Image of জিল্লুর শেখ

নাম: জিল্লুর শেখ

জন্ম তারিখ: ১৪ জুলাই, ২০০৭

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৮ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে

শহীদের জীবনী

জিল্লুর শেখ গোপালগঞ্জের শেখ হাসান ও শাহনাজ বেগম দম্পতির প্রথম সন্তান। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠি ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামে ২০০৭ সালের ১৪ জুলাই তার জন্ম। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তার মেজো ভাই দশম শ্রেণিতে ও ছোট ভাই তৃতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। ছোট বোনের বয়স মাত্র দুই বছর। প্রাথমিক শিক্ষাজীবনে মেধার স্বাক্ষর রেখেছিলেন জিল্লুর। সন্তানের সফলতায় মুগ্ধ হয়ে গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় আসেন তার বাবা-মা। স্কুলের রচনা প্রতিযোগিতায় হাজার শব্দে জিল্লুর জানান দিয়েছিলেন নিজের স্বপ্নের কথা। স্কুল থেকে ফিরে বাবা-মা’কে এসে বলেছিলেন- ‘একদিন বড় হয়ে মস্ত বড় অফিসার হবেন।’ শহীদ জিল্লুরের পিতা জনাব হাসান ঢাকার মেরুল বাড্ডায় ব্যবসা করেন। ছোট ভাইকে সাথে নিয়ে মাছের আড়ৎদারী বাণিজ্য তার। বাড্ডার আফতাব নগরে পরিবারের সাথেই থাকতেন জিল্লুর শেখ। ২০২৪ সালে বনশ্রীর ফয়জুর রহমান আইডিয়াল স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৪.৯৬ পেয়ে এসএসসি পাশ করেছিলেন তিনি। আফতাব নগরের ইম্পেরিয়াল কলেজের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে উচ্চ শিক্ষার প্রথম ধাপে পা রেখেছিলেন শহীদ জিল্লুর। শহীদ সম্পর্কে অনুভূতি প্রকাশ “কার কাছে বিচার চাইব? আমার কলিজাডারে যে মারছে একদিন না একদিন আল্লাহ তার বিচার করবো।” নাতির কবরের সামনে দাঁড়িয়ে এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলেছেন শহীদের শতবর্ষী দাদি। শহীদের প্রতিবেশী আহমদ সালেহ বলেন- “শহীদ জিল্লুর শেখ অনেক ভালো ছিল। সে ছোট বয়স থেকে নম্র ও ভদ্র স্বভাবের ছিল। লেখাপড়ায়ও ছিল অত্যন্ত মেধাবী। সবসময় ছোটদেরকে স্নেহ এবং বড়দেরকে সম্মান দিয়ে কথা বলত। নামাজের সময় হলে মসজিদে যেতে দেরি করত না ছেলেটি এবং অন্যায় কাজে কখনও কাউকে সমর্থনও করত না।” শহীদ জননী বলেন, “কার কাছে বিচারের কথা বলব? আর বিচার করলে হাসিনা কি আমার ছাওয়ালরে ফেরত দিতে পারবে, আমার ছাওয়ালরে যে মারছে, আল্লাহ একদিন না একদিন তাদের বিচার করবে। আমার সন্তান অবুঝ। গত ১৫ জুলাই কলেজে ভর্তি করেছি। ঘটনার দিন জিল্লুর বলে, মা নামাজ পড়তে যাই, বললাম যাও, নামাজ পড়ে বাসায় চলে এসো। আমার ছেলে আর ফেরেনি। পুলিশ আমার অবুঝ ছাওয়ালরে কেন মারল।” শহীদ পিতা জনাব হাসান শেখ বলেন, “ওইদিন দুপুরে নামাজে যাওয়ার আগে আমি আমার সন্তানকে ঘরে দেখে গিয়েছি। ওর বন্ধুর ফোন পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার বাবা রক্তের উপরে শুয়ে আছে।” জিল্লুরের ফুফা ইমদাদুল মোল্লা বলেন, সন্তানদের ভালো পড়াশোনা নিশ্চিত করতে তার বাবা-মা গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় আসেন। কিন্তু ঘাতকের গুলি তাদের সব স্বপ্ন-আশা ধূলিসাৎ করে দিয়েছে।” তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার! “চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার।” আন্দোলন যখন তুঙ্গে সারাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাস ছিল আন্দোলনের মাস। ছাত্র-জনতা এক হয়ে দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে তুলেছিল দুর্বার আন্দোলন। আন্দোলিত হয়েছিল গোটা জাতির হৃদস্পন্দন। যার উত্থাপন ছিল সরকারী চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবি নিয়ে। একপর্যায়ে তৎকালীন খুনি হাসিনা সরকার সহিংসতার মাধ্যমে ছাত্রদের দমন করার চেষ্টা করলে সর্বস্তরের মানুষ আন্দোলনে যোগ দেয়। শিক্ষার্থীরা জানায়, কোটাকে চিরতরে উচ্ছেদ করতে হবে। দাবী আদায়ের লক্ষ্যে রাজপথে আবস্থান কর্মসূচী ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠন। যার প্রেক্ষিতে স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী হাসিনা মন্তব্য করে, “মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর তাদের এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিরা কোটা সুবিধা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারদের নাতি-নাতনিরা পাবে?” হাসিনার এই বিরূপ বক্তব্যের পর, ছাত্র-জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীরা রাজপথে স্লোগান দিতে থাকে, “তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার! চাইতে গেলাম অধিকার হয়ে গেলাম রাজাকার।” অতঃপর সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষিত হয়। কর্মসূচী ভেস্তে দিতে টিয়ার শেল, রাবার বুলেট, ছড়রা গুলি, গুম, খুন, নির্যাতন, মামলা করে ছাত্র-জনতাকে হয়রানি করে স্বৈরাচারী হাসিনার পালিত গুন্ডা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হাসিনার ইন্ধন পেয়ে হেলিকপ্টার থেকে গুলি বর্ষণ করে ঘাতক র‌্যাব। ফ্যাসিস্ট সরকারের বিজিবি সাধারণ জনতার বুকে গুলি চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালায়। দেশীয় অস্ত্র ও রাইফেল নিয়ে সাধারণ ছাত্রদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে আওয়ামী দাগী সন্ত্রাসীরা। আন্দোলনে যোগদান বন্ধুদের সাথে রামপুরা এলাকায় আন্দোলনে যোগ দেন শহীদ জিল্লুর। বাসায় বললে মা রাগ করবে। এজন্য কাউকে না জানিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে নিয়মিত রাজপথে যাতায়াত ছিল তার। শাহাদাতের ময়দানে যোগ দিতে গত ১৮ জুলাই ২০২৪ দুপুর ১২:৪৫ এর দিকে জিল্লুর তার মা’কে জানায়- ‘মা নামাজ পড়তে যাই, শহীদ জননী বলেন-‘যাও, নামাজ পড়ে বাসায় চলে এসো।’ মসজিদে প্রবেশ করার পূর্বে ভালো করে অজু করে নেয় জিল্লুর। চার রাকাত ফরজ নামাজ শেষ করে মোবাইল হাতে নেয়। খেয়াল করে দেখে, বন্ধুরা মেসেজ দিয়েছে। একসাথে আন্দোলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। বন্ধুকে বাঁচাতে নিজের বুক পেতে দেয় শহীদ জিল্লুর শেখ শাহাদাতের পথে সময় ১:৪৫। জিল্লুর শেখ মসজিদ থেকে বের হয়ে আফতাবনগরের দিকে যাত্রা শুরু করে। এরপর বন্ধুদের সাথে মিলিত হয়ে আন্দোলনে যোগ দেয়। মিছিল নিয়ে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির দিকে যাত্রা শুরু করে। আকস্মিক মিছিলকে কেন্দ্র করে ফ্যাসিস্ট সরকারের পালিত পুলিশ বাহিনী অতর্কিত হামলা চালায়। ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে এলোপাথাড়ি রাবার বুলেট, টিয়ার শেল, ছররা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে ঘাতক পুলিশ বাহিনী। হঠাৎ কয়েকটি গুলি জিল্লুরের শরীরে এসে বিদ্ধ হয়। বন্ধুকে বাঁচাতে নিজের বুক পেতে দেন তিনি। একটি গুলি তার মাথা ভেদ করে বেরিয়ে যায়। দ্রুত বন্ধুরা তাকে আদাবর নাগরিক হাসপাতালে নিয়ে যায়। যাওয়ার পথেই দুপুর ২ টার সময় শাহাদাত বরণ করেন শহীদ মো: জিল্লুর শেখ। তবুও শহীদকে নিয়ে হাসপাতালে পৌছায় তার সহপাঠীরা। কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা জানায়- “তোমাদের বন্ধু আর নেই। তিনি দুনিয়ার মোহ ছেড়ে পরপারে মহান মনিবের কাছে চলে গেছেন।” শহীদের প্রথম জানাজা রাজধানীর বাড্ডায় সম্পন্ন হয়। পরের দিন নিজ গ্রামে ১৯ জুলাই সকাল ৮টায় কাঠি, সপ্তপল্লী ঈদগাহ মাঠ প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পশ্চিমপাড়া কবরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত হন শহীদ জিল্লুর শেখ। শহীদের মৃত্যুতে যেন একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে। তিনি ছিলেন সম্ভাবনাময় এক তরুণ, যার প্রতিভা ফুটে উঠেছিল তার পড়াশোনা সহ সকল কাজে। তার মৃত্যু শুধু পরিবার নয়, তার স্কুল, খেলার সাথী এবং পুরো সমাজের জন্য এক অমোচনীয় ক্ষতি। শহীদ চিরতরে আমাদের থেকে বিদায় নিলেও তাঁর আদর্শ, বিনয়, এবং সংগ্রাম আমাদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলী নাম : শহীদ মো: জিল্লুর শেখ পেশা : ছাত্র, প্রতিষ্ঠান: ইম্পেরিয়াল কলেজ, ঢাকা, শ্রেণি: একাদশ জন্ম তারিখ ও বয়স : ১৪ জুলাই ২০০৭, ১৭ বছর শহীদ হওয়ার তারিখ : ১৮ জুলাই ২০২৪, বৃহস্পতিবার, আনুমানিক দুপুর ২টা শাহাদাত বরণের স্থান : ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে দাফন করা হয় : পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: কাঠি, সপ্তপল্লী, জেলা: গোপালগঞ্জ পিতা : মো: শেখ হাসান মাতা : মোছা: শাহনাজ বেগম ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : শহীদ পিতার গ্রামে ১০ শতাংশ জমি রয়েছে ভাইবোনের বিবরণ ১. মো: জোবায়ের শেখ পেশা : ছাত্র প্রতিষ্ঠান : ফয়জুর রহমান আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ শ্রেণী : ১০ম সম্পর্ক : ভাই বয়স : ১৫ ২. মো: জোনায়েদ শেখ পেশা : ছাত্র প্রতিষ্ঠান : ফয়জুর রহমান আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ শ্রেণী : ৩য় সম্পর্ক : ভাই বয়স : ০৯ ৩. মোসা: হীরা জাহান নূর সম্পর্ক : বোন বয়স : ০২

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of জিল্লুর শেখ
Image of জিল্লুর শেখ
Image of জিল্লুর শেখ
Image of জিল্লুর শেখ

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: সাব্বির হাওলাদার

মো: রবিউল ইসলাম

মো: লেবু শেখ

জোবায়ের ওমর খান

মো: রিয়াজ

মাহামুদুর রহমান সৈকত

মো: জোবায়ের বেপারী

মো: জাহাঙ্গীর

 মোঃ শাফিক উদ্দিন আহমেদ আহনাফ

মো: আহমাদ আব্দুল্লাহ

মোঃ মাহমুদুল হাসান জয়

মো: আমির হোসেন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo