জন্ম তারিখ: ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৯৪
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা: হাউজ কিপিং, শাহাদাতের স্থান : ধানমন্ডি ০৫ নাম্বার রোড
শহীদ মো: রুমান ঢাকার হাজারীবাগ এলাকায় ১৯৯৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা-মায়ের চার সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তাঁর পিতা মো: স্বপন ব্যাপারী একজন চা দোকানদার ছিলেন। রুমানের বয়স যখন এক বছর তখন তার পিতা মাতার মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর থেকে তাঁর জীবনের মর্মান্তিক অধ্যায় শুরু হয়। বাবা স্বপন বেপারী অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শহীদ রুমানের মা ও তার ভাইবোনদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শহীদ রুমান ও তার ভাইবোনদের দেখাশোনার সমস্ত দায়িত্ব তার মায়ের উপর এসে বর্তায়। কিছুদিন পর তার মা মোসা: লুচি বেগমও অন্য একজনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার বড় বোন রুমিয়া আক্তার (৩১), ছোট দুই ভাই যথাক্রমে রাজু (২৪) ও সাজু (২২) ল্যাবএইড হাসপাতালের পরিচ্ছন্ন কর্মী। শহীদ রুমানও উক্ত হাসপাতালে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বাবা-মায়ের পারিবারিক টানাপোড়েন ও দারিদ্রতার কারনে শহীদ রুমান ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। অভাবের কারনে বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেননি। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও শহীদ মো: রুমান ছিলেন নির্লোভ, কষ্ট সহিষ্ণু, কর্মচঞ্চল ও ত্যাগী যুবক। তার আচরণে পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন ও সহকর্মীরা খুবই সন্তুষ্ট ছিল। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে ভাই-বোনদের পড়াশোনার খরচ বহন করা সম্ভব হয়নি বিধায় তাদেরকেও পেশাজগতে ঢুকে যেতে হয়। জীবিকার তাগিদে তাকে সবসময় কষ্ট করতে হয়েছিল। সারা দেশে যখন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলছিল তখনো তাকে নিয়মিত অফিসে যেতে হয়েছে। ১৯ জুলাই ২০২৪ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে তিনি পুলিশের গুলিতে মারাত্মক আহত হয়ে শাহাদাত বরণ করেন। শাহাদাতের সময় তার বয়স ছিল ২৯ বছর। শাহাদাতের মর্মান্তিক ঘটনা ১৯ জুলাই ২০২৪ শুক্রবার। চলছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচী। অপরদিকে অবৈধ স্বৈরাচারী সরকার কর্তৃক অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে। সারা দেশে ছাত্র-জনতা কারফিউ উপেক্ষা করে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। সকল শ্রেণি পেশার মানুষ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সারা দেশে ছাত্র-জনতার সাথে সরকারের পোষা গুণ্ডাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। জুম’আর নামাজের পর শহীদ মো: রুমানও অন্যদের সাথে আন্দোলনে অংশ নিতে অফিস থেকে বের হয়ে আসেন। অফিস থেকে বের হয়ে তিনি ধানমণ্ডির ০৫ নং রোডে এসে আন্দোলনকারীদের সাথে যুক্ত হন। মিছিল ব্যাপক আকার ধারণ করলে চতুর্দিক থেকে ঘাতক আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও পুলিশ সদস্যরা জনতাকে লক্ষ্য করে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল, ছররা গুলি, রাবার বুলেট, গ্রেনেড বোমা নিক্ষেপ করে এবং সাজোয়া যান, হেলিকপ্টার ও উচু ভবন থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্রের মাধ্যমে গুলিবর্ষণ শুরু করে। নিরস্ত্র ছাত্র-জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ছাত্ররা টিয়ারশেলের ধোয়া থেকে বাঁচতে কাগজ, পত্রিকা, টায়ার প্রভৃতিতে আগুন ধরিয়ে নিজেদের চোখ রক্ষা করার চেষ্টা করে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে অকুতোভয় সাহসী রুমান আহত ছাত্রদের ঝুঁকি নিয়ে রক্ষা করে হাসপাতালে পাঠানোর চেষ্টা করেন। শহীদ রুমান বুলেটের সামনে বুক পেতে দিতে দ্বিধাবোধ করেননি। ঘাতকেরা রুমানকে টার্গেট করে। আনুমানিক দুপুর ২:৩০ মিনিটের সময় একটি বুলেট তাঁর মাথায় বিদ্ধ হয়। মুহুর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে শহীদ রুমান। মাথা থেকে রীতিমতো তার মগজ বেরিয়ে এসেছিল। এভাবেই শাহাদাতের খাতায় নাম লেখান শহীদ মো: রুমান। স্থানীয় লোকজন তার গলায় আইডি কার্ড দেখে শনাক্ত করেন তিনি ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালের কর্মচারী। তাৎক্ষণিক তাকে হাসপাতালে পৌছিয়ে দেওয়া হয়। তার হৃদয় বিদারক মৃত্যু দেখে স্থানীয় লোকজন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়দের অনুভূতি প্রতিবেশী মোসা: খাদিজা বেগমের ভাষ্যমতে, শহীদ মোঃ রুমান একজন নম্র, ভদ্র, বিনয়ী ও পরোপকারী মানুষ। নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন। কখনো কারও সাথে খারাপ আচরণ করতেন না। পরিবার সংক্রান্ত তথ্য শহীদ মো: রুমান ছোট থেকেই তার পরিবারে এক সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে আসছিলেন। শৈশবেই তার বাবা মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। বাবা অন্যত্র বিয়ে করার পর শহীদ রুমানের ভাইবোন ও তার মায়ের সাথে যাবতীয় যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। কিছুদিন পর শহীদ রুমানের মা দুই সন্তান সহ অন্যত্র বিয়ে করেন। তার সৎ বাবা একজন রিক্সাচালক। শহীদ রুমানের দুই ভাই ও এক বোন আছে। বাবা-মা দুজনেই বেঁচে আছেন। তাদের পরিবারের কোন স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নেই। ঢাকার হাজারীবাগে একটি টিন শেড বাড়িতে ভাড়া থাকেন। ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : শহীদ মো: রুমান পেশা : হাউজ কিপিং, ল্যাবএইড হাসপাতাল, ধানমন্ডি জন্ম : ১৩/১২/১৯৯৪, ২৯ বছর জন্ম স্থান : হাজারীবাগ ঢাকা পিতা : জনাব মো: স্বপন ব্যাপারী, চায়ের দোকানদার মাতা : মোসা: লুচি বেগম বৈবাহিক অবস্থা : অবিবাহিত পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৫ জন শাহাদাৎ বরণের তারিখ ও সময়কাল : ১৯ জুলাই ২০২৪ দুপুর ২:৩০ আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান ঘটনার স্থান : ধানমন্ডি ০৫ নাম্বার রোড আক্রমণকারী : ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও পুলিশ স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : হাজারীবাগ, ঢাকা