জন্ম তারিখ: ২৯ আগস্ট, ২০০৩
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২১ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা: ব্যাবসা শাহাদাতের স্থান: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢামেক
শহীদ পরিচিতি শহীদ রাব্বি আলম ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলার ২১ নং ওপাদি ইউনিয়ন এর নওগাঁ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা বাবুল পাটোয়ারী একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। মা পারভীন বেগম গৃহিণী। ২ ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি ভাইদের মাঝে সবার বড়। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে বাবার ব্যবসায় সহযোগিতা করার জন্য ঢাকায় পাড়ি জমান রাব্বি। ঢাকায় তাদের কয়েক ধরনের ব্যবসা আছে। জীবনে অনেক স্বপ্ন এঁকেছিলেন তিনি, যে ঢাকায় অনেক বড় বাড়ি করবেন এবং বড় ব্যবসায়ী হবেন। আর তার স্বপ্নগুলো শুধু নিজেকে নিয়ে নয় গরিব দুঃখী মানুষকে নিয়েও ছিল। তিনি বলতেন আমাদের জীবনের সবকিছু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দিয়েছেন এজন্য যে আমরা যেন এগুলো ভালোভাবে বন্টন করতে পারি। আমাদের সম্পদ শুধু আমরা ভোগ করলে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে পারবোনা ।আমাদের সম্পদের ভিতরে গরিব-দুঃখীদের হক আছে সেই হক আমাদের সঠিকভাবে আদায় করতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের সন্ত্রাসী পুলিশ বাহিনী স্বপ্নগুলো সব ভেঙে চুরমার করে দিল ২১ জুলাই ২০২৪। শাহাদাতের মর্যাদা নিয়ে তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। কিভাবে শহীদ হলেন তিনি প্রত্যেক আত্মাকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। পৃথিবীর জীবন ক্ষণস্থায়ী আর মৃত্যু এক অনিবার্য বাস্তবতা। মৃত্যুর পরবর্তী অবস্থা নিয়ে মতভেদ আছে, কিন্তু একদিন সবাইকে মরতে হবে-সে বিষয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কোন মতপার্থক্য নেই। ‘মৃত্যু’ পৃথিবীর মায়ামোহ ধন-দৌলত থেকে সবাইকে বিচ্ছিন্ন করে। ভাই-বোন, পিতা-মাতা কিংবা বন্ধু-বান্ধব আর আত্মীয়-স্বজনের সম্পর্কের মাঝে ফারাক তৈরি করে। প্রেম-ভালোবাসার বন্ধনকে ছিন্ন করে। এমনকি এক পর্যায়ে মৃত ব্যক্তিকে তাদের স্বজন কিংবা পরিচিত জনের হৃদয় থেকে ভুলিয়ে দেয়। কিন্তু মৃতকে বাঁচিয়ে রাখে একটি মৃত্যু। সেই মৃত্যু সৌভাগ্যের, সেই মৃত্যু শাহাদাতের। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদেরকে মৃত বলো না। এসব লোক প্রকৃতপক্ষে জীবিত, কিন্তু তোমরা তা উপলব্ধি করতে পার না।’ সত্য মুক্ত স্বাধীন জীবন লক্ষ্য শুধু যাদের/খোদার রাহে প্রাণ দিতে আজ ডাক পড়েছে তাদের।’ কি অপরাধ ছিলো শহীদ রাব্বি আলমের? কেন সন্তানের কফিন পিতার কাঁধে বহন করতে হলো? কেন মা আর বোনের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়েছিলো? কেন স্বজন আর দ্বীনি ভাইদের বুকফাটা আর্তনাদ শুনতে হলো? অপরাধ একটাই! ‘তাদের (ঈমানদারদের) থেকে তারা কেবল একটি কারণেই প্রতিশোধ নিয়েছে। আর তা হচ্ছে তারা সেই মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল, যিনি প্রশংসিত, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর সাম্রাজ্যের অধিকারী মূল ঘটনা শহীদ রাব্বি আলম প্রতিদিন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতো স্বতঃস্ফূর্তভাবে। তার ফেসবুক প্রোফাইলের একটি পোস্টে তাকে মিছিলে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়। ১৯ জুলাই ২০২৪ এ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা দ্বিতীয় দিনের মত শাট ডাউন কর্মসূচি চলছিল। হাসিনার সরকার আন্দোলন দমানোর জন্য এদিন ইন্টারনেট শাট ডাউন করে দেয়। জুমার নামাজের পর পল্টন এলাকায় ছাত্র জনতা মিছিল বের করে। এতে যোগ দেন তিনি। উন্মাদ পুলিশ সদস্যরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের উপর সরাসরি গুলি চালায়। পুলিশের একটি গুলি এসে শহীদ রাব্বি আলমের মাথা বিদ্ধ করে। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। সহযোদ্ধারা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কে থাকবে ডুপ্লেক্স বাড়িতে শহীদের গ্রামের ভিটা জমিতে নির্মাণ হচ্ছিল একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি। এই বাড়িতেই অল্পদিন পরে তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। পুলিশের বুলেট তার এবং তার পরিবারের সকল স্বপ্ন মাটি করে দিলো নিমিষেই। পরিবারে এখন শুধু হাহাকার আর হাহাকার। কান্না আর কান্নার মাতম চলছে। মা বিলাপ করে বলে, এই যুগে আমার ছেলের মত একটা ছেলেও খোঁজে পাবেননা আপনারা, একদিনের জন্যও সে মা বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি। কি অপরাধ ছিল আমার ছেলের? পরিবার থেকে চাঁদা দাবী করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা শহীদ রাব্বি আলমকে মেরে ফেলার পর তার পরিবারকে বিভিন্ন হুমকি ধমকি দেয় আওয়ামিলীগ এর সন্ত্রাসীরা। পরিবারে এসে চাঁদা আদায়ের খবর পাওয়া যায় এলাকাবাসীর মাধ্যমে। কি পরিমাণ সন্ত্রাসী হলে একটি শহীদ পরিবারের সাথে এমন আচরণ করতে পারে এরা? শহীদ সম্পর্কে মায়ের কথা এই যুগে আমার ছেলের মত একটা ছেলেও খোঁজে পাবেননা আপনারা, একদিনের জন্যও সে মা বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি। কি অপরাধ ছিল আমার ছেলের? আমার ছেলে সকল সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে চলেছে। সে কখনো খারাপ কাজ করত না। ভালো কাজে সকল সময় অংশগ্রহণ করতো। সেই ইসলাম প্রিয় ছিল। এই ভালো হওয়াই আমার ছেলের অপরাধ, তা ছাড়া আর কোন অপরাধ নেই। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ঢাকায় বাবার কয়েক ধরনের ব্যবসা আছে। মুদির দোকান ও মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট এর ব্যবসা আছে। গ্রামে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মানাধীন। অল্প জায়গা জমি আছে। অর্থনৈতিকভাবে মোটামুটি সচ্ছল তার পরিবার। একনজরে শহীদ রাব্বি আলম শহীদের পূর্ণ নাম : রাব্বি আলম জন্ম তারিখ : ২৯-০৮-২০০৩ জন্মস্থান : নওগাঁ, মতলব দক্ষিণ, চাঁদপুর স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: পিংড়া, ইউনিয়ন: ২১নং উপাদি দক্ষিণ, থানা: মতলব দক্ষিণ, জেলা : চাঁদপুর বর্তমান ঠিকানা : পিজি হাসপাতাল গলি, শাহবাগ, ঢাকা পিতার নাম : বাবুল পাটোয়ারী(৫২) মাতার নাম : পারভিন বেগম (৪৫) এক ভাই : ১. রাহিম (১৯), ব্যবসা (তিন বোন সবাই বিবাহিতা) আঘাতকারী : আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসী পুলিশ আহত হওয়ায় ও স্থান সময় : বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ২১-০৭-২০২৪ বিকেল ৩টায় মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ২১-০৭-২০২৪, বিকেল ৪:০০ টায়, ঢামেক জানাজা : ২২-০৭-২০২৪ সকাল ১০টায় কবরস্থান : নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান