Image of শেখ হৃদয় আহমেদ শিহাব

নাম: শেখ হৃদয় আহমেদ শিহাব

জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ২০০৬

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: স্টিল কারখনার শ্রমিক, শাহাদাতের স্থান : নাগরিক স্পেশালাইজড প্রাইভেট হাসপাতাল, বনশ্রী

শহীদের জীবনী

‘সে হাসপাতালে চিকিৎসা পায়নি। ভর্তি করতে চায়নি কোন হাসপাতাল।’ -মনির মোল্লা মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার সন্ন্যাসীরচর ইউনিয়নের রাজারচর আজগর হাওলাদারকান্দি গ্রামের শাহ আলম হাওলাদার ও নাছিমা বেগমের কোল জুড়ে ২০০৬ সালে জন্ম নেন শেখ হৃদয় আহমেদ শিহাব। ২০২৪ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি শাহাদত বরণ করেন। পেশায় ফার্নিচার দোকানের একজন কর্মচারী ছিলেন শিহাব। প্রায় ৮ বছর আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কাঁধে আঘাত পান শিহাবের বাবা শাহ আলম হাওলাদার। এরপর থেকে ভারী কোনো কাজ করতে পারেন না তিনি। বর্তমানে তাঁর হার্টে সমস্যা দেখা দিয়েছে। শিহাবের বাবা অসুস্থ হওয়ার পর তৎকালীন সন্তানদেরকে নিয়ে নাছিমা বেগমের সংসারে তৈরি হয় আর্থিক সংকট। সংসারের হাল ধরতে সেলাইয়ের কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলেন শিহাবের মা। পরে কোনো মতে ধীরেধীরে সংসার উঠে দাড়ায়। তখন হৃদয় আহমেদ শিহাব অষ্টম শ্রেণিতে পড়তেন। সংসারের হাল ধরতে বাধ্য হয়ে লেখাপড়া ছেড়ে ঢাকায় আসেন তিনি। একটি ফার্নিচারের দোকানে যোগ দিয়ে পিতার চিকিৎসার খরচ যোগানে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন সিহাব। সেই থেকে শুরু হয়েছিল তাঁর শ্রমিক জীবন। তারপর থেকে ফার্নিচারের দোকানে প্রায় তিন বছর ধরে কাজ করেছেন শিহাব। বেতন থেকে নিজের চলার মত কোন রকম খরচ রেখে বাকি টাকা মায়ের হাতে পাঠিয়ে দিতেন। অবসর সময়ে রোলার স্কেটিং চালানই ছিল শিহাবের অন্যতম শখ। যেভাবে তিনি রবের সান্নিধ্যে গিয়েছেন ‘ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন সড়কে কিছু দেখতে না পেয়ে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করেন’ ঢাকার বাড্ডা লিংকরোড এলাকায় ফুপাত ভাই মনির মোল্লার ‘হাসান স্টিল অ্যান্ড ফার্নিচার-এ কাজ করতেন শিহাব। ১৯ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে মনির মোল্লার বোনের বাসায় দুপুরের খাবার খেতে যান। এ সময় বাড্ডা এলাকা আওয়ামী নেতাকর্মীরা দখল করে রেখেছিল। কোটাবিরোধী আন্দোলনকে প্রতিহত করতে লাগাতার গোলাগুলি করছিল। শিহাব এসব দেখে ভয় পেয়ে যান। এরপর খাবার শেষ করে কারখানায় যাওয়ার সময় রাস্তা পার হতে গেলে পুলিশের টিয়ারশেলের মুখে পড়েন তিনি। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন সড়কে কিছু দেখতে না পেয়ে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় পুলিশের ছোড়া একটি গুলি তাঁর শরীরে এসে বিদ্ধ হয়। শিক্ষার্থীরা পুলিশের মুহুর্মুহু গুলি উপেক্ষা করে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে ফার্নিচার দোকানের মালিক মনির স্থানীয় এক হাসপাতালে গিয়ে শিহাবকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। সেখানে চিকিৎসা না পেয়ে বনশ্রী এলাকার নাগরিক স্পেশালাইজড প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শুক্রবার রাতে গ্রামের বাড়ি শিবচর উপজেলার সন্ন্যাসীর চর ইউনিয়নের রাজারচর আজগর হাওলাদারকান্দি গ্রামে লাশ এসে পৌঁছালে চারিদিকে শোকের মাতম উঠে। পরে শনিবার দিবালোকে শহীদ শেখ হৃদয় আহমেদ শিহাবের দাফন সম্পন্ন হয়। মনির মোল্লা বলেন, শিহাব আমার দোকানে কাজ করতেন। দুপুরে খাবার খেয়ে কারখানায় ফেরার সময় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। বুকের এক পাশ থেকে গুলি ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায় তার। সে হাসপাতালে চিকিৎসা পায়নি। ভর্তি করতে চায়নি কোনো হাসপাতাল! চোখের সামনেই সব শেষ হয়ে গেল। পরিবারের ও পরিচিত জনদের অভিমত আদরের একমাত্র সন্তান হারিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন মা নাছিমা বেগম। শোকে বাকরুদ্ধ বাবা নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকছেন ঘরের এক কোণে। একমাত্র ভাইকে হারিয়ে আর্তনাদ করছেন বোন। শোকে আচ্ছন্ন স্বজন-প্রতিবেশী। বাড়ির পাশের কবরস্থানে এসে ভিড় করছেন স্বজনেরা। একমাত্র নাতিকে হারিয়ে প্রলাপ বকছেন দাদা রফিক হাওলাদার। কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত শিহাবের মা নাছিমা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে দুপুরে খাইয়া কারখানায় যাইতেছিল। ওই তো আন্দোলন করে নাই। ওরে কেন গুলি কইরা মারলো? আমার একমাত্র ছেলে! আমি এখন কি নিয়া বাঁচমু। আমার বাবার কাছে আমারে নিয়া যাও’। শহীদের বাবা শাহ আলম হাওলাদার বলেন, আমাদের পরিবারের একমাত্র ছেলে ও একমাত্র উপার্জনকারী সন্তান ছিল শিহাব। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই। বাবা হয়ে সন্তানের লাশ কাঁধে নেওয়ার কষ্ট কাউকে বলে বুঝাতে পারব না। সন্তানের মরদেহ কাঁধে নেব, তা কখনও ভাবিনি। কিন্তু কেন আমার সন্তান গুলিতে মারা গেল। তার কি কোনো বিচার পাব? নিহত শিহাবের চাচা সাহাবুদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের পরিবারের একমাত্র ছেলেসন্তান ছিল শিহাব। আমার বড় ভাইয়ের ছেলে। তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিল শিহাব।’ জুনায়েদ নামে তার এক প্রতিবেশী বলেন, এলাকার মধ্যে অত্যন্ত ভদ্র ও বিনয়ী ছিল। ছুটিতে বাড়িতে আসলে সবার সঙ্গে মিশতো। তার এমন আকস্মিক মৃত্যু কেউ মানতে পারছেন না। শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, শিহাবের মৃত্যুর বিষয়টি দুঃখজনক। আমি খোঁজখবর নিয়েছি। সবকিছু স্বাভাবিক হলে ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব। তা ছাড়া তারা চাইলে আমাদের পক্ষ থেকে যেকোনো সহযোগিতা করা হবে। শিহাবের হদয় বিদারক ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে লেখালেখি করেছে। উল্লেখযোগ্য মিডিয়ার লিংক সমূহ 1. https://reformbangladesh.net/martyrs/†kL-ü`q-Avn‡g`-wknve/ 2. https://dailyinqilab.com/index.php/national/article/672604 3. https://www.jugantor.com/tp-firstpage/831751 4. https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/08/04/1411601 5. https://www.dhakapost.com/country/296473 6. https://www.somoynews.tv/news/2025-01-29/P1vQSFNx 7. https://www.jaijaidinbd.com/wholecountry/481018 8. https://www.youtube.com/watch?v=OnKIysZ-z4M আওয়ামী আগ্রাসন বিতর্কিত রক্তখেকো দল আওয়ামী সরকারের ১৬ বছরের শাসনামলে শিহাবের মত এমন আরও হাজারও মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। গুম হতে হয়েছে শত-শত নিরপরাধ মানুষকে। আওয়ামী দুঃশাসনের কয়েকটি খন্ড চিত্র তুলে ধরা হল। বিচার বহির্ভূত হত্যা ও ক্রসফায়ার ২. গুম করে আয়না ঘরে বন্দী ৩. গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরা ৪. ডিবি হেফাজতে অত্যাচার ৫. শিবির ট্যাগ দিয়ে সাধারণ ছাত্রদের নির্যাতন ও খুন ৬. অর্থ পাচার ও হল মার্ক কেলেঙ্কারি ৭. ব্যাংক ডাকাতি, পদ্মা সেতুর টাকা নিয়ে ছল চাতুরী ৮. অর্থ কালোবাজারি ৯. শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি ১০. ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ পিলখানা হত্যাকাণ্ড, ৫ মে ২০১৩ হেফাজত হত্যা কাণ্ড ১১. বিরোধী দলকে অথর্ব করা, সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ১২. সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক জিয়াকে অপমান-অপদস্থ, জেল-জুলুম, আটক ও আরাফাত রহমান কোকোকে ষড়যন্ত্র করে স্ট্রোক নাটক সাজিয়ে হত্যা ১৩. ট্রাইব্যুনাল গঠন করে জনদরদী নেতাদের গ্রেফতার ও হত্যা নাটক ১৪. বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলিকে জবাই করে হত্যা ১৫. আওয়ামী গডফাদার শামিম ওসমানের নেতৃত্বে নারায়ণঞ্জে সাত খুন ১৬. বিশিষ্ট ইসলামী ব্যক্তিত্ব আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদি সাহেবের আটক ও রায় ঘোষণা কেন্দ্রিক সারাদেশে একযোগে গণহত্যা ১৭. ইসলামী স্কলারদের দেশ থেকে বিতারিত করণ ১৮. উলামায়ে কেরামদের হুমকি ও তাঁদের গাড়িতে ধাক্কা দিয়ে হত্যা চেষ্টা ১৯. টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন কোটা সৃষ্টি করে মেধাবী শুন্যকরণ ২০. আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে নিজের আয়ত্বে রেখে গণহত্যা বাস্তবায়ন শেষকথা আওয়ামী শাসনামলে বিগত বছর গুলোতে দেশের মানুষকে খুনি হাসিনা বাকরুদ্ধ করে রেখেছিল। এই বাক স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে ২০২৪ সালে আপামর জনতা ফুঁসে ওঠে। একপর্যায়ে শতশত মানুষের তাজা প্রাণ বিলিয়ে দেওয়ার পর বাংলাদেশে ২য় স্বাধীনতা ফিরে আসে। বিজয়ের এই চেতনা আমাদের মধ্যে জাগ্রত করুক দেশপ্রেম ও মহানুভবতা। শহীদ শিহাবের এই আত্মত্যাগ দেশের নাগরিক মনে রাখুক কোটি-কোটি বছর। শিহাবের এমন আকস্মিক শাহাদাতে ভেঙে পড়েছেন তার বয়োবৃদ্ধ বাবা-মা। বাকরুদ্ধ বাবার নিরবতা ও মায়ের আহাজারিতে চারিদিক যেন ভারী হয়ে উঠেছে। এই তেজস্বী তরুণ তুর্কী বেঁচে থাকুক আমাদের হৃদয়ে, আমদের জীবনে। একনজরে শহীদ সম্পর্কিত তথ্যাবলি নাম : শেখ হৃদয় আহমেদ শিহাব জন্ম : ২০০৬ সাল, বয়স: ১৮ পেশা : স্টিল কারখনার শ্রমিক প্রতিষ্ঠান : হাসান স্টিল অ্যান্ড ফার্নিচার স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: রাজারচর আজগর হাওলাদারকান্দি, উপজেলা: শিবচর, জেলা: মাদারীপুর বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: নবীনগর, ঢাকা পিতা : শাহ আলম হাওলাদার, পেশা: দিনমজুর মাতা : নাছিমা বেগম, পেশা: গৃহিণী সম্পদের পরিমাণ : পৈতৃক বসতি জমি রয়েছে আহত হওয়ার সময় : ১৯ জুলাই ২০২৪, আনুমানিক দুপুর ৩:৩০টা ঘটনার স্থান : বাড্ডা লিংক রোড, ঢাকা আক্রমণকারী : আওয়ামী মদদপুষ্ট পুলিশ বাহিনী চিকিৎসা সেবা নেওয়া হাসপাতাল : নাগরিক স্পেশালাইজড প্রাইভেট হাসপাতাল, বনশ্রী শাহাদাতের তারিখ ও স্থান : ১৯ জুলাই ২০২৪, নাগরিক স্পেশালাইজড প্রাইভেট হাসপাতাল, বনশ্রী লাশ হস্তান্তর ; ১৯ জুলাই ২০২৪ শহীদের কবরের অবস্থান : নিজগ্রাম প্রস্তাবনা ১. শহীদ পরিবারে মাসিক বা এককালীন সহযোগিতা করা যেতে পারে ২. শহীদের পিতাকে কর্মসংস্থান করে দেওয়া যেতে পারে ৩. নিজস্ব জমিতে স্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করলে অসহায় পরিবারটির উপকার হবে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: শ্রাবণ গাজী

মোহাম্মদ নুরু

 মো: তাজুল ইসলাম

মো: রাসেল মাহমুদ

আবদুল্লাহ আল রোমান

হাফেজ মো: শরিফুল ইসলাম

মো: রাসেল গাজী

মোহাম্মদ সাইফুল হাসান

নাফিসা হোসেন মারওয়া

মো: সুজন মিয়া

বাবু মোল্লা

মো: মায়া ইসলাম

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo