Image of শাওন তালুকদার

নাম: শাওন তালুকদার

জন্ম তারিখ: ১৫ মার্চ, ২০০৩

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: আলমারী মিস্ত্রী শাহাদাতের স্থান : যাত্রাবাড়ি

শহীদের জীবনী

“শহীদ শাওন: রাষ্ট্রীয় নির্মমতার বলি” শহীদ পরিচিতি শাওন তালুকদার সদা হাস্যোজ্জ্বল একজন আলমারী মিস্ত্রী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে গোপনে নির্যাতনের দৃশ্য ধারণ করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। শাওন তালুকদার পিতা নুরনবী তালুকদার ও মাতা মোসাম্মত বেবির পরিবারে ২০০৩ সালে টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণ করেন। শাওনের মা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বাবা নুরনবী তালুকদার রিক্সা চালক। তিনি অন্যত্র বিয়ে করেছেন। শাওনের ছোট ভাই নয়ন একজন শ্রমিক। তার ছোট বোন নুরজাহান দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। শাওনের মাসিক আয় ছিল ১৫ হাজার টাকা। তিনি মৃত্যুর ১ সপ্তাহ আগে বিয়ে করেছিলেন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট আওয়ামীলীগ অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেই দলীয়করণ, লুটপাট, অর্থ পাচার, অবিচার প্রতিষ্ঠা, সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ নানামূখী অন্যায় কাজের বিস্তার ঘটিয়েছে। দেশের মানুষকে জিম্মি করে দেশটাকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। ১৯৭৪ সালে মুজিব এমপি-মন্ত্রীদের লুটপাটের ফলে দেশে ভয়াবহ দূর্ভিক্ষ শুরু হয়েছিল। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পরবর্তী বছরগুলোয় অত্যাচারের মাত্রা এতো তীব্র হয় যে সরকারের সমালোচনা করলেই জেল-জুলুম, গুম-খুন শুরু হয়ে যায়। বিদেশ থেকে উচ্ছারে ঋণ গ্রহণ করার কারণে এবং আর্থিক লুটপাটের ফলে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায় অত্যাধিক ভাবে। নিম্ন আয়ের মানুষ ৩ বেলা খাবার খেতে পারেনা। গরুর গোস্তের দাম আওয়ামী আমলে বেড়ে হয় ১ হাজার থেকে ১২ শত টাকা। অন্যান্য দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রন করতে না পারায় সাধারণ পরিবার গুলো তাদের সন্তানদের লেখাপড়া না করিয়ে বিভিন্ন কাজে যুক্ত করে দিতে বাধ্য হয়। শাওন তালুকদারের বাবাও এমন কাজ করেছিলেন। তিনি ৩ বেলা খাওয়াতে না পেরে তার দুই ছেলে সন্তানকে কাজে লাগিয়ে দেন। এছাড়া ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত করোনার কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা চরমভাবে ব্যহত হয়। এসময়ে প্রচুর পরিমাণে ছাত্র-ছাত্রী ঝরে যায়। ইতোঃপূর্বে দেখা যায় সাধারণ লেখাপড়া শিখে হাসিনার দূর্নীতিবাজ প্রশাসনের কারণে চাকুরীর ব্যবস্থা করতে না পারায় সাধারণ পরিবার গুলো শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে মুখ ফেরানো শুরু করে। বাংলাদেশের সর্বত্র অব্যবস্থাপনার ফলে দেশ মূলত অকার্যকর দেশে পরিণত হতে থাকে। এমন অবস্থায় দেশের সচেতন সাধারণ মানুষ অনিয়মের বিরুদ্ধে কিছু বলার সুযোগ পেতোনা। সমগ্র মিডিয়া কথা বলতো হাসিনার সুরে। এসময় অনলাইন মাধ্যম যেমন ফেইসবুক ও ইউটিউবের নিউজ ছিল একমাত্র ভরসা। শেখ হাসিনা তার ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে নিজ দলের অদক্ষ, চাটুকার, সন্ত্রাসী ভারত প্রেমিকদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অন্যায়ভাবে নিয়োগ দিয়ে অফিস আদালতসহ সমস্ত সেক্টরকে আওয়ামীকরণ করেন। দেশের সকল ক্ষেত্র অসৎ লোকেদের হাতে থাকায় সর্বত্র নৈরাজ্য শুরু হয়। শেখ হাসিনা আগে থেকেই মেধাবীদের অধিকার হরণ করে নিজ লোকেদের সরকারী চাকুরীতে নিয়োগ দিচ্ছিলেন। ছাত্ররা এ ব্যাপার নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিল। তিনি চাইলেন ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটার মাধ্যমে আরো অধিক সংখ্যক নিজ দলের কর্মী নিয়োগ দিতে। কিন্তু ২০১৮ সালে ছাত্ররা আন্দোলন করে এর বিরুদ্ধে। ফলে কোটা পদ্ধতি ২০১৮ সালে আন্দোলনের মুখে বাতিল করেছিলেন শেখ হাসিনা। ২০২৪ সালে অবৈধ ভাবে আবার ক্ষমতা দখল করার পরে তিনি নিজের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত ও চিরস্থায়ী করতে দলীয় সন্ত্রাসী, চাটুকার ও ভারতীয়দের সরকারী চাকুরীতে নিয়োগের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এমনিতেই দেশে জনসংখ্যার আড়াই কোটি বেকার জীবন যাপন করছিলেন তার উপরে প্রায় ২৬ লক্ষ ভারতীয় অবৈধভাবে চাকুরী করে যাচ্ছিল। জনতা আরো জানতে পেরেছিল কয়েক লাখ টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট কিনতে পাওয়া যেত। মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক অর্থের বিনিময়ে নিজ দলের কর্মীদের মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট প্রদান করতেন। ২৫ জুন ২০১৯ সালের ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত হয় দেশে ৮০ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। ছাত্ররা নিয়মিতভাবে দেশব্যাপী কর্মসূচী দিতে থাকে। অপরদিকে হাসিনার সন্ত্রাসী বাহিনী নির্মমভাবে ছাত্র-জনতার সমাবেশে নির্যাতন চালাতে থাকে। হাজার হাজার আহত ও নিহত হতে থাকে। ছাত্র জনতার আন্দোলন কোটা থেকে পরিণত একদফার আন্দোলনে। ১ আগস্ট শেখ হাসিনা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তারা বুঝতে পেরেছিল এ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে আছে জামায়াত ও শিবিরের কর্মীবাহিনী। পুলিশকে নির্দেশ দেয় গণহত্যা চালানোর। ৪ আগস্ট সর্বত্র নিরিস্ত্র ছাত্র-জনতা অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। ৫ আগস্ট খুনি হাসিনা ও তার চাটুকার বাহিনী সেনা প্রধানের সহায়তায় পলায়ন করে। যাওয়ার আগে তার বাহিনীকে গণহত্যার নির্দেশ দিয়ে যায়। যেভাবে শহীদ হলেন ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার একদফা দাবীর ফলে খুনি হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার এমন খুশির খবরে সাধারণ মানুষের পাশে শহীদ শাওন বিজয়মিছিলে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। জুলাই মাসের আন্দোলনের পরিপূর্ণ তথ্য মিডিয়াগুলো প্রচার না করলেও শাওন তালুকদারদের মতো কিছু দুঃসাহসী তরুণ এগিয়ে আসে। তাদের ধারণ করা ছবি এবং ভিডিও গুলো দেখে দেশবাসী আওয়ামী লীগের নির্মমতা বুঝতে পারে। শাওন অন্যান্য দিনের মতো ৫ আগস্ট বিকাল ৪ টার দিকে পুলিশের জনতার উপরে গুলিবর্ষণের ভিডিও ধারণ করছিলেন। আওয়ামী বাদী পুলিশ তাকে চিহ্নিত করে এবং তার মাথায় গুলি করে। শহীদ হয়ে যায় শাওন তালুকদার। শাওনের মৃত্যুর খবর কাজলা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তার নিজ বাড়ি ও এলাকায় শোকের মাতম শুরু হয়। কাজলার পাড় কবরস্থানে জানাযা শেষে তাকে দাফন করা হয়। কেমন আছে তার পরিবার: শাওনের মা ০থাকেন। ছোট ভাই ও ছোট বোন নানীর আশ্রয়ে বসবাস করে। তার স্ত্রী বিয়ের ১ সপ্তাহ পর বিধবা হয়ে যায়। প্রস্তাবনা : ১. শহীদের স্মৃতি সংরক্ষনে উদ্দ্যোগ গ্রহন একনজরে শহীদের পরিচয় নাম : শাওন তালুকদার পেশা : আলমারী মিস্ত্রী জন্ম তারিখ ও বয়স : ১৫ মার্চ ২০০৩ পিতা : নুর নবী তালুকদার (রিক্সা চালক) মাতা : মৃত মোসা: বেবি ভাই : নয়ন, বয়স ১৮, পেশা শ্রমিক বোন : নুরজাহান, বয়স-১০ বছর, ২য় শ্রেণি আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪, সোমবার, আনুমানিক সন্ধ্যা ৭ টা শাহাদাত বরণের স্থান : যাত্রাবাড়ি থানার সামনে দাফন করা হয় : কাজলা কবরস্থান স্থায়ী ঠিকানা : কাজলার পাড়, যাত্রাবাড়ি, ঢাকা ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : কোন সম্পদ নেই

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of শাওন তালুকদার

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

হাসনাইন আহমেদ

মো: ইউসুফ মিয়া

আব্দুর রহমান জিসান

মিরাজ হোসেন

মো: জসিম

মো: আহমাদ আব্দুল্লাহ

মো: সাব্বির হাওলাদার

হাফেজ মোহাম্মদ জুবায়ের আহমাদ

মো: মোসলেহ উদ্দিন

মো: আসলাম

 জোবাইদ হোসেন ইমন

ওয়াসিম শেখ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo