Image of সানজিদ হোসেন মৃধা

নাম: সানজিদ হোসেন মৃধা

জন্ম তারিখ: ২৭ জানুয়ারি, ২০০৮

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র শাহাদাতের স্থান : রবীন্দ্র স্মরণী রোড, উত্তরা, সেক্টর-৩, আজমপুর, ঢাকা

শহীদের জীবনী

সানজিদ হোসেন মৃধা গাজীপুর জেলার দেশপ্রেমিক কৃতিসন্তান। তিনি ২৭ জানুয়ারি ২০০৮ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মোঃ কবির হোসেন মৃধা এবং মায়ের বনাম রাজিয়া বেগম। ঘটনার প্রেক্ষাপট ২০০৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ১৬ বছরে বেশিরভাগ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে দিয়েছিল। এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তারা নিজেরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের যে ক্ষমতার ভিত্তি, তার কোনটাই টেকসই ছিল না। কারণ তারা জনগণ থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলো। ফলে মানুষের একটা ক্যাটালিস্ট বা স্ফুলিংগের দরকার ছিল। সেটাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দিয়ে শুরু হয়েছে। ফলে সরকার বিরোধী একটা আন্দোলন যখন জোরালো হয়ে ওঠে, সেই আন্দোলন ঘিরেও মানুষের ক্ষোভের জন্ম হয়, তখন সেনাবাহিনী, কারফিউ বা পুলিশের পরোয়ানা না করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার হাজার হাজার মানুষ গণভবনের উদ্দেশ্যে রাজপথে নেমে এসেছিলেন। বিশেষজ্ঞরা জানান, ১৫ বছরের একটা পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, জিনিসপত্রের দাম অত্যাধিক বৃদ্ধি, গণপরিবহনের অব্যবস্থাপনা, লুটপাট, ব্যাংকিংয়ের অনিয়ম সব কিছু নিয়ে ক্ষুব্ধ মানুষ কোটা আন্দোলনকে উপলক্ষ্য করে একটা পরিবর্তনের আশায় সম্পূর্ণ খালি হাতে অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে এসেছেন। তাহমিনা নামে একজন আন্দোলনকারী বলেন, ''আমার সরকারি চাকরির দরকার নেই, চাকরির আবেদন করার মতো বয়সও নেই। কিন্তু আমাদের সাথে যে মিথ্যাচার করা হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে, আমাদের যে ভয়ভীতির মধ্যে রাখা হচ্ছে, সেটার অবসান চাই। সেটার জন্যই আজ আমি পথে নেমে এসেছি।'' গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসলেও পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ বাস্তবে কার্যত একটি 'একনায়কতান্ত্রিক' সরকারে পরিণত হয়েছিল। ২০০৮ সালের পর বাংলাদেশে বাস্তবিক অর্থে আর কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। এই সময়ে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের দুইটি হয়েছে অনেকটা একতরফা নির্বাচন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নিলেও সেখানে ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ ছিল, যে নির্বাচনকে 'রাতের নির্বাচন' বলেও অনেকে বর্ণনা করেন। এমনকি স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ প্রভাব বিস্তার করেছে। সেসব নির্বাচনও বেশিরভাগ সময় একতরফা হয়েছে। যেখানে বিএনপি বা অন্য রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে, সেখানেই অনিয়ম বা কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। ফলে গত ১৫ বছরে মানুষ আসলে ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি বেছে নেয়ার বা মতামত জানানোর কোন অধিকার পায়নি। বিরোধী দলের কেন্দ্রীয় নেতাসহ শত শত নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে, মামলা বা সাজা দিয়ে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। অনেক নেতাকর্মীকে ধরে নিয়ে বছরের পর বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছে। যে দেশটা স্বাধীন হয়েছে মানুষের ভোটের অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে, সেই দেশে দীর্ঘ ১৫ বছরে মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ। তাকে জিইয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের আইন, নজরদারি করার মাধ্যমে।'' বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও বিএনপি ও জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোকে সভা সমাবেশও করতে দেয়া হয়নি। জেল, গুম, খুন করে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার ও পুলিশ বাহিনী মিলে পুরো দেশকে একটা 'মাফিয়া স্টেট' তৈরি করেছিল। সামাজিক মাধ্যমেও শেখ হাসিনা বা শেখ মুজিব বিরোধী বক্তব্য পোস্ট করার জের ধরে মামলা হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকার বিরোধী বক্তব্য দেয়ার জের ধরে মাসের পর মাস ধরে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে, জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। আওয়ামীলীগের একজন ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাও দেশের টাকা লুটপাট করে উন্নত দেশে পাচার করতো। এককথায় আওয়ামী দুঃশাসন সকল স্তরের জনতাকে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল। সকলেই একটি পরিবর্তনের অপেক্ষায় ছিল। অপরদিকে আওয়ামীলীগ পরিকল্পনা করেছিল জনতাকে গোলাম বানিয়ে আজীবন বংশ পরম্পরায় এদেশটাকে গিলে খাবে। আর তাই কোটা বিরোধী আন্দোলনে ব্যপক নির্যাতন হলেও ছাত্র-জনতা আরো বেশি পরিমাণে রাজপথে সামীল হতে থাকে। বাংলার ফেরাউনকে হঠাতে ও দেশের জন্য প্রাণ দিতে ছাত্ররা ঝাঁপিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তাদের সাথে ১৬ বছর ধরে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতিত জনতা যুক্ত হতে থাকে। আন্দোলন পুলিশ, বিজিবি, আনসার, সেনাবাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার মুখে বার বার থমকে যাচ্ছিল। ছাত্ররা নিজেদের ঘরে অবস্থান করতে পারছিলোনা। রাজপথে যাদের হাতে মোবাইল ফোন থাকতো এবং তাতে হাসিনা বিরোধী কোন ছবি-তথ্য পেলেই গ্রেফতার, খুন করা হচ্ছিল। কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধ করে সবকিছু অচল করে দেয়া হলো। দেশবাসী ভেবে নিলো বাংলার এই জুলুমবাজ ইহুদীদের আর বুঝি নির্মূল করা গেলোনা! এসময় আবির্ভূত হয় নির্যাতিত ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। তারা নিত্য নতুন ও অভিনব কর্মসূচী প্রদান করে আন্দোলনকে জাগিয়ে রাখে। ছাত্র সমন্বয়কদের সেইফ হোমে রেখে সরকারের নির্যাতনের সংবাদ ইন্টারনেট বন্ধ থাকার পরেও বিশ্ব মিডিয়ায় প্রচার করতে থাকে। ফলশ্রুতিতে বিশ্ব মিডিয়া বাংলাদেশের দিকে নজর দিতে বাধ্য হয়। আওয়ামী লীগের হত্যাকান্ডে প্রবাসীরা ক্ষুব্ধ হয়ে রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ করে দেয়। জাতিসংঘের গাড়ি ও যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করায় জাতিসংঘ কর্মকর্তা সেনাবাহিনীকে সতর্ক করে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। বিশ্ববাসীর তখন একটাই জিজ্ঞাসা কেন আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সন্তানদের সাধারণ আন্দোলনকে রাক্তাক্ত করলো? কেন সাধারণ ন্যায় সংগত দাবী মেনে না নিয়ে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করছে? শেখ হাসিনা তার ১৬ বছরের লুটপাটের সঙ্গী ও বাংলাদেশের পরজীবী-আগাছা হিসেবে খ্যাত বামপন্থী দল গুলো নিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করলো। তারা বুঝতে পেরেছিল সমস্ত আন্দোলন জামায়াত ও শিবিরের দেশপ্রেমিক মেধাবীদের সাহায্যে সংঘটিত হচ্ছে। শেখ হাসিনা ছাত্রদের শিবির আখ্যা দিয়ে একটি ভয়ংকর গণহত্যার প্রস্তুতি নিল। অপরদিকে দেশবাসী আরো বেশি ক্ষেপে গেল। শিবির নেতাদের আহ্বানে সকলে নিজেদের ফেইসবুক প্রোফাইল লাল করতে লাগলো। দেশবাসী প্রতিবাদে নিজেদের ফেইসবুক প্রোফাইল লাল করতে লাগলেন। সাবেক সেনাপ্রধানও এই কর্মসূচীতে অংশ নিলেন। প্রাক্তন সেনা সদস্যরা এই আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করলেন। ৪ আগস্ট সারাদেশে আওয়ামী বাহিনী খুন করতে এসে প্রথমবারের মতো প্রতিরোধের মুখে পড়লো। শিবির নেতারা পরদিন মার্চ ফর ঢাকা কর্মসূচী দিলেন। সানজিদ হোসেন মৃধা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র। তিনি বুকে সাহস নিয়ে সমস্ত জুলাই জুড়ে রাজপথে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। ছাত্রদের অধিকার রক্ষায় নিজের প্রাণের ভয়কে দূরে সরিয়েছিলেন। ৫ আগস্ট তিনি ‘মার্চ ফর ঢাকা’ কর্মসূচীতে অংশ নিতে রাস্তায় নেমে আসেন। বিকেলে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের রবীন্দ্র সরণিতে হাসিনার খুনি বাহিনী তাকে গুলি করে হত্যা করে। উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। পরিবারের মামলা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, বরগুনা-১ আসনের সাবেক এমপি ধীরেন্দ্র নাথ শম্ভুসহ ২৩১ জনের নামে মামলাটি হয়েছে। রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরীর আদালতে সানজিদের বাবা কবির হোসেন মৃধা মামলার আবেদন করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে উত্তরা পশ্চিম থানাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সংসদ সদস্য মো. খসরু চৌধুরী আলহাজ্ব মো. হাবিব হাসান, শওকত হাচানুর রহমান রিমন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নির্দেশে উত্তরার ৩ নং সেক্টরের রবীন্দ্র সরণিতে ৩০০/৪০০ জন গুলি চালায়। এতে সানজিদসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সানজিদকে মৃত ঘোষণা করেন। একনজরে শহীদ সম্পর্কিত তথ্যাবলি নাম : সানজিদ হোসেন মৃধা জন্ম : ২৭ জানুয়ারি ২০০৮ পেশা : ছাত্র পিতা : কবির হোসেন মৃধা মাতা : রাজিয়া বেগম স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা : ১০৬, বর্ষন হল রোড, উত্তর দত্তপাড়া, টেকবাড়ি, এরশাদ নগর, টঙ্গী, গাজীপুর ঘটনার স্থান : রবীন্দ্র স্মরণী, ৩ নং সেক্টর রোড, আজমপুর, উত্তরা, ঢাকা আক্রমণকারী : আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী আহত হওয়ার সময় : বিকেল ৫ টা আঘাতের ধরন : গলায় গুলিবিদ্ধ মৃত্যুর তারিখ সময় ও স্থান : ৫ আগস্ট, বিকাল ৫ টা প্রস্তাবনা ১. মাসিক ও এককালীন ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of সানজিদ হোসেন মৃধা
Image of সানজিদ হোসেন মৃধা
Image of সানজিদ হোসেন মৃধা
Image of সানজিদ হোসেন মৃধা
Image of সানজিদ হোসেন মৃধা

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

জাকারিয়া হাসান

মো: কামাল মিয়া

জাহাঙ্গীর আলম

আরমান মোল্লা

মো: মনির হোসেন

 মো: তাজুল ইসলাম

রিয়াজুল তালুকদার

মো: সামিউ আমান নুর

তানজীর খান মুন্না

মো: অহিদ মিয়া

রাহাত হোসেন শরিফ

সৈয়দ মো: মোস্তফা কামাল রাজু

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo