জন্ম তারিখ: ৯ জুন, ২০০৬
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা:মোবাইল বিক্রেতা, শাহাদাতের স্থান : ধানমন্ডি ৩২
হাসিনা পালিয়ে গিয়েছে। দেশ এখন ফ্যাসিবাদ মুক্ত। সারাদেশে বিজয়ের আনন্দ। সবাই ফিরেছে ঘরে। ফেরেনি মো: ইউসুফ মিয়া। আর কোনদিনই তিনি ফিরবেন না। তিনি শহীদ হয়েছেন স্বৈরাচারী হাসিনার পুলিশের বুলেটে। মো: ইউসুফ মিয়া পেশায় ছিলেন পুরাতন মোবাইল ক্রেতা বিক্রেতা। তার একমাত্র বোন ইকরা ৩য় শ্রেণিতে পড়ে। তিনি পারিবারিকভাবে অসচ্ছল। তার বাবা দিনমজুর। রিক্সা চালিয়ে দিনাতিপাত করেন। ঘটনার বিবরণ ৫ আগস্ট আরেক মুগ্ধের মতো করে ইতিহাস রচনা করেছিলেন শহীদ ইউসুফ। মুগ্ধরা যুদ্ধের মাঠে নেমেছিলেন খালি হাতে। অস্ত্র নেই তবু রণাঙ্গনের যোদ্ধা তারা। সহযোদ্ধাদের সেবক। মো ইউসুফ তেমনই এক যোদ্ধা। মাকে বলেন যুদ্ধে যাবেন। দেশ মুক্তির যুদ্ধে। রাজপথে তখন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার বিক্ষুব্ধ আন্দোলন। ৫ আগস্ট বাসা থেকে বের হন ইউসুফ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিজেকে শামিল করতে তিনি বেরিয়ে আসেন রাজপথে। মাকে বলেন আন্দোলনে ছাত্রদের তিনি পানি পান করাবেন। মা ও স্ত্রীর কাছে বিদায় নিয়ে আসেন। প্রিয়তমা স্ত্রীকেও যেন দেখে আসেন শেষবার। সেদিন দুপুরে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে বিজয়োল্লাসে নেমে পড়ে জনতা। সন্ধ্যায় একে একে সবাই নিজ ঘরে ফিরছিল। তখনও ফেরেননি ইউসুফ। স্বজনেরা উৎকন্ঠা নিয়েই খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে লাশ পড়ে থাকতে দেখেন ধানমন্ডি ৩২ এর পথে। ধানমন্ডির পুলিশ, বিজিবি, আওয়ামী লাঠিয়াল বাহিনী মরিয়া। তখনও তারা গুলি ছুড়ছে আন্দোলনকারীদের দিকে। ধানমন্ডি যেন তপ্ত যুদ্ধের ময়দান। এক পক্ষ সশস্ত্র, আরেকপক্ষ নিরস্ত্র। পুলিশ গুলি করছে, বিজিবি গুলি করছে। গুলি করছে আওয়ামী গুন্ডালীগ। পুলিশের গুলিতে নিহত হয়ে রাস্তায় পড়েছিল নিরীহ ইউসুফ। কেউ তার খোঁজ নেয়নি। ঘাতক পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। বুলেটের বিষক্রিয়ায় তার আঘাতের স্থানটি পুড়ে যায়। সন্ধ্যায় স্বজনরা খুঁজতে বের হন ইউসুফকে। অবশেষে বেওয়ারিশ হিসেবে একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। কাছে গিয়ে দেখেন এ যে তার নিজেরই সন্তান। নিজের পবিত্র রক্ত দিয়ে দেশকে মুক্ত করেছেন। জাতি পেয়েছেন গণতন্ত্র, বিদায় হয়েছে স্বৈরাচারের। পরিবারের লোকেরা ইউসুফের লাশ নিয়ে বাড়িতে ফেরেন। পরদিন ৬ আগস্ট জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয় আজিমপুর কবরস্থানে। প্রতিবেশীর অনুভূতি প্রতিবেশী রফিকুল ইসলামের ভাষ্যমতে শহীদ মো: ইউসুফ মিয়া একজন ভদ্র, নম্র ও বিনয়ী মানুষ ছিলেন। তিনি ছিলেন পরোপকারী ও কঠোর পরিশ্রমী। কখনো কারো সাথে খারাপ আচরণ করেননি ইউসুফ মিয়া। ইউসুফ দরিদ্র ঘরের সন্তান। কিন্ত হৃদয়ের বিশালতায় তিনি ছিলেন ধনী ও সমৃদ্ধ। দেশ প্রেম যার হৃদয় জুড়ে দারিদ্রতা তাদের কাছে তুচ্ছ। ইউসুফ যুদ্ধের মাঠের মহানায়কদের একজন। নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন দেশের তরে। তার বিষয়ে অন্যান্য প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলেও জানা যায় তিনি ছিলেন মিশুক প্রকৃতির বন্ধুভাবাপন্ন মানুষ। পারিবারিক অবস্থা ইউসুফ দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ভাড়া বাসায় থাকতেন। বাবা মা স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ছিল তার সুখের সংসার। তার বাবা একজন রিক্সা চালক। তিনি শহীদ হওয়ার পর তার স্ত্রী তার বাবা মায়ের সাথেই থাকছেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে এক সন্তান হয়েছিল। দেড় মাস বয়সে মারা গেছে। একনজরে শহীদ মো: ইউসুফ মিয়া নাম : মো: ইউসুফ মিয়া জন্ম : ০৯-০৬-২০০৬ পিতা : মো: আসাদ মাতা : মোসা: সাথী স্থায়ী ঠিকানা : বৌ বাজার, হাজারিবাগ, ঢাকা বর্তমান ঠিকানা : বাসা ৩৯/১, বৌ বাজার,হাজারিবাগ, ঢাকা পেশা : পুরাতন মোবাইল ক্রয় বিক্রয় শাহাদাত চিত্র : ধানমন্ডি ৩২ এ পুলিশের গুলিতে নিহত তারিখ : ৫ আগস্ট, লাশ রাস্তায় পড়েছিল কবরস্থান : আজিমপুর কবরস্থান প্রস্তাবনা ১. তার স্ত্রীকে আর্থিক সহায়তা প্রদান ২. শহীদের পিতার জন্য মাসিক অনুদান ৩. ব্যবসার জন্য পুঁজি প্রদান করা ৪. বোনের লেখাপড়ার খরচ সরকার বহন করতে পারে ৫. পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা ভাতা প্রদান