জন্ম তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০০৪
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা: ছাত্র, শেরেবাংলা ডিগ্রী কলেজ, চিতলমারী, বাগেরহাট শাহাদাতের স্থান: বিএনএস সেন্টার, ৭নং সেক্টর, উত্তরা, ঢাকা
২০০৪ সালের ৪ মার্চ বাবা শাহিন মিয়া ও মা হোসনে আরার কোল আলোকিত করে জন্ম নেয় শহীদ মাসুম মিয়া। তারা দুই ভাই ও এক বোন। সে কুমিল্লা জেলায় জন্মগ্রহণ করে ও বেড়ে ওঠে। মাসুম একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করত। যেভাবে শহীদ হলেন ৫ জুন ২০২৪ আদালত কর্তৃক বৈষম্যপূর্ণ কোটা প্রথা পুনর্বহাল হলে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ এর প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে। তারা সরকারের কাছে কোটা প্রথার যৌক্তিক সংস্কারের দাবি জানায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হওয়া এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা বাংলাদেশে। কিন্তু সরকার এতে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত না করে আন্দোলনকারীদের সাথে টালবাহানা করতে থাকে। আন্দোলন ক্রমেই জমতে শুরু করলে মানুষের মাঝে ক্রমশই সরকার বিরোধী ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে। ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা চীন সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে চাটুকার সাংবাদিক প্রভাষ আমিনের এক প্রশ্নের জবাবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে গালি দেন। এর প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পরে ছাত্রসমাজ, ঢাবির বিভিন্ন হল থেকে শ্লোগান উঠে তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার। কে বলেছে ? কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে এই শ্লোগান, দেশের প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই শ্লোগানে মিছিল চলে রাতভর। সেই রাতেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের মিছিলে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। পরদিন ১৫ তারিখ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম ছাত্রদের শেষ দেখিয়ে ছাড়বে বলে হুমকি দেয়, সেদিন দেশব্যাপী ছাত্রলীগ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ভয়াবহ হামলায় সারাদেশে প্রায় ৩০০ এর বেশি ছাত্র আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। পরদিন ১৬ জুলাই ছাত্রদের সমাবেশে পুলিশ কর্তৃক সর্বপ্রথম খুন হয় রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। দেশব্যাপী আরও পাঁচ জন শাহাদাৎ বরন করে। এরপর থেকেই ছাত্র আন্দোলন গণমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়। সর্বশেষ ৩ আগস্ট সরকার পতনের লক্ষ্যে এক দফার ডাক দেন সমন্বয়কগণ। দিনটি ছিল ৪ আগস্ট ২০২৪। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পুলিশের সাথে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ছাত্রদের গুলি করে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য মাসুম বের হয় আনুমানিক সকাল ১১ টায়। দুপুর ২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা সদর দক্ষিণ মডেল থানাধীন নন্দনপুর সাকিন কোটবাড়ি বিশ্বরোড পাকা রাস্তার ওপর শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি গ্রহন করছিল। বিকেল সোয়া ৪ টার দিকে সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহার ও তার মেয়ে সিটি মেয়র তাহসীন বাহার সূচনার হুকুমে আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালায় আওয়ামীলীগ। সন্ত্রাসীদের ছোড়া বুলেট বিদ্ধ করে মাসুম মিয়াকে (২০)। তার বামপায়ে পরপর দুটি গুলি লাগলে রাস্তায় বসে পড়েন মাসুম। আহত অবস্থায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে ঘটনাস্থলেই তাকে হত্যা করে। এ সময় আরও অনেকে আহত হন। সন্ধ্যায় বাড়ি না ফেরার কারণে পরিবারের সদস্যরা চিন্তিত হয়ে পড়েন। এরপর খোঁজা খুঁজি করতে থাকে পরিবার। কিন্তু কোন খোঁজ মেলেনা মাসুমের। টানা ৪ দিন নিখোঁজ থাকার পর ৮ আগষ্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত একটি ছবি দেখে স্বজনরা তা মাসুম মিয়ার মরদেহ বলে শনাক্ত করেন। কিন্তু ততোদিনে পরিচয়হীন মাসুম মিয়াকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। পরবর্তীতে এ ঘটনায় ১৯ আগস্ট সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আকম বাহাউদ্দীন বাহার ও তার মেয়ে সিটি মেয়র তাহসীন বাহার সূচনা সহ ৬২ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ সময় মামলায় আরও অন্তত ৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। নিকটাত্নীয়ের স্মৃতিতে শহিদ মাসুম ১. মাসুমের নিকটাত্মীয় আব্দুল্লাহ জানায় যে, মাসুম একজন সৎ ছেলে ছিল। সে পরিবারকে সবসময় সাপোর্ট করত। ২. মাছুমের বাবা শাহীন মিয়া বলেন, আমার ছেলে নিরপরাধ, তাকে কেন এভাবে হত্যা করা হলো। তার বাম পায়ে দুটি গুলি ও মাথার পেছনে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। আমি আমার ছেলের খুনিদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি। মৃত্যুর পর মাসুমের পরিবারের অবস্থা মাসুম তার পরিবারের আয়ের উৎস ছিল। তার বাবা একজন ড্রাইভার। তার ভাই এসি এর কাজ শিখে। মাসুম তার বাবার পাশাপাশি নিজে রেস্টুরেন্টে কাজ করে যা আয় করত তাতে তাদের সংসার কোন মতে চলে যেত। কিন্তু এখন মাসুমের মৃত্যুর পর তাদের পরিবারের আয় কমে গিয়েছে। বলা যায় তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো নেই। এক নজরে শহীদ মাসুম মিয়া নাম : মাসুম মিয়া পেশা : রেস্টুরেন্ট জব জন্ম তারিখ ও বয়স : ০৪-০৩-২০০৪; ২০ বছর পিতা : শাহিন মিয়া মাতা : হোসনে আরা স্থায়ী ঠিকানা : ১০৫, উত্তর রামপুর, আহাম্মদ নগর, কুমিল্লা সদর, কুমিল্লা আহত হওয়ার তারিখ : ৪ আগষ্ট ২০২৪ নিহত হওয়ার তারিখ : ৪ আগষ্ট ২০২৪ আক্রমণকারী : আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী আঘাতের ধরণ : বাম পায়ে দুটি গুলি ও মাথার পেছনে ধারালো অস্ত্রের আঘাত শাহাদাত বরণের স্থান : কোট বাড়ি বিশ্বরোড, কুমিল্লা দাফন করা হয় : কুমিল্লা কবরের ঠিকানা : ২৩ক্ক২৫'০২.৭"ঘ ৯১ক্ক১০'৩৯.৬"ঊ ভাইবোনের বিবরণ : দুই ভাই এক বোন প্রস্তাবনা ১. শহীদ মাসুমের পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান ২. শহীদের ছোট ভাইয়ের জন্য ভালো চাকুরির ব্যবস্থা করা