Image of শাব্বির হোসেন

নাম: শাব্বির হোসেন

জন্ম তারিখ: ৩ জানুয়ারি, ২০০৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: চট্টগ্রাম

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র, দালালবাজার ডিগ্রী কলেজ, লক্ষ্মীপুর, শাহাদাতের স্থান : লক্ষ্মীপুর মেয়র তাহেরের বাসার সামনে

শহীদের জীবনী

শহীদ শাব্বির হোসেনের জীবন ছিল সহজ-সরল, কিন্তু উদ্যমে ভরপুর। ২০০৫ সালের ৩ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলার ভাবানীগঞ্জ শরীফপুর এলাকায় জন্ম নেওয়া শাব্বির ছোটবেলা থেকেই গ্রামের পরিবেশে বড় হন। তার বাবা আমির হোসেন একজন দিনমজুর, ৫৮ বছর বয়সেও পরিবারের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তার মা মায়া বেগম একজন গৃহিণী। যিনি সবসময় ঘরের কাজ সামলে সংসারের ভার বইতেন। শাব্বির ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। স্থানীয় প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং উচ্চশিক্ষার জন্য দালালবাজার ডিগ্রী কলেজে দ্বাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন। তার স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষ করে পরিবারকে অর্থনৈতিক দিক থেকে সাহায্য করা, বিশেষ করে তার বাবা-মায়ের কষ্ট লাঘব করা। কিন্তু তার সেই সব স্বপ্ন নির্মমভাবে শেষ হয়ে যায়, স্বৈরাচারী হাসিনার বিরুদ্ধে নিজের অধিকারের কথা বলতে গিয়ে নিজেকে বলি হতে হয়। যার ফলে জালিমের বুলেট তার জীবন কেড়ে নেয়। শাব্বিরের সহজ-সরল স্বভাব, উদ্যম এবং সদ্য বিবাহিত জীবনের সুখের স্বপ্ন সবকিছুই চুরমার হয়ে যায়। তার স্ত্রী তন্বা আকতার এবং ছোট সন্তান এখন এক অন্ধকারময় ভবিষ্যতের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, শাব্বিরের অনুপস্থিতিতে তাদের জীবন যেন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শহীদ সম্পর্কে অনুভুতি শহীদ শাব্বির হোসেন সম্পর্কে তার প্রতিবেশী বলেন, শাব্বির ছিলেন সত্যিকার অর্থে এক ভালো মনের মানুষ। ছোটবেলা থেকেই আমি তাকে চিনতাম—তার মিষ্টি স্বভাব, বিনয়ী আচরণ, এবং সবার প্রতি সম্মান প্রদর্শন তাকে বিশেষ করে তুলেছিল। এলাকায় কেউ কোনোদিন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি; বরং সবাই তাকে ভালোবাসতো, শ্রদ্ধা করতো। তার এমন নির্মম মৃত্যুর খবরে পুরো এলাকা যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। যারা তাকে একসময় হেসে খেলে দেখেছিল, তারাই আজ চোখের জল ফেলছে। শাব্বিরের বিদায়ে এলাকাবাসী গভীর শোকাহত, যেন হারিয়ে গেছে তাদের পরিবারেরই এক সদস্য। তার মতো একজন সহজ-সরল, ন্যায়পরায়ণ এবং সাহসী তরুণের চলে যাওয়া আমাদের মনে গভীর কষ্টের দাগ কেটে গেছে। অর্থনৈতিক অবস্থা কোটা আন্দোলনে নিহত শহীদ শাব্বির হোসেনের পরিবার বর্তমানে চরম অর্থনৈতিক দুরাবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শহীদের বাবা, যিনি এখন ৫৮ বছর বয়সী, বয়সের ভারে ন্যুব্জ হলেও পরিবারের খরচ চালানোর জন্য তাকে দিনমজুর হিসেবে কাজ করতে হচ্ছে। পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরেই অর্থকষ্টে ভুগছিল, তবে একমাত্র ছেলে শাব্বিরের উপার্জন কিছুটা হলেও তাদের ভরসা ছিল। শাব্বিরকে কেন্দ্র করেই তাদের বেঁচে থাকার এবং ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন ছিল। তবে, সেই স্বপ্ন সন্ত্রাসীদের হামলায় নির্মমভাবে বিনষ্ট হয়েছে। শাব্বিরের মৃত্যুর পর তার পরিবার একেবারে ভেঙে পড়েছে, বিশেষ করে তার স্ত্রী তন্বা আকতার, যার বয়স মাত্র ১৮ বছর। তন্বা তাদের ছোট ছেলে সন্তানকে নিয়ে এখন চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারটি বর্তমানে সম্পূর্ণ অসহায় হয়ে পড়েছে। যেভাবে শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করলেন ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দিনটি শাব্বির হোসেনের জীবনের শেষ, কিন্তু তার সাহসের গল্প আজও জীবিত ও শ্বাস্বত। সারা দেশ যখন হাসিনার পতনের জন্য এক দফা নিয়ে মাঠে,আপামর জন সাধারণ কাঁধে কাধ মিলিয়ে তার পতনের জন্য সচেষ্ট। দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিবাদের ঘাটি লক্ষ্মীপুর তার ব্যতিক্রম নয়। লক্ষ্মীপুরের মাদাম ব্রিজ-ঝুমুর এলাকায় হাজারো ছাত্র-জনতা সমবেত হয়েছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে। তবে সেই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ অন্ধকারে ঢেকে গেল যখন আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসী, যুবলীগ, এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নিরীহ ছাত্রদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কাটা রাইফেল ও মরণাস্ত্র ছিলো তাদের প্রধান উপাদান। যার বিপরীতে সাধারণ ছাত্র জনতার হাতে ছিলো ইট পাটকেল এবং সাধারণ বাঁশের লাঠি। রাষ্ট্রীয় ও সরকার দলীয় ক্যাডারদের বিরুদ্ধে নিজেদের আত্মরক্ষা করার এটাই ছিলো একমাত্র অবলম্বন। প্রতিবাদের সেই মিছিলে শাব্বির ছিল সামনের সারিতে, সাহসের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। আচমকাই গোলাগুলির আওয়াজ, তারপর ধোঁয়া। শাব্বিরের বুক পেরিয়ে তীক্ষ্ণ গুলিটি বিদ্ধ করে তাকে। গুলি খেয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। রক্তে লাল হয়ে যায় সবুজ ঘাস। কিন্তু এতেই শেষ নয়—জালিমরা সেখানেই থামেনি। লাঠি হাতে নিয়ে শাব্বিরের নিথর দেহকে পিটিয়ে তারা তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। তার নিস্তেজ শরীরটি তখন কাঁপছিল না, নিঃশ্বাসগুলোও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এরপর সন্ত্রাসীরা সেখান থেকে পালিয়ে গেল, কিন্তু শাব্বিরের নিঃশব্দ প্রতিবাদ সেই মাটিতে স্থায়ী হয়ে রয়ে গেল। এ যেন আইয়ামে জাহিলিয়াতের কথা মনে করিয়ে দেয়। শহরের বাস টার্মিনাল এলাকায় কোনো ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাকে দাফন করা হলো। যেন তার মৃত্যু আর বিচার এদেশের বুকে এক ফেলে আসা কাহিনী। শাব্বির, যিনি ছিলেন আন্দোলনের প্রতীক, প্রতিবাদে প্রতিদিনই উপস্থিত থাকতেন, তাঁর জীবনের শেষ অধ্যায়টি লিখিত হলো রক্তের অক্ষরে। সাহসী সেই তরুণ, যিনি কখনও পিছু হটেননি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময়ই সোচ্চার ছিলেন, তার শোকার্ত মৃত্যু দেশের বিবেককে নাড়া দেয়। এক নজরে শহীদ শাব্বির হোসেন নাম : শাব্বির হোসেন পেশা : ছাত্র, দালালবাজার ডিগ্রী কলেজ, লক্ষ্মীপুর জন্ম তারিখ ও বয়স : ০৩ জানুয়ারি ২০০৫, ১৯ বছর স্থায়ী ঠিকানা : ভবানীগঞ্জ, শরীফপুর, সদর, লক্ষ্মীপুর বর্তমান ঠিকানা : সমশেরবাদ, মনির উদ্দীন পাটোয়ারীর বাড়ি, মনির উদ্দীন পাটোয়ারীর বাড়ি পিতা : আমির হোসেন (৫৮), দিনমজুর মাতা : মায়া বেগম (৪৫), গৃহিনী পরিবারের আয় : ১০০০০/- আয়ের উৎস-দিনমজুর পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৪ জন শ্রাবন্তী আক্তার : বয়স-১৮, শিক্ষার্থী-দ্বাদশ শ্রেণী, সম্পর্ক-ছেলে সামিয়া আক্তার : বয়স-১৮, শিক্ষার্থী, ৪র্থ (সম্পর্ক-বোন) তার স্ত্রী ছোট ছেলে সন্তান রয়েছে আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ০৪ আগস্ট ২০২৪, রবিবার শাহাদাত বরণের স্থান : লক্ষ্মীপুর মেয়র তাহেরের বাসার সামনে আক্রমণকারী : স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দাফন করা হয় : সদর লক্ষ্মীপুর কবরের জিপিএস লোকেশন : যঃঃঢ়ং://সধঢ়ং.ধঢ়ঢ়.মড়ড়.মষ/খভছড৪ভহকুপঞঊঃুঁঞ৭ প্রস্তাবনা : বাসস্থান প্রয়োজন : বাবার জন্য কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দেয়া যেতে পারে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of শাব্বির হোসেন
Image of শাব্বির হোসেন
Image of শাব্বির হোসেন
Image of শাব্বির হোসেন
Image of শাব্বির হোসেন
Image of শাব্বির হোসেন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: আবুল হোসেন মিজি

রিফাত হোসেন

মো: ওয়াকিল আহমদ শিহাব

মো:  সিয়াম সরদার (জিহাদ)

মাসুম মিয়া

আল আমিন

সৈকত চন্দ্র দে

মো: ফারুক

মো: রিপন

আলমগীর হোসেন

মো: আরিফ বেপারী

মো: সাহাদাত হোসেন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo