারিক কবরস্থান স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: বারুনাতৈল, উপজেলা: মাগুরা সদর, পৌরসভা: মাগুরা পৌরসভা, ওয়ার্ড নম্বর: ০১, জেলা: মাগুরা পরামর্শ ১। শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা ২। শহীদের স্ত্রীর জন্য একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ৩। শহীদের অনাগত সন্তানের সকল দায়িত্ব গ্রহণ করা