Image of মো: ইউসুফ

নাম: মো: ইউসুফ

জন্ম তারিখ: ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৪

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: চট্টগ্রাম

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা :বই বিক্রেতা, শাহাদাতের স্থান :শনির আখড়া, ঢাকা।

শহীদের জীবনী

“আমার ছেলেটাকে এনে দে তোরা। আমি একটু আদর করতাম” কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের সবুজ শ্যামল সাতঘর গ্রাম। এই গ্রামে ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারী জন্মগ্রহণ করেন শহীদ আবু ইউসুফ। তার বাবার নাম মো. শহীদ মিয়া। তিনি পরলোক গমন করেন দশ বছর আগে। মায়ের নাম মরিয়ম বেগম। শহীদ আবু ইউসুফ তার বাল্যকাল কাটান সাতঘর গ্রামে। সেখানেই তিনি অল্প পড়াশোনা করে কৈশোর, যৌবন পেরিয়ে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় আসেন। শাহাদাত বরণকালীন পর্যন্ত তিনি একটি বইয়ের দোকানে চাকুরি করতেন। আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শহীদ মোহাম্মদ ইউসুফ তার সহকর্মীদের কাছে জানতে পারেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কথা। আরও ৪ বছর আগে ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারন শিক্ষার্থীরা শুরু করেছিল কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সে বছর তারা স্বৈরাচার সরকারের হঠকারিতা ও একগুঁয়েমিতার কারণে সম্পূর্ণ খালি হাতে ঘরে ফিরতে বাধ্য হয়েছিলো। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলন ২০২৪ সালে আবার ফিরে এসেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন নামে। যৌক্তিক ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্যও যে এদেশে কত সংগ্রাম আর ত্যাগের প্রয়োজন হয় তা ছোট ছোট শিশুদের সাথে শহীদ ইউসুফও অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। ২০২৪ সালের জুন মাসে ছাত্ররা দেখলো আবারও তারা বৈষম্যের চেতনাবাদী সরকারের কুটচালের শিকার হচ্ছে। তাই জুলাইয়ের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যখন থেকে রাজপথকেই তাদের দাবি আদায়ের শেষ ঠিকানা হিসেবে নির্ধারিন করলো, শহীদ ইউসুফ তখন থেকেই কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিয়মিত আন্দোলনের খোঁজ নিতে শুরু করলো। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চলছে রাজপথে। এর মধ্যে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার অস্ত্র হাতে তুলে নিলেন নিরস্ত্র সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। ১৬ জুলাই আন্দোলনরত নিরীহ-নিরস্ত্র সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর নির্বিচারে গুলি করলো খুনি পুলিশ। শহীদ হলেন রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৬ জন শিক্ষার্থী। এই ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠলো দেশের প্রতিটি সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আন্দোলনের সাথে যোগ দিলো অনেক স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী। যোগ দিলেন শহীদ মোহাম্মদ ইউসুফও। যেভাবে শহীদ হন তিনি ২০ জুলাই ২০২৪, শনিবার। ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ডাকা তৃতীয় দিনের মত কর্মসূচি চলছিল। সরকার গণজোয়ার থামানোর জন্য কারফিউ জারি করে এদিন। ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট করে মানুষের উপর হামলা চালায় ঘাতক পুলিশ ও সন্ত্রাসী দল আওয়ামীলীগ। পুলিশের হামলা থেকে বাঁচতে পারেনি পথচারী, দোকানদার, ড্রাইভার এমনকি অ্যাম্বুলেন্সে থাকা রোগী ও রোগীর স্বজনরা। এরকম একটি নির্মম হত্যাকান্ডের স্বীকার হন শহীদ আবু ইউসুফ। তিনি ঐদিন তার ভাই খোকনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে বাসায় ফিরেছিলেন। পথিমধ্যে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের সাথে সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে যান তারা। পুলিশ আন্দোলনকারীদের উপর এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়ে। একটি গুলি এসে বিদ্ধ করে শহীদ আব্ ুইউসুফকে। ঘটনাস্থলেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পথচারীরা ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে শাহাদাতের সুধা পান করেন শহীদ আবু ইউসুফ। রেখে যান স্ত্রী, মা এবং এক মেয়েকে। কেমন আছে শহীদের পরিবার শহীদ আবু ইউসুফের পরিবারে এখন শোকের মাতম চলছে । পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। ইউসুফ তার ছোট পরিবার নিয়ে ঢাকা থাকতেন মা সহ। ছেলের কথা মনে পড়তেই এখন তার মা হাউ মাউ করে কান্না করেন আর বলেন, “আমার ছেলেটাকে এনে দে তোরা। আমি একটু আদর করতাম” তার একটি সাত বছর বয়সী মেয়ে আছে। সে শহীদ হওয়াতে পরিবারের হাল ধরার মত কেউ নাই। স্ত্রী রেহেনা বেগম তার একমাত্র মেয়েকে নিয়ে খুবই চিন্তিত। তিনি বলেন, “আমার এখন কিছুই নেই। আমি এখন দিশেহারা। কিভাবে খাবো, কিভাবে বাঁচবো বুঝতে পারছিনা। আমার মেয়েটারই বা কি হবে এখন?” কর্তব্যপরায়ণ শহীদ আবু ইউসুফ শহীদ আবু ইউসুফ ছিলেন খুবই কর্তব্যপরায়ণ ব্যক্তিত্ব। পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববান ছিলেন তিনি। ভাইয়ের চিকিৎসার কাজে গিয়েই তিনি শাহাদাত বরণ করেছিলেন, এ ব্যাপারে প্রতিবেশী আব্দুল মজিদ বলেন, “অত্যন্ত সহজ সরল শহীদ আবু ইউসুফ ছিলেন পরিবারের প্রতি খুবই দায়িত্ববান। বেচারা ভাইয়ের চিকিৎসার কাজে গিয়ে শাহাদাত বরণ করেন। আমরা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। এক নজরে শহীদ মো: ইউসুফ নাম : মো: ইউসুফ পেশা : বই বিক্রেতা জন্ম তারিখ : ০১-০২-১৯৮৪ আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ২০ জুলাই ২০২৪ শনিবার শাহাদাত বরণের স্থান : শনির আখড়া দাফন করা হয় : নিজ গ্রামে কবরের জিপিএস লোকেশন : ২৩ক্ক১৩'০৩.৫"ঘ ৯১ক্ক০৪'৪২.৮"ঊ স্থায়ী ঠিকানা : সাতঘর, গোবিন্দপুর, লাকসাম, কুমিল্লা পিতা : মো: শহীদ মিয়া মাতা : মরিয়ম বেগম ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : একটি টিনের বাড়ি আছে। অল্প ভিটা জমি আছে সন্তানের বিবরণ : এক মেয়ে, ৭ বছর বয়স প্রস্তাবনা ১. বাসস্থানের প্রয়োজন। আনুমানিক খরচ: ৫ লাখ টাকা ২. মেয়ের পড়াশোনার খরচ বহন করা ৩. পরিবারের জন্য একটি সিএনজি কিনে দেওয়া যেটা ভাড়া দিয়ে দৈনিক ১০০০ টাকা পাওয়া যাবে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: ইউসুফ
Image of মো: ইউসুফ
Image of মো: ইউসুফ

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

রিফাত হোসেন

সোহাগ মিয়া

শাহিনুর বেগম

আল আমিন

মো: জুয়েল

মো: বেলাল হোসেন

মো:  রিটন উদ্দীন

মো: শাহাদাত হোসেন শাওন

হাফেজ মাসুদুর রহমান

মো: পারভেজ হোসেন

নাছিমা আক্তার

মোহাম্মদ ইসমামুল হক

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo