জন্ম তারিখ: ১ জুন, ২০১২
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা: দিনমজুর, শাহাদাতের স্থান : সোনাইমুড়ী থানার সামনে
২০১২ সালের ১ জুন, নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী পৌরসভার কাঁশারপাড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শিশু শহীদ মো: হাসান হাসানের বাবার নাম মামুন উদ্দিন তিনি পেশায় একজন হকার। মায়ের নাম শাহিন আক্তার তিনি পেশায় একজন গৃহিণী। শহীদ হাসান পরিবারের অভাবের কারণে পড়াশোনা করতে পারেনি। সোনাইমুড়ি সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অক্ষর জ্ঞান অর্জন করে বাবার সাথে সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করে। শাহাদাতের আগ পর্যন্ত সে বাবাকে পেশাগত কাজের সহযোগিতা করতো আর দিনমজুর হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতো। গ্রামবাংলার সহজ সরল শিশু হাসান সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশ। বৃহত্তর চটগ্রাম বিভাগের নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী পৌরসভার এক মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের গ্রাম কাঁশারপাড়। এ গ্রামে জন্ম নিয়েছিলো হাসান নামের একটি শিশু। গ্রামের কাদা-মাটি-পানি আর আলো-বাতাস গায়ে মেখে হাটি-হাটি পা-পা করে বেড়ে উঠা তার। গ্রামের আর দশটি শিশুর মতো মেঠোপথে খালি পায়ে হাটা। পাহাড়-টিলায় চড়েবেড়ানো। বন-বাগানে লুকোচুরি খেলা। কখনো একাকী বসে দিগন্তবিস্তৃত ফসলের মাঠের দিকে উদাস মনে তাকিয়ে থাকা। বাবার সাথে মসজিদে যাওয়া। সহপাঠীদের সাথে মক্তবে ও স্কুলে যাওয়া। বিকেলে মাঠে ছোট বড়ো সকলের সাথে মিলেমিশে খেলা। দলবেঁধে পুকুরে, খালে, নদীতে ঝাপ দেয়া। ডুবিয়ে ডুবিয়ে দুচোখ লাল করে ফেলা। বাড়িতে ফিরে মায়ের আদুরে বকা খাওয়া। সব বকা, সব শাসন ভুলে পরের দিন আবার একই কাজে মনোযোগী হওয়া। এইসব ছিলো তার প্রতিদিনকার জীবনের অংশ। এতকিছুর পরেও এক দিকে বাবার সাথে মাছ ধরতে যাওয়া। জমিতে কাজ করা। কাঁচা সবজি বিক্রিতে সাহায্য করা। অপর দিকে বাড়িতে মাকে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করা। ছোট ভাই-বোনদের দেখাশোনা করা। সাধ্যমতো তাদের পড়ালেখায়সাহায্য করা। এসব কাজে কখনো কোনো অবহেলা ছিলো না শিশু হাসানের। বরং স্বতঃস্ফূর্তভাবে আনন্দচিত্তে এসব কাজ সম্পাদন করতো সদাহাস্যজ্বল এই শিশুটি। তাইতো সে মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন আর পাড়া প্রতিবেশিদের কাছে যেমন আদরের ছিলো তেমনি প্রিয়পাত্র ছিলো সহপাঠী, বন্ধুবান্ধব আর শিক্ষকদের কাছে। কচি চাঁদের মতো হাসি দিয়ে সবার হৃদয় জয় করে নিতো শহীদ হাসান। গ্রামবাসীরাও যেন প্রশান্তি পেতো তার নির্মল সহচার্যে। যেভাবে শহীদ হন হাসান ৫ আগস্ট ২০২৪ সাল। দিনটি ছিল সোমবার। বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বিজয়ের দিন। এদিন বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশী সময় ধরে চলতে থাকা স্বৈরাচারী হাসিনার স্বৈরশাসন থেকে মুক্তি পায়। ধূর্ত হাসিনা এদিন জনগণকে জুলুম নির্যাতনের ভিতরে রেখে হেলিকপ্টার যোগে ভারত পালিয়ে যায়। খুনি শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে এদেশের আপামর জনসাধারণ রাস্তায় বিজয় মিছিল করার জন্য নেমে পড়ল। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা অলিগলিতে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হলো, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, পালিয়ে গেছে। ক্ষুব্ধ মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার বজ্রকণ্ঠে বারংবার ধ্বনিত হয় বিভিন্ন বিপ্লবী স্লোগান‘। যা রাজপথকে করে তুলেছিলো আরও মুখরিত। উৎসুক জনতা বিজয় মিছিল নিয়ে সোনাইমুড়ি থানার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ আতঙ্কিত হয়ে জনসাধারণের উপর নির্বিচারে গুলি ছুঁড়ে। এই মিছিলে জনসাধারণের সাথে যুক্ত ছিলো মো. হাসান। পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে। এতে বুলেট বিদ্ধ হয়ে ঘটনা স্থলেই শাহাদাত বরণ করেন শিশু শহীদ মো. হাসান। জানাজাও দাফন পরবর্তীতে শহীদ মো: হাসানের জানাজার নামায নিজ গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে কাঁশারপাড়য় তাকে সমাহিত করা হয়। কেমন আছে শহীদের পরিবার শহীদ হাসানের বাবা একজন হকার। তারা ছিলো দুই ভাই দুই বোন। সে ভাই-বোনদের মধ্যে সবার বড় ছিল। ছোট বোন জিনিয়া আক্তার সোনাইমুড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। ভাই হোসেনের বয়স তিন বছর এবং ফাতেমা আক্তার নামে তার ছয় মাস বয়সী আরো একটি বোন রয়েছে। শহীদ হাসানকে হারিয়ে তার পরিবারে এখন দুঃখের মাতম চলছে। পরিবারের স্বপ্ন ছিল শহীদ হাসান বড় হয়ে সবার দায়িত্ব নিবে। কিন্তু দায়িত্ব নেয়ার আগেই শিশু অবস্থায় শাহাদাতের সুধা পান করে সে। ছেলেকে হারিয়ে মায়ের অবস্থা এখন পাগল প্রায়। ছোট ছোট ভাই বোন গুলোর এখনো বুঝে ওঠার বয়স হয়নি যে তাদের বড় ভাই দুনিয়াতে আর নেই। মা শাহীন আক্তার বলেন, আমার নিষ্পাপ শিশু শহীদ হাসানের কি দোষ ছিল, কি অপরাধ ছিল, আমার জানতে ইচ্ছে করে খুব। কেন আমার বুক খালি করল, কারা করল? আমি সবার ফাঁসি চাই! জান্নাতের পাখি শহীদ হাসান নিঃসন্দেহে শহীদ মো: হাসান জান্নাতের পাখি। সে জান্নাতে পাখি হয়ে উড়ে বেড়াবে। তার কোন দোষ ছিল না। সে একজন নিষ্পাপ নাবালক ছেলে ছিল। নরপিশাচ আওয়ামী পুলিশ তাকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। অকালে তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিয়েছে। শহীদ হাসান এই জাতির মুক্তির জন্য অল্পকালে তার জীবনকে বিলিয়ে দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এদেশের মুক্তিকামী মানুষের ইতিহাস যেখানে লেখা থাকবে, সেখানে শহীদ মো: হাসান এর নাম চিরকাল জ্বল জ্বল করবে। পারিবারিক আর্থিক অবস্থা শহীদ হাসানের বাবা একজন হকার। তারা ছিলো দুই ভাই দুই বোন। ভাইবোনদের মধ্যে সে সবার বড় ছিল। ছোট বোন জিনিয়া আক্তার সোনাইমুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। ভাই হোসেনের বয়স তিন বছর এবং ফাতেমা আক্তার নামে তার ছয় মাস বয়সী আরো একটি বোন রয়েছে। একটি টিনের বাড়ি ও অল্প ভিটা জমি আছে। এক নজরে শহীদ মো: হাসান নাম : মো : হাসান জন্ম তারিখ : ১ জুন ২০১২ সাল আহত হওয়ার তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪ শাহাদাত বরণের তারিখ, সময় ও স্থান : ৫ আগস্ট ২০২৪, সন্ধ্যা ৫:৩০ টা, সোনাইমুড়ী থানার সামনে দাফন করা হয় : নিজ গ্রামে বাবা : মো. মামুন উদ্দীন মা : শাহিন আক্তার বাড়িঘর ও সম্পদের বিবরণ : একটি টিনের বাড়ি ও অল্প ভিটাজমি আছে ভাই বোনের বিবরণ : একজন ভাই ও দুজন বোন রয়েছে। একজন বোন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। বাকি দুজন এখনো ছোট প্রস্তাবনা ১. পারিবারিক অর্থনৈতিক সমস্যা আছে। তাই এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান করা ২. পরিবারটির জন্য স্থায়ী একটি আয়ের ব্যবস্থা করে দিলে ভালো হয় ৩. ছোট ভাই বোনদের ভবিষ্যতের পড়াশুনাসহ আনুষাঙ্গিক সকল খরচের ব্যবস্থা করে দিলে ভালো হয়