জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ১৯৭৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা : চাকরি, কর্মরত প্রতিষ্ঠান : নিপা গ্রুপ অব কোম্পানীজ লিমিটেড শাহাদাতের স্থান : উত্তরা, সেক্টর-৪ সংলগ্ন রোড, ঢাকা
শহীদ পরিচিতি পরিবারের একমাত্র অভিভাবক ছিলেন শহীদ মো: সাইফুল ইসলাম। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবক হলেও তিনি ছিলেন ন্যায়পরায়ণ ও দানশীল ব্যক্তি। শহীদ সাইফুল ইসলাম ১৯৭৫ সালের ১ জানুয়ারি ঝালকাঠি সদরের দেউলকাঠি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় ছোট বেলাতেই তিন ভাই ও এক বোনের দায়িত্ব এসে পড়ে সাইফুল ইসলামের ওপর। তারই ধারাবাহিকতায় মাত্র ১৫ বছর বয়সেই পড়ালোখার স্বপ্ন ছেড়ে পাড়ি জমাতে হয় থেকে রাজধানীতে। পরিবারের সামর্থ্য ছিল না। তাই ঢাকায় আসতে নিজের পাঠ্যবই বিক্রি করতে হয়েছিল তাকে। ঢাকায় এসে দীর্ঘ ছয় বছর তিনি শহরের বিভিন্ন জায়গায় দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। ২০০৬ সালে ২১ বছর বয়সেই তিনি নতুন কাজের সন্ধান পান এবং ঢাকা দক্ষিনখাণের ব্যবসায়ী মসরু চৌধুরির অধীনে কন্ট্রাকটর হিসেবে যুক্ত হন। সেখানেই দীর্ঘ ১৭ বছর যাবৎ স্ত্রী ও একমাত্র কন্যাকে নিয়ে তিনি বসবাস করেছেন। ৩০ হাজার টাকার বেতনের চাকরি করলেও তিনি ছিলেন নিরহংকারী। তিনি বরাবরই নিরবে কাজ করে গিয়েছেন। পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে তিনি ছিলেন বটবৃক্ষ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ও নাম না জানা অনেককেই তিনি খাদ্য, চিকিৎসা ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন, অথচ এগুলো কাউকে বলেও বেড়াননি। শাহাদাতের সময় তিনি স্ত্রী ও কন্যা সন্তানকে রেখে গিয়েছেন। তার একমাত্র কন্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে অধ্যয়ন করছেন। শহীদ মো: সাইফুল ইসলাম নিজে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন পূরণ না করতে পারলেও, মেয়ের মাধ্যমে সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন। ঘটনা সংক্রান্ত বিবরণ ৫ আগস্ট ২০২৪ সোমবার সন্ধ্যা ৬ টায় নিজ কর্মস্থল ৪ নং সেক্টরের ৯ নং হাউজ থেকে সাইফুল ইসলাম বাসায় ফিরছিলেন। ঐ মূহূর্তে ঢাকা শহরের সকল এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন সফলতার দ্বার প্রান্তে পৌঁছাতে শুরু করেছে। স্বৈরাচারী সরকারের প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় ছাত্র-জনতা বিজয়ের আনন্দ উদযাপন করছিল। সাইফুল ইসলাম ভেবেছিলেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু অফিস থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পরে তিনি বুক ও হাতে গুলিবিদ্ধ হন। তার একমাত্র কন্যা সোহানা আক্তার মীম বলেন, “৫ আগস্ট সকালে আমার অফিসে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় আমি বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েও সরাসরি বাসায় না গিয়ে বাবার অফিসে যাই। তখন বেলা ২টা। সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশ নিয়ে বাবার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করি। বাবাকে বাসায় যাওয়ার কথা বলি। তিনি বলেন, তুমি যাও, আমার একটু দেরী হবে। বাসায় আসার কিছুক্ষণ পর চাচ্চুর ফোন আসে। জানায়-'বাবা গুলিবিদ্ধ।' বিকাল ৫টার সময় আমি আর আম্মু উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হসপিটালে গিয়ে বাবাকে মর্গে পাই। বাবার বুকে ও হাতে একটি গুলি লেগেছিল। এত সহজে বাবার হাসিমাখা মুখটা হারিয়ে ফেলবো তা আমি মানতেই পারছিলাম না। অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে আমি আর আমার চাচ্চু বাবাকে কোলে করে রিক্সার মাধ্যমে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানেও যখন ডাক্তাররা বাবার মৃত্যুর কথা বলে তখন আমরা তাকে নিয়ে আবদুল্লাহপুর আইচি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখানেও একই কথা শোনার পর নিশ্চিত হই বাবা আর নেই, তখন হার মানতে বাধ্য হই। নির্মম সত্য মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না তখন।” জানাজা ও দাফন শহীদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় দক্ষিণখান নিপা গ্রুপের সামনে এবং দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় দেউলকাঠি, ধানসিড়ি, ঝালকাঠী জেলায়। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। শহীদ সম্পর্কে প্রতিবেশীর বক্তব্য ডা. হাবিব বলেন: জনাব সাইফুল ইসলাম অনেক ভাল মানুষ ছিলেন। সবসময় মানুষের উপকার করতেন। আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা কামনা করছি। একনজরে ব্যক্তিগত প্রোফাইল শহীদের পূর্ণ নাম : মো: সাইফুল ইসলাম জন্ম তারিখ : ০১/০১/১৯৭৫ পেশা : চাকরি কর্মরত প্রতিষ্ঠান : নিপা গ্রুপ অব কোম্পানীজ লিমিটেড স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: দেউলকাঠি, ইউনিয়ন: ধানসিড়ি, থানা: ঝালকাঠি, জেলা: ঝালকাঠি বর্তমান ঠিকানা : বাসা: হলান রোড, এলাকা: ইসলামবাগ, থানা: দক্ষিণখান, জেলা: ঢাকা পিতার নাম : আ: সামাদ মৌলভী মায়ের নাম : মোছা: সেতারা বেগম মায়ের পেশা ও বয়স : গৃহিণী, ৭৫ বছর স্ত্রীর নাম : গুল নাহার, পেশা: গৃহিণী কন্যার নাম : সোহানা আক্তার মিম, বয়স: ২৪, পেশা: শিক্ষার্থী, প্রতিষ্ঠান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শ্রেণি: মাস্টার্স আক্রমণকারী : স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশ বাহিনী আহত হওয়ার সময়কাল : সন্ধ্যা: ৬:৩০ মিনিট, ৫ আগস্ট ২০২৪ মৃত্যুর তারিখ সময় ও স্থান : ৫ আগস্ট ২০২৪, সন্ধ্যা: ৬:৩০ মিনিট, উত্তরা, সেক্টর-৪ সংলগ্ন রোড, ঢাকা কবরের অবস্থান : দেউলকাঠি গ্রাম, ধানসিড়ি, ঝালকাঠী