Image of তাহিদুল ইসলাম

নাম: তাহিদুল ইসলাম

জন্ম তারিখ: ২ মার্চ, ২০০২

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ছাত্র, কবি নজরুল কলেজ শাহাদাতের স্থান : ফার্মগেট, ঢাকা

শহীদের জীবনী

শহীদ পরিচিতি তাহিদুল ইসলাম বরিশালের কৃতি সন্তান ও জালিমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কন্ঠস্বর। তিনি ২ মার্চ ২০০২ সালে বরিশালের বানারিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম জনাব মান্নান সরদার এবং মায়ের নাম লাভলী বেগম। তিনি কবি নজরুল সরকারী কলেজের অনার্সের ছাত্র ছিলেন। সচেতন নাগরিক হয়ে তাহিদুল লক্ষ্য করেছেন বাংলাদেশে জন্ম গ্রহণ করেও তিনি স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারছেন না। প্রশাসনের দূর্নীতি তাকে ভাবায়। তিনি খেয়াল করে দেখলেন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যায়বহুল ও চাকুরীবান্ধব নয়। দেশে ক্রমাগত শিক্ষিত বেকার বাড়ছে। পরীক্ষা পদ্ধতি তুলে দিয়ে শিশুদের মূর্খ বানানো হচ্ছে। সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয়েছে। মুজিববাদী হতে ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।পাড়ায়, ইউনিয়নে, উপজেলায়, জেলায় কোটি কোটি টাকা খরচ করে শেখ মুজিবের ম্যুরাল ও মূর্তি স্থাপন করে দেশের জনগণের টাকা অপচয় করা হয়েছে। লেখাপড়া না করেও চাকুরী পাচ্ছে দূর্বল মেধার ও ছাত্রলীগের কর্মীরা বাহিনী। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ছাত্ররা সমস্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত। নামাজি ছাত্রদের ছাত্র শিবির আখ্যা দিয়ে পেটানো ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়। ইসলামী ব্যক্তি, আলেম-ওলামা, ইসলাম বিস্তারে রত প্রতিষ্ঠানকে জঙ্গী আখ্যা দিয়ে নির্বিচারে আটক, বন্দী, ক্রসফায়ার, গুম, খুন এবং দেশ থেকে বহিস্কার করা হয়। দেশের টাকা পাচার করে বিদেশে বেগম পাড়ার মতো স্থাপনা তৈরী করেছে আওয়ামী রাজনীতিবিদেরা। বাংলাদেশের রিজার্ভ নিঃশেষ হয়ে যাওয়ায় এক অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে চলতে থাকে দেশ। দেশের ভবিষ্যত ভেবে তিনি উৎকণ্ঠিত হয়ে উঠেন। তাহিদুল সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। জালিমদের নির্মূল করতে কোটা সংস্কার আন্দোলন তাকে সেই সুযোগ এনে দেয়। যেভাবে শহীদ হলেন শেখ হাসিনা ২০১৮ সালে মেধাবীছাত্রদের আন্দোলনের মুখে কোটা পদ্ধতি বাতিল করেন। তারপরে থেকে তিনি সুযোগ খুঁজছিলেন কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে তার কর্মী বাহিনীকে সরকারী চাকুরীতে নিয়োগ দিতে। ২০২৪ সালে ৫ জুন শেখ হাসিনার নির্দেশে হাইকোর্ট সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় প্রদান করে। পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা বিক্ষোভ করে। ছাত্ররা ৩০ জুনের মধ্যে রায় বাতিল করার দাবী জানায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবীর সাথে সাথে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজসমূহ তাদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে রাজপথে নেমে আসে। দিনে দিনে ছাত্রদের আন্দোলন যেমন জোরদার হয় তেমনি আওয়ামী সন্ত্রাসীদের তান্ডব বাড়তে থাকে। ধর্ষক ও টোকাই লীগ নামে খ্যাত ছাত্রলীগ ছাত্রদের সমাবেশ গুলোতে দা, কিরিচ, রড, শর্টগান প্রভৃতি নিয়ে হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত ও আহত করে। আহত ছাত্ররা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানেও তাদের প্রচন্ডভাবে আক্রমন করে। আওয়ামী লীগ যুদ্ধক্ষেত্রে নামার মত সমস্ত অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে ছাত্র হত্যায় মেতে উঠে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রদের পিটিয়ে বের করে দিলেও এসময় রাজপথে হাজির হয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকার সকল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা। কবি নজরুল কলেজ আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। একলেজের সাহসী শিক্ষার্থীরা কারফিউ ও মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ থাকার পরেও অত্যাধুনিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। অস্ত্রে সজ্জিত টোকাই লীগকে পিছু হটতে বাধ্য করে। আওয়ামী লীগ তার আমলে যেকোন প্রতিবাদী ব্যক্তিকে রাজাকার ও স্বাধীনতা বিরোধী আখ্যা দিয়ে বিশেষ করে জামায়াত-শিবির অভিযোগ তুলে নির্মমভাবে দমন করতো। এক্ষেত্রে বরাবরের মতই বিরোধী দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বি এন পি নিরব ভূমিকায় থাকতো। তারা কখনো আক্রান্ত ও মজলুমের পক্ষে সমর্থন ও সহযোগিতা যোগায়নি। জামায়াতে ইসলামীর মজলুম নিরীহ আলেম এবং বি এন পির নেতাদের রাজাকার মিথ্যা রাজাকার আখ্যা দিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিলেও বিএনপি প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ জানাতে এগিয়ে আসেনি। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন, আওয়ামী লীগ বিএনপির বড় বড় নেতাদের টাকার বিনিময়ে কিনে ফেলেছিল। যেকারণে দেশে সমস্ত অন্যায় জুলুম, লুটপাট, বিদেশে অর্থ পাচারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির উল্লেখযোগ্য ভূমিকা না থাকায় শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র বানাতে ও ভারতীয় আধিপত্যকে মেনে নিতে সচেষ্ট হয়। শেখ হাসিনা বুঝতে পেরেছিল এদেশে বিএনপিকে কিনে ফেলা সহজ হলেও বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামী ও ছাত্র শিবিরকে কেনা সম্ভব নয়। তাই বার বার রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী আখ্যা দেয়ায় দেশের মানুষ বুঝতে পেরেছিল এদেশের প্রকৃত শত্রু হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। স্বৈরতন্ত্রের অনুপ্রেরণা হচ্ছে শেখ মুজিব। জনতা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে মুজিববাদকে উপড়ে ফেলার। শেখ হাসিনা তার প্রিয় সেক্যুলার দল গুলোকে সাথে নিয়ে ১ আগস্ট জামায়াত ও শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। শেখ হাসিনার ইচ্ছা প্রতিবাদী ছাত্র-জনতাকে জামায়াত-শিবির অভিযোগ তুলে বিগত ১৬ বছরের মতো নির্মূল করবে। ছাত্র জনতা হাসিনার গোপন ইচ্ছা বুঝতে পেরে আন্দোলন আরো জোরদার করে। ৪ আগস্ট ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। ছাত্র-জনতা বুঝে ফেলেছে ঘাতক বাহিনীকে কিভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। এদিন সারাদেশে প্রচন্ড বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভে অত্যাধুনিক অস্ত্রের বিপরীতে ছাত্ররা ইটের টুকরো দিয়ে প্রতিরোধ করে। বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-জনতার হাতে কিছু আওয়ামী পুলিশ নিহত হয়। হাসিনা এমন মেসেজ পেয়ে ভাবতে শুরু করে ভিন্ন কিছু করার। এদিন ছাত্র-জনতার মধ্য থেকে ১৩০ জন শহীদ হয়। এই শহীদের তালিকায় ছিলেন শহীদ তাহিদুল ইসলাম। এদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ফার্মগেট ফুটওভার ব্রিজের নিচে অবস্থান করছিলেন তাহিদুল। তিনি ছাত্রদের অবস্থান করতে উৎসাহ দিচ্ছিলেন। তিনি ছাত্রদের আশ্বাস দিচ্ছিলেন, ‘আমরা টিকে গেলে জালিম পালিয়ে যাবে। আমরা পালিয়ে গেলে জালিম টিকে যাবে।‘ ৪ আগস্ট পুলিশ অন্যদিনের চেয়ে ভয়ংকররুপে আক্রমণ চালায়। ধারণা করা হয় উচু ভবনের উপরে থেকে স্নাইপারের মাধ্যমে তাহিদুলকে হত্যা করা হয়। তার মুখের নিচে থুতনির একাংশ গুলিতে অদৃশ্য হয়ে যায়। ঘটনার পরপরই তাহিদুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মূলত রাজপথেই তাহিদুল শাহাদাত বরণ করেন। আত্মীয়ের বক্তব্য তাহিদুল ইসলামের বড় ভাই তরিকুল ইসলাম জানান, শেখ হাসিনাসহ ৪৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান ও আলী আরাফাত, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ এবং সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে। আমরা আমাদের ভাই হত্যার বিচার চাই। প্রস্তাবনা: ১. মাসিক ও এককালীন সহযোগিতা প্রদান করা একনজরে শহীদের পরিচয় নাম : মো: তাহিদুল ইসলাম পেশা : ছাত্র, কবি নজরুল কলেজ জন্ম তারিখ : ২ মার্চ ২০০২ পিতা : মো: মান্নান সরদার মাতা : লাভলী বেগম আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ৪ আগস্ট ২০২৪ শাহাদাত বরণের স্থান : ফার্ম গেইট, ঢাকা আক্রমণকারী : পুলিশ দাফন করা হয় : বানারিপাড়া, বরিশাল বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা : সরদার বাড়ি, গ্রাম- বড় চাউলা কাঠি, ডাকঘর- চাখার, বানারিপাড়া, বরিশাল ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : গ্রামে নিজস্ব বাড়ি আছে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of তাহিদুল ইসলাম
Image of তাহিদুল ইসলাম
Image of তাহিদুল ইসলাম
Image of তাহিদুল ইসলাম
Image of তাহিদুল ইসলাম
Image of তাহিদুল ইসলাম
Image of তাহিদুল ইসলাম

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

শাহরিয়ার হোসেন রোকন

বাবুল হাওলাদার

হাফিজুল শিকদার

মো: পারবেজ মিয়া

 মো: ইসহাক জমদ্দার

জিল্লুর শেখ

মো: রমজান আলী

শেখ মেহেদী হাসান জুনায়েদ

মো: সুজন

মো: আসলাম

অজ্ঞাত

অজ্ঞাত

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo