Image of  সৈয়দ মুনতাসীর রহমান আলিফ

নাম: সৈয়দ মুনতাসীর রহমান আলিফ

জন্ম তারিখ: ১১ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: চট্টগ্রাম

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান :যাত্রাবাড়ী।

শহীদের জীবনী

২০০৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর দেওভান্ডার, কুমিল্লায় জন্মগ্রহন করেন আলিফ। ছোটবেলা থেকেই প্রচন্ড মেধাবী ছিলেন। একইসাথে ছিলেন ধার্মিক। আলিম পড়ছিলেন ঢাকার তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসায়। ছোটবেলা থেকেই ইসলামী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। সবার সাথে তার সুসম্পর্ক ছিলো। স্বপনপিপাসু আলিফ দেশ থেকে সকল অন্যায় অবিচার দূর করার মহান স্বপ্ন লালন করছিলেন। নিজের জীবন দিয়ে সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ করে দিয়ে গেলেন শহীদ আলিফ। যেভাবে শহীদ হলেন শহীদ আলিফ ছিলেন ইসলামি আন্দোলনের নিবেদিত কর্মী। বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরের সাথী ছিলেন। শুরু থেকেই আন্দোলনে খুব সক্রিয় ছিলেন আলিফ। আন্দোলন চলাকালীন যাত্রবাড়ী থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেকদিন নিখোঁজ থাকার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজে তাঁর লাশের সন্ধান পাওয়া যায়। তাঁকে মাথায় গুলি করা হয়,এতে মাথার খুলি ফেটে গুলি ভেতরে ঢুকে যায় এবং বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত চিহ্ন পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, তিনি দেশের মুক্তির জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে শহীদ হন; থেমে যায় জীবনের পথচলা। যাওয়ার আগে আরেকবার স্বাধীন করে গেলেন স্বদেশকে। ইসলামী আন্দোলনের নিবেদিত প্রাণ আলিফ অল্প বয়সে সমর্থক হোন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের। এরপর থেকে নিয়মিত আন্দোলনের কাজে ছিলেন। নিজের সাংগঠনিক মানোন্নয়ন করেন ছাত্র শিবিরের ‘সাথী’ পর্যায়ে। তাঁর স্বপ্ন ছিলো এই আন্দোলন করতে গিয়ে একদিন শহীদ হবেন। আল্লাহ তায়ালা অবশেষে পূরণ করলেন তার স্বপ্ন। শহীদ হলেন অধিকার আদায়ের আন্দোলনে, মুক্তির আন্দোলনে। দেখিয়ে গেলেন কিভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ হুঙ্কার তুলে অকাতরে বিলিয়ে দিতে হয় প্রাণ। দৈনিক ইত্তেফাকের রিপোর্ট : বয়স ১৫ হওয়ার আগেই ঝরে গেল ছেলেটা ‘বেঁচে থাকলে সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখ ছেলেটার ১৫ বছর পূর্ণ হতো। কিন্তু তা হওয়ার আগেই ঝরে গেল ছেলেটা’ কথাগুলো বলছিলেন ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদ হওয়া সৈয়দ মুনতাসির রহমান আলিফের বাবা সৈয়দ মো: গাজীউর রহমান। তিনি বলেন, একমাত্র সন্তানকে হাফেজ করতে ছোটবেলায় মাদ্রাসায় দিয়েছিলাম। কোরআনে হাফেজ হতে পারেনি, কিন্তু মাদ্রাসা থেকে এ প্লাস পেয়ে দাখিল (এসএসসি) পাশ করে। আলিম প্রথম বর্ষের পরীক্ষার পর বললাম, ‘চলো গ্রামের বাড়ি নাঙ্গলকোট ঘুরে আসি, কিন্তু ছেলে বলে, ‘বাবা আমাকে কম্পিউটার আর ইংরেজি ভাষা শিখতে কোচিংয়ে ভর্তি করে দাও’। আমি ছেলের কথামতো ১০ হাজার টাকা দিয়ে কোচিংয়ে দুই বিষয়েই ভর্তি করিয়ে দিই। সেই কোচিং থেকে বন্ধুরা মিলে আন্দোলনে যাওয়া শুরু। ১৬ জুলাই রংপুরে আবু সাঈদসহ আরও অনেকে যখন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়, তারপর থেকে ছেলে চুপি চুপি আন্দোলনে যেত, আমরা জানতাম না। যখন জানলাম, ছেলে আন্দোলনে যাচ্ছে, তখন আমি খুব শঙ্কিত ছিলাম। এত বাচ্চারা আহত-নিহত হচ্ছে, আমার একটাই ছেলে, ‘ওর যদি কিছু হয়ে যায়’! সেই আশঙ্কা থেকে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু আলিফের এক কথা—‘মরে গেলে যাব, তবু আন্দোলনে যাব। বড় ভাইদের প্রাণ যাচ্ছে, আমি ঘরে বসে থাকব না’। আলিফ আন্দোলনে শেষ যায় ৫ আগস্ট। সেদিন ছেলেকে ঘরে তালা দিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু তার পরেও শেষ রক্ষা হলো না। ৫ আগস্ট যখন আলিফ আন্দোলনে গেল, দুপুরের পর জানলাম, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু বিকাল হয়ে গেলেও আলিফ বাসায় আসছিল না, ওর বন্ধুদের দু-এক জনকে ফোন করে জানতে চাইলাম, আলিফের কথা। বন্ধুরা জানালো, ‘আঙ্কেল চিন্তা করবেন না, অনেকে তো আজ শাহবাগ, গণভবন গেছে, হয়তো আলিফও ওদিকে গেছে’। কিন্তু আমি বললাম, সব রাস্তা বন্ধ, ও শাহবাগ যাবে কী করে? এরপর সন্ধ্যায় বিভিন্ন মসজিদ থেকে মাইকিং হচ্ছিল—যেখানে যেখানে লাশ পড়েছিল—‘এত বছর বয়সের ছেলের লাশ পাওয়া গেছে’। আমি গেলাম দুই জায়গায়, দেখি আমার ছেলে নয়। এরপর স্থানীয় হাসপাতালে গেলাম, ওরা জানাল, মারাত্মক আহত যারা, তাদের আমরা ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দিচ্ছি, সেখানে খোঁজ নিতে পারেন। ওর বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে রাত ১০টার দিকে ঢাকা মেডিক্যালের দিকে রওনা হই। কিন্তু সেদিন রাতে পথে পথে ব্যারিকেড আর গোলাগুলি চলছিল, তখন যাত্রাবাড়ী থানা লুট হয়ে গেছে, সড়কে ভয়াবহ অবস্থা। আমরা যখন ঢাকা মেডিক্যালে পৌঁছাই তখন রাত আনুমানিক ১২টা। বাবা গাজীউর বলেন, আমার এক চাচাতো ভাই ঢাকা মেডিক্যালের ব্রাদার। ওকে ডেকে নিই। ঐদিন ঢাকা মেডিক্যালের গেট থেকে ইমার্জেন্সি পর্যন্ত রক্ত আর রক্ত। মর্গের সামনে একটা ঘরে অসংখ্য লাশ স্তূপ করে রাখা। ঐ ঘরের মেঝেতে দাঁড়াতেই রক্তে পা ডুবে যায়। এর মধ্যে দেখি কারো মাথায় পতাকা বাঁধা, কারো শরীর পতাকায় ঢেকে দেওয়া। এর মধ্যে হঠাৎ চোখ যায়, লাশের স্তূপের ভেতর, একটা হাত দেখা যাচ্ছে। গায়ে কালো টি-শার্ট। আমি ঐ ঘরের দায়িত্বে থাকা লোকদের বলি লাশটা দেখাতে, কিন্তু তারা বলেন, আপনি কনফার্ম হলে আমরা দেখাব, তা না হলে দেখানো যাবে না। এত লাশ ওলটপালট করা যাবে না। আমি আরও কিছুক্ষণ দেখে নিশ্চিত হই এটাই আমার ছেলের লাশ হবে। ছেলে বাসায় ব্যায়াম করত, তার সুঠাম বাহু এবং সাদা পায়জামা ও কালো টি-শার্ট দেখে বলি ‘আমি কনফার্ম’। আপনারা আমাকে মুখটা দেখান। ওরা বলে, মাথায় গুলি লাগা, এরপর ওরা আমার ছেলের লাশটা বের করে দেয়। কিন্তু লাশের গায়ে কোনো নম্বর বা অন্য কিছু ছিল না। ওরা বলে, ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দেওয়া যাবে না। কিন্তু আমার চাচাতো ভাই বলার পর ওরা আমার ছেলের লাশ দেয়। অ্যাম্বুলেন্সের চালক বলেন, ‘এত রক্তমাখা লাশ, ধুইয়ে নিয়ে যান, তা না হলে অনেকে গোসল দিতে চাইবে না’। তখন ছেলের লাশ সেগুনবাগিচায় কোয়ান্টামে নিয়ে যাই। ওরা গোসল দিয়ে কাপড় পরিয়ে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ চায়। ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়া তারা লাশ দেবে না। তখন তাদের বিষয়টি বুঝিয়ে বন্ডসই দিয়ে ছেলের লাশ নিয়ে আসি। যাত্রাবাড়ীর বাসায় যখন পৌঁছাই তখন ভোর ৪টা। সেখানে আলিফের মাকে নিয়ে আমরা ভোরেই গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোর্ট চলে যাই। জোহরের নামাজের পর পারিবারিক কবরস্থানে ছেলেকে দাফন করি। এক নজরে শহীদ সৈয়দ মুনতাসীর রহমান আলিফ নাম : সৈয়দ মুনতাসীর রহমান আলিফ পেশা : ছাত্র জন্ম তারিখ ও বয়স : ১১/৯/২০০৯, ১৫ বছর আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪, সোমবার,আনুমানিক রাত ১০.৩০টা শাহাদাত বরণের স্থান : যাত্রাবাড়ী দাফন করা হয় : গ্রামের বাড়ির কবরস্থান কবরের জিপিএস লোকেশন : ২৩ক্ক০৪'৪৭.৯"ঘ ৯১ক্ক১১'৩৫. স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: দেওভাণ্ডার, থানা/উপজেলা: নাঙ্গলকোট, জেলা: কুমিল্লা পিতা : সৈয়দ গাজীউর রহমান মাতা : শিরিন সুলতানা ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : গ্রামে একটি সেমিপাকা বাড়ি আছে ভাই বোনের বিবরণ : বড় দুই ভাই ও এক বোন রয়েছে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of  সৈয়দ মুনতাসীর রহমান আলিফ
Image of  সৈয়দ মুনতাসীর রহমান আলিফ
Image of  সৈয়দ মুনতাসীর রহমান আলিফ
Image of  সৈয়দ মুনতাসীর রহমান আলিফ
Image of  সৈয়দ মুনতাসীর রহমান আলিফ
Image of  সৈয়দ মুনতাসীর রহমান আলিফ
Image of  সৈয়দ মুনতাসীর রহমান আলিফ
Image of  সৈয়দ মুনতাসীর রহমান আলিফ
Image of  সৈয়দ মুনতাসীর রহমান আলিফ
Image of  সৈয়দ মুনতাসীর রহমান আলিফ

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মোহাম্মদ সবুজ

শহীদ জসীম উদ্দিন

মো: আবদুর গনি

পারভেজ বেপারী

শাহিনুর বেগম

মো: আবু বকর ছিদ্দিক

মো: ইমন গাজী

মো: মিজানুর রহমান

মাজহারুল ইসলাম

জাহিদ হোসেন রাব্বি

মো: মাহমুদুল হাসান রিজভী

মো: হাসান

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo