Image of শেখ রাকিব

নাম: শেখ রাকিব

জন্ম তারিখ: ২ ফেব্রুয়ারি, ২০০৩

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৭ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ওয়েল্ডিং শ্রমিক শাহাদাতের স্থান : যমুনা ফিউচার পার্ক সংলগ্ন, নদ্দা, ঢাকা

শহীদের জীবনী

অবিস্মরণীয় ইতিহাসের স্মরণীয় নক্ষত্র, জীবন যার ঈমান দীপ্ত শহীদ পরিচিতি শেখ রাকিব ২০০৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারী ঢাকা বিভাগের নবাবগঞ্জ জেলার চুরাইন থানার কামারখোলা গ্রামের বাসিন্দা বাবা মিজানুর রহমান ওরফে হুমায়ুন কবির ও মা সুইটি আক্তারের ঘরে ২য় সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন। দারিদ্র্যরে ক্লেশ দূর করার জন্য বাবা মিজানুর রহমান ওরফে হুমায়ুন কবির বিদেশে পাড়ি জমান। কিন্তু ভাগ্য সহায় না হওয়ায় দেশে কোনো অর্থ পাঠাতে ব্যর্থ হন। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় মা সুইটি আক্তার তার ছেলেদেরকে দাদীর কাছে রেখে কাজের সন্ধানে গাজীপুরে আসেন এবং গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। বড় ছেলে শেখ সাকিব এর বয়স তখন ১২ বছর। মায়ের কষ্ট সহ্য না করতে পেরে ১২ বছরের সাকিব তখন সংসারের হাল ধরেন। শেখ রাকিব খুব কাছে থেকে বড় ভাই এর এই কঠিন সংগ্রাম খেয়াল করেন। ছোট থেকে তাই চেষ্টা করতেন যতটা পারা যায় ভাই এর বোঝা কমাতে। ছোট্ট সাকিবের পক্ষে গাজীপুরে থেকে এতগুলো মুখে অন্ন তুলে দেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাই মা ও ছোট দুই ভাইকে পাঠিয়ে দেন নানার বাড়িতে। সেখানেই শেখ রাকিবের শৈশবের কিছু অংশ এবং কৈশোর কাটে। ৮ম শ্রেণী পাস করার পর পরিবারের হাল ধরার জন্য পড়ালেখা বাদ দিয়ে গাজীপুরে ভাইয়ের কাছে চলে আসেন। পরবর্তীতে তার সঙ্গে বাহরাইন যাওয়ার জন্য যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে এক ওয়েল্ডিং এর দোকানে কাজ শুরু করেন। সেখানে কাজ শিখে ২০২৪ সালে তার বিদেশে যাওয়ার কথা ছিল। অনেক বেশি পড়ালেখা করতে না পারলেও তার অন্তরে ছিল পড়াশোনার প্রতি তীব্র ভালোবাসা। ছোট থেকে দারিদ্রতার তীব্র ক্লেশ দেখে বড় হওয়া রাকিব অত্যন্ত নরম হৃদয় ও শান্তশিষ্ট চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। বাবার সাথে বাহরাইনে গিয়ে নিজেদের দুঃখ দারিদ্রতা দূর করার কথা থাকলেও দেশের দুঃসময়ে তিনি ঘরে চুপ করে বসে থাকতে পারেননি, নেমেছিলেন ছাত্র জনতার পক্ষে। ঘটনার বিবরণ স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে প্রশাসনের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সমস্ত পর্যায়গুলো কলুষিত করার চেষ্টা করে। ভারতীয় দাস তৈরী করতে ধীরে ধীরে শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসাসহ অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ধ্বংস করার নীল নকশা বাস্তবায়ন শুরু করে করোনা কালীন সময়ে ফুটে উঠে চরম অব্যবস্থাপনা। পূর্ববর্তী সময়ে প্রশ্ন ফাঁস, মুজিবকে দেবতা বানিয়ে সিলেবাস প্রণয়ন, শিক্ষাব্যবস্থায় সেক্যুলার নীতিকে প্রাধান্য দিয়ে বই রচনা, ছাত্রলীগ কর্তৃক শিক্ষার পরিবেশে ব্যাঘাত ঘটানো শেখ হাসিনার নির্দেশে সংঘটিত হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে রিকুইজিশন এবং টেন্ডারবাজির নামে টাকা লুট করে। উদাহরণস্বরূপ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের আইসিও বিভাগের একটি পর্দার দাম যেখানে ৩৭ লক্ষ টাকা আওয়ামীলীগের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও তার পুত্র দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেশবাসীকে ভারতে চিকিৎসা নিতে বাধ্য করে। স্বৈরাচার তার ডানা মেলে প্রশাসনেও পুলিশের অনেক বড় বড় অফিসার প্রকাশ্যে হাসিনার দোসর হিসেবে কাজ করা শুরু করে। এমনই একজন অফিসার 'তিন অপশন' খ্যাত কুষ্টিয়ার তৎকালীন এসপি এস এম তানভীর আরাফাত তার বক্তব্যে বিরোধী পক্ষগুলোকে ‘তিনটি অপশন’ দেন । তানভীর আরাফাত বলেন, ‘এক. উল্টাপাল্টা করবা হাত ভেঙে দেব, জেল খাটতে হবে। দুই. একেবারে চুপ করে থাকবেন, দেশের স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস নিয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবেন না। তিন আপনার যদি বাংলাদেশ পছন্দ না হয়, তাহলে ইউ আর ওয়েলকাম টু গো ইউর পেয়ারা পাকিস্তান। 'এ বক্তব্য তখন তুমুল আলোচনায় আনে এসপি তানভীর এক সমাবেশে ‘বালিশ ছাড়া শোওয়াইয়া দেব’ বলেও ঘোষণা দেন, যেটা স্পষ্ট বিচারবহির্ভূত হত্যার হুমকি হাসিনা তার পুলিশ ও র‌্যাব টিমের মাধ্যমে গুম, খুন বাস্তবায়ন করতে থাকে। হাজার হাজার আওয়ামী বিরোধী গ্রেফতার হয় এবং চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়। ২০২৪ সালে বাংলাদেশে কোটা আন্দোলন নতুন করে আলোচনায় আসে। তবে, ২০২৪ সালের কোটা আন্দোলনটি ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের একটি নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা যেতে পারে। ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলন ছিল সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের জন্য একটি বৃহৎ ছাত্র বিক্ষোভ, যা তীব্র প্রতিবাদ সৃষ্টি করে। সেই আন্দোলন সফলভাবে কোটা পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে, সরকারি চাকরিতে কোটা ৫৬% থেকে কমিয়ে ৩০% করা হয়। ২০২৪ সালের কোটা আন্দোলন বাংলাদেশে একটি ব্যাপক এবং শক্তিশালী প্রতিবাদ আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল, যা মূলত মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবে শুরু হয়। ৫ জুন ২০২৪ তারিখে হাইকোর্ট মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণা করলে এই আন্দোলন জোরালো হয়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যাপক বিক্ষোভ ও সমাবেশ শুরু করে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা কোটা পদ্ধতি পূর্ণরূপে বাতিল এবং ২০১৮ সালের কোটা সংস্কারের আদেশ পুনঃবহালের দাবি জানায়। ২-৬ জুলাই পর্যন্ত এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থীরা বিশেষত 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' শীর্ষক ব্যানারে বিক্ষোভ এবং মিছিল করে। ৪ জুলাই, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিলে আন্দোলন আরো তীব্র হয়ে ওঠে। ৭-৮ জুলাই আন্দোলনকারীরা শহরের বিভিন্ন সড়কে সমাবেশ ডাকে। আন্দোলনকারীরা সরকারের কাছে একটি নতুন আইন প্রণয়নের দাবি জানায়, যাতে সব অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করা হয়। ১০ জুলাই সরকার আপিল বিভাগের আদেশ অনুসরণ করে কোটা বিষয়ে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিলেও, আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে এবং সরকারের প্রতিশ্রুতি না পাওয়ার কারণে আন্দোলন আরো জোরালো হয়। এভাবে, কোটা আন্দোলন ২০২৪ এ এক কঠিন রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি নিয়ে সরকারের কাছে পরিবর্তন দাবি করছে। ১২ জুলাই ২০২৪ তারিখে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে এবং ঢাকার বাইরে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকার শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। শিক্ষার্থীরা সরকারের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করতে এবং কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল বা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখে। এদিন, সাবেক আইনমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি আন্দোলন চলতে থাকে, তবে সরকার ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। তবে, বিক্ষোভকারীরা তা উপেক্ষা করে তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখে, যার ফলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে, আন্দোলনকারীরা সরকারের কাছে এক দফা দাবি জানাচ্ছে—কোটা পদ্ধতির পুরোপুরি সংস্কার, এবং বিশেষ করে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করা যাতে সমস্ত অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থার অবসান ঘটে। ১৩ জুলাই ২০২৪ তারিখে, রাজশাহীতে শিক্ষার্থীরা রেলপথ অবরোধ করে তাদের বিক্ষোভ চালিয়ে যায়। সেইদিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে এবং অভিযোগ করেন যে, "মামলা দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।" আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল কোটা পদ্ধতির সংস্কার, যা তাদের চোখে বৈষম্যহীন এবং যৌক্তিক হতে হবে। ১৪ জুলাই ২০২৪-এ, আন্দোলনকারীরা সব গ্রেডে কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে গণপদযাত্রা করে এবং রাষ্ট্রপতি বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেন। কিন্তু, ওইদিন সন্ধ্যায় ততকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বিতর্কিত মন্তব্য আন্দোলনকারীদের প্রতি ছিল অত্যন্ত সমালোচিত। এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে, তিনি আন্দোলনকারীদের 'রাজাকার' বলে মন্তব্য করেন, যা ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করে। এই মন্তব্যের পর, রাতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ আরো জোরালো হয়ে ওঠে এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা 'তুমি কে, আমি কে, রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার।' দিয়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। এটি আন্দোলনের এক নতুন স্তরে পৌঁছায়, যেখানে শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে, এবং তাদের দাবির প্রতি আরও দৃঢ় অবস্থান গড়ে তোলে। এই পরিস্থিতি আন্দোলনকে আরো উত্তপ্ত করে তোলে, এবং দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এটি একটি বড় আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই বিক্ষোভকারী ছাত্রদের উপরে ছাত্রলীগ অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। ব্যপক সংঘর্ষ শুরু হয়। এই সহিংস সংঘর্ষে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি এবং আওয়ামী লীগের ছাত্র, যুব ও স্বেচ্ছাসেবক শাখার সদস্যরা অংশগ্রহণ করে, যা আন্দোলনকারীদের ওপর অত্যন্ত সহিংসতা সৃষ্টি করে। সংঘর্ষের পরের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগসহ আওয়ামীলীগ সরকারের শোষণ-উৎপীড়ন বন্ধ করার দাবি জানাতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ জুলাই বাংলাদেশের একযোগে ক্র্যাকডাউন শুরু হয় রাজধানী ঢাকাতে। পুলিশ, বিজিবিসহ আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যুদ্ধাস্ত্র সহকারে হেলিকপ্টারে করে সাধারণ নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের উপরে তীব্র বেগে গোলাগুলি শুরু করে। এই ঘটনা সারাদেশে সংঘটিত হয়। ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্কের সামনেও ঘটে। আওয়ামীলীগ বাহিনীর তান্ডব রাকিব তার কাজের জায়গা থেকে দেখতে পান। তিনি এই নির্যাতন দেখে সহ্য করতে না পেরে নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের সাথে রাস্তায় নেমে পড়েন। সে সময় সামনে থেকে আসা পুলিশের গুলিতে তিনি আহত হন। তার বন্ধু ও আশেপাশের আন্দোলনকারীরা তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করেন এবং কুর্মিটোলা হসপিটালে নিয়ে যান। রাকিবের ভাই তৎক্ষণাৎ সংবাদ পেয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে লোকজনের কাছে সাহায্য চান কুর্মিটোলা হসপিটাল পর্যন্ত যাওয়ার জন্য। সেখানে মর্ডান হসপিটাল এর এক ডক্টর এবং এক অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার তাকে সাহায্য করেন। ঢাকার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে তাকে নিয়ে আসার। সে সময় শাকিব সরকারী বাহিনীর বর্বর হত্যাকান্ড প্রত্যক্ষ করেন। পুলিশ তাদের এম্বুলেন্সের উপরে গোলা বারুদ নিক্ষেপ করে। দুপুরে রাকিবকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং শাকিব সন্ধ্যার কিছু পরে গিয়ে উপস্থিত হন। রাকিব ততক্ষণে মারা গিয়েছিল। রাকিবের বন্ধু মর্গের বাইরেই অপেক্ষা করছিল কিন্তু হসপিটাল কর্তৃপক্ষ রাকিবের থাকার বিষয়ে নাকোচ করে দেন। যদিও পরে দেখা যায় রাকিব মর্গেই ছিল। শাকিব ফিউচার পার্কের বাসায় ড্রাইভার এর কাজ করতো বিধায় অবস্থা বেগতিক দেখে যমুনা গ্রুপের মালিক বাবুল সাহেবের স্ত্রীর কাছে ফোন দিয়ে তার সমস্যার কথা জানান। ঐ মুহুর্ত্বে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করে এবং হসপিটাল কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে স্বীকার করেন যে তাদের মর্গে দুই জন আন্দোলনকারীর মৃতদেহ আছে। তিনদিন ধরে রাকিবের মৃতদেহ বিভিন্ন জায়গায় ঘোরার পরে অবশেষে সোমবার শাকিব সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গ থেকে রাকিবের মৃতদেহ বুঝে পান। কিন্তু পুলিশের নির্দেশে মর্গ থেকে জানানো হয় যে, এক ঘন্টার মধ্যে দাফন করতে হবে। এসব কারনে লাশ নিজেদের গ্রামে নিয়ে যেতে পারেননি। রাকিবের শেষ ঠিকানা হয় গাজীপুরের কাশিমপুরের বরিশাইল্লা কবরস্থানে। এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কারের দাবিতে, তবে সরকারী বাহিনীর সহিংস দমন-পীড়নের কারণে এটি গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়। ছাত্ররা একত্রিত হয়ে সারাদেশে প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে থাকে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের শোষণ ও উৎপীড়ন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। এর ফলে, ৪ আগস্ট ২০২৪ সারা দেশে ছাত্র জনতা রাস্তায় নামে এবং তাদের ওপর সরকারের বাহিনী গুলি চালায়, যা আন্দোলনকে আরও সহিংস করে তোলে। এই আন্দোলন শেষে, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শোষণ এবং উৎপীড়নের অবসান ঘটে এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়। শহীদ সম্পর্কে নিকট আত্মীয়দের অনুভূতি : শহীদের বাবা : ‘আমার ছেলেটা আমার কলিজার টুকরা ছিল। এমন অসাধারণ সন্তানের জন্য আমি গর্ববোধ করি। আমি তার জন্য কিছুই করতে পারিনি।’ শহীদের বড় ভাই : “ আমার ভাই ছিল অত্যন্ত স্বল্পভাষী ও ভীষণ বিনয়ী। কোনো ঝামেলার মধ্যে কখনও জড়ায়নি। ও এতো লাজুক ছিল যে আমার প্রতিবেশীরা মনে করত আমরা শুধু দুই ভাই। আমার ছোট ভাইটা একটু জেদ করে। কিন্তু রাকিব কখনো কোনো কিছুর জন্যই জিদ করেনি। আমার বাবা কিছু কারণবশত প্রবাস থেকে টাকা পাঠাতে পারতেন না এজন্য আমাকে ১২ বছর বয়সেই সংসারের হাল ধরতে হয় । ও আমাকে এত বুঝতো যে আমার কাছে কখনো মুখ ফুটে কোন কিছু চাইতো না এমন কি প্রয়োজনীয় জিনিস আমি নিজেই কিনে দিতাম। ও আমাকে সাহায্য করার জন্য এবং সংসারের হাল ধরার জন্য বাবার সঙ্গে বিদেশে যেতে চেয়েছিল। আমার ছোট দুইটা বাচ্চাকে ও ভিষন ভালবাসতো। ছেলেটার সাইকেল চালানোর খুব শখ ছিল দেখে ও ওর বন্ধুর কাছে ৬০০০ টাকা ধার চেয়েছিল একটা সাইকেল কিনে দেয়ার জন্য। কিন্তু সাইকেল কিনে দেয়ার সময়টা আর পেল না। ও মারা যাওয়ার পরে ওর বন্ধুরা এসে আমাকে এইসব জানিয়েছে। সাহায্য যদি কিছু করতে পারেন, আমাদের দেশে কামার খোলা রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ এ রাস্তাটা রাকিবের নামে করার ব্যবস্থা নেওয়া হোক। নবাবগঞ্জ থানায় ডিসি অফিসে এই নিয়ে কথা হয়েছে আপনারা যদি একটু দেখতেন, আর স্যার আমরা আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আল্লাহ ভালো রাখছে। শহীদের ছোট ভাই : ভাই আমাকে খুব ভালোবাসতো। আমি কত জিদ করতাম, ভাই কোনদিন রাগ করেনি। তিনি অসাধারণ একজন মানুষ ছিলেন। আমি আমার ভাইকে খুব মিস করি। শহীদের বন্ধু : নিজের বন্ধু বলে বলছি না, ওর মতন মানুষ হয় না। আমাদের যে কারোর যেকোনো প্রয়োজনে ও সব সময় এগিয়ে আসতো। সব সময় কত চুপচাপ শান্ত হয়ে থাকতো, অথচ কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করেনি। আমাদের জোর দাবি তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদি মর্যাদা দেয়া হোক। একনজরে শহীদ সম্পর্কিত তথ্যাবলি নাম : শেখ রাকিব জন্ম : ২ ফেব্রুয়ারি ২০০৩ পেশা : ওয়েল্ডিং কর্মী মাসিক আয় : ৮০০০ স্থায়ী ঠিকানা : বিভাগ: ঢাকা, জেলা: নবাবগঞ্জ, থানা: চুরাইন, গ্রাম: কামারখোলা বর্তমান ঠিকানা : জেলা: গাজীপুর, থানা: কালিয়াকৈর অঞ্চল : সফিপুর, মানজারমনিক, পাড়া: পশ্চিমপাড়া পিতার নাম : মিজানুর রহমান (ওরফে হুমায়ুন কবির ) পেশা : প্রবাসী (বাহারাইন দেশে কর্মরত) বয়স : ৪৯ মাতার নাম : সুইটি পেশা : গৃহিণী বয়স : ৩৯ পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৭ জন ঘটনার স্থান : যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে, ঢাকা আক্রমণকারী : পুলিশ (গলায় গুলি করেছিল) আহত হওয়ার সময় : ১৭ জুলাই, দুপুর ২ ঘটিকা নিহত হওয়ার তারিখ ও সময় : ১৭/৭/২৪, দুপুর দুই ঘটিকা (ঘটনা স্থলে) কবরস্থান : গাজীপুর কাশিমপুর লস্কর চলা বরিশাইল্লা কবরস্থান মৃত্যুর তারিখ : ১৭/৭/২৪ মৃত্যুর স্থান : যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে কবরের অবস্থান : গাজীপুর কাশিমপুর লস্কর চলা বরিশাইল্লা কবরস্থান, খুব ইচ্ছা ছিল নবাবগঞ্জ কামারখলা কবরস্থানে দেশের বাড়িতে কবর দেওয়ার, পারি নাই, নেওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা ছিল না রাকিবের মৃত্যুর কারণ : পুলিশ গলায় গুলি করছিল, আমার ভাইয়ের দোষ ছিল শুধু ছাত্রদের সাথে দাঁড়িয়েছিল

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: মোহসীন

মোস্তফা জামান সমুদ্র

মো: মনিরুজ্জামান মোল্লা

মো: সিয়াম

 মো: তাজুল ইসলাম

মো: আব্দুল্লাহ বিন জাহিদ

মো: হাছান মিয়া

মো: বিপ্লব

মো: সোহেল

রমজান মিয়া জীবন

মো: রাসেল গাজী

মোহাম্মদ সাইফুল হাসান

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo