জন্ম তারিখ: ৭ নভেম্বর, ২০০৪
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা: টেইলার্সের দোকানে, শাহাদাতের স্থান : লালদিঘি, চট্টগ্রাম
২০০৪ সালের নভেম্বর মাস, শীতের তীব্রতা তেমন প্রকট হয়ে উঠেনি তখন। কুয়াশাঘেরা সকালে শিশির জমে ঘাসের বুকে। তেমনি একবুক স্বপ্নে বিভোর হয়ে অপেক্ষায় দিন গুনছেন সাহাবউদ্দীন ও শিল্পী আক্তার। তাঁদের অপেক্ষার অবসান হলো নভেম্বরের ৭ তারিখ। ঘর আলো করে দুনিয়ায় এলো তাদের প্রথম সন্তান নিজাম উদ্দিন, যার আদুরে নাম ইমন। আর এখন তিনি দেশের মানুষের কাছে পরিচিত শহীদ মো: নিজাম উদ্দিন ইমন নামে। শহীদ ইমনের পৈতৃক নিবাস নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার ৬ নং রাজগঞ্জ ইউনিয়নের গণি হাকিমপুর গ্রামে। তবে ইমনের পরিবার বাস করতেন চট্টগ্রামের কোতয়ালী থানার বাকলিয়া গ্রামে। পরিবারের আর্থিক অবস্থান দুই ভাই ও একমাত্র বোন নিয়ে ৫ জনের পরিবার ইমনের।পিতা দর্জির কাজ করতেন ও মাতা গৃহিণী। চট্টগ্রামে নিজস্ব টেইলার্সের দোকানে বাবার কাজে সহযোগিতা করতেন ইমন এবং এটাই তাদের পরিবারের আয়ের উৎস। মধ্যবিত্ত এই পরিবারের খরচ ও ভাইবোনদের পড়ালেখার খরচ চলতো এই আয় থেকেই।বড় ছেলে ইমনকে আলেম বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু আল্লাহর পরিকল্পনা ছিলো ভিন্ন। তিনি সহজ সরল ইমনকে বেছে নিয়েছিলেন শহীদ হিসেবে। সবার সাথে যে এত মিলেমিশে থাকতো সেই ছেলেটি যে তাদের ছেড়ে চলে যাবে সে কথা কি আর কেউ জানতো! যেভাবে শহীদ হলেন ৫ আগস্ট, ২০২৪। রোজ শুক্রবার। এক পবিত্র দিনে পতন ঘটে স্বৈরাচার হাসিনার। দেশজুড়ে চলছিলো বিজয়োল্লাস। হাজারো মায়ের ছেলে হারানোর শোক আর বিধবা স্ত্রীর অসহায়ত্বের করুণ চাহনি যেন একেকটা উত্তপ্ত মরুভূমি। যে মরুভূমিতে কখনো বসন্ত আসে না।হাসিনার পতন ধ্বনি সেই মরুভূমিতে বৃষ্টির রহমধারার মতো শান্তির ও স্বস্তির অনুভূতি সৃষ্টি করেছিলো প্রতিটি অন্তরে। বুকের উপর চাপানো মস্ত বোঝার ভার যেন কিছুটা হালকা হলো।আনন্দের বন্যা বইছিলো সারা দেশের আনাচে কানাচে।সেই আনন্দে মিছিলে শামিল হতে নিজেদের দোকান থেকে বের হয়ে চট্টগ্রামের লালদিঘি পাড়ের দিকে এগিয়ে যায় ইমন। কিন্তু জনতার এই উল্লাসে আগুন ধরে যায় আওয়ামীলীগের পেটুয়া বাহিনীর গায়ে। ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণ করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। তাদের গুলি বিদ্ধ করে ইমনের চোখ। ছুটে আসা বুলেটটি তার চোখ ভেদ করে বেরিয়ে যায় মাথার অপর পাশ দিয়ে। রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায় ইমনের গায়ের শার্ট। উপস্থিত লোকজন ইমনকে রিক্সায় করে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু হাসপাতালে পৌছার আগেই শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করে স্বপ্নবাজ ইমন। শহীদ সম্পর্কে বন্ধু/নিকটাত্মীয়ের অনুভূতি পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী বোঝা হলো পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ। যে পিতার দৃঢ়তা আমাদের সাহস যোগায় সে পিতাই ছোট্ট অবুঝ শিশুর মতো হু হু করে কেঁদে উঠে সন্তানের লাশ দেখে। এ দৃশ্য বিবেককে নাড়া দেয়। ইমনের বাবা বলেন, “ইমন আমার বড় ছেলে, তাকে আলেম বানানোর স্বপ্ন ছিলো। সে আমাকে দোকানের কাজে হেল্প করতো পরিবারকে একটু ভালো রাখার জন্য। সে সবার সাথে মিশতো এবং সবসময় হাসিখুশি ছিলো। প্রশাসনের কাছে আমার দাবি-আমার ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই, খুনিদের যেন ফাঁসি দেয়া হয়।” এক নজরে শহীদ পরিচিতি নাম : মো: নিজাম উদ্দিন ইমন জন্ম তারিখ : ৭/১১/২০০৪ পিতার নাম : সাহাব উদ্দিন (৩৮) ব্যবসা মাতার নাম : শিল্পী আক্তার (৩১) গৃহিণী স্থায়ী ঠিকানা : গনি হাকিমপুর, ৬ নং রাজগঞ্জ, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী বর্তমান ঠিকানা : বাকলিয়া, কোতোয়ালি, চট্টগ্রাম : ভাই মো: শরিফ উদ্দিন, বয়স-১১, হিফজ বোন জান্নাতুল ফেরদৌস মীম, বয়স: ১৬ আহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : লালদিঘি, চট্টগ্রাম, ০৫/০৮/২০২৪ আক্রমণকারী : ছাত্রলীগ নিহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : লালদিঘি, চট্টগ্রাম ০৫/০৮/২০২৪ সমাধি : নিজ গ্রামে শহীদ পরিবারকে সাহায্যের প্রস্তাবনা ১. বাসস্থান প্রয়োজন। ২. বাবার জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দেয়া যায়। ৩. ছোট ভাই বোনদের পড়ালেখার খরচ দিয়ে সহযোগিতা করা যায়।