জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ১৯৯২
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা : বাস ড্রাইভার , শাহাদাতের স্থান : সাইনবোর্ড যাত্রাবাড়ী
“আমার ভাগ্নে একজন নিরীহ মানুষ ছিল” নদী বিধৌত জেলা চাঁদপুরের সদর উপজেলার অন্তর্গত দক্ষিণ সবুজ শ্যামল বলিয়া গ্রামে ০১ জানুয়ারি ১৯৯২ সালে দেলোয়ার হোসেন মিজি ও সাহিদা বেগমের ঘরে জন্ম গ্রহণ করেন শহীদ আবুল হোসেন মিজি। প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠার আগেই চিরতরে তিনি তাঁর বাবাকে হারান। তারপর থেকে অসহায় সংসারে মায়ের কাছে বড় হতে থাকেন তিনি। শহীদ জননী একমাত্র ছেলের বেড়ে উঠায় ব্যাঘাত হবার আশংকায় সুযোগ থাকা সত্তে¦ও দ্বিতীয় বিয়েতে বসেনি।শহীদ মিজি পরিবারের একমাত্র ছেলে। তবে তাঁর দুইজন বোন আছে। তাঁরা বিবাহিতা। বড় হয়ে প্রাইভেট কার গাড়ির চালক হিসেবে পেশা জীবন শুরু করেন আবুল হোসেন। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর শহীদ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিছুদিন পর ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় ফুটফুটে এক পুত্র সন্তান। তাঁর নাম রাখা হয় আব্দুর রহমান। শহীদ সন্তান বর্তমানে চতুর্থ শ্রেণীতে অধ্যায়ন করছে। শহীদ হওয়ার পূর্বে আবুল হোসেন মিজি রাজধানী শহরের প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে বাস ড্রাইভার হিসেবে চাকরি করতেন। যে কারণে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে পৈতৃক ভিটা ছেড়ে রাজধানীতে এসেছিলেন তিনি। বর্বরতার বলি হন শহীদ আবুল হোসেন মিজি যেভাবে শহীদ হন তিনি ২০২৪ সালের জুলাই মাস ছিল বাংলাদেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত বেদনার মাস। বিশেষ করে ঢাকা বাসীর জন্য এই মাসের প্রতিটা সেকেন্ড ছিল আতঙ্কের। রাস্তার ফুটপাত থেকে শুরু করে বাসার ছাঁদ, বেলকনি এমনকি ব্যক্তিগত রুমেও মানুষ নিরাপদ ছিলনা। যেদিকেই মানুষ সেদিকেই স্বৈরাচারী হাসিনার হায়েনার দল গুলি ছুড়ে মানুষ হত্যা করেছিল। তেমনই এক বর্বরতার বলি হন আবুল হোসেন মিজি। পেশায় বাস ড্রাইভার ছিলেন তিনি। পেশাগত দায়িত্ব পালন করার জন্য সাইনবোর্ড এলাকায় গেলে আন্দোলনকারীদের উপর ছোড়া গুলিতে ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়েন। পথচারীরা তাঁকে প্রো-একটিভ মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে রেফার করা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ওখানেই কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। অ্যাম্বুলেন্সের হুইসেলে আতঙ্কিত গ্রামবাসী ২০ জুলাই ২০২৪, পাখির কলতানে প্রভাত ফেরীর আগমন ঘটে। অন্ধকার কেটে গিয়ে দিনের আলো উদিত হয়। বলিয়াগ্রামেরমসজিদ থেকে সুমধুর কণ্ঠে মুয়াজ্জিনের ফজরের আজান ভেসে আসে। হঠাৎ সে সময় অ্যাম্বুলেন্সের তীব্র শব্দ গ্রামের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। অ্যাম্বুলেন্সটিতে দুইজন ছাত্র ছিল। তাঁরা শহীদ আবুল হোসেন মিজির পকেটে থাকা আইডি কার্ডের ঠিকানার সূত্র ধরে গ্রামে লাশ নিয়ে আসে। অপর দিকে তার মা ও স্ত্রী ঢাকার অলিতে গলিতে খোঁজাখুঁজি করছিলেন তাকে। অ্যাম্বুলেন্সের সাথে থাকা ছাত্ররা আইডি কার্ডটি প্রথমে একজন অল্পবয়সী মুসল্লীকে দেখালে তারা চিনতে পারেনি কারণ শহীদ আবুল হোসেন অনেক আগেই গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে যায়। পরে আরেকজন মুরুব্বির মাধ্যমে শহীদকে চিনতে পারে এলাকাবাসী। গ্রামে থাকা মিজির আপন মামাকে খবর দেয়া হয়। মামা ছুটে এসে ভাগ্নের লাশ দেখে ভেঙে পড়েন। তিনি শহীদের স্ত্রী ও মা’কে মোবাইলে ঘটনার বর্ণনা করে বিষয়টি তুলে ধরেন। অতঃপর শহীদ পরিবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তাদের মাথায় যেন আসমান ভেঙে পড়ে। ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে চাঁদপুর গিয়ে ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখতে পায় শহীদের পরিবার। ঘাতক হাসিনার পৈশাচিক নির্যাতনে এভাবেই বিদায় নেয় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি শহীদ আবুল হোসেন মিজি। দৈন্যদশা পরিবারে শহীদ আবুল হোসেনকে হারিয়ে তার পরিবার দৈন্যদশায় পতিত হয়েছে। বর্তমানে এই পরিবারের উপার্জনের কোন পথ খোলা নেই। সম্পূর্ণ পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েছে শহীদ পরিবারটি। পারিবারের অভিমত শহীদের বড় মামা বলেন- ‘আমার ভাগ্নে অত্যন্ত নিরীহ একজন মানুষ ছিল। সে তাঁর পরিবারের একমাত্র অবলম্বন ছিল। কেন তাকে গুলি করে মারা হয়েছে আমি জানিনা! এই অসহায় পরিবারের দায়িত্ব এখন কে নেবে?” এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : মো: আবুল হোসেন মিজি পেশা : বাস ড্রাইভার জন্ম তারিখ ও বয়স : ০১ জানুয়ারি ১৯৯২, ৩২ বছর আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার, আনুমানিক বিকাল ৫ টা শাহাদাত বরণের স্থান : সাইনবোর্ড যাত্রাবাড়ী দাফন করা হয় : দ. বাালিয়া, চান্দ্রা, সদর, চাঁদপুর কবরের জিপিএস লোকেশন : ২৩ক্ক০৯'৩৯.০"ঘ ৯০ক্ক৩৯'৪৭.৪"ঊ স্থায়ী ঠিকানা : দ. বাালিয়া, চান্দ্রা, সদর, চাঁদপুর পিতা : দোলোয়ার হোসাইন মিজি মাতা : সাহিদা বেগম ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : কোনো সম্পদ নেই ভাইবোনের ও সন্তানের বিবরণ : ভাই নেই। বড় দুই বোন বিবাহিত। একটা ছেলে আছে প্রস্তাবনা ১. শহীদের পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান ২. সন্তানের ভবিষ্যতের যাবতীয় খরচ নিশ্চিত করা ৩. বাসস্থানের ব্যবস্থা করা