Image of আক্কাস আলী

নাম: আক্কাস আলী

জন্ম তারিখ: ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮০

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ব্যবসা, শাহাদাতের স্থান : যাত্রাবাড়ি

শহীদের জীবনী

মো: আক্কাস আলী (৪৫) একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি দাঁতের মাজন বিক্রি করতেন। ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় বাস করতেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, কারফিউ ঘোষণা এবং ছাত্রদের আন্দোলন ঠেকাতে সরকারের সকল প্রতিষ্ঠানের সাধারণ ছুটির ফলে মো: আক্কাস আলী বিপদে পড়ে যান। তার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে ধ্বস নামে। রাজপথে মানুষের আনাগোনা কমে যাওয়ায় তিনি দাঁতের মাজন বিক্রি করতে পারছিলেন না। ৫ আগস্ট দেশ মুক্ত হয়েছে শুনে রাস্তায় আনন্দে নেমে এসে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। যেভাবে শহীদ হলেন শেখ হাসিনা সব সময় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করতেন। কাউকে দমন করতে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরোধী আখ্যা দিয়ে ঘায়েল করতেন। কেউ ন্যায্য অধিকার চাইলে রাজাকার বলে গালি পেতেন। তিনি ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে নিজের দলের সন্ত্রাসী ও চাটুকারদের সরকারী চাকুরীতে নিয়োগ দেয়া শুরু করেন। ২০১৮ সালে ছাত্র আন্দোলনের মুখে বাতিল হওয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটাকে আবার ২০২৪ সালের ৫ জুলাই ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। অথচ তিনি ভাব দেখান, ‘এটা হাইকোর্টের বিষয়, তার কিছুই করার নেই’!! একারণে ছাত্ররা স্লোগান বানায়- ‘রাতে আটক দিনে নাটক’! এব্যাপারে আরো একটি ডায়লগ জনপ্রিয়তা পায়- ‘নাটক কম করো পিও’! কোটাপ্রথা বহাল করার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। সুপ্রিম কোর্টে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর স্মারকলিপি দেয়। ছাত্রদের দাবী ছিল অত্যন্ত ন্যায্য এবং শান্তিপূর্ণ। তাদের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে ছাত্রলীগের গুন্ডারা সবাইকে মেরে আহত করে। আহতরা হাসপাতালে গেলে গুন্ডারা সেখানে গিয়ে হামলা চালায়। শেখ হাসিনা চীন সফর থেকে ব্যার্থ হয়ে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আন্দোলনকারী ছাত্রদের রাজাকারের নাতি-পুতি বলে কটাক্ষ করেন। এর প্রতিবাদে রাত নয়টার দিকে ঢাবির বিভিন্ন হলে শ্লোগান ওঠে, ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার! রাজাকার! কে বলেছে কে বলেছে? স্বৈরাচার স্বৈরাচার!’ ১৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্ররা বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী দেয়। অপরদিকে অবৈধ সরকার কারফিউ, সাধারণ ছুটি, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়। রাতে ঘরে ঘরে যেয়ে ছাত্রদের আটক করে। দিনে সমাবেশে লাঠিচার্জ, গুলিবর্ষণ করে হত্যাকান্ড চালায়। প্রায় এক হাজার ছাত্র-জনতা নিহত হয়। কয়েক হাজার আহত হয়। আটক হয় আড়াই হাজার। খুনি হাসিনা গণহত্যার পরিকল্পনা নেয়। ছাত্র-জনতাকে নির্মূল করতে পুরনো অস্ত্রে ধার দেয়। অতীতে আওয়ামী লীগের পুরনো অস্ত্র ছিল কাউকে খুন-গুম করতে চাইলে তাকে জামায়াত-শিবির বলে অভিযুক্ত করা! নিষিদ্ধ করা হয় জামায়াত-শিবির। কিন্তু ১৬ বছর ধরে নির্যাতনের স্বীকার জনতা তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ১৬ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত মার খেয়ে গেলেও ৪ আগস্ট প্রতিরোধ করা শুরু হয়। খুনি হাসিনার দোসরেরা বুঝে ফেলে জনতা ক্ষেপেছে। এখন পালাতে হবে। ৫ আগস্ট ঢাকামুখী লং-মার্চের কর্মসূচি দেয় ছাত্র-জনতা। ৫ আগস্ট সকাল থেকেই ব্যাপক মারমুখী অবস্থান নেয় পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী। সারা ঢাকা শহরে খন্ড খন্ড যুদ্ধ শুরু হয় ছাত্র জনতার সাথে। সকাল সাড়ে দশটার পর হাসিনা পালিয়ে যায়। কর্মরত পুলিশরা এই খবর না জানায় তারা জনতার সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। অনেক মানুষকে তারা খুন করতে থাকে। দুপুর ১ টায় মানুষ জেনে যায়, হাসিনা পালিয়ে গেছে। চরম আনন্দে সারাদেশে গলিতে গলিতে মিষ্টি বিতরণ ও ঈদ মোবারক বলে কোলাকুলি করতে থাকে মানুষ। রাস্তায় রাস্তায় মানুষ সিজদা দিয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতে থাকে। দেশে বিভিন্ন মোড়ে থাকা স্বৈরাচার মুজিবের সকল মুর্তি ভেঙ্গে দেয় আন্দোলনকারী ছাত্রজনতা। পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায় ও আত্মগোপন করে। অল্প সংখ্যক ছাত্রজনতার রোষাণলে পড়ে আহত ও নিহত হয়। রাজধানীতে জনতা সংসদ ও গণভবনে হাজির হয়ে শোকরানা নামাজ আদায় করে। খুনি হাসিনা দেশ ছেড়ে ভেগে গেলে জনতা আনন্দে রাজপথে নেমে আসে। মোঃ আক্কাস আলী জনতার কাতারে সামীল হন। যাত্রাবাড়ি এলাকায় পুলিশ তখনো হাসিনার নির্দেশে গুলি ছুড়ছিল। বিকেল সাড়ে চারটায় তিনিও গুলিবিদ্ধ হন। সাড়ে পাঁচটার সময় মৃত্যুবরণ করেন। কেমন আছে তার পরিবার আক্কাস আলী স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে ২ রুমের ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তার সন্তান আবদুর রব হিফজ শেষ করে একটি মাদরাসায় অধ্যয়ন করছে। তার গ্রামে কোন জমি নেই। পরিবারটির বর্তমানে কোন আয় নেই: শহীদের স্ত্রী বলেন, সৎ মানুষ ছিলেন। সব সময় পাঞ্জাবী-পায়জামা ও টুপি পরে থাকতেন। ছেলে বড় আলেম হবে এই স্বপ্ন দেখতেন। প্রস্তাবনা ১. মাসিক ও এককালীন সহযোগিতা প্রদান করা ২. সন্তানের লেখা-পড়ায় সহযোগিতা প্রদান করা নাম : মোহাম্মদ আক্কাস আলী পেশা : ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জন্ম তারিখ : ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮০ পিতা : মো: সোনা মিয়া মাতা : মোমেলা খাতুন স্ত্রী : লাভলী আক্তার আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ০৫ আগস্ট ২০২৪ শাহাদাত বরণের স্থান : যাত্রাবাড়ি আক্রমণকারী : পুলিশ দাফন করা হয় : জুরাইন কবরস্থানে বর্তমান ঠিকানা : দোস্তর গলি, পূর্ব ধুনাইরপাড়, গেন্ডারিয়া, ঢাকা স্থায়ী ঠিকানা : ঝালামতি, সাইফ পাড়া, শ্রীনগর, মুন্সিগঞ্জ ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : বাড়িতে ঘরের জমি আছে।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of আক্কাস আলী

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: মনির হোসেন

তামিম শিকদার

মুহাম্মদ জান শরীফ

মো: শাকিল হোসেন

মো: জুয়েল রানা

মো: সাইফ আরাফাত শরীফ

নুর মোহাম্মদ সরদার

ফারহানুল ইসলাম ভুইঁয়া

আশিকুল ইসলাম রাব্বি

মো: অহিদ মিয়া

মো: মিরাজুল ইসলাম অর্নব

শেখ হৃদয় আহমেদ শিহাব

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo