জন্ম তারিখ: ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৯
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা: চাকরি, বেসরকারি শাহাদাতের স্থান: ঘটনার স্থান: এনাম মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন, সাভার, ঢাকা
মোঃ আল আমিন ইসলাম ১৯৯৯ সালে ১ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মোঃ ওয়াজেদ আলী এবং মায়ের নাম সেলিনা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম সুমাইয়া আক্তার। একমাত্র সন্তান ২ বছর ৭ মাস বয়সী। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট ১৬ বছরে লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মানুষের মাঝে যে প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে, তার চূড়ান্ত রূপ হলো ৩৬ দিনের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন। ২০২৪-এর কোটা সংস্কার আন্দোলন হলো বাংলাদেশে সব ধরনের সরকারি চাকরিতে প্রচলিত কোটাভিত্তিক নিয়োগ ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে সংগঠিত একটি আন্দোলন। ২০২৪ সালের ৫ জুন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের জারি করা পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণার পর কোটা পদ্ধতির সংস্কার আন্দোলন আবার নতুনভাবে আলোচনায় আসে। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত পরিপত্র জারি করা হয়েছিল। ঐ পরিপত্রের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে নবম গ্রেড এবং ১০ম-১৩তম গ্রেডের পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সকল কোটা বাতিল করা হয়েছিল। জুলাই মাস জুড়ে বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ সরকারী বাহিনী ব্যপক নির্যাতনসহ হত্যাকান্ড চালায়। এতে আন্দোলন আরো জোরালো হতে থাকে, সর্বত্র প্রতিবাদ আসতে থাকে। প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ করে দেয়। শেখ হাসিনা তার সব সময়ের অপকর্মের সহযোগী বামপন্থী দল গুলো নিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। বিশেষজ্ঞদের মতো ছাত্র-জনতাও বুঝতে পারে খুনি হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকতে ও আন্দোলন দমাতে অত্যন্ত নির্মম গণহত্যা চালাতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন পেশার মানুষ আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে। তারা বুঝতে পারে স্বৈরাচারকে হঠাতে এবারই শেষ সুযোগ। এই সুযোগ হাতছাড়া করলে জাতিকে আজীবন ভারতীয় দালাল সরকারের গোলামী করে যেতে হবে। ইসলামী ছাত্র শিবির সাধারণ জনতার সাথে মিশে আন্দোলনকে সারাদেশে জমিয়ে রাখে। তারা ছাত্র নেতাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। আল জাজিরার সাংবাদিক জুলকার নাইন সায়ের জুলাই বিপ্লবে ছাত্র শিবিরের সাহসী নেতৃত্বের প্রশংসা করে তখনকার অবস্থা বর্ণনা করেছেন তার লেখায়। ৪ আগস্ট ছাত্র নেতারা ৬ আগস্ট গণভবন ঘেরাও ঘোষণা করেন। কিন্তু শিবির নেতৃবৃন্দ অনুধাবন করলেন ৫ আগস্ট গণহত্যা চালানো হতে পারে। একারণে মার্চ ফর ঢাকা কর্মসূচীর তারিখ ৬ তারিখের পরিবর্তে ৫ আগস্ট ঘোষণা করা হয়। এছাড়াও জুলাই মাস জুড়ে সরকারী বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নির্যাতিত হলেও ছাত্র-জনতা ৪ আগস্ট প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে। জেলায়-মহানগরীতে সরকারী গুন্ডাবাহিনী ইটের আঘাতে পিছু হটে। এই প্রতিরোধ হাসিনার মসনদ কাঁপিয়ে তোলে। জাতিসংঘ থেকে নিষেধাজ্ঞার হুশিয়ারি পাওয়ায় সেনাবাহিনীর একাংশ সরকারকে সহযোগিতা করবেনা বলে জানিয়ে দেয়। পরদিন ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ও তার দূর্নীতিবাজ বোন শেখ রেহানা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। হাসিনার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার খবর শুনে ছাত্র-জনতার পাশাপাশি আল আমিন আনন্দে রাজপথে বেরিয়ে আসেন। যেখানেই যাকে পান আনন্দে কোলাকুলি করেন। মিষ্টির দোকান গুলো খালি হতে থাকে। হাজার কোটি টাকায় নির্মিত দাম্ভিক ও সাবেক স্বৈরাচার মুজিবের মূর্তি ও ম্যুরাল ঘৃণার সাথে ভাঙ্গতে থাকে জনতা। আল আমিন এসব দৃশ্য দেখে হতবিহ্বল। খুশিতে আত্বহারা। তার সাথে ছিলেন ছোট ভাই শাকিল ইসলাম। তারা সাভার থানার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের এলোপাথাড়ি গুলির মুখে পড়েন। গুলির কারনে ছোটভাইকে হারিয়ে ফেলেন। এসময় আল আমিন গুলিবিদ্ধ হন। তিনি তার শ্বশুরকে ফোন দিয়ে আহত হওয়ার কথা জানান। শ্বশুর আল আমিন ইসলামের বাবাকে ফোন করে জানান। আল আমিনের বাবা ওয়াজেদ আলী শাকিলকে উদ্ধার করার নির্দেশ দেন। পথচারীরা আল আমিন ইসলামকে এনাম মেডিকেলে দিয়ে আসে। শাকিল বড় ভাইকে এনাম মেডিকেলে এসে লাশ হিসেবে খুঁজে পান। অর্থনৈতিক অবস্থা আল আমিন ইসলাম বংশালে একটি বেসরকারী কোম্পানীতে চাকরী করতেন। তার বাবা মোঃ ওয়াজেদ আলী কৃষি কাজ করেন। আল আমিনের স্ত্রী সুমাইয়া একাদশ শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। আল আমিন ও সুমাইয়ার সংসারে ২ বছর ৭ মাস বয়সী একটি পুত্র সন্তান আছে। একনজরে শহীদ সম্পর্কিত তথ্যাবলি নাম : মো: আল আমিন ইসলাম জন্ম : ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ পেশা : বেসরকারী চাকরীজীবী পিতা : মোঃ ওয়াজেদ আলী মাতা : সেলিনা খাতুন স্ত্রী : সুমাইয়া সন্তান : হুজাইফা (২.৭ মাস) স্থায়ী ঠিকানা : ডাবড়া, জিনেশ্বরী, মাস্টারের মোড়ের উত্তর পাশে, বীরগঞ্জ, দিনাজপুর বর্তমান ঠিকানা : শোভাপুর, রাজফুলবাড়ি, রাজফুল বাড়িয়া, সাভার, ঢাকা ঘটনার স্থান : এনাম মেডিকেল কলেজের সামনে রাস্তায়, সাভার আক্রমণকারী : পুলিশ আহত হওয়ার সময় : ৫ আগস্ট আঘাতের ধরন : গুলিবিদ্ধ মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ৫ আগস্ট ২০২৪ শহীদের কবরের অবস্থান : ডাবড়া কবরস্থান প্রস্তাবনা : ১. মাসিক ও এককালীন ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা