Image of আবদুল্লাহ

নাম: আবদুল্লাহ

জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ২০০২

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৩ নভেম্বর, ২০২৪

বিভাগ: খুলনা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : সিএমএইচ, ঢাকা

শহীদের জীবনী

যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার বড়আঁচড়া মাঠপাড়া গ্রামের দিনমজুর আব্দুল জব্বাবের ছেলে মেধাবী ছাত্র আব্দুল্লাহ। মা মাবিয়া বেগম। তারা তিন ভাই ও এক বোন। আব্দুল্লাহ ছিল সবার ছোট। তিনি রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকেই আবদুল্লাহ সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত আব্দুল্লাহর শেষ ইচ্ছা পূরণ হয়নি। লেখাপড়া শেষ করে চাকরিতে প্রবেশ করে মা-বাবার দায়িত্ব নেওয়া হলো না তার। দীর্ঘ ৩ মাসেরও বেশি সময় মা-বাবা ছেলে আব্দুল্লাহর সঙ্গে হাসপাতালে অবস্থান করলেও তাকে বাঁচাতে পারেননি। ১৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ঢকা সিএমএইচে মৃত্যুবরণ করেন মেধাবী এই শিক্ষার্থী। আব্দুল্লাহর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার বাড়ি বড়আঁচড়াসহ গোটা বেনাপোলে। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট হাসিনা সরকার চায় ২০৪১ সাল পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতায় থাকতে। একারণে আ ক ম মোজাম্মেল হকের মাধ্যমে দলীয় নেতা-কর্মীদের ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রদান করে সরকারী চাকুরীতে নিয়োগ দেয়া শুরু করে। আ ক ম মোজাম্মেল ছিলেন মজিব আমলের লম্পট আওয়ামী কর্মী, গাজীপুর এলাকায় ডাকাতি, লুটপাট, অপহরণ, নারী ধর্ষণসহ নানাবিধ অপকর্মের সাথে জড়িত ছিলেন। এবিষয়ে এন্থনী মাসকারেনহাস তার ‘রক্তের ঋণ’ বইতে মোজাম্মেলের বর যাত্রীর গাড়ি আটকে বরকে হত্যা এবং বধুকে ধর্ষণের ঘটনা উল্লেখ করেন। ভয়ানক অপকর্ম করার পরেও শেখ মুজিব তাকে শাস্তি না দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন। শেখ হাসিনাও তার মন্ত্রনালয়ে লম্পট, মদ্যপ, দূর্নীতিবাজ, সেক্যুলারে বিশ্বাসী ও ভারত প্রেমীকদের নিয়োগ দিয়েছিলেন। হাসিনা চেয়েছিলেন কোটার মাধ্যমে নিজ দলীয় কর্মীদের নিয়োগ দিয়ে নিজের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করবেন। মেধাবী ছাত্ররা প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসে। ১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত অধিকার আদায়ে রত ছাত্র-জনতার উপরে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায় পুলিশ র‌্যাব-বিজিবি। এদের সহযোগিতা করে আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী। এদের যৌথ নারকীয়তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন! এই নারকীয়তার সাক্ষী এদেশের মানুষ, রাস্তাঘাট, বিল্ডিং, রাস্তার দু’পাশে গাছের সারি, আকাশ, বাতাস সব সবকিছু। আন্দোলন চলাকালে একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ‘পুলিশের হামলা থেকে রক্ষা পেতে একজন কিশোর বয়সী আন্দোলনকারী বিল্ডিংয়ের কার্নিশ ধরে ঝুলে ছিলো। একজন পুলিশ কাছ থেকে ৩ রাউন্ড গুলি করে। অন্য একজন পুলিশ আরও ৩ রাউন্ড গুলি করে। রাস্তায় আহত হয়ে পড়েছিল একজন আন্দোলনকারী। তাকে যখন অন্য একজন উদ্ধার করতে যায় তাকেও কাছ থেকে গুলি করে পুলিশ। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইমাম হোসেন তাঈম। সেও বন্ধুদের সাথে আন্দোলনে অংশ নেয়। তার বাবা রাজারবাগ পুলিশ লাইনের উপপরিদর্শক আয়নাল হোসেন। সারাদিন কোথাও ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে এলেন ঢাকা মেডিকেলে। অবশেষে ছেলের সন্ধান পেলেন ঢাকা মেডিকেলের মর্গে। সেখানে পড়ে ছিলো তাঈমের নিথর দেহ। পুরো শরীর গুলিবিদ্ধ, রক্তাক্ত। তখন তিনি কাদঁতে কাঁদতে মোবাইলে একজনকে জিজ্ঞেস করেন, “স্যার, আমার ছেলেটা মারা গেছে। বুলেটে ওর বুক ঝাজরা হয়ে গেছে। স্যার,আমার ছেলে আর নেই। একজনকে মারতে কতগুলো গুলি লাগে, স্যার?” ৫ আগস্ট, দেশের মানুষ হাসিনার পলায়নে খুশিতে রাজপথে নেমে আসে। দেশের কোটি কোটি টাকা খরচ করে তৈরী শেখ মুজিবের ম্যুরাল ও মূর্তি গুলো ভাঙ্গতে থাকে। গণভবন ও সংসদ ভবন দখলে নেয়। আবদুল্লাহ ছাত্র-জনতার আন্দোলন একজন সক্রীয় কর্মী। তিনিও মাথায় পতাকা বেঁধে আনন্দে ঘুরে বেড়ান। জানান দেন, এদেশ আমাদের। এদেশকে আমরা নতুন প্রজন্ম গড়ে তুলবো। আর কোন স্বৈরাচার এদেশে থাকবে না। শেখ হাসিনার কাছের মানুষেরা বলেছেন, এই নারী একজন মস্তিস্ক বিকৃত! প্রতিহিংসা থেকে এমন কোন কাজ নেই তিনি করতে পারেন না! মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান রেন্টু তার ‘আমার ফাঁসি চাই’ বইতে উদাহরণ তিনি দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা তাজ উদ্দিনের সন্তান সোহেল তাজ এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার মানসিক বিকৃতি সম্পর্কে একটি ঘটনা উল্লেখ করেন। জনতা মোটেই জানতে পারেনি হাসিনা ও তার কুখ্যাত দূর্নীতিবাজ নেতারা পলায়ন করলেও রেখে গেছে একঝাক ঘৃণিত পুলিশ বাহিনী। এই বাহিনী তাদের শেষ বুলেট থাকা পর্যন্ত নির্বিচারে ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ করতে থাকে।অসংখ্য ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর তাঁতীবাজার মোড়ে বংশাল থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হন আবদুল্লাহ। প্রথমে তাকে মিটফোর্ড এবং পরে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার করে তার মাথা থেকে গুলি বের করা হয়। তবে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকলেও তাকে হাসপাতাল থেকে ১০ আগস্ট জোরপূর্বক ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এরপর তাকে বেনাপোলে নিয়ে আসেন স্বজনরা। বাড়িতে তার অবস্থার অবনতি হতে থাকলে তাকে ১১ আগস্ট রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় ডাক্তাররা দ্রুত আবারও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। গত ১২ আগস্ট সকাল ৭টায় তাকে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা মাথার ভেতরে ইনফেকশন দেখতে পান যা তরল প্লাজমার মতো গলে গলে পড়তে থাকে। আবারও তার অপারেশন করা হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত ২২ আগস্ট তাকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন মেধাবী এই শিক্ষার্থী। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা নিজ চেষ্টায় লেখাপড়া করে এতদুর পর্যন্ত গিয়েছিলেন তিনি। মেধা ও আচরণের কারণে গ্রামে সবার প্রিয় ছিলেন আব্দুল্লাহ। এলাকায় সুপরিচিত ছিলেন মেধাবী শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ। সবার প্রিয়পাত্র আব্দুল্লাহ এভাবে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে কেউই ভাবেনি। বন্ধু সহপাঠী কেউই মানতে পারছে না আব্দুল্লাহ আর নেই। আত্মীয়ের বক্তব্য নিহত আব্দুল্লাহর বাবা আব্দুল জব্বার পেশায় একজন শ্রমিক। অর্থাভাবে কোন ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারেননি তিনি। আব্দুল্লাহ ছোট থেকেই ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন আব্দুল্লাহ। তাকে ঘিরে আকাশসম স্বপ্ন ছিল দরিদ্র বাবা-মা ও ভাই-বোনদের। তাকে হারিয়ে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে পুরো পরিবারে। একনজরে শহীদের পরিচয় নাম : আবদুল্লাহ পেশা : ছাত্র পিতা : আব্দুল জব্বার মাতা : মাবিয়া বেগম আহত ও হওয়ার তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪ শহীদ হওয়ার তারিখ : ১৩ নভেম্বর ২০২৪ শাহাদাত বরণের স্থান : সিএমএইচ, ঢাকা আক্রমণকারী : পুলিশ দাফন করা হয় : মাঠপাড়া বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম-মাঠপাড়া, থানা-বড়আঁচড়া, যশোর ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : দরিদ্র পরিবার, গ্রামে থাকার জন্য ঘর আছে প্রস্তাবনা : ১. মাসিক ও এককালীন সহযোগিতা প্রদান করাএকনজরে শহীদের পরিচয়

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of আবদুল্লাহ
Image of আবদুল্লাহ

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: বাবলু ফরাজী

মুত্তাকিন বিল্লাহ

মো: মাহিম হোসেন

মো: মারুফ হোসেন

মো: কালাম

 মো: ইউসুফ শেখ

সৈয়দ মিথুন মোর্শেদ

মো: ইয়াসিন আলী শেখ

আলম সরদার

মো: আলামিন বিশ্বাস

সাকিব রায়হান

মো: হাফিজ উদ্দীন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo