Image of  কাজী আশরাফ আহমেদ রিয়াজের

নাম: কাজী আশরাফ আহমেদ রিয়াজের

জন্ম তারিখ: ১ ফেব্রুয়ারি, ২০০১

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৩০ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: চট্টগ্রাম

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ফটোগ্রাফার

শহীদের জীবনী

কুমিল্লার জেলার নাঙ্গলকোটের বাগড়া গ্রামের ব্যবসায়ী কাজী বাবুল ও রোকেয়া আক্তার দম্পতির বড় ছেলে কাজী আশরাফ আহমেদ রিয়াজের। ঢাকা কমার্স কলেজে অধ্যায়নের পাশাপাশি পাঠশালা ইউনিভার্সিটিতে ফটোগ্রাফি নিয়ে লেখাপড়া করতেন। তিনি ছিলেন একজন ট্রাভেলার, দুর্দান্ত ফটোগ্রাফার আর কবি। কাজী আশরাফ আহমেদ রিয়াজের কাব্য প্রতিভা কিছুদিন আগে লেখা তাঁর একটা কবিতা সাড়া জাগিয়েছিল ভীষণ! তাঁর লেখার শুরুটা ছিল এমন; "আমি আসলে চেয়েছিলাম মেট্রো স্টেশন হতে যার ধ্বংসে কান্না ধরে রাখা যায় না! (কিংবা টোল প্লাজা, ডাটা সেন্টার, সিটি কর্পোরেশনের ওয়েস্ট ডাম্পিং ট্রাক ) “কিন্তু আমাকে ছাত্র করে পাঠালেন, যে মরলে কান্না আসে না , যার রক্তে কোটি টাকার লোকসান হয় না , যে মরলে কেউ দেখতে আসেনা , রাষ্ট্রীয় ক্ষয়ক্ষতির তালিকায় আসেনা আমার নাম, যার লাশ মর্গে নিছক একটা সংখ্যা.... অথচ 'আমি কতো কি হতে চেয়েছিলাম.!” মাত্র ৪ দিন আগে তিনি তাঁর ওয়ালে শেয়ার করল আরেকখানা অগ্নিঝড়া কবিতা; এই শহরে পাখিদের ঘুম ভাঙ্গে গুলির শব্দে এই শহরে ছাত্র পড়ে থাকে মগজ ভর্তি বারুদের গন্ধে মস্তিষ্ক ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে শকুন এর গুলি রক্তের দাবানলে ভেসে যাচ্ছে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা ফ্যাসিষ্ট কারা? স্বৈরাচার কে? শকুন এর ভয়ে থাকে ঘরে কে ? মায়ের বুকের আর্তনাদ- হামার বেটাকে মারলু কেনো? এর মাঝে তাঁর ফেসবুকওয়াল জুড়ে কোমল পেলব নারীদের শরীরের ফাঁক গলে আর বাংলার নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে ম্লান করে দিয়ে ভরে উঠল কোটা আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের উত্তাল মাতাল করা রক্তভেজা ছবি। যার প্রতিটা ছবি ঠাই নিবে নিশ্চিত ভবিষ্যত ইতিহাসের পাতায়। ঘটনার বিবরণ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকেই রাজপথে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব ছিলেন এই শিক্ষার্থী। আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। ঢাকা কমার্স কলেজে অধ্যয়নের পাশাপাশি পাঠশালা ইউনিভার্সিটিতে ফটোগ্রাফি নিয়ে লেখাপড়া করতেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হওয়া নির্যাতনের বহুচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করা হতো তার ফেসবুক পেইজ থেকে। আন্দোলনের নানা মূহুর্ত ক্যমেরাবন্দি করেছিলেন রিয়াজ। এর মাঝে তাঁর ফেসবুকওয়াল জুড়ে ভরে উঠল কোটা আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের উত্তাল মাতাল করা রক্তভেজা ছবি। যার প্রতিটা ছবি ঠাই নিবে নিশ্চিত ভবিষ্যত ইতিহাসের পাতায়। এর পর থেকেই নাকি ভীষন মানসিক যন্ত্রনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। যে রাতে তাঁর শেষ প্রয়াণের ক্ষণ ঠিক হয়েছিল- সন্ধ্যেয় বাবাকে ফোন করে বললেন, পকেটে টাকা নেই- ডাব খেতে ইচ্ছে করছে টাকা পাঠাও। বাবা তাঁর আদরের ছেলেকে সঙ্গে সঙ্গে বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দিল। তিনি যত ব্যস্তই থাকুক বাবা মায়ের ফোন রিসিভ করবেই। এর পর আর রিয়াজ ফোন ধরে নি। আন্দোলনের নানা মুহূর্ত ক্যমেরাবন্দি করেছিলেন রিয়াজ। রিয়াজের মৃত্যু নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা গুঞ্জন, কাটেনি ধোঁয়াশা। এলাকাবাসী বলছে, দেশের পরিস্থিতি অনেক খারাপ থাকায় তাকে চিকিৎসা দেয়া যায়নি। কিন্তু যারা গোসল করিয়েছে তারা রিয়াজের মুখে মারধরের চিহ্ন পেয়েছে। পিঠে একাধিক গুলির চিহ্ন পেয়েছে, মূলত আন্দোলন চলাকালীন পুলিশের গুলিতে রিয়াজ আহত হন । জানাজা ও দাফন সরকারবিরোধী আন্দোলনের তকমা থাকায় ১ আগস্ট অনেকটা নিভৃতেই কাজী আশরাফ আহমেদ রিয়াজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় রিয়াজের মরদেহ। পারিবারিক অবস্থা শহীদ রিয়াজ ছিলেন একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রফার, তার বাবা কাজী বাবুল ছিলেন গ্রামের একজন সাধারণ ব্যবসায়ী। তার বাবার পাশাপাশি তিনিও পরিবারে আর্থিক সহায়তা করার চেষ্টা করতেন। শহীদ রিয়াজের অবর্তমানে তার বাবা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন। ব্যবসায় ভালো মনোযোগ দিতে পারছেননা, তাই ব্যবসার অবস্থাও ভালো যাচ্ছেনা। বর্তমানে সংসারের যাবতীয় খরচ চালানো তার একার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তার পরিবার এখন মানবেতর জীবন অতিবাহিত করছেন । হত্যার বিচার চাইলেন শহীদ পরিবার রিয়াজের মা রোকেয়া আক্তার বলেন, ছেলে বলতো, ‘আম্মু বের হলেই ওরা আমাকে মেরে ফেলবে’। আমার ছেলে প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার ছিল। বহু হুমকি ধামকি পেলেও সে তার কাজ করে গেছে, থামেনি। বিভিন্নভাবে আন্দোলনে অংশ নিছে। আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার দাবি করছি। এলাকাবাসী বলছে, দেশের পরিস্থিতি অনেক খারাপ থাকায় তাকে চিকিৎসা দেয়া যায়নি। কিন্তু যারা গোসল করিয়েছে তারা রিয়াজের মুখে মারধরের চিহ্ন পেয়েছে। পিঠে একাধিক গুলির চিহ্ন পেয়েছে। ছাত্রদের সাথে আন্দোলনের পাশাপাশি ফটোগ্রাফির মাধ্যমে সাংবাদিকতার ভূমিকায়ও রিয়াজ বেশ সরব ছিল বলেও জানান তারা। অভিযোগ, হয়তো এজন্যই তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রিয়াজের মতো অকাতরে প্রাণ ঝরেছে আরও অনেকের। তাদের সবাইকে খুঁজে বের করে তালিকা তৈরির দাবি জানিয়েছে সাধারণ মানুষ ও এলাকাবাসী। প্রস্তাবনা ১. শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা একনজরে শহীদ সম্পর্কিত ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : কাজী আশরাফ আহমেদ রিয়াজ পেশা : ফটোগ্রাফার স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: বাগড়া, ইউনিয়ন: বক্সগঞ্জ, থানা: নাঙ্গলকোট, জেলা: কুমিল্লা পরিবারের তথ্য পিতা : কাজী বাবুল মাতা : রোকেয়া আক্তার আক্রমণকারী : পুলিশ আহত হওয়ার সময় : ৩০ জুলাই ২০২৪, মৃত্যুর তারিখ ও সময় : ৩০ জুলাই ২০২৪ আনুমানিক রাত ১০ টা শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : পারিবারিক কবরস্থান

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of  কাজী আশরাফ আহমেদ রিয়াজের
Image of  কাজী আশরাফ আহমেদ রিয়াজের

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: মাঈন উদ্দিন

মো: মামুন হোসেন

শামছুল ইসলাম

মোহাম্মদ সবুজ

মো: ইমরান

মো: ইমন গাজী

ইশতিয়াক আহমেদ

মো: ইউসুফ

জাহিদ হোসেন রাব্বি

মো: ইমতিয়াজ হোসেন

মো: ওসমান পাটওয়ারী

মো: আলাউদ্দিন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo