জন্ম তারিখ: ১৫ মার্চ, ২০১৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : চিটাগং রোড, ঢাকা
“শিশু শহীদ হোসাইন রাষ্ট্রীয় নির্মমতার বলি” কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বেতরা গ্রামের বাসিন্দা মো: হোসাইন, মাত্র ৯ বছর বয়সে ঝরে পড়া ফুল। ২০২৪ সালের ২০ জুলাই, ঢাকার চিটাগং রোডে সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হয় সে। ২০১৫ সালের মার্চের ১৫ তারিখ ভোরবেলা মা মালেকা বেগমের কোল আলোকিত করে জন্ম নেয় হোসাইন। বেড়ে উঠে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার চিঠাগং রোড এলাকায়। পড়াশোনা করছিল আল হেরা ইন্টাঃ হাই স্কুলে ৩য় শ্রেনিতে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মাঝে সে সবার বড়। পড়াশনায় খুবই মেধাবি ছিলো সে। অবসরে বাবাকে আচার বিক্রিতে সাহায্য করতো। হোসাইন একটি সাধারণ পরিবারের সন্তান ছিল। তার বাবা মো: মানিক মিয়া ও মা মালেকা বেগম ও দুই বোনের সঙ্গে অভাবগ্রস্ত পরিবারে সংগ্রাম করে আসছিল। নিজস্ব ঘরবাড়ি না থাকায় তারা নানুর বাড়ির পাশে থাকত। একটি শিশু হিসেবে হোসাইনের স্বপ্ন ছিল হয়তো খেলাধুলা, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, পড়াশোনা করে ভালো মানুষ হওয়া। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে তার স্বপ্ন অসম্পূর্ণ থেকেই যায়। তার এই করুন মৃত্যু একটি সরকার ও সমাজ ব্যবস্থার ব্যর্থতার প্রমাণ। হোসাইনের আত্মা শান্তিলাভ করুক এই কামনা করি। আর এই ঘটনা যেন আমাদের সকলকে আরো সচেতন করে তোলে। যেভাবে শহীদ হলেন ২০ জুলাই দুপুরে ভাত খেয়ে বের হয় খেলাধুলা করতে। পাশেই একটা ভবনে আগুন লেগেছে দেখে ছুটে যায় দেখার জন্য। এর আগেরদিন ১৯ জুলাই সারা দেশব্যাপী নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে সরকারি বাহিনী ও আওয়ামী-ছাত্রলীগের গুন্ডারা। সারাদেশে হতাহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে শতাধিক। দেশব্যাপী চলছে ডিজিটাল র্ক্যাক ডাউন, কারফিউ সহ সেনাবাহিনী ও বিজিবির টহল। মন্ত্রী-এম পিরা আন্দোলনে নিহতদের নিয়ে করছে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য। তথ্যমন্ত্রী এ. আর. আরাফাতের ভাষায়, আন্দোলনকারীরা মাদকাসক্ত “ঞযবু ধৎব উৎঁমমবফ”। ওবায়দুল কাদের তার স্বভাবসুলভ ভাড়ামিতে ব্যস্ত। দেশব্যাপী থমথমে অবস্থা বিরাজমান। এদিকে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার পরেও ছেলে বাড়ি ফিরছে না দেখে খোঁজ শুরু করে তার মা। খোঁজাখোঁজির এক পর্যায়ে এক পথচারীর মোবাইলে দেখানো ছবিতে তার সন্ধান মেলে হোসাইনের। পরে ঢামেকের মর্গে গিয়ে দেখতে পান তার ছেলের দেহটা পড়ে আছে। নিথর, প্রাণহীন। ছোট্ট হোসাইনের পেট ছিদ্র করে দিয়েছে দুটি বুলেট। সন্ত্রাসী ঘাতক পুলিশের নির্মমতা থেকে রেহায় পায়নি ০৯ বছর বয়সী শিশু হোসাইন। থেমে গেছে তার স্বপ্ন। বাবা মার আশা। বোনের ভালোবাসা। ক্ষমতার লালসার বলি হতে হলো তার স্বপ্নগুলোকে। ঝরে গেলো কচি প্রাণ। জান্নাতে সবুজ পাখি হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে শিশু শহীদ মোহাম্মদ হোসাইন। কেমন আছে তার পরিবার শিশু শহীদ মো: হোসাইনের বাবা মানিক মিয়া পেশায় একজন হকার। আচার বিক্রি করে পরিবার চালান। শহীদ হোসাইন পড়াশোনার পাশাপাশি বাবাকে হেল্প করতো। অল্প আয় হয় তার । সে আয় থেকে পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখাও করাতেন। অভাবের সংসার। নিজেদের সব শখ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে সন্তানদের প্রয়োজন পূরণের চেষ্টা করতেন তিনি। তাদেরই আদরের সন্তান মাত্র ক্লাস থ্রি পড়ুয়া মো: হোসাইনের জীবনের প্রদীপ নিভে যায় পুলিশের ঘাতক বুলেটের আঘাতে। এক নজরে শিশু শহীদ হোসাইন নাম : মো: হোসাইন পেশা : ছাত্র জন্ম তারিখ ও বয়স : ১৫ মার্চ ২০১৫, ০৯ বছর পিতা : মো: মানিক মিয়া মাতা : মালেকা বেগম ভাই বোন : ২ জন : ১. শাহিনুর (০৫ বছর) : ২. মাহিনুর (০৮ বছর) আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ২০ জুলাই ২০২৪, শনিবার, আনুমানিক সন্ধ্যা ০৮ টা শাহাদাত বরণের স্থান : চিটাগং রোড, ঢাকা দাফন করা হয় : নানুর বাড়ির পাশে (নিজস্ব বাড়ি না থাকায়) কবরের জিপিএস লোকেশন : ২৩ক্ক৩২'০৬.৮"ঘ ৯০ক্ক৫৬'৪৩.০"ঊ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: বেতরা, থানা/উপজেলা: দেবিদ্বার , জেলা: কুমিল্লা ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : ঘরবাড়ি নেই ভাইবোনের বিবরণ : এক ভাই ও দুই বোন আছে প্রস্তাবনা ১. শহীদের পিতাকে ব্যবসার জন্য পুঁজি দেওয়া যেতে পারে ২. ছোট দুই বোপ্নের পড়াশোনার খরচ বহন করা যেতে পারে ৩. বাসস্থানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন