জন্ম তারিখ: ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা : চাকরি (সেলস) শাহাদাতের স্থান: স্থান : এম জেড হাসপাতাল
পিতা-মাতার এলাকা নোয়াখালীতে হলেও আব্দুল জব্বারের জন্মের আগেই পরিবারসহ ঢাকাতে চলে আসায় আব্দুল জব্বার ঢাকাতেই ১৯৮৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আব্দুল মতিন এবং মাতা নাজমা বেগম অনেক কষ্ট করে আব্দুল জব্বার সহ আরো ৪ ভাই বোনকে বড় করেছেন। ঢাকা তেজগাঁও পশ্চিম নাখালপাড়া এলাকায় তার জন্ম। মৃত্যুকালীন সময় পর্যন্ত পরিবারসহ বাড্ডা এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করে পরবর্তীতে তিতুমীর কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স মাস্টার্স শেষ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি নিয়মিত ইসলাম চর্চা করতেন। স্বেচ্ছায় ইসলাম বহির্ভূত কোনো কাজ তিনি করতেন না। বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হোক, কোরআনের আইন চালু হোক এর জন্য তিনি সকল সময় ইসলামী আন্দোলনকে সহযোগিতা করতেন। ছাত্র জীবনে ইসলামী ছাত্রশিবির এবং কর্মজীবনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামকে সমর্থন করতেন। মৃত্যুকালীন অবস্থায় তার দুইটি ছেলে মেয়ে ছিল। ছেলে সামির ইব্রাহিম ১২ বছরের এবং মেয়ে নুজাইফা ইসলাম ৩ বছরের। কর্মজীবনে তিনি সেলসের চাকরি করতেন। ছেলেমেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন এঁকেছিলেন আব্দুল জব্বার। ভেবেছিলেন এদের জন্য ঢাকাতে কোথাও অল্প কিছু জমি কিনে বাড়ি করবে এর জন্য তাকে বিদেশ যেতে হবে। অবশেষে বিদেশ গেলেন কিন্তু এমন দেশে গেলেন যেখান থেকে আর ফেরা সম্ভব নয়। ৫ আগস্ট ৭:৩০ মিনিটে আওয়ামী লীগের ভাড়া করা ভারতের পুলিশের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। আব্দুল জব্বারের শাহাদাতের ঘটনা ০৫ আগস্ট ২০২৪ সাল স্বর্ণ অক্ষরে লেখা থাকবে। এই দিন আব্দুল জব্বার তার নিজ কর্মস্থল থেকে সকাল ১১ টার দিকে বাসায় চলে আসেন। চিন্তা ছিল ওই সময় বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সহযোগিতা করবেন এবং মিছিলে অংশগ্রহণ করবেন। অংশগ্রহণ করেছিলেন তবে দুপুরের পরে শেখ হাসিনার পতনের কথা শুনে পরিবারসহ আনন্দ উল্লাসের জন্য রাস্তায় বের হন। পতন নিশ্চিত হওয়ার পরেও বাড্ডা থানার পুলিশ নৃশংস হত্যাকাণ্ডে মেতে ওঠে। মানুষ দেখামাত্রই তারা গুলি করতে থাকে। আব্দুল জব্বার তার পরিবার নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন। আসরের নামাজ পড়ে রাস্তায় বের হলে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেলে আহত হয়ে বাসায় চলে আসেন। স্ত্রীকে বলেন সামান্য আঘাত লেগেছে এতে সমস্যা নেই। তারপরে বাড়িতে ফোন রেখে মাগরিবের নামাজ পড়তে তিনি বাড়ি থেকে বের হন। ভেবেছিলেন এখন মনে হয় কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু মাগরিবের নামাজ পড়ে তিনি যখন রাস্তায় নেমেছিলেন, তখন চারিদিক থেকে মানুষ ছোটাছুটি করছিল। পুলিশ আরো বেশি ভয়ংকর রূপে গুলি করছিল। কয়েকশো পুলিশ একই সাথে চারিদিকে গুলি চালাতে থাকে। আব্দুল জব্বার বিভিন্ন মানুষের সাথে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু হঠাৎ একটি বুলেট এসে তার পেটে বিদ্ধ হয়। এখানে তিনি পড়ে যান। রাস্তার সাধারণ মানুষ তাকে হসপিটালে নিয়ে যায় কিন্তু দীর্ঘ এক ঘন্টা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে এমজেড হসপিটালে শাহাদাত বরণ করেন। হসপিটালের মালিকপক্ষ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে স্থানান্তর করে। বাহিরে ভয়াবহ অবস্থার কথা শুনে আব্দুল জব্বারের স্ত্রী আতঙ্কিত হয়ে যায়। তিনি তার স্বামীকে খোঁজ করেন কিন্তু কোথাও খোজ মেলে না। বাইরে বের হয়ে দেখেন চার থেকে পাঁচটা লাশ রাস্তায় পড়ে আছে। তাদের চেহারার সাথে তার স্বামীর চেহারার মিল পাওয়া যায় না। তাই তিনি স্বামীকে খুঁজতে বিভিন্ন হসপিটালে রাত তিনটা পর্যন্ত ছোটাছুটি করেন কিন্তু কোথাও মেলে না। অবশেষে তিনি তার দেবরকে সাথে করে ফজরের সময় বের হন। এলাকার কিছু লোকের পরামর্শে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বামীকে খুঁজতে যান। হাসপাতালের ডাক্তারদের তার স্বামীর ছবি দেখালে তারা তাকে মর্গে নিয়ে যায়। সেখানে তিনি কয়েকশো লাশের মধ্যে তার স্বামীকে খুঁজে পান। নিথর দেহ পড়ে আছে কোনো কথা নেই তার স্বামীর। একদিন আগেও তিনি তার স্ত্রী, ছেলেমেয়েদের সাথে সময় কাটিয়েছেন। আজ সেই আব্দুল জব্বার আর কোন কথা বলছেন না। বলবে কি করে? আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসী সংগঠন ভারত থেকে 'র' এর সদস্য ভাড়া করে নিয়ে এসে বাংলাদেশের মানুষকে হত্যা করছে। এরা যে ভারতের পুলিশ ছিল সেটা পরবর্তীতে তাদের বুলেট এবং অস্ত্রের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়। হত্যাকারী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষকে কোনোদিন ভালোবাসেনি। বাংলাদেশের কোনোদিন ভালো চায়নি। সে চেয়েছিল বাংলাদেশকে বিক্রি করে; এদেশের মানুষকে হত্যা করে এ দেশটাকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা। কিন্তু অন্যায় কখনো জয়ী হতে পারে না। শেষ পর্যন্ত সত্যেরই জয় হয়। ৫ আগস্ট ২০২৪ স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনে সেটাই প্রমাণিত হলো। আব্দুল জব্বারের স্ত্রীর বক্তব্য “আমার স্বামী সারাজীবন অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং সত্যের পথে থেকেছেন। বৈষম বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। বিজয়ের পরেও আমার স্বামীকে এভাবে মরতে হবে কখনো ভাবিনি। আমার পরিবার এখন কিভাবে চলবে, আমার ছেলে মেয়েরা কিভাবে লেখাপড়া করবে, এখন সবই অনিশ্চিত। আয়ের কোনো উৎস আমাদের নেই। এখন আমি কি করবো বুঝতে পারছি না।” শহীদ আব্দুল জব্বারের পারিবারিক অবস্থা স্ত্রী এখন নাবালক দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। গ্রামের ভিটেমাটি বলতে কিছু নেই। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন আব্দুল জব্বার। শাহাদতের পরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে ২ লক্ষ টাকা সহযোগিতা করা হয়েছে। এই দুই লক্ষ টাকা দিয়েই এখন কোনো রকম সংসার চলছে। সংসারের সহযোগিতা করার মতো কোনো আত্মীয়-স্বজন তার নেই। স্থায়ী কোনো সম্পদও নেই। একনজরে শহীদ আব্দুল জব্বার নাম : আব্দুল জব্বার জন্ম তারিখ : ১৫-০২-১৯৮৬ জন্মস্থান : বাসা: ৩৭২, রাস্তা: ১২ নম্বর গলি, পশ্চিম নাখালপাড়া, ডাকঘর: তেজগাঁও-১২১৫ থানা: তেজগাঁও, জেলা: ঢাকা পেশা : সেলসের চাকরি বর্তমান ঠিকানা : ভিআইপি প্রজেক্ট, ৮ নম্বর রোড, ৫১ নম্বর বাসা, থানা: বাড্ডা, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন পিতা : মৃত: আব্দুল মতিন মাতা : নাজমা বেগম স্ত্রী : সুমাইয়া ইসলাম সুমী ছেলে : মো: সামির ইব্রাহিম (১২) মেয়ে : মোসা: নুজাইফা ইসলাম (৩) আঘাতকারী : পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার স্থান ও সময় : বাড্ডা থানার সামনে, ০৫-০৮-২০২৪, সন্ধ্যা ৭:৩০ মৃত্যুর তারিখ,সময় ও স্থান : ০৫-০৮-২০২৪, রাত ৮:৩০, এম জেড হাসপাতাল জানাজা : ০৬-০৮-২০২৪ বিকাল, ৩টা কবরস্থান : তেজগাঁও শিল্প এলাকা, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কবরস্থান