Image of মো: সাইফুল ইসলাম তন্ময়

নাম: মো: সাইফুল ইসলাম তন্ময়

জন্ম তারিখ: ২ এপ্রিল, ২০০২

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ইলেকট্রিশিয়ান শাহাদাতের স্থান : কুতুবখালী মাদরাসার সামনে, যাত্রাবাড়ী

শহীদের জীবনী

শহীদ পরিচিতি সাইফুল ইসলাম তন্ময় ২ এপ্রিল ২০০২ সালে কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মোঃ শফিকুল ইসলাম এবং মা রেবেকা সুলতানা। বাবা বাস কাউন্টারে কাজ করেন। সাইফুল বেঁচে থাকার সময় ইলেক্ট্রিশিয়ানের কাজ শিখতেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকেই তার মামার সাথে রাজপথে ছিলেন। আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ১৮ জুলাই, বৃহস্পতিবার, কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রদের “কমপ্লিট শাটডাউন” শুরু হয় এদিন। এর আগে ১৭ জুলাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় তারা। কর্মসূচি চলাকালে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের উপরে ছাত্র নামধারী বিতর্কিত সংগঠন ছাত্রলীগ ও স্বৈরাচারী সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্য সংরক্ষিত ভয়ানক মারণাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সারাদেশে ২৭ জনের অধিক হত্যাকান্ডের খবর পাওয়া যায়। অবরোধকারীদের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারা দেশের মানুষ সমর্থন জানায়। আওয়ামী লীগ ছাত্রদের উপরে দোষ চাপাতে ও তাদের কঠোরভাবে নির্মূল করতে মহাখালীতে সেতু ভবন, স্বাস্থ্য ভবন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ভবন, দুর্যোগ ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় আগুন দেয়। শতাধিক গাড়ি পোড়ায়। দুই দফা আগুন দেয় রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশনে। রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমে নিয়মিত প্রচার করা হয় ছাত্ররা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। শেখ হাসিনা হত্যাকান্ডে নিহত হওয়া ছাত্রদের দেখতে না গিয়ে তুমুলভাবে সমালোচিত হন। এমপি পলকের নির্দেশনায় ১৭ জুলাই থেকে বন্ধ রাখা হয় মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট। ফলে কার্যত ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে গোটা দেশ। পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করতে ও ছাত্রদের হত্যা করতে সারাদেশে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এইচ এস সি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় গুলো থেকে সাধারণ ছাত্ররা সন্ত্রাসী ছাত্রলীগকে বহিস্কার করে নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী প্রশাসন ছাত্রলীগের অবস্থান ধরে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার ও হল ত্যাগের ঘোষণা দেন। ছাত্ররা পাল্টা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মচারীদের তাদের নিজ নিজ বাসস্থান ত্যাগের ঘোষণা প্রদান করেন। সন্ধ্যায় পুলিশ-বিজিবি-সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ যৌথভাবে হামলা চালিয়ে হলগুলো পাল্টা দখলে নেয়। ছাত্রদের কঠোরভাবে নির্যাতন করে। শুরু হয় ৯ দফা কর্মসূচী। ছাত্র নেতৃবৃন্দকে আটক করে গুম করা হয়। কাজটি করেন ‘ভাতের হোটেলের মালিক খ্যাত’ ও ‘হাউন আংকেল’ উপাধীপ্রাপ্ত ডিবি হারুন। ক্ষোভের ও প্রতিবাদের মুখে ছাত্র নেতাদের থেকে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে মর্মে স্বাক্ষর গ্রহণ করে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। দেশ আরো খারাপ অবস্থার দিকে ধাবিত হতে থাকে। বিদেশ থেকে প্রবাসীরা প্রতিবাদে রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ করায় হাসিনা সরকার আরো বেকায়দায় পড়ে। ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতা অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পুলিশ, বিজিবি, আনসার, র‌্যাব ও ছাত্রলীগকে পরাজিত করতে থাকে। এতে স্বৈরাচারী সরকারের পদত্যাগ তরান্বিত হয়। ১ আগস্ট ২০২৪ আওয়ামী লীগ ও তাদের সকল বাম জোট মিলে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করে। তাদের ইচ্ছা এভাবে গণহত্যা চালাবে এবং আন্দোলন দমণ করবে। এরকম অতীতে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন আন্দোলন নির্মুল করেছিল। ছাত্র-জনতা আরো গর্জে ওঠে। দেশে নিন্দার ঝড় ওঠে। ফেইসবুক আওয়ামী বিরোধী লেখায় সয়লাব হয়। একে একে আওয়ামী লীগের আন্দোলন দমাতে অপকর্ম গুলো প্রচার হতে শুরু করে। নিরিহ ও মেধাবী ছাত্রদের হত্যাকান্ডের ঘটনা বিশ্বমডিয়ায় আলোচিত হতে থাকে। যেভাবে শহীদ হলেন সাইফুল দেশ প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে ছাত্রদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যুক্ত হন। তিনি নিজেকে সাধারণ জনতার কাতারে দাঁড় করিয়ে উপলব্ধি করেন তিনিও সরকারী অপশাসন ও অব্যবস্থাপনায় জুলুমের স্বীকার একজন নাগরিক। তার কোন মূল্য স্বৈরাচারী সরকারের কাছে নেই। তার বাবা পরিবহণ সেক্টরে কাজ করার কারণে তিনি নিজ চোখে দেখেছেন পরিবহণ সেক্টরের অরাজকতা। জুলাই মাস জুড়ে রাজপথে তিনি অত্যন্ত সক্রীয় ছিলেন। ৫ আগস্টের কয়েকদিন আগে পুলিশের ছররা গুলিতে আহত হয়েছিলেন। ১৮ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তার মামাসহ সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ৫ আগস্ট সকাল ১০ টা, মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ। সারাদেশ উত্তাল। এসময় মাকে বলেন, ‘’আমি ৫ মিনিটের মধ্যে আসছি!’’ ওটাই ছিল তন্ময়ের মায়ের সাথে শেষ কথা। তন্ময়ের মামার প্রিন্টের ব্যবসা আছে। তিনিও সেদিন রাজপথে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। ৫ আগস্ট জোহরের সময় ফোনে জানা যায়, সাইফুল ইসলাম তন্ময় গুলি খেয়েছেন। গুলিটি মাথার পেছনে লেগেছে। পরিবার সারাদিন বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে অবশেষে ঢাকা মেডিকেলে শহীদের লাশ খুঁজে পান। পরদিন জানাজা শেষে দনিয়া পঞ্চায়েত কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। কেমন আছে তার পরিবার সাইফুল ইসলাম তন্ময়ের পরিবারে বাবা মা ছাড়াও নানী থাকেন। তার বড় বোন নারগিস সুলতানা বিবাহিতা। ছোট ভাই রাফি ইসলাম তানিম এলাহাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। বোন সানজিদা ইসলাম এলাহাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে পড়ে। তন্ময়ের বাবা শফিকুল ইসলাম বাস কাউন্টারে ছোট চাকুরী করেন। তার মাসিক আয় ১০ হাজার টাকা। মা রেবেকা সুলতানা গৃহিণী। পরিবারটি ঢাকা দনিয়া এলাকায় একটি জরাজীর্ন পুরনো বাড়িতে ভাড়া নিয়ে বসবাস করে। প্রস্তাবনা ১. মাসিক ও এককালীন সহযোগিতা প্রদান করা ২. ভাই-বোনের লেখা-পড়ায় সহযোগিতা প্রদান করা একনজরে শহীদের পরিচয় নাম : সাইফুল ইসলাম তন্ময় পেশা : ইলেকট্রিশিয়ান জন্ম তারিখ : ২ এপ্রিল ২০০২ পিতা : মো: শফিকুল ইসলাম মাতা : রেবেকা সুলতানা আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ০৫ আগস্ট ২০২৪ শাহাদাত বরণের স্থান : কুতুবখালী মাদরাসার সামনে আক্রমণকারী : পুলিশ দাফন করা হয় : দনিয়া পঞ্চায়েত কবরস্থানে বর্তমান ঠিকানা : ৫৭৫, নাসির উদ্দিন রোড, দনিয়া, যাত্রাবাড়ি, ঢাকা স্থায়ী ঠিকানা : এলাহাবাদ, দেবিদ্বার, কুমিল্লা ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : বাড়িতে ঘরের জমি আছে।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: সাইফুল ইসলাম তন্ময়
Image of মো: সাইফুল ইসলাম তন্ময়
Image of মো: সাইফুল ইসলাম তন্ময়

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: আসলাম

মো: রিয়াজ

মো: সাফাকাত সামির

মোঃ মাহমুদুল হাসান জয়

শাহরিয়ার খান আনাস

আবদুল রাকিব

রাসেল মিয়া

মো: ইসমাইল

নাসিব হাসান রিয়ান

ইমন হোসেন আকাশ

মো: গোলাম নাফিজ

তাহিদুল ইসলাম

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo