জন্ম তারিখ: ৭ আগস্ট, ২০০৭
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: খুলনা
পেশা: ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : মাগুরা জেলার মহম্মদপুর থানার পাশে অবস্থিত আমিনুর রহমান ডিগ্রী কলেজ
৩৬ জুলাইয়ের আন্দোলনকে মূলত কিশোর বিদ্রোহ বললেও মনে হয় মোটেই বাড়িয়ে বলা হবে। প্রায় ৭০ জন শিশু-কিশোর এই আন্দোলনে শহীদ হয়। তেমনই একজন বিদ্রোহী কিশোর শহীদ আহাদ আলী। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি আসে আগস্ট মাসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন ধীরে ধীরে সর্বাত্নক আন্দোলনে রূপ নেয়। ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হয় লাখ লাখ তরুণ-তরুণী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, আলেমসহ সকল শ্রেণি পেশার মুক্তিকামী জনতা। সবাই চোখে মুখেই ছিল আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঘৃণা আর প্রতিবাদের ঝাঁঝালো শ্লোগান। সবাই একই দাবীতে একাট্টা হয়। যে করেই হোক ঝেটিয়ে বিদায় করতে হবে আওয়ামী লীগ সরকারকে। ৩ আগস্ট ব্যান্ডদলগুলো প্রতিবাদী কর্মসূচি "গেট আপ স্ট্যান্ড আপ" পালন করে রবীন্দ্র সরোবরে। বিকাল ৩ টায় সেখান থেকে তারা সংহতি জানাতে চলে আসে শহীদ মিনারে। শহীদ মিনার পর্যন্ত আসতে তাদের পোহাতে হয় অনেক ধকল। পথে পথে অস্ত্রধারী ছাত্রলীগ, যুবলীগ আর পুলিশের বাঁধার মুখোমুখি হতে হয় শিল্পীদের। গণদাবীর ভিত্তিতে ঐ দিন দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলন ঘোষণা করা হয়। ৪ আগস্টে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে ৬৪ জেলায়। মগুরা জেলার সদর, শ্রীপুর ও মহম্মদপুর উপজেলায় হয় ব্যাপক সংঘর্ষ। মোট চারজন শহাদাত বরণ করে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায়। তারমধ্যে ছিলেন শহীদ মো: আহাদ আলী। শহীদ আহাদ আলীর জন্ম ২০০৭ সালের আগস্ট মাসের ৭ তারিখে মহম্মদপুরে। পিতা মো: ইউসুফ আলী একজন ভ্যান চালক এবং মাতা পাখি খাতুন ছিলেন গৃহিণী। শহীদ মো: আহাদ আলী মহম্মদপুর বরকতিয়া দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পাশ করে ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে মহম্মদপুরের স্বনামধন্য আমিনুর রহমান ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। শহীদ আহাদ আলী মানবিক বিভাগের প্রথম বর্ষের একজন নিয়মিত ছাত্র ছিলেন। তার ছোট ভাই মো: ইসাহাক আলী মুহাম্মদপুর সরকারি প্রাইমারি স্কুলের ৫ম শ্রেণির ছাত্র। যেভাবে শহীদ হয় কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র জনতার আন্দোলন সারা দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ক্রমেই এই দাবির সাথে সাধারণ জনতা একত্রিত হতে থাকে। এক সময় বৈষম্য বিরোধী এই আন্দোলন সকলের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়। ছাত্র জনতার স্বৈরাচার বিরোধী বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেয়ার জন্য শহীদ আহাদ আলী বন্ধুদের উৎসাহ দিতেন এবং প্রতিদিন কলেজে যেয়ে কখন কিভাবে মিছিলে যোগ দিতে হবে সেই বিষয়ে সকলকে একত্রিত করে উদ্বুদ্ধ করতেন। ৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখ সকাল ১১ টায় তিনি সহপাঠি ও বন্ধুদের সাথে নিয়ে মাগুরা জেলার মহম্মদপুর থানার পাশে অবস্থিত আমিনুর রহমান ডিগ্রী কলেজের সামনের প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। কিছুক্ষণ পর শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল থেকে মহম্মদপুর থানা পুলিশ ৪ জন ছাত্রকে গ্রেফতার করলে বিক্ষোভ মিছিলটি প্রতিবাদ মিছিলে পরিণত হয়। চতুর্দিক থেকে বিপুল সংখ্যক ছাত্র জনতা এসে মিছিলে যেগে দেয়। মিছিলকারীরা গ্রেফতারকৃত ছাত্রদের ছেড়ে দেয়ার জন্য থানা পুলিশকে বার বার অনুরোধ করেন কিন্তু পুলিশ তাদের না ছেড়ে বরং ছাত্র জনতার মিছিলের উপর টিয়ারসেল ও গুলি বর্ষন শুরু করে। গুলিতে অনেক ছাত্র জনতা মারাত্মক আহত হন। জনতার প্রতিরোধে এক পর্যায়ে পুলিশ থানা থেকে পালিয়ে যায়। সাধারণ মানুষ থানা ঘেরাও করে গ্রেফতারকৃত ছাত্রদের থানা হাজত থেকে বের করে আনে। পরবর্তিতে সাধারণ জনতা আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করেন। দুপুর ১ টায় ডাক্তার চিকিৎসারত অবস্থায় শহীদ আহাদ আলীকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রিয় আহাদ আলীকে হারিয়ে শোকে স্তব্দ হয়ে যায় মহম্মদপুরের সর্বস্তরের জনতা। ৫ আগস্ট সকালে শহীদ আহাদ আলীর জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজায় হাজার হাজার মানুষ অংশ গ্রহণ করেন। তারা শহীদ আহাদ আলীর কথা স্মরণ করে কাঁদতে থাকেন। জানাজা শেষে স্থানীয় পারিবারিক কবরস্থানে শহীদ আহাদ আলীকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। প্রিয় আহাদ আলীর মৃত্যুতে তার সহপাঠিরা শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন। শহীদ আহাদ আলীর রক্তভেজা টুপি পাঞ্জাবীটা এখানো শহীদের স্মৃতি বহন করে আছে। এই আন্দোলনে ইসলামি ভাবাদর্শের সকল মানুষের অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছাত্ররা ছিলেন বুনিয়ানুন মারসুস বা শিশা ঢালা প্রাচীরের ন্যায়। তাইতো এ আন্দোলন পৃথিবীর বিম্ময় হিসেবে আলোচিত হতে থাকবে। শহীদ সম্পর্কে মন্তব্য শহীদের চাচা ও স্থানীয় মেম্বার বলেন-শহীদ মো: আহাদ আলী খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। সে সব সময় মসজিদে যেয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতো। শহীদের বাবা বলেন-আহাদ আলী খুবই সৎ ছিলো, সে ইতিমধ্যে তাবলীগ জামাতের তিন চিল্লা সমাপ্ত করেছে। শহীদের মা বলেন- আমার ছেলে কখনো কারো উপর চোখ তুলে কথা বলেনি, কিন্তু আমার নিরপরাধ ছেলেকে পুলিশ অন্যায় ভাবে হত্যা করেছে। আমরা হত্যাকান্ডের বিচার চাই। একনজরে শহীদের পরিচয় শহীদের পূর্ণ নাম : শহীদ মো: আহাদ আলী (১৭) পেশা : শিক্ষার্থী ঠিকানা : মহম্মদপুর, মাগুরা জন্ম তারিখ : ০৭/০৮/২০০৭ পিতা : মো: ইউনুস আলী (৬০) পিতার পেশা : ভ্যান চালক মাতার নাম : মোসা: পাখি খাতুন (৫০) মাতার পেশা : গৃহিণী শহীদের ভাই : মো: ইসলাম আলী (১০) পেশা : শিক্ষার্থী, পঞ্চম শ্রেণি, মোহম্মদপুর সরকারি প্রাইমারি স্কুল পারিবারের সদস্য সংখ্যা : ০৩ জন মাসিক আয় : ১০০০ টাকা আক্রমণকারী : পুলিশ আহত হওয়ার সময়কাল : ৪ আগস্ট, ২০২৪, বেলা ১১:৩০টা মৃত্যুর তারিখ ও সময় : ৪ আগস্ট, ২০২৪, দুপুর ১টা শহীদের কবরের অবস্থান : মোহাম্মদপুর থানার পৌর কবরস্থান পরামর্শ ১। ছোট ভাইকে লেখাপড়ায় সহযোগিতা ২। দুধ উৎপাদনের জন্য গাভী কিনে দেয়া ৩। ঈদে শুভেচ্ছা উপহার পাঠানো