Image of জসিম ফকির

নাম: জসিম ফকির

জন্ম তারিখ: ৫ আগস্ট, ১৯৮৮

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: দিনমজুর, শাহাদাতের স্থান: গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে

শহীদের জীবনী

মো: জসিম ফকির পেশায় ছিলেন দিনমজুর। তিনি ৫ আগস্ট ১৯৮৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মোঃ হায়াত আলী ফকির ও মায়ের নাম সেলিনা বেগম। জসিম ফকিরের স্ত্রীর নাম সারমিন খানম। তার তোহা ইসলাম তানহা নামে ৮ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান আছে। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের আশ্রয় থেকে বের হয়ে এসে নতুন দেশ বাংলাদেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কয়েক বছরের মধ্যে মুজিব ও তার দলের দূর্নীতি ও অবিচারের ফলে দেশে দূর্ভিক্ষ নেমে আসে। মানুষ না খেতে পেয়ে কোলের সন্তানকে পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। এসময় ত্রান কর্তা হয়ে দেশবাসীকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন সেনাবাহিনীর কিছু দেশপ্রেমিক অফিসার। তারা মুজিব ও তার খুনি বাহিনীকে পরাজিত করেন। ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ভারতের সহায়তায় আবার ক্ষমতা দখল করে বাংলাদেশকে ভারতের তাবেদার রাষ্ট্র বানিয়ে ফেলে। ইসলামপন্থীদের নির্মূল করে। প্রতিবাদকারীদের জামায়াত-শিবির আখ্যা দিয়ে খুন করে। ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তাদের ১৬ বছরের শাসন পৃথিবীর ইতিহাসে নিকৃষ্ট সময় হিসেবে স্থান লাভ করে। ছাত্র-জনতার একাংশ এই ঘাতক ও দেশবিরোধী অবৈধ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা করে। হাসিনার নির্দেশ ছিল যেকোন আন্দোলন দমাতে প্রয়োজনে লাশ ফেলে দিতে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল ইসলামী ছাত্রশিবিরের কতিপয় জানবাজ নেতা-কর্মী। তারা সাধারণ ছাত্রদের ব্যানারে বিভিন্ন দাবী উপস্থাপন করতে থাকে এবং ব্যতিক্রমধর্মী কর্মসূচী দিয়ে দেশবাসীকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানায়। ইন্টারনেট বন্ধ এবং কারফিউ চলাকালে সমন্বয়কদের রক্ষার পাশাপাশি অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের অপকর্ম বিশ্ব মিডিয়ায় তুলে ধরে নিয়মিতভাবে। কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন চলাকালে সরকার কারফিউ, ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করাসহ জনবিচ্ছিন্ন নির্দেশনা জারি করে। সাধারণ মানুষ এতে দূর্ভোগের মুখে পড়ে। কাজ না থাকায় জসিম ফকির জুলাই মাসের সম্পূর্ণ সময় ঘরে বসে কাটান। বিশ বছর ধরে গাজীপুরের কালিয়াকৈর সফিপুর আমিরুল সুপার শপের পাশে স্ত্রী শারমিন খানম (২৭) ও একমাত্র কন্যা তোহফা ইসলাম তানহা (৭) কে নিয়ে বসবাস করতেন জসিম ফকির (৩৬)। আন্দোলন যখন তুঙ্গে, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন যখন অনিবার্য ঠিক সেইদিন গণঅভ্যুত্থানে যোগ দিতে কাউকে না জানিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েন তিনি। দিনটি ছিল ৫ আগস্ট। এরপর আর দুইদিন তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরিবার থেকে অনেক খোঁজাখুঁজি চলে। কিন্তু তারা হতাশ হন। শেষ পর্যন্ত গত ৭ আগস্ট খুব সকালে এক নারী আনসার সদস্য জসিমের মৃত্যু সংবাদের কথা নিশ্চিত করেন। জসিমের স্ত্রী শারমিন ওইদিন বেলা ১২ টার দিকে লাশের সন্ধান পান গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এরপর ৮ আগস্ট খুব ভোরে শহিদ জসিম ফকিরের লাশ এম্বুলেন্স যোগে নিয়ে আসা হয় তার নিজ গ্রাম বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার কলাতলা ইউনিয়নের চর চিংগুড়ী গ্রামে। এ গ্রামেই তার জন্ম। এ গ্রামই এখন তার শেষ ঠিকানা। লাশ গ্রামে পৌঁছালে হাজারো মানুষের ভীড়ে সৃষ্টি হয় শোকের আবহ। পুরো গ্রামজুড়ে চলে শোকের মাতম। চর চিংগুড়ি সরকারি প্রাইমারি স্কুল মাঠে জানাজা শেষে সকাল ৯ টায় স্থানীয় মাদ্রাসার পাশে কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। শহিদ জসিম ফকিরের বাবা মোঃ হায়াত আলি (৮০) ও মাতা সেলিনা বেগম (৬৭)। তারা জানান, জসিমের পিঠে ছিল বুলেট বিদ্ধের দাগ, নাক কান রক্তাক্ত, মুখমণ্ডল থেঁতলানো। তবে আন্দোলনে যোগ দেয়ার পর জসিম ঠিক কখন কিভাবে মারা গিয়েছিলেন তার প্রত্যক্ষ বিবরণ তার পরিবার পায়নি। জসিম ফকিরের রয়েছে আরও তিন ভাই। বড়ভাই মুরাদ হোসেন অনার্স ফাইনালের আগেই মানসিক রোগে আক্রান্ত হন। যাকে এলাকায় এক নামে ‘পাগলা মুরাদ’ বললে সবাই চেনে। জসিমের পরের ভাই রিয়াদ হোসেন ও ছোট ভাই আবির হোসেন রিফাত। তারা দুজনেই এস এস সি পাস করেছে। জসিমের একমাত্র কন্যা তোহফা ইসলাম তানহা গাজীপুর শাহীন ক্যাডেট স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে। স্ত্রী শারমিনের বাবা হেমায়েত হোসেন মোল্লা (৮০) ও মা আয়না মতি (৬০)। জসিম ফকিরের বাবাও একজন ভ্রাম্যমাণ পান বিক্রেতা। গ্রামের হাটে বাজারে ঘুরে ঘুরে পান বিক্রি করেন। সহায় সম্বল তেমন নেই। পরিবারের বক্তব্য স্ত্রী বলেন, ‘আর্থিক অনুদান পাওয়ার অনেক চেষ্টা করছি। কিন্তু এখনও কোন সাহায্য সহযোগিতা মেলেনি। বাবার বাড়ি এবং শ্বশুর বাড়ি থেকে সামান্য যা পাচ্ছি তা দিয়েই কোনমতে চলছি। কিন্তু মেয়ের লেখাপড়ার খরচ তো ভবিষ্যতে বাড়বে। তখন কিভাবে কি করবো ভেবে কূল কিনারা পাচ্ছি না।’ জসিম ফকিরের বাবা মো: হায়াত আলি বলেন,আমরা খুবই অসহায়। আমাদের বলতে গেলে ভিটেমাটি সহায় সম্পত্তি কিছুই নেই। দিন চলে কোন রকমে। এর মধ্যে জসিমের স্ত্রী ও মেয়ের খরচ কে দেবে? কিভাবে চলবে তাদের? মা সেলিনা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমি আমার পাগল ছেলে মুরাদকে নিয়ে কোনভাবে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি। আমাদের কোন সহায় সম্বল নেই। সরকার ও রাষ্ট্রের কাছে আমাদের দাবি দেশের জন্য অকাতরে আমার সন্তান জীবন বিসর্জন দিয়েছে। সরকার যদি আমাদের বিপদে এগিয়ে আসে তাহলে বৃদ্ধ বয়সে ডাল আলুভর্তা খেয়ে কোনরকমে জীবন যাপন করতে পারতাম। আমরা সেদিকে তাকিয়ে আছি। একনজরে শহীদ সম্পর্কিত তথ্যাবলি নাম : মো: জসিম ফকির জন্ম : ০৫ আগস্ট ১৯৮৮ পেশা : দিনমজুর পিতা : মোঃ হায়াত আলী মাতা : সেলিনা বেগম স্ত্রী : সারমিন খানম সন্তান : তোহা ইসলাম তানহা, ২য় শ্রেণি, শাহীন ক্যাডেট স্কুল, গাজীপুর স্থায়ী ঠিকানা : চর চিংগুড়ী, কলাতলা, চিতলমারী, বাগেরহাট বর্তমান ঠিকানা : আমিরুল সুপার শপ, শফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর আক্রমণকারী : ছাত্রলীগ আহত হওয়ার সময় : ৫ আগস্ট আঘাতের ধরন : পিঠে বুলেট বিদ্ধের দাগ, নাক কান রক্তাক্ত, মুখমণ্ডল থেঁতলানো মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ৫ আগস্ট শহীদের কবরের অবস্থান : চর চিংগুড়ী কবরস্থান প্রস্তাবনা ১. মাসিক ও এককালীন ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা ২. সন্তানদের শিক্ষা ব্যয় প্রদানে সহযোগিতা করা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

শাখাওয়াত হোসেন শাহাদাত

মো: মিঠু বিশ্বাস মারুফ

মো: সাইফ আরাফাত শরীফ

মোঃ সুজন খাঁন

মো: আদিল

নাজমুল মিয়া

মো: শ্রাবণ গাজী

মো: শাওন

মো: আরিফুল মিয়া

আমজাদ হোসেন

আব্দুল গণি

রাহাত হোসেন শরিফ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo