Image of মো: সাজ্জাদ হোসাইন ( সাব্বির )

নাম: মো: সাজ্জাদ হোসাইন ( সাব্বির )

জন্ম তারিখ: ২ অক্টোবর, ২০০৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: চট্টগ্রাম

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ছাত্র, শাহাদাতের স্থান: মিরপুর ১০

শহীদের জীবনী

মাতা-পিতার কোল আলোকিত করে ২০০৫ সালে ২ অক্টোবর রাজাবাড়ির উত্তর রঘুনাথপুর এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন সুন্দর ফুটফুটে এক নবজাতক। বাবা ভালোবেসে নাম রাখেন মো: সাজ্জাদ হোসাইন। তার বাবা জসীম রাজা ও মা শাহানাজ বেগম অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন। তাদের ইচ্ছা ছিল বড় সন্তানকে হাফেজ বানানোর। এজন্য শৈশবে সাজ্জাদকে এলাকার একটি হেফজখানায় ভর্তি করেন। সাজ্জাদ এলাকার ঐ হেফজখানা থেকে হেফজ শেষ করেন। এরপর উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য তিনি পরবর্তীতে জামিয়া কুরানিয়া এমদাদুল উলুম মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। এরই মধ্যে আর্থিক সংকটে পড়ে তার পরিবার। তখন নিজে উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পরিবারের হাল ধরার উদ্দেশ্য নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমান। এখানে এসে সরকারি তুলারাম কলেজে ভর্তি হন। পাশাপাশি নানা ধরনের কাজ শিখতেন ভাগ্য উন্নয়নের জন্য। যেভাবে শহীদ হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলছিল জুলাই’২৪ জুড়ে। ছাত্ররা মূলত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা এবং সেমিনারের মাধ্যমে তাদের দাবি তুলে ধরে। কিন্তু সরকারী দলের বিতর্কিত সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের আক্রমনের ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আন্দোলনটি সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠতে থাকে। নিরাপত্তা বাহিনী ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় সর্বত্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। কারণ স্বৈরাচার সরকার ছাত্রদের নায্য দাবী না মেনে চালাচ্ছিলো অত্যাচারের স্টীমরোলার। সারাদেশ জুড়ে গুলি, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছোঁড়া হচ্ছিলো ছাত্রজনতাকে লক্ষ্য করে। খালি হয়ে যাচ্ছিলো হাজারো মায়ের বুক। পিতাহারা হয়ে পড়ছিলো হাজারো শিশু একইসাথে স্বামী হারা হচ্ছিলো হাজারো রমণী। ছাত্রদের মধ্যে মো: সাজ্জাদ হোসাইন ছিলেন অন্যতম। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯ জুলাই শিক্ষার্থীদের 'কমপ্লিট শাটডাউন' বা সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকায় পুলিশ, বিজিবি, আনসার সদস্য, র‌্যাবসহ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীদের আক্রমনে ব্যাপক সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, গুলি, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। দেশের বিভিন্ন জেলাতেও ব্যাপক বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও সহিংসতা তৈরী হয়। কয়েকদিনে যুবলীগ, পুলিশ ও বিজিবির নৃশংস গুলিতে ১১৯ জন শাহাদাতবরণ করেন। এরপরপরই ছাত্র আন্দোলন রুপ নেয় গণআন্দোলনে। রাস্তায় ছাত্রদের পাশাপাশি নেমে আসে নানান শ্রেণির, নানান পেশার মানুষ। যাদের একটাই দাবী ছিল স্বৈরাচার হটানো। ১৯ জুলাই সাজ্জাদ খালার বাসা থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে মিরপুর ১০ এ চলে যান আন্দোলনে অংশ নিতে। পথিমধ্যে আসরের ওয়াক্ত হলে পাশে কোনো একটা সুইমিংপুলে নামায আদায় করেন। এরপর সাথীদের সাথে পুনরায় মিছিলে অংশ নেন। মিছিলে পুলিশ লাটিচার্জ শুরু করে। প্রথমে পায়ে আঘাত পেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সাজ্জাদ। এরপর পুলিশের এলোপাথাড়ি বুটের আর লাথির আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হতে থাকে সাজ্জাদের দেহ। এক পর্যায়ে পুলিশ তার আহত দেহে গুলি চালালে দেহ পিঞ্জর ছেড়ে বেরিয়ে যায় প্রাণ শক্তি। এই ইহকালের মায়া ত্যাগ করে পরকালে পাড়ি জমান সাজ্জাদ। কবির ভাষায় - বীরের এ রক্ত স্রোত মাতার এ অশ্রুধারা এর যতো মূল্য সেকি ধরার ধুলোয় হবে হারা? না, এ সকল শহীদের জীবন বৃথা যায়নি! এরই পথ ধরে ৫ আগস্ট অত্যাচারী স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে কেমন ছিলেন সাজ্জাদ কথায় আছে, “অ সধহ ফড়বং হড়ঃ ষরাব রহ ুবধৎং নঁঃ রহ ফববফং” এটিই যথার্থ সাজ্জাদের বেলায়। শহীদ মো: সাজ্জাদ হোসাইন অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ এবং সদালাপী মানুষ ছিলেন। ছোটবড় সকলের সাথে মিলেমিশে চলতেন। তিনি পিতামাতার বাধ্যগত সন্তান ছিলেন। সকল সময় তার পিতামাতাকে নিয়ে ভাবতেন। তিনি তার ছোট ভাইটিকে অনেক স্নেহ করতেন। তার সাথে থাকা এক সাথি ভাই বলেন- সাজ্জাদ গ্রাম থেকে ঢাকা আসে কাজ শিখে পরিবারের হাল ধরার জন্য। কিন্ত ভাগ্য তার সহায় হলো না। খুনি হাসিনার বর্বর পুলিশ কেড়ে নিলো তার প্রাণ। শহীদ সাজ্জাদ দেশের মানুষের মুক্তির জন্য অকাতরে বিলিয়ে দিলেন নিজের প্রান। সাজ্জাদের মৃত্যু শুধু তার পরিবারকেই নয়, আমাদের সমাজকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আজও যখন তার স্মৃতি আমাদেরকে স্পর্শ করে, তখন মনে হয় তিনি যেন একজন সাহসী যোদ্ধা, যার হৃদয়ে ছিল নিখাঁদ দয়া। সাজ্জাদ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তার আদর্শ ও সংগ্রাম চিরকাল আমাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে। কেমন আছে তার পরিবার শহীদ সাজ্জাদের পরিবারে আছে বাবা, মা এবং একটা ছোট ভাই। বাবা সেনিটারি মিস্ত্রীর কাজ করেন। এতে করে তাদের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা। এজন্য পরিবারের আর্থিক সংকট কাটাতে এবং নিজের পড়াশোনা চালাতে ঢাকায় আসেন সাজ্জাদ। কিন্তু নরপিশাচ পুলিশ বাহিনী নির্মম ভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলে তাকে। নিমিষেই শেষ হয়ে যায় একটি পরিবারের স্বপ্ন। যুবক ছেলেকে হারিয়ে শোকাহত বাবা-মা। ছোট ভাইকে এখন জুতো, চশমা, চকলেট কিনে দেবার মতো কেউ রইলো না। তাঁর মৃত্যু তার পরিবারের জন্য এক ঘোরতর অমানিশা। এখন তারা চিন্তিত, কিভাবে চলবেন এবং কিভাবে সংসারের খরচ চালাবেন। সাজ্জাদের অভাব তাদের জীবনকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। এই দুরবস্থার মধ্যে, তারা আশা করে সমাজ সহায়তা করবে, যাতে তাদের জীবনে কিছুটা আলো ফিরিয়ে আনা যায়। দ্রুত একটা আর্থিক সহায়তা না পেলে অনাহারে থাকতে হবে সাজ্জাদের পরিবারকে।“জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো” একনজরে শহীদ মো: সাজ্জাদ হোসাইন (সাব্বির) নাম : মো: সাজ্জাদ হোসাইন ( সাব্বির ) পেশা : ছাত্র জন্ম তারিখ ও বয়স : ২ অক্টোবর ২০০৫ , ১৯ বছর আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার, আনুমানিক বিকেল ০৫ টা শাহাদাত বরণের স্থান : মিরপুর ১০ দাফন করা হয় : রঘুনাথপুর, সদর, চাঁদপুর স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: রাজাবাড়ি, উত্তর রঘুনাথপুর , থানা/উপজেলা: সদর, জেলা: চাঁদপুর পিতা : মো: জসিম রাজা মাতা : শাহানাজ বেগম ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : গ্রামে বাড়ি আছে ভাই-বোনের বিবরণ : ছোট ভাই আছে ভাই : সাফায়েত রাজা (বয়স ৮,শ্রেণি ২য়) শহীদ পরিবারকে সাহায্যের প্রস্তাবনা: ১ : বাবার জন্য কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দিলে উপকার হবে ২ : ছোট ভাইয়ের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করে দেয়া যেতে পারে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: সাজ্জাদ হোসাইন ( সাব্বির )
Image of মো: সাজ্জাদ হোসাইন ( সাব্বির )
Image of মো: সাজ্জাদ হোসাইন ( সাব্বির )

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: ফয়েজ

ওমর বিন নুরুল আবছার

মো: ইফাত হাসান খন্দকার

মো: আমিনুল ইসলাম সাব্বির

মো: তানভীর ছিদ্দিকী

মো: রিপন

মো: মাহমুদুল হাসান

মো: হৃদয়

মো: ফারুক

মো: মনিরুল ইসলাম অপু

মো: আহসান হাবিব

মো: আল মামুন আমানত

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo