Image of মো: আয়াতুল্লাহ

নাম: মো: আয়াতুল্লাহ

জন্ম তারিখ: ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: সিলেট

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: গার্মেন্টস কর্মী, শাহাদাতের স্থান : আনসার ভিডিপি একাডেমির সামনে

শহীদের জীবনী

নিহত আয়াতুল্লাহর বাড়ি সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার চামরদানী ইউনিয়নের জলুষা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের কৃষক মো: সিরাজুল ইসলাম ও শুভা আক্তার দম্পতির চার ছেলেমেয়ের মধ্যে আয়াতুল্লাহ সবচেয়ে ছোট ছেলে। আয়াতুল্লাহর জন্ম ২০০৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর গ্রামের বাড়িতে। তিনি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক কলাবাঁধা এলাকাধীন দক্ষিণ ভান্নারার মারকাযুল ঈমান মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি নুরানি মাদ্রাসায় কিছুদিন শিক্ষকতাও করেছেন। সর্বশেষ আয়াতুল্লাহ তার বড় ভাই সোহাগ মিয়ার সাথে দরিদ্র পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে এ বছর জুলাই মাসে খণ্ডকালীন চাকরিতে যোগ দেন গাজীপুরের একটি ইন্ডাস্ট্রিতে। বড় ভাইয়ের সাথে কালিয়াকৈরের জামতলা এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। তারা সেখানে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকের কাজ করতে। ঘটনা সংক্রন্ত বিবরণ শহিদের পিতা জানান, গত ৫ আগস্ট সোমবার গাজীপুরের শফিপুরে অবস্থিত আনসার ভিডিপি একাডেমির সামনে গুলিবিদ্ধ হয় আমার ছোট ছেলে মো: আয়াতুল্লাহ (১৯)। তার বড় ভাই সোহাগ মিয়ার সঙ্গে ওইদিন সে স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর বিজয়মিছিলে যোগ দিয়েছিল। মিছিলটি বিকেল পাঁচটার দিকে কালিয়াকৈরের মৌচাক পয়েন্ট থেকে আনসার একাডেমির কাছে পৌঁছালে এলোপাতাড়ি গুলি আসতে থাকে। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে ছাত্র-জনতা। দুই ভাই পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সাড়ে ৫টার দিকে আয়াতুল্লাহর সঙ্গে মোবাইল ফোনে সর্বশেষ কথা হয় সোহাগের। এরপর থেকে ফোন রিসিভ হচ্ছিল না। কোথাও খোঁজ মিলছিল না আয়াতুল্লাহর। যেভাবে শহীদের লাশের খোঁজ পেলেন ছেলের সন্ধানে গ্রামের বাড়ি থেকে গাজীপুর ছুটে যাই আমি। ধরনা দেই আনসার একাডেমিতে। সন্ধান চাই ছেলের, জীবিত না থাকলে লাশটি অন্তত ফেরত পাওয়ার আকুতি জানাই। কিন্তু কোনো সহযোগিতা পাইনি সেখান থেকে। ছুটে যাই একের পর এক হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। লাশের স্তূপে খুঁজতে থাকি নিজের সন্তানকে। এরপর শূন্য হাতে বাড়ি ফিরে আসি। ঘটনার পর গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানায় ছোট ভাইয়ের সন্ধান চেয়ে বড় ভাই মো: সোহাগ মিয়া থানায় জিডি করে (জিডি নং ৩৭৫, তাং ১৬/৮/২০২৪ইং)। একটি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত খবরের সূত্রে ১১ দিন পর ১৬ আগস্ট ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে আয়াতুল্লাহর লাশের সন্ধান পায় তার পরিবার। সেখান থেকে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সহায়তায় ১৭ আগস্ট শনিবার বিকেলে হাসপাতাল থেকে লাশটি গ্রহণ করেন তিনি। জানাজা ১৭ আগস্ট ২০২৪ রাত সাড়ে ১২টার দিকে স্থানীয় উব্দাখালী নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর ওপর জানাজা শেষে রাত আড়াইটার দিকে গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার চামারদানী ইউনিয়নের জলুষা গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে আয়াতুল্লাহর লাশ দাফন করা হয়। হত্যার বিচার চাইলেন আয়াতুল্লাহর পরিবার সবার ছোট ছেলে আমার আয়াতুল্লাহ। হে আমার কলিজার টুকরা সন্তান আছিল। তারে নিয়া আমার অনেক স্বপ্ন আছিল। একদিন সে বড় হইয়া চাকরি কইরা সংসারের হাল ধরব। কিন্তু আমার হেই স্বপ্ন আর পূরণ হইল না। ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে যাইয়া আমার গুলিতে শহীদ হইছে। যারা আমার আয়াতুল্লাহকে গুলি কইরা মারছে, সেই হত্যাকারীদের বিচার চাই।ু মা- সুভা আক্তার (৫২) শহিদের বাবা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিজয় বলছিলেন মিছিলে গিয়ে নিভে গেল আয়াতুল্লাহর বড় আলেম হওয়ার স্বপ্ন। আয়াতুল্লাহকে বড় আলেম বানানোর ইচ্ছে ছিল। আমার ছেলেকে যারা খুন করেছে তাদের বিচার চাই। খুনির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আয়াতুল্লাহর বড় ভাই সোহাগ মিয়া বলেন, আমার ভাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে, এখন তাকে তো আমরা ফিরে পাব না। আমার ভাই আয়াতুল্লাহসহ যারা গুলিতে মারা গেছেন, সেসব হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি এবং এই আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন প্রত্যেককে যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের মর্যাদা দেওয়া হয়—সেই দাবি ও জানাই। পরিবারের ঐতিহ্য আয়াতুল্লাহর পিতৃভিটা সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার চামারদানী ইউনিয়নের জলুষা গ্রামে। তার দাদা মরহুম আব্দুর রহীম কালারচান ফকির এলাকার একজন মরমী সাধক ছিলেন। এছাড়া ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বিত্তবান সালিশ ব্যক্তিত্বও ছিলেন তিনি। এলাকাবাসীর মন্তব্য শহীদ আয়াতুল্লাহ আমাদের সুনামগঞ্জ জেলার গর্ব ও অহংকার। যতদিন এ জেলায় সুরমা, কালনী, কুশিয়ারা নদী প্রবাহিত থাকবে ততদিন গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় এই মহান শহীদ সূর্য সন্তানকে আমরা স্মরণ করব। এদিকে আয়াতুল্লাহর স্মৃতিকে অমর করে রাখতে তার নামে সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে উব্দাখালী নদীর ওপর নবনির্মিত ৩২০ মিটার দীর্ঘ সেতুর নামকরণ করা হয়েছে। ১৯ আগস্ট বিকেলে উব্দাখালী নদীর ওপর নির্মিত সেতুর সামনের সড়কে শহীদ আয়াতুল্লাহর নামে সেতুর নামকরণ করে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়। পাশে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও অন্যান্যরা শহীদ মো. আয়াতুল্লাহর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় প্রশাসন, নাগরিক আলেম সমাজ এবং রাজনৈতিক নেতারা। ২১ আগস্ট মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের কক্ষে নিহত আয়াতুল্লাহর বাবা কৃষক মো. সিরাজুল ইসলামের কাছে মধ্যনগর উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা বাবদ এক লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অতীশ দর্শী চাকমা। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, ওই শহীদ পরিবারটি খুবই দরিদ্র হওয়ায় জেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং আরও সহায়তা দেওয়া হবে। একনজরে শহীদের পরিচয় নাম : মো: আয়াতুল্লাহ পেশা : গার্মেন্টস কর্মী জন্ম তারিখ ও বয়স : ২৫ ডিসেম্বর ২০০৫, ১৯ বছর শহীদ হওয়ার তারিখ : ০৫ আগস্ট ২০২৪, আনুমানিক সন্ধ্যা ০৬.০০ টা শাহাদাত বরণের স্থান : আনসার ভিডিপি একাডেমির সামনে গুলিবিদ্ধ হয় দাফন করা হয় : সামাজিক কবরস্থান (মধ্যনগর, সুনামগঞ্জ) কবরের লোকেশন : ২৫ক্ক০১'৪৫.০"ঘ ৯১ক্ক০২'৫৬.৬"ঊ বা ২২ঐঢ+গঔ৭ ঈযযধহনধৎর স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম-জলুষা, ইউনিয়ন- চামরদানী, উপজেলা-মধ্যনগর, জেলা- সুনামগঞ্জ পিতা : মো: সিরাজুল ইসলাম মাতা : মোছা: শুভা আক্তার ভাইবোনের বিবরণ: ১. সোহাগ মিয়া, সম্পর্ক: ভাই, বয়স: ২৪ পেশা: শ্রমিক ২. তানিয়া আক্তার, সম্পর্ক: বোন, বয়স: ২২, পেশা: গার্মেন্টস কর্মী ৩. সুরাইয়া আক্তার, সম্পর্ক: বোন, বয়স: ২০, পেশা: গার্মেন্টস কর্মী প্রস্তাবনা: ১. শহীদের ভাই বা পিতার জন্য কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দিলে উপকার হবে ২. শহীদের পরিবারের বাসস্থান প্রয়োজন

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: আয়াতুল্লাহ
Image of মো: আয়াতুল্লাহ

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: আকিনুর রহমান

সানি আহমদ

ময়নুল ইসলাম

ওয়াসিম

মো: হাসাইন মিয়া

মো: মোনায়েল আহমেদ

পঙ্কজ কুমার কর

এটিএম তুরাব

মো: আশরাফুল আলম

মো: সোহেল আখঞ্জি

গৌছ উদ্দিন

মিনহাজ আহমদ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo