জন্ম তারিখ: ১ নভেম্বর, ২০০৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ
আব্দুল্লাহ বিন জাহিদ ২০০৮ সালে ১ নভেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম জাহিদুল ইসলাম এবং মায়ের নাম ফাতেমাতুজ জোহুরা। বাবা-মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। আব্দুল্লাহ বিন জাহিদ এইচ এসসি ২য় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার ছোট ভাই ১৪ বছর বয়সী মাহমুদুল্লাহ বিন জিসান ক্যানসারে আক্রান্ত। আব্দুল্লাহ বিন জাহিদ মা ও ছোট ভাইসহ আশকোনায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট আবদুল্লাহ শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট সাবেক অবৈধ ও খুনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আবদুল্লাহ আনন্দমিছিলে যাওয়ার জন্য মায়ের কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন। মা অনুমতি দিয়েছিলেন। তবে মাগরিবের আজানের পরপরই যাতে বাসায় ফিরে আসে, সে শর্ত দিয়েছিলেন মা। সন্ধ্যা ৭টা ৩৬ মিনিটে তার মা ফাতেমা ছেলেকে ফোন দিয়ে ১৭ সেকেন্ড কথা বলে সন্ধ্যা হয়েছে সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। ছেলে জানিয়েছিলেন, আর আধা ঘণ্টার মধ্যেই বাসায় ফিরবে। তবে রাত ৮টা ১০ মিনিটে অপরিচিত এক নম্বর থেকে ফোন করে একজন জানান, আবদুল্লাহ গুলিতে আহত হয়েছে। দ্রুত উত্তরার মা ও শিশু হাসপাতালে আসতে হবে। ফাতেমা হাসপাতালে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আরও তিনবার ওই মুঠোফোন থেকে ফোন আসে। বলা হয়, দ্রুত না এলে আবদুল্লাহকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। প্রায় ৯টার দিকে ফাতেমা যখন হাসপাতালে পৌঁছান, তখন দেখেন, ছেলের নিথর দেহের দুই পায়ের বুড়ো আঙুল সাদা গজ দিয়ে বেঁধে রাখা। মা জানান, উত্তরায় এপিবিএন সদর দপ্তরের উল্টো পাশে আবদুল্লাহ গলায় ও পিঠে গুলিবিদ্ধ হয়। পিঠে যে গুলি লেগেছিল, তা আর শরীর থেকে বের করা যায়নি। ৫ আগস্ট রাতেই কিশোরগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে আবদুল্লাহকে দাফন করা হয়। পরিবারের বক্তব্য বড় ছেলে গুলিতে মারা যাওয়ার পর স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন ছেলের মৃত্যুর জন্য মাকে দায়ী করেছেন। মা হয়ে তিনি কেন ছেলেকে আনন্দমিছিলে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ফাতেমা বলেন, এই ছেলে মারা যাওয়ার পর আমার ৮০ ভাগ জীবনই অন্ধকারে তলিয়ে গেছে। ছোট ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। ছোট ছেলের চিকিৎসার জন্য আমাকে মানুষের কাছে সাহায্য চাইতে হবে, এ ছাড়া তো আর উপায় নেই। এই ক্যানসারের ভালো চিকিৎসা হয় সিঙ্গাপুরে। ছেলের হত্যাকারীদের ন্যায়বিচার চাওয়ার পাশাপাশি বর্তমান সরকার আমার ছেলেটার চিকিৎসায় যাতে একটু সহায়তা করে, সেটাই আমার চাওয়া। এর আগে ৪ আগস্ট আবদুল্লাহ প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার কথা বলে আজমপুরে আন্দোলনে চলে যায়। ফোন করে বাসায় আসতে বললে ছেলে জানায় ঝামেলার জন্য আসতে পারছে না। বাধ্য হয়ে ফাতেমা তাঁর বড় ভাইকে ফোন করে ছেলের কথা জানালে বড় ভাই কৌশলে এক অফিসের ঠিকানায় কিছু জরুরি কাজের কথা বলে আবদুল্লাহকে যেতে বলেন। পরে রাতে বড় ভাই সেই অফিস থেকে আবদুল্লাহকে নিয়ে বাসায় ফেরেন। এর আগেও আন্দোলনে গিয়ে চোখের সামনে আবদুল্লাহ একজনকে গুলি লেগে মারা যেতে দেখেছে। নিজে কাঁদানে গ্যাস এবং পুলিশের লাঠিপেটা খেয়েছে। ফাতেমা গুলি লাগার পর ছেলের অবস্থার কথা উল্লেখ করে বললেন, ‘হাসপাতাল থেকে যে ডাক্তার ফোন দিয়েছিলেন, তিনি জানিয়েছিলেন আবদুল্লাহ নিজেই তার নাম বলেছিল। বারবার নাকি বলেছিল, আমার আম্মুকে দ্রুত আসতে বলেন। আম্মু এলেই আমি ভালো হয়ে যাব। তবে এ কথাগুলো নাকি সে অনেক কষ্টে বলেছিল। আর তারপরই সে মারা যায়। আর যে ছেলে আবদুল্লাহকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল, আবদুল্লাহর অবস্থা দেখে ওই ছেলে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।’ অর্থনৈতিক অবস্থা শহীদ আব্দুল্লাহ বিন জাহিদের ইন্তেকালের এক সাপ্তাহ পরেই তার একমাত্র ছোট ভাইয়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে ,তার বাবা- মায়ের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ হয়েছিল অনেক আগে। বর্তমানে ছোট ভাইকে নিয়ে শহিদের মা হাসপাতালে ক্যামো দিচ্ছেন, তাদের কোন আয়-উপার্জন নেই বর্তমানে পরিবারটি অসহায় অবস্থায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। নিউজ লিংক https://www.prothomalo.com/bangladesh/f5hvbvrk0l https://www.jugantor.com/capital/876656 https://www.facebook.com/share/p/14mb3gtjDk/?mibextid=wwXIfr একনজরে শহীদ সম্পর্কিত তথ্যাবলি নাম : আব্দুল্লাহ বিন জাহিদ জন্ম : ০১/১১/২০০৮ পেশা : ছাত্র ঐঝঈ ২য় বর্ষ -ক্যান্টনমেন্ট রমিজুদউদ্দিন কলেজ পিতা : জাহিদুল ইসলাম মাতা : ফাতেমাতুজ জোহুরা ভাই-বোন : ১ ভাই স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: বর্শিকুড়া, পো: শাহেদুল, উপজেলা: হোসেনপুর, জেলা: কিশোরগঞ্জ বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: বর্শিকুড়া, পো: শাহেদুল, উপজেলা: হোসেনপুর, জেলা: কিশোরগঞ্জ ঘটনার স্থান : উত্তরা-বিমানবন্দর আক্রমণকারী : পুলিশ আহত হওয়ার সময় : ৫ আগস্ট রাত ৮ টা আঘাতের ধরন : গলায় এবং পিঠের পিছনে গুলি লাগে মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ৫ আগস্ট, রাত ৮.৩০, উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ শহীদের কবরের অবস্থান : নিজ গ্রাম প্রস্তাবনা ১. শহীদের ছোট ভাইয়ের চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহন ২.পূনর্বাসন করা ও মাসিক ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা