Image of মো: মোসলেহ উদ্দিন

নাম: মো: মোসলেহ উদ্দিন

জন্ম তারিখ: ২৯ ডিসেম্বর, ১৯৯০

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: লন্ড্রি ব্যবসা, শাহাদাতের স্থান : ইষ্ট ওয়েষ্ট ইউনিভার্সিটির সামনে

শহীদের জীবনী

রাজধানীর বনশ্রী আবাসিক এলাকার ব্লক-এ এর আতিক মসজিদের গলিতে একটি ভাড়ায় চালিত লন্ড্রি (মদিনা লন্ড্রি) পরিচালনা করতেন মোসলেহ উদ্দিন। তিনি দ্বীপ জেলা ভোলার লালমোহন উপজেলার গজারিয়া গ্রামের মৃত হানিফ মিয়ার পুত্র। ১৯৯০ সালের ২৯ ডিসেম্বর মা রোকেয়া বেগমের কোল জুড়ে জন্ম নেন শহীদ হাফেজ মোসলেহ উদ্দিন। তার পিতা পেশায় দিনমজুর ছিলেন। একমাত্র ছেলেকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পবিত্র কুরআন শিক্ষা দেন। স্থানীয় মাদরাসা থেকে হিফজুল কুরআন সম্পন্ন করে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছিলেন তিনি । অর্থনৈতিক অবস্থা শহীদের পিতার মাধ্যমে এক সময় একটি হাট পরিচালিত হত। নদী ভাঙ্গণে হাটটি বিলীন হয়ে যায়। গ্রামের ভিটেবাড়ি ভেসে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে পড়েন জনাব হানিফ মিয়া। জীবিকার তাগিদে প্রত্যন্ত অঞ্চল ছেড়ে সন্তানকে নিয়ে ওঠেন রাজধানীর ভাড়া বাড়িতে। এখানে জন্ম নেন শহীদের আরো এক সহোদর। জীবনের পাথেয় সংগ্রহ করতে ব্যবসার পথ ধরেন শহীদের পিতা। এরপর কেটে যায় অনেকগুলো বছর। পরিবারের দায়িত্ব বর্তায় হাফেজ মোসলেহ উদ্দিনের উপর। বনশ্রী এলাকায় পাঁচ লক্ষ টাকা ঋণ করে লন্ড্রি দোকান ভাড়া নেন তিনি। ছেলের উপার্জনে সংসার গুছিয়ে নিতে শুরু করে রোকেয়া বেগম। কিছুদিন পর বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন হাফেজ মোসলেহ। শহীদ পত্নী নাসরিন আক্তারের কোল জুড়ে আসে নতুন অতিথি। খড়কুটোর সংসারে বাসা বাঁধে দুশ্চিন্তার বিরামহীন যাতনা। কারণ- একমাত্র ছেলে আফফান প্রতিবন্ধী হয়ে পৃথিবীতে আগমন করেছে। মুহূর্তে তাজা রক্তে শুভ্র পাঞ্জাবী লালে রূপ নেয়। শাহাদাতের সামগ্রিক বিবরণ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে রাজপথ প্রকম্পিত করে তোলে শহীদ মোসলেহ উদ্দিন। রাজপথে রুখে দিতে দলে দলে বাহিনী প্রেরণ করে খুনি হাসিনা। স্বৈরাচারীর পাষণ্ড ক্যাডারদের ছত্রছায়ায় গাদ্দার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শিক্ষার্থীদের উপর গুলি বর্ষণ করে। নির্মমভাবে সাঁজোয়া যান তুলে দেয় জলজ্যান্ত শিক্ষার্থীদের উপর। হ্যান্ড গ্রেনেড ছুড়ে দ্বিখণ্ডিত করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। কী নির্মমতা! কোনো মানুষ এই ন্যক্কারজনক কাজ ঘটাতে পারে? ১৯ জুলাই ২০২৪, শহীদ হাফেজ মো: মোসলেহ উদ্দীন দিপ্রহর ১২ টায় বাসা থেকে বের হন। উদ্দেশ্য নিজের কর্মস্থল মদিনা লন্ড্রি। সে সময় রামপুরা-ডেমরা সড়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাজার-হাজার শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজপথ অবরোধ করে রাখে। ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে বিটিভি ভবনের পাশ থেকে নির্বিচারে গুলি ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এমনই সময় জুমার নামাজের জন্য মসজিদ থেকে সুমধুর কন্ঠে মুয়াজ্জিনের আজান ভেসে আসে। দোকান বন্ধ করে মসজিদে যায় হাফেজ মোসলেহ উদ্দিন। ইমাম সাহেবের গুরুত্বপূর্ণ খুৎবা পাঠ শেষে নামাজ আদায় করে বের হন তিনি। সড়কে অবস্থান নেয়া আন্দোলনকারী ও জুমার নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়া মুসল্লিরা যার যার বাসায় যেতে সড়কে একাকার হয়ে যায়। ঘড়িতে দুইটা বেজে ত্রিশ। হঠাৎ বিটিভি ভবনের পাশে অবস্থান নেয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি গুলি মোসলেহ উদ্দিনের বুকে এসে বিদ্ধ হয়। মুহূর্তে তাজা রক্তে শুভ্র পাঞ্জাবী লালে রূপ নেয়। মুসুল্লিরা শহীদ মোসলেহকে বনশ্রী ফরাজী হাসপাতালে নিয়ে যায়। ক্ষত বিক্ষত শহীদের দেহ থেকে ঝরে পড়া রক্তে রিক্সা রঞ্জিত হয়ে যায়। চিকিৎসালয়ের চিকিৎসকগণ শহীদের পালস পরিমাপ করে জানায় তিনি আর নেই। খবর শোনা মাত্র শহীদ স্ত্রী নাসরিন আক্তার প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। শহীদ জননী ছেলের দিকে তাকিয়ে বুক চাপড়িয়ে মাতম করে কাঁদেন। পরবর্তীতে আন্দোলনের কারণে থানা অকার্যকর থাকায় পোস্টমর্টেম ও মামলা ছাড়া শহীদের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়। হাফেজ মোসলেহ উদ্দিনের লাশ পূর্ব রামপুরা মোল্লাবাড়ী নিরিবিলি কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। করুণ পরিস্থিতি শহীদের পত্নী নাসরিন আক্তার সন্তান সম্ভবা। তার আগামী দিনগুলো কিভাবে কাটবে তিনি জানেন না। একমাত্র সন্তান আফফানের বয়স দশ বছর। জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী শহীদ পুত্রের মাসে কয়েক হাজার টাকার ঔষধের প্রয়োজন হয়। চিকিৎসা, বাবার সঙ্গ, যত্ন প্রয়োজন হয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন মোসলেহ উদ্দিন। তাকে হারিয়ে সংসারটি বর্তমানে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। আর্থিক অনটনে জর্জরিত হয়ে মানুষের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। কিভাবে চলবে শহীদ পরিবার? শহীদ পুত্রের চিকিৎসা খরচই বা কে দেবে? কে ধরবে এই ভঙ্গুর পরিবারের হাল? ‘বয়োবৃদ্ধা শহীদ জননী ছেলের শোক ভুলতে না পেরে এখনও জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকেন। যেন এই তার কোরআনের হাফেজ শহীদ মোসলেহ উদ্দিন ঘরে ফিরবে। আর বলবে ‘মা, দরজা খোল, আমি এসেছি।’ প্রিয়জনদের অভিমত শহীদ মোসলেহ উদ্দীন সম্পর্কে তার ভাই বলেন- “তিনি খুব সরল মনের মানুষ ছিলেন। যে কোনো আমানত যথাযথ ভাবে রক্ষার চেষ্টা করতেন। হালাল উপার্জনের মাধ্যমে স্বল্প আয় হলেও সেটা দিয়ে তিনি সংসার চালাতেন। ৫ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে জামায়াতের সাথে আদায় করার চেষ্টা করতেন। ব্যবহারে ছিলেন অমায়িক। প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক ছিলো খুব আন্তরিক”। স্থানীয় দোকানদার মিন্টু বলেন- “মোসলেহ উদ্দিন খুবই ধার্মিক ভদ্র ও নিরীহ প্রকৃতির ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মোসলেহ উদ্দিনের নির্মমভাবে নিহত হওয়ার ঘটনা বনশ্রী ও পূর্ব রামপুরা এলাকায় মানুষের মুখে মুখে।” এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলী নাম : শহীদ মো: মোসলেহ উদ্দিন পেশা : লন্ড্রি ব্যবসায়ি, ভাড়ায় চালিত দোকান, মদিনা লন্ড্রী জন্ম তারিখ ও বয়স : ২৯ ডিসেম্বর ১৯৯০, ৩৪ বছর শহীদ হওয়ার তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার, আনুমানিক দুপুর ২.৪৫ টা শাহাদাত বরণের স্থান : ইষ্ট ওয়েষ্ট ইউনিভার্সিটির সামনে দাফন করা হয় : পূর্ব রামপুরা মোল্লাবাড়ী নিরিবিলি কবরস্থানে স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: গজারিয়া, পাঙ্গাসিয়া, জেলা: ভোলা পিতা : মৃত হানিফ মিয়া মাতা : মোছা: রোকেয়া বেগম ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : নদী ভাঙ্গনে বিলীন সন্তানের বিবরণ : ১. মো: আফফান (প্রতিবন্ধী), সম্পর্ক : ছেলে, বয়স : ১০ স্ত্রী : নাসরিন আক্তার, বয়স: ৩২, পেশা: গৃহিণী প্রস্তাবনা ১. পরিবারের স্থায়ী বাসস্থান প্রয়োজন ২. শহীদের প্রতিবন্ধী পুত্রকে ভাতা দেয়া যেতে পারে ৩. পরিবারকে মাসিক বা এককালীন সহায়তা করা যেতে পারে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: মোসলেহ উদ্দিন
Image of মো: মোসলেহ উদ্দিন
Image of মো: মোসলেহ উদ্দিন
Image of মো: মোসলেহ উদ্দিন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মোঃ মাহমুদুল হাসান জয়

রাকিব হোসেন

শেখ ফাহমিন জাফর

অজ্ঞাত

মারুফ হোসেন

আলী হোসেন

সাজিদুর রহমান ওমর

মো: সোহেল রানা

নাসির হোসেন

মো: ইয়াসির সরকার

হাসনাইন আহমেদ

নাসিব হাসান রিয়ান

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo