Image of মো: আকাশ

নাম: মো: আকাশ

জন্ম তারিখ: ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৮

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : রিকশাচালক, শাহাদাতের স্থান : ওভারব্রিজের নিচে, আজমপুর

শহীদের জীবনী

মো: আকাশ যেন এক নিভৃতচারী পিতা। দেশ মাতৃকার অন্যতম এই বীর যোদ্ধা ১ সেপ্টেম্বর ১৯৮৮ সালে মাদারীপুর জেলার উত্তর দুধখালী গ্রামের আজিজ বেপারি ও সামরতো বানের কোল জুড়ে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব কৈশোর গ্রামে পার করলেও পরবর্তীতে পেশাগত কাজে পাড়ি জমান ঢাকা শহরে। তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে বাস করতেন রাজধানীর সুপরিচিত এলাকা উত্তরার বাউনিয়া। ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবে উত্তরার আজমপুর ওভারব্রিজ সংলগ্নে পুলিশের গুলিতে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। তথ্য শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের আশ্রয় থেকে বের হয়ে এসে নতুন দেশ বাংলাদেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কয়েক বছরের মধ্যে মুজিব ও তার দলের দুর্নীতি ও অবিচারের ফলে দেশে দুর্ভিক্ষ নেমে আসে। মানুষ না খেতে পেয়ে কোলের সন্তানকে পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। স্বৈরাচারী মুজিব ও তার নিষ্ঠুর রক্ষী বাহিনীকে পরাজিত করা ছিল কল্পনার বাইরের কাজ। এই অসাধ্য সাধন করতে এগিয়ে আসেন সেনাবাহিনীর কিছু দেশপ্রেমিক অফিসার। মুজিব ও তার খুনি বাহিনী পরাজিত হলে শেখ হাসিনা ও তার বোন রেহানা ভারতে আশ্রয় নেন। সেখানে তারা ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করেন। দেশপ্রেমিক ও শাসক মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে পৃথিবীর মানচিত্রে তুলে ধরতে রাত-দিন পরিশ্রম করেন। তিনি মুজিব কন্যাদের দেশে ফিরিয়ে আনেন। দেশে ফেরার কিছুদিনের মধ্যে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়। প্রকৃত হত্যাকারী সম্পর্কে দেশবাসী আজও জানে না। ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করে বাংলাদেশকে ভারতের তাবেদার রাষ্ট্র বানিয়ে ফেলে। ইসলামপন্থীদের নির্মূল করে। প্রতিবাদকারীদের জামায়াত-শিবির আখ্যা দিয়ে খুন করে। তাদের ১৬ বছরের শাসন পৃথিবীর ইতিহাসে নিকৃষ্ট সময় হিসেবে স্থান লাভ করে। ছাত্র-জনতার একাংশ এই ঘাতক ও দেশবিরোধী অবৈধ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা করে। হাসিনার নির্দেশ ছিল যেকোনো আন্দোলন দমাতে প্রয়োজনে লাশ ফেলে দিতে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল ইসলামী ছাত্রশিবিরের কতিপয় জানবাজ নেতা-কর্মী। তারা সাধারণ ছাত্রদের ব্যানারে বিভিন্ন দাবি উপস্থাপন করতে থাকে এবং ব্যতিক্রমধর্মী কর্মসূচি দিয়ে দেশবাসীকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানায়। ইন্টারনেট বন্ধ এবং কারফিউ চলাকালে সমন্বয়কদের রক্ষার পাশাপাশি অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের অপকর্ম বিশ্ব মিডিয়ায় তুলে ধরে নিয়মিতভাবে। এসম্পর্কে বিশ্ববিখ্যাত নিউজ চ্যানেল আল জাজিরার কর্মকর্তা জুলকারনাইন সায়ের তার ফেইসবুক আইডিতে চার পর্বে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন এভাবে- পার্ট ১ ছাত্র আন্দোলন “স্টুডেন্টস অ্যাগেইনস্ট ডিসক্রিমিনেশন (ঝঅউ)” এবং “শিবির” এর মধ্যে জুলাই বিপ্লব এবং স্বৈরশাসক পতনের অবদানের নিয়ে চলমান বাদানুবাদ দেখে আমি ও আমার সঙ্গীরা সত্যিটা স্পষ্ট করার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি তখন অন্য মহাদেশে থাকতাম এবং আন্দোলনের সময় হাজারো কাজের মধ্যে ডুবে ছিলাম, তাই মাঠ পর্যায়ের সমন্বয়ের দায়িত্ব পড়ে আমার দীর্ঘদিনের আস্থাভাজন এক বন্ধুর উপর, যিনি বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক। ঘটনার শুরু হয় ২৬ জুলাই রাত ১০টা ১০ মিনিটে। আমার সেই আস্থাভাজন বন্ধুর কাছে একটি বার্তা আসে, যেখানে তাকে চারজন আন্দোলনকারীর জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে বলা হয়, যারা হাসপাতালে থেকে পালিয়ে পুলিশের নজরদারি এড়ানোর চেষ্টা করছিল। তারা তখন ইউএস এম্বেসির কাছে একটি অ্যাম্বুলেন্সে আটকে ছিল। সঙ্গে সঙ্গেই সে আমাকে ফোন করে এবং সেই মুহূর্ত থেকে আমি সরাসরি এই ছাত্র আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ি। আমি তাকে আমাদের ইউএস এম্বেসির পরিচিত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে বলি। সে কর্মকর্তাকে মনে করিয়ে দেয় যে এর আগে ইমরান আহমেদ ভূঁইয়ার ক্ষেত্রেও ইউএস এম্বেসি আশ্রয় দিয়েছিল, যিনি সেপ্টেম্বর ২০২৩-এ আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধী বিবৃতি দেওয়ার কারণে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে বরখাস্ত হয়েছিলেন। তবে এবার কর্মকর্তাটি জানান যে, বিভিন্ন কারণে এটি সম্ভব নয়, যার মধ্যে একটি হলো সেই সময় দূতাবাসে কোনো রাষ্ট্রদূত ছিল না এবং চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হাসিনা সরকারের রোষানলে পড়তে চাননি। তবে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে তার পরিচিতদের সাথে যোগাযোগ করার আশ্বাস দেন। এদিকে, আমার আস্থাভাজন বন্ধু তার অন্যান্য যোগাযোগসূত্রে চেষ্টা করে কিন্তু কোনো ফল মেলে না। শেষপর্যন্ত যদি কিছুই না হয়, তাহলে সে নিজেই আন্দোলনকারীদের তার বাসায় আশ্রয় দিতে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু প্রায় ২০ মিনিট পর ইউএস এম্বেসির কর্মকর্তার ফোন আসে। তিনি জানান, আন্দোলনকারীরা গুলশানের একটি বিদেশি সংস্থার অফিসে আশ্রয় নিতে পারবে এবং সেই অফিসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা তাদের গ্রহণ করবেন। খবরটি পাওয়ার পর, আমি সেই ছাত্রদের একজন, সালমানের সাথে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করি। পরবর্তীতে জানা যায়, সে আসলে শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম। আমি ঢাকার বিভিন্ন সূত্রের সাথে কথা বলে গুলশান-২ এ নিরাপদে পৌঁছানোর রুট ঠিক করি। চারজন ছাত্রকে দুটি রিকশায় বিভক্ত করে পাঠানো হয় এবং রাত ১১টার মধ্যে তারা নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে যায়। তবে, ২৮ জুলাই সকাল ৯টার মধ্যে তাদের সেই স্থান ছাড়তে হবে, কারণ তখন অফিস খোলার সময়। পরের দিন, ২৭ জুলাই, শহিদুল আলম ভাই ছাত্রদের সম্পর্কে জানতে পারেন এবং সন্ধ্যায় তাদের নিজের আশ্রয়ে নেন। এসময় আমরা ভেবেছিলাম তারা নিরাপদেই আছে। এদিকে, সালমান আমাকে ফোন করে জানতে চায়, তারা কি আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে আন্দোলন নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করতে পারবে? আমি আমার আস্থাভাজন বন্ধুকে সালমানের পরিকল্পনা জানার জন্য বলি। সে শফিকুল আলম (তৎকালীন এএফপি ব্যুরো প্রধান) এবং মানবাধিকার কর্মী রেজাউর রহমান লেনিনের সাথে কথা বলে। তারা জানায়, ইএমকে সেন্টার সম্ভব নয়, কারণ সব বুকিংয়ের জন্য নিরাপত্তা অনুমোদন প্রয়োজন, আর ড্রিক গ্যালারি ১০ আগস্টের আগে খোলা হবে না। তারা এই পরিকল্পনা বাতিল করার পরামর্শ দেয় এবং তা সালমানকে জানানো হয়। ফলে, প্রদর্শনীর ধারণা তখনই বাদ দেওয়া হয়। ২৮ জুলাই দুপুর ১২:০৯ মিনিটে সালমান আমার আস্থাভাজন বন্ধুকে একটি বার্তা পাঠায়, যেখানে আব্দুল কাদেরের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় খোঁজার অনুরোধ করা হয়। আমি তখন ঢাকায় আমার এক পরিচিতের সাথে যোগাযোগ করি, যিনি একটি দূতাবাসে কাজ করেন। তিনি কাদেরকে গুলশানের নিজের বাসায় আশ্রয় দিতে সম্মত হন। তবে অফিস শেষে বিকাল ৪টার পরেই তিনি তাকে নিতে পারবেন। কাদের তখন শনির আখড়ায় ছিল, তাই সরাসরি গুলশানে যাওয়া সম্ভব ছিল না। ফলে কাদেরকে মাঝপথে আসতে বলা হয়। এই পর্যায়ে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান আন্দোলনের খবরাখবর সরাসরি মনিটর করা শুরু করেন, মির হেলাল (বিএনপির চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক)-এর মাধ্যমে, যিনি কাদেরের আশ্রয়দাতার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলেন। সেই রাতে আমরা জানতে পারি যে ঝঅউ-এর ছয়জন সমন্বয়ক— নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, আবু বকর মজুমদার এবং নুসরাত তাবাসসুম—ডিবি অফিস থেকে আন্দোলন বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। আমরা অবাক হয়ে যাই। তবে রাত ৯:৫০ মিনিটে সালমান আমাদের জানায় যে আন্দোলন চলবে এবং কাদের, হান্নান, রিফাত ও মাহিন নেতৃত্ব দেবে। আমি পরামর্শ দেই, চারজন নতুন নেতা যেখানে আছেন সেখান থেকেই একটি ভিডিও বার্তা রেকর্ড করতে। সালমান সেই বার্তার খসড়া পাঠায়, যা আমি সম্পাদনা করি এবং আমার আস্থাভাজন বন্ধু সেটি ইংরেজিতে অনুবাদ করে। রাত ১১:০৪ মিনিটের মধ্যে বার্তাটি সালমানের কাছে পাঠানো হয়। তবে, বার্তাটি কোথাও প্রকাশিত হয়নি। রাত ১১:৩৫ মিনিটে সালমান আমাদের জানায় যে, তাদের থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক এখনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তারা কি এখনই শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করবে নাকি আগের নয় দফা দাবিতেই অটল থাকবে। শেষে তারা নয় দফাতেই থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। ঠিক রাত ১২টায় ঝঅউ-এর লেটারহেডে চূড়ান্ত বার্তাটি প্রকাশ করা হয়। কাদের বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায় ভিডিও বার্তা রেকর্ড করে এবং আমি সেই ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করি। বাকি তিনজনও তাদের ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে। পরের দিন, ২৯ জুলাই, বিকাল ৪:৫০ মিনিটে সালমান আবার ফোন করে এবং হান্নান, রিফাত, মাহিন ও মেহেদীর (যিনি পরে চট্টগ্রাম ছাত্রদলের জাহাঙ্গীরনগর ইউনিটের আব্দুল গফ্ফার জিসান বলে পরিচিত হন) জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়ের অনুরোধ করে। তারা তখন গুলশানের নর্থ এন্ড কফি রোস্টার্স-এ বসে ছিল এবং দ্রুতই তাদের নিরাপদ স্থানে যেতে হতো, কারণ এক ঘণ্টার মধ্যে কারফিউ শুরু হবে। আমার আস্থাভাজন বন্ধু ভৎবহবঃরপভাবে তার পরিচিতদের ফোন করতে থাকে, কিন্তু কোনো ফল মেলেনি। শেষ পর্যন্ত তার দুই বন্ধু ফাহিম আহমেদ এবং আন্দালীব চৌধুরী তাদের বনানীর বাসায় আশ্রয় দিতে রাজি হন। ছেলেরা তখন নর্থ এন্ড থেকে বেরিয়ে বনানীর এক কোচিং সেন্টারে লুকিয়ে ছিল। আন্দালীব তাদের সেখান থেকে নিয়ে আসে। আন্দালীব একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক এবং ১৮ জুলাই থেকে কোটা আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ছেলেরা তার আশ্রয়ে নিরাপদ বোধ করে। তবে, আমার আস্থাভাজন বন্ধু জানায় যে, ফাহিমের পেশাগত জীবনের ঝুঁকি এড়াতে পরদিন সকালে ছেলেদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে। এরপর আবার শুরু হয় নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ। কাদেরের আশ্রয়দাতাকে জিজ্ঞেস করা হয়, তবে তার বাসায় আর জায়গা ছিল না। তবে তিনি পুরান ঢাকায় একটি নতুন আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন। ছেলেদের বনানী থেকে পুরান ঢাকায় নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, তাই রেজার সহায়তা নেওয়া হয় এবং তিনি সম্মত হন। পাশাপাশি, আমি বিকল্প আশ্রয় হিসেবে মিরপুর ডিওএইচএস-এ একটি বাসার ব্যবস্থা করি ও আমার আস্থাভাজন বন্ধুর কাছে সেই ঠিকানা পাঠাই। পার্ট ২ ৩০ জুলাই সকালে রেজা ফাহিম এবং আন্দালীবের বাসায় (বনানী) পৌঁছায় ছেলেদের পরবর্তী নিরাপদ আশ্রয়ে (পুরান ঢাকা) সরানোর জন্য। কিন্তু সেখানে পৌঁছে রেজা দেখতে পায়, লোকেশনটি (যা আদালতের খুব কাছেই) মোটেও নিরাপদ নয়। ছেলেরা থাকার জায়গার অবস্থা দেখে অখুশি হয় এবং ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায়। তারা ফাহিম ও আন্দালীবের বাসায় ফিরে যেতে চায়, যদিও আমার আত্মীয় (পড়হভরফধহঃব) এর তীব্র বিরোধিতা ছিল। তবুও ছেলেরা আন্দালীবকে ফোন করে এবং আন্দালীবও তাদের ফেরত আসতে বলে। কিন্তু আমার আত্মীয় এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেয়। সে ওহাইদ আলমকে ফোন করে জানতে চায় তার দেওয়া আশ্রয়ের প্রস্তাব এখনো প্রযোজ্য কিনা এবং ওহাইদ খুব উদারভাবে রাজি হয়। রেজার কাছে ওহাইদের বিস্তারিত তথ্য পাঠানো হয় এবং রেজা ছেলেদের ওহাইদের আশ্রয়ে পৌঁছে দেয়। এই ফ্ল্যাটটি ওহাইদ আলমের বাইয়িং হাউসের হেডকোয়ার্টার। এটি খুবই নিরাপদ এবং ছেলেদের মান অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা ছিল, যা পুরান ঢাকার ঠিকানায় পাওয়া যায়নি। রেজা ছেলেদের ফোনে প্রিমিয়াম ভিপিএন ডাউনলোড করে দেয় আমার আত্মীয়ের আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে। এদিকে রেজার সাথে যোগাযোগ করার সময় দুপুর ২:১৩ মিনিটে সালমান আমার আত্মীয়কে একটি বার্তা পাঠায়, পরের দিনের জন্য কী কর্মসূচি ঘোষণা করা যায় তা জানতে। ৩:২৪ মিনিটে সালমান দেশব্যাপী আদালতের সামনে বিক্ষোভ করার প্রস্তাব দেয়। আমার আত্মীয় এই ধারণাটিকে পছন্দ করে এবং পরামর্শ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাইরের এলাকায়ও বিক্ষোভ করার জন্য, কারণ তখন ক্যাম্পাসগুলো ব্লক করা ছিল। ৪:৫৪ মিনিটে সালমান হান্নানের সাথে কথা বলতে বলে যেন সে এই কর্মসূচি ঝঅউ-এর ফেসবুক পেজ থেকে ঘোষণা করে। হান্নান লিফলেট বিতরণের কথা ভাবছিল, কিন্তু আমার আত্মীয়ের সাথে কথা বলার পর সে আদালতের সামনে বিক্ষোভের পরিকল্পনায় রাজি হয়। ৫:৩২ মিনিটে সালমান বাংলা কমিউনিকেশন পাঠায় ভেটিংয়ের জন্য এবং ইংরেজি অনুবাদ করতে বলে। সন্ধ্যার মধ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এদিকে হান্নান আমার আত্মীয়কে ছেলেদের জন্য নতুন পোশাক ও লুঙ্গি কিনে দিতে বলে এবং তাদের সাইজ পাঠায়। আমার আত্মীয় তার এক সহকর্মীকে টাকা দেয়, যে মিরপুরে থাকে, এবং তাকে পোশাক কিনে মিরপুর ডিওএইচএস-এ পৌঁছে দিতে বলে। তবে তখন কারফিউ চলছিল, ফলে সব দোকান বন্ধ ছিল। তার সহকর্মী এক বন্ধুর মাধ্যমে দোকানদারকে রাজি করিয়ে দোকান খোলায় এবং পরদিন সকালে ওহাইদ আলম সেসব পোশাক সংগ্রহ করে নেয়। ৩১ জুলাই দুপুর ১:৩১ মিনিটে সালমান জানায়, সেদিনের কর্মসূচিতে বিশাল সাড়া পাওয়া গেছে। এরপর সে পরদিনের জন্য “সফট”কর্মসূচি প্রস্তাব করে, যেমন লিফলেট বিতরণ। আমার আত্মীয় এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে কারণ এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এবং জেন-জেড হিসেবে তাদের আরও সচেতন হওয়া উচিত। সেই সাথে আন্দোলনের গতি নষ্ট হবে বলেও সে সতর্ক করে। পরিবর্তে, সে জাতিসংঘের অফিসের সামনে বিক্ষোভ করার প্রস্তাব দেয়, যাতে তারা হত্যাযজ্ঞের স্বাধীন তদন্তের দাবি জানাতে পারে। কিন্তু সালমান জানায়, বাকিরা নরম কর্মসূচির পক্ষে এবং জাতিসংঘ অফিসের সামনে বিক্ষোভ একদিন পরে করা যেতে পারে। কিন্তু সেই দিনটি ছিল সপ্তাহান্ত, ফলে তা ফলপ্রসূ হবে না। বৃহস্পতিবারই এ কর্মসূচি পালন করতে হবে বলে সে জোর দেয়। এই সময় আমার আত্মীয় কাদেরের আশ্রয়দাতার কাছ থেকে একটি ফোন পায়। তিনি জানান, নাহিদের "গুরু" আন্দোলনকে মন্থর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলার আন্দোলনে রূপান্তর করার পরামর্শ দিয়েছে। এই গুরু হলো মাহফুজ আবদুল্লাহ, এখন মাহফুজ আলম নামে পরিচিত। আমার আত্মীয় শফিকুল আলমকে ফোন করে মাহফুজ সম্পর্কে জানতে চায়। শফিকুল আলম জানায়, সে মাহফুজকে ভালোভাবে চেনে এবং দুইটি বাংলা দৈনিক পত্রিকায় চাকরি পাইয়ে দিয়েছিল, কিন্তু মাহফুজ সেখানে টিকতে পারেনি। আমার আত্মীয় শফিকুলকে বলে মাহফুজকে আন্দোলনের পথে বাধা হতে না দেওয়ার জন্য সাবধান করতে। তিন ঘণ্টা পর শফিকুল জানায়, মাহফুজকে সতর্ক করা হয়েছে। আমার আত্মীয় সালমানকেও মাহফুজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে এবং আন্দোলন মন্থর না করার নির্দেশ দেয়। সালমান জানায়, আন্দোলনে অনেক স্টেকহোল্ডার রয়েছে এবং সবার মধ্যে ঐক্যমতে পৌঁছানো কঠিন। কিন্তু সে যতক্ষণ বেঁচে আছে, আন্দোলন চলবে। সে জানায়, ছাত্রদের নয় দফা দাবি সে-ই লিখেছে এবং ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের সময় নিজে গিয়ে মিডিয়াগুলোতে তা দিয়েছে। তবে ছেলেরা ক্লান্ত, তাই পরদিনের কর্মসূচি সফট রাখতেই হবে। সে একটি আকর্ষণীয় টাইটেল এবং হ্যাশট্যাগ চায়। আমার আত্মীয় ফাহিমকে জিজ্ঞেস করে এবং ফাহিম কিছু হ্যাশট্যাগ ও টাইটেল দেয়। পরদিনের জন্য ‘সফট’ কর্মসূচি নির্ধারিত হওয়ায় আমার আত্মীয় রাত ৯টায় শহীদদের স্মরণে দেশব্যাপী ক্যান্ডেল লাইট ভিজিল করার প্রস্তাব দেয়, যা শক্তিশালী বার্তা দেবে। সালমানও এ ধারণা পছন্দ করে। কিন্তু রাত ৮:৫৬ মিনিটে সালমান জানায়, পরদিনের কর্মসূচি হবে ‘রিমেম্বারিং দ্য হিরোস’, যেখানে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে—ক্যান্ডেল লাইট ভিজিল নয়। শনিবারের জন্য ‘মার্চ ফর ক্যাম্পাস’কর্মসূচি ঠিক করা হয়, যাতে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার দাবি জানানো হয়। আমার আত্মীয় কাদেরের আশ্রয়দাতাকে ফোন করে, যে এই পরিবর্তনে খুবই বিরক্ত। আমার আত্মীয় সালমানকে তিরস্কার করে আন্দোলনের গতি কমানোর জন্য। সে বলে, যদি আন্দোলন কেবল ক্যাম্পাস-কেন্দ্রিক হয়, তবে এটি থেমে যাবে। জনসমর্থন কমে যাবে এবং শেখ হাসিনা পুনরায় সংগঠিত হয়ে আন্দোলনকারীদের দমন করবে। সে জানায়, তার বন্ধুরা তাদের জীবন ও ক্যারিয়ারকে বিপন্ন করছে না শুধু কোটা পাওয়ার জন্য। রাত ১১:১৫ মিনিটে সালমান তাকে অনুরোধ করে একটি জুম মিটিংয়ে ছাত্রনেতাদের এসব বোঝানোর জন্য। সে রাজি হয়, কিন্তু সেই মিটিং আর হয় না। পার্ট ৩ ১ আগস্ট সকাল ১১:৩৬ মিনিটে সালমান আমার আত্মীয়কে ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভের ছবি পাঠায়। সে ফাহিমের কাছ থেকে প্রস্তাবিত হ্যাশট্যাগগুলো সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত করার অনুরোধও করে, যেন সেগুলো ছাত্র গ্রুপগুলোতে শেয়ার করা যায়। বিকেল ৪:২৩ মিনিটে আমার আত্মীয় সালমানকে আবারও বকাঝকা করে কারণ "হিরোদের স্মরণ" কর্মসূচিকে ঘিরে জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া খুব খারাপ হয়েছিল। সে সালমানকে বলে যে, যতক্ষণ না তারা তাদের স্বার্থপর নয়-দফা দাবির জন্য চাপ দেবে, ততক্ষণ রক্তপাত চলতে থাকবে। এ ছাড়াও সে লেখে, “তারা খুনির কাছ থেকে ন্যায়বিচার দাবি করছে, এটা কতটা অযৌক্তিক!” সে আরও বলে, “ওরা তোমাদের খুব সহজেই খেলাচ্ছে।” বিকেল ৪:৪৫ মিনিটে সালমান আমার আত্মীয়কে ফোন করে অনুরোধ করে যেন সে এখনই তাদের ত্যাগ না করে এবং প্রতিশ্রুতি দেয় যে সে এখান থেকে তার নির্দেশনা অনুসরণ করবে। প্রায় ৫টার দিকে হান্নান আমার আত্মীয়কে ফোন করে তাদের জন্য গাড়ি এবং আরেকটি নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করে। কেন? কারণ পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র হান্নানকে খুঁজছিল — রিফাত, মাহিন বা কাদেরকে নয় — এবং সে মিরপুর ডিওএইচএস-এর ফ্ল্যাটে নিরাপদ বোধ করছিল না। আমার আত্মীয় তাকে জিজ্ঞেস করে, সে কি তার অবস্থান কারও সাথে শেয়ার করেছে? হান্নান উত্তর দেয়, “না”। তখন আমার আত্মীয় তাকে বলে, বাংলাদেশের মধ্যে এর চেয়ে নিরাপদ কোনো জায়গা নেই। এর কয়েক মিনিটের মধ্যে রেজা ফোন করে জানায় যে, হান্নান তাকেও একই অনুরোধ করেছে। মূলত, তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল কারণ তারা ফ্ল্যাটের চাবি হারিয়ে ফেলেছিল এবং ওয়াহিদ আলমের সাথে যোগাযোগ করতে পারছিল না। কিন্তু পরে রেজা আবার ফোন করে জানায় যে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে, চাবি তাদের বেডসাইড ড্রয়ারে ছিল এবং ওয়াহিদ আলমকে ফোনে পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য, ওয়াহিদ আলম ছিলেন দায়িত্বশীল ও উদার স্বাগতিক। তিনি ছেলেদের জন্য দুই সপ্তাহের বাজার করে রেখেছিলেন, তাদের নিজ অফিসে থাকা নতুন পোশাক ব্যবহার করতে বলেছিলেন এবং ক্লিনারকে আসতে মানা করেছিলেন যাতে ছেলেদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়। সন্ধ্যায় ছয়জন সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজত থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং হাসনাত ও সারজিস ফেসবুকে অস্পষ্ট পোস্ট দেয়, যা আমার আত্মীয়কে বিরক্ত করে। সে বিষয়টি তার সহকর্মীর সাথে আলোচনা করে, যিনি হান্নান ও তার সঙ্গীদের জন্য পোশাকের ব্যবস্থা করেছিলেন। সহকর্মীটি বলে যে এখন হাসিনার পদত্যাগ দাবি করার সঠিক সময় নয়। এরপর সে শফিকুল আলামের সাথে আলোচনা করে, যিনি বলেন; ছাত্রনেতারা এখন মুক্ত, এবং তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে। তবে তিনি এটাও বলেন, হাসিনা যেকোনো সময় পড়ে যাবে — এ থেকে তার আর কোনো রক্ষা নেই। ফাহিমও হতাশ হয়ে জানায় যে এখনো কেন হাসিনার পদত্যাগের দাবি ওঠেনি। কাদেরের স্বাগতিকও সম্মত হয় যে একদফা দাবি তোলা প্রয়োজন। রাত ১০:২৪ মিনিটে সালমান আমার আত্মীয়কে রামপুরার ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত এক মোমবাতি প্রজ্বালন অনুষ্ঠানের ছবি পাঠায়। এরপর নারায়ণগঞ্জে পুলিশের হামলার খবরের একটি লিংক পাঠায়। এরপর সে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত মোমবাতি প্রজ্বালন অনুষ্ঠানের ছবি পাঠাতে থাকে। ২ আগস্ট দুপুর ১২:৫০ মিনিটে আমার আত্মীয় সালমানকে মেসেজ পাঠায়: “তারা যদি হাসিনার পদত্যাগ দাবি না করে, তবে এটা আত্মঘাতী মিশন হবে।” সালমান সাথে সাথে উত্তর দেয় যে এখন তারা নয়-দফা দাবিতে আছে, তবে দিনের শেষে এক দফা দাবি নিয়ে সভা হবে। আমার আত্মীয় আবারও বলে, “এক দফা দাবি তোলাটা দ্রুত করতে হবে কারণ হাসিনার সমর্থকেরা ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাপী প্রচার শুরু করেছে যে, বাংলাদেশের কোনো বিকল্প নেতা নেই।” সালমান উত্তর দেয় যে সে চেষ্টা করছে, তবে অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো আগে সমাধান করতে হবে — এবং সারজিস ও হাসনাত “দালাল”। তাদের শেষবারের জন্য সতর্ক করা হয়েছে এবং যদি তারা বাড়াবাড়ি করে, তবে তাদের ঝঅউ থেকে বের করে দেওয়া হবে। বিকেল ২:০৮ মিনিটে সালমান হান্নানের পোস্ট করা একটি ভিডিওর লিংক পাঠায় যেখানে ছাত্রদের নয়-দফা দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু আমার আত্মীয় উত্তর দেয়, “এটা খুব স্বার্থপর ভিডিও।” সে আরও লেখে, “ধরো হাসিনা তোমাদের নয়-দফা দাবি মেনে নিল, কিন্তু যারা ছাত্র নয়, তাদের মৃত্যু? তাদের জন্য ন্যায়বিচার চাইবে না? অনেক শিশু, পেশাজীবী মারা গেছে এবং অনেকে স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়েছে।” সালমান তাকে আশ্বস্ত করে যে, সে এই বিষয়গুলো তাদের মিটিংয়ে তুলবে। বিকেল ২:৩৬ মিনিটে সালমান জানায়, সারজিস ও হাসনাত ঝঅউ-এর সেদিনের কর্মসূচি বাতিল করেছে এবং কাদের ও হান্নানের সাথে এক দফা দাবি নিয়ে কথা বলার জন্য অনুরোধ করে। সালমান আরও জানায়, আসিফ মাহমুদের জন্যও নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু আমার আত্মীয় তাকে বলে, “এটি তখনই সম্ভব যদি তোমরা এক দফা দাবি তোল।” তবে কাদেরের স্বাগতিক জানান যে আসিফের পিছু চষধরহপষড়ঃযবং পুলিশ লেগে আছে। তাই আসিফকে অন্য কোনো আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া সবার জন্য বিপদ ডেকে আনবে। এর মধ্যে ফাহিম মেসেজ করে: “আজ দুই সপ্তাহের গুরুত্বপূর্ণ দিন। দুই সপ্তাহ পার হলে পরিস্থিতি স্থির হতে শুরু করে। আজই সেই দিন। তারা হাসিনার পদত্যাগের দাবি তুলল না কেন?” সন্ধ্যা ৪টার দিকে আমার আত্মীয় কাদেরের স্বাগতিকের বাসায় যায় এবং সেখান থেকে তারা আমাকে ফোন করে। আমরা সিদ্ধান্ত নিই, এক দফা দাবি আজকেই তুলতে হবে মাগরিবের নামাজের পর। কারণ তখন প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে। শফিকুল আলামও ফোন করে বলে, “এখনই সময়।” এরপর ফাহিমও মেসেজ করে বলে, “এখনই সময়।” তারা কাদের, হান্নান, মাহিন ও রিফাতকে আহ্বান জানায় এক দফা দাবি তোলার জন্য। সালমান জানায়, দাবি উঠলে সে মাঠে সমর্থন দেবে। কিন্তু হান্নান আবার ফোন করে নতুন নতুন দাবি তোলে। এক পর্যায়ে তারা বলে, “আমাদের পরিবারকে দূতাবাসে সরিয়ে দাও, তারপর আমরা দাবি তুলবো।” কাদেরের স্বাগতিক তাদের বোঝায়, “এটা এখন সম্ভব নয়, তবে দাবি তোলার পর দূতাবাস তাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হবে।” তারা রাজি হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার ফোন করে কমিউনিকেশনটির ভাষা নিয়ে আপত্তি জানায়। তারা চায় একটি রূপরেখা যেখানে হাসিনার পদত্যাগের পর রাষ্ট্র কিভাবে চলবে তা উল্লেখ থাকবে। শেষে আমরা একটি লাইন যোগ করি: “হাসিনার পদত্যাগের পর দেশ চলবে রাজনৈতিক দল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সিভিল সোসাইটি, সশস্ত্র বাহিনী এবং ছাত্রদের সমন্বয়ে।” তবে এখানেও তারা চায় “ছাত্রদের” নামটি আগে রাখতে। রাত প্রায় ১১টা বেজে যায় এবং তখন আমাদের সবাই ধৈর্য হারিয়ে ফেলে। আমি সাফ জানিয়ে দেই: “এই ছেলেদের কোনো রকম জোর করা হয়নি। তবুও হান্নান মিথ্যা বলে বেড়ায় যে আমি নাকি তাদের হুমকি দিয়েছিলাম। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল একটাই হাসিনাকে সরানো। অন্য কোনো লোভ বা স্বার্থ আমাদের ছিল না।” “আমরা যেখানে ছিলাম, সেখানেই আছি — আমাদের জীবনে কোনো পরিবর্তন আসেনি, শুধু শান্তি এসেছে যে হাসিনা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী শেষ।” পার্ট ৪ মজার বিষয় হলো, এসএডি পরের দিন, অর্থাৎ ৩ আগস্ট, বিকেল ৩টায় শহীদ মিনারে একটি প্রোগ্রামের ডাক দেয়। দুপুর ১:০৫ টায় হান্নান আমার আস্থাভাজনকে ফোন করে তাদের জন্য নাহিদের ব্যবস্থাপনায় আরেকটি নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে অনুমতি চায়। শহীদ মিনারে বিকেল ৩টায় নাহিদ হাসিনার পদত্যাগের দাবি তোলে। তখন আর কিছুই সধঃঃবৎবফ করছিল না, ঢাকা এবং অন্যান্য শহরের রাস্তাগুলো হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে স্লোগানে মুখরিত ছিল। আমরা পরে কাদেরের কাছ থেকে জানতে পারি যে নাহিদ, মাহফুজ, আসিফ এবং এসএডি সমন্বয়কারীরা একদফা দাবিতে যেতে চাননি। আমাদের আগের দিনের চাপের কারণেই তারা বাধ্য হয়। নাহিদ সব আলো নিজের দিকে টানতে চেয়েছিল—সে চায়নি কাদের, হান্নান, রিফাত এবং মাহিন হাসিনার পদত্যাগের ডাক দিয়ে সেই স্বীকৃতি পাক। কাদেরের জন্য এটা বিশেষভাবে মজার ছিল যে, হান্নান আগের দিন সন্ধ্যায় কাদের, রিফাত ও মাহিনকে সেই ডাক দিতে বাধা দিয়েছিল কারণ সে তার “নাহিদ ভাই”ছাড়া কিছু করতে চায়নি। কিন্তু সেই নাহিদ ভাই-ই পরের দিন শহীদ মিনারে হান্নান ছাড়া সেই ডাক দিল। এসএডি পরের দিন এক অসহযোগ আন্দোলনেরও ডাক দেয়, যা বিদেশি মিশনগুলো ভালোভাবে নেয়নি, যেমনটা আমার আস্থাভাজন তার সংযোগ থেকে জানতে পারে। বিকেল ৭:৫৬ টায় সালমান আমার আস্থাভাজনকে এসএডি’র দাবি-দাওয়ার একটি তালিকা পাঠায় এবং তার মতামত চায়। আস্থাভাজন সালমানকে পরামর্শ দেয়, এসএডি যেন সাধারণ জনগণের সঙ্গে মিশে যায় এবং হাসিনার পদত্যাগ ছাড়া আর কোনো দাবি না তোলে। এখনই আলাদা কোনো দাবি করলে তারা আত্মকেন্দ্রিক এবং ক্ষমতালোভী মনে হবে এবং জনগণ তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ করবে। তাদের পুরো জীবন সামনে পড়ে আছে ক্ষমতায় আসার জন্য। হাসিনা চলে গেলে তারা যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যায় এবং জীবনের অভিজ্ঞতা অর্জন করে তারপর রাজনীতিতে আসে। সালমান এতে সম্মতি জানায় এবং বলে যে তারা কোনো আলাদা দাবি তুলবে না। এরপর সালমান জিজ্ঞেস করে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হওয়া উচিত। আস্থাভাজন তাকে পরামর্শ দেয় গণভবন ও সকল মন্ত্রীদের বাসভবন ঘেরাও করার জন্য। সে আরও ব্যাখ্যা করে যে হাসিনা/আওয়ামী লীগ তখনও আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়ে যাচ্ছিল কারণ পশ্চিমা দেশগুলো এখনও তার পদত্যাগ বা স্বাধীন তদন্তের দাবি জানায়নি; তারা শুধু বলেছিল যেসব মৃত্যুর তদন্ত হওয়া উচিত এবং হাসিনাকে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংলাপে বসতে হবে। এটা এমন যেন খুনিকে খুনের তদন্ত করতে বলা হচ্ছে। সালমান জানতে চায় কী করলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোভাব পরিবর্তন করা সম্ভব। আস্থাভাজন তখন বলে, শুধু হাসিনাকে সরানোর ওপর মনোযোগ দিতে হবে। রাত ৯:২১ টায় সালমান জানায় যে পরের দিন সকাল ১০টা থেকে শহরের ১২টি পয়েন্টে সমবেত হয়ে গণভবনের দিকে মার্চ করা হবে। এদিকে, আমার সূত্র থেকে জানতে পারি যে আওয়ামী লীগ ৪ আগস্ট ঢাকায় প্রায় ১৫,০০০ জন দলীয় কর্মী নামানোর পরিকল্পনা করেছে। আস্থাভাজন সালমানকে এ তথ্য জানিয়ে দেয়। ৪ আগস্ট গণভবন ঘেরাওয়ের পরিকল্পনা কার্যকর হতে পারেনি কারণ আওয়ামী লীগের সশস্ত্র কর্মীরা রাস্তায় নেমে রক্তপাত শুরু করে। দুপুর নাগাদ আসিফ ও নাহিদ পরের দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে, যা আস্থাভাজনকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। গুলশানের কম্প্তোয়ার রিচার্ডসে বসে আস্থাভাজন বিকেল ২:১৬টায় ওহাইদ আলমকে ফোন করে জানায়, এসএডি এইভাবেই চলতে চাইছে এবং তাদের গণভবন ঘেরাওয়ের কোনো পরিকল্পনা নেই। সে ওহাইদ আলমকে বলে যেন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দায়িত্ব নেয় এবং এই আন্দোলন এসএডি’র হাতে না ছাড়ে। ওহাইদ তাকে আশ্বস্ত করে যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে; হাসিনার প্রধানমন্ত্রীত্বের দিন ফুরিয়ে এসেছে। বিকেল ৩:২০টায় সে সালমানকে ফোন করে ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং জানায় সে এই আন্দোলন থেকে সরে যাচ্ছে। সালমান তাকে অনুরোধ করে যেন এখনই সরে না যায় এবং বলে, সে কিছু করার চেষ্টা করবে। ঠিক ৩:২৫ টায় আমি আমার আস্থাভাজনকে আমার এক সূত্র থেকে বার্তা পাঠাই—আওয়ামী লীগ পুনরায় দল সাজাচ্ছে, এসএডি’কে ঢাকা মার্চের কর্মসূচি একদিন এগিয়ে আনতে হবে, আর দেরি করা যাবে না, জনগণ কালই সেই কর্মসূচি চায়। সে বার্তাটি রেজা ও ওহাইদ আলমকে পাঠিয়ে দেয়। রেজা তাকে ফোন করে শান্ত হতে বলে। কিন্তু আস্থাভাজন জানায়, সে এই আন্দোলন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। রেজা জিজ্ঞেস করে, সে কী চায়। আস্থাভাজন জানায়, তার একটাই দাবি—পরের দিন থেকে গণভবন ঘেরাও করে বসে থাকা যতক্ষণ না হাসিনা পদত্যাগ করে। রেজা তাকে শান্ত থাকতে বলে কারণ এমন বড় পদক্ষেপের জন্য অনেক কিছুর সমন্বয় প্রয়োজন। ঠিক ৩:৫২টায় রেজা তাকে মেসেজ করে: "উড়হব. ঐধঢ়ঢ়ু?" কিভাবে সম্ভব হলো? এক মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নাহিদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি করানো হয়। সন্ধ্যা ৫:২১টায় আসিফ তার ফেসবুক পেজে ঘোষণা দেয় যে ঢাকা মার্চ কর্মসূচি একদিন এগিয়ে ৫ আগস্ট করা হয়েছে। এরপর সব এসএডি সমন্বয়কারীরা ভিডিওবার্তায় ঢাকা মার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করতে থাকে। তবে আমরা চাইছিলাম কাদেরের ভিডিওটি সবার থেকে আলাদা হোক—শান্ত, সংযত ও ন্যায়পরায়ণ। আমার আস্থাভাজন তার সহকর্মীকে কাদেরের বাংলায় বক্তব্য লিখতে বলে, যা সে ইংরেজিতে অনুবাদ করে। আমি কাদেরের বাংলা ও ইংরেজি ভিডিওবার্তা আমার সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করি। রাত ১১:১১টায় আমি আস্থাভাজন, ফাহিম ও সালমানের সাথে গ্রুপ কলে যুক্ত হই পরদিনের গণভবন ঘেরাওয়ের লজিস্টিকস নিয়ে আলোচনা করতে। রেজা ও ওহাইদ আলম কাদেরের আশ্রয়দাতার ফ্ল্যাটে আরও পরিকল্পনার জন্য যান। ৫ আগস্ট সকালে ফাহিমের কাছ থেকে আস্থাভাজন শোনে যে পুলিশ বসুন্ধরায় ঢুকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভিতরে গুলি ছুঁড়ছে। চারপাশ থেকে ভয়াবহ পরিস্থিতির খবর আসতে থাকে। সকাল ১১:৩২ টায় ওহাইদ আলম মেসেজ করে, “আজকের পর হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। আমরা চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।” দুপুর ১:৩৫ টায় সালমান আস্থাভাজনকে ফোন করে কোনো আপডেট আছে কি না জানতে চায়। আস্থাভাজন বলে সবাইকে বের করে আনতে। ১:৫৯টায় সালমান আবার মেসেজ করে জানায়, তারা সবাই গণভবনের দিকে যাচ্ছে। ঠিক ২:৩০টায় আস্থাভাজন শফিকুল আলামের কাছ থেকে মেসেজ পায় যে হাসিনা ও রেহানা গণভবন ছেড়ে পালিয়েছে। এরপর সালমান ফোন করে আনন্দে কাঁদতে থাকে। পরের দিন ভোর রাতে সালমান আবার ফোন করে জানায় যে, “নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনুস অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দিতে রাজি হয়েছেন—সালমান তার সঙ্গেই ফোনে কথা বলে উঠেছে।” রিকশাচালক আকাশের মৃত্যু ছাত্র নেতাদের আহ্বানে সাধারণ জনতা রাজপথে নেমে আসার পরে অবস্থা বেগতিক দেখে ৫ আগস্ট মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা গণহত্যার নির্দেশ দিয়ে ছোটবোনসহ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। দুপুরের দিকে হাসিনার পলায়নের সংবাদ পেয়ে দেশের মানুষ খুশিতে আনন্দ মিছিল করে। মিষ্টি বিতরণ হয়, নারায়ে তাকবীর স্লোগানে জনতা রাস্তায় আনন্দে মেতে উঠে। সেদিন স্বৈরাচার বিরোধী বিজয় মিছিলে মো: আকাশও শামীল হন। পাশাপাশি তার রিকশার সরাঞ্জাম ক্রয় করতে টঙ্গী যান। সাথে ছিল প্রতিবন্ধী সন্তান। বিকেলে টঙ্গী থেকে ফেরার পথে আজমপুর ওভারব্রিজের নিচে আসার পরে পুলিশের নির্বিচারে গুলির মুখে পড়েন। এসময় ছেলেকে নিরাপদ আশ্রয়ে রেখে লুকিয়ে পড়েন। ঘন্টাখানেক পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে কিনা দেখতে আসেন। রাজউক কমার্শিয়াল মার্কেটের কাছাকাছি আসার পরে ৪টি গুলি এসে তার দেহে বিদ্ধ হয়। মো: আকাশ ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন। অনেক্ষন অপেক্ষা করার পর প্রতিবন্ধী ছেলে বাবাকে না দেখে কান্না করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত অবস্থা আরো বেগতিক হলে আকাশ ব্যাপারির ছেলেকে তার প্রতিবেশী বাড়িতে পৌঁছে দেয়। রাতে আকাশের জন্য তার পরিবার উদ্বিগ্ন হতে থাকে। নিরাপত্তার অভাবে তার স্ত্রী ও কন্যারা খোঁজ নিতে ব্যর্থ হয়। খোঁজাখুঁজি কয়েকদিন ধরে চলে। পরিবার ছবিসহ নিখোঁজ সংবাদ ছাপিয়ে প্রচার করে। উত্তরার আশেপাশের হাসপাতাল গুলোয় আকাশ নামে কাউকে পাওয়া যায় না। একপর্যায়ে ছাত্র সমন্বয়কেরা সাহায্যে এগিয়ে আসেন। এ ব্যাপারে সমন্বয়ক রায়হান বলেন, “এক মহিলা আমাদের কাছে আসেন। তার দুই কন্যা ও এক প্রতিবন্ধী সন্তান।” ঘরে তাদের খাবার নেই। তাদের গৃহকর্তার ভাগ্যে কি ঘটেছে তা জানতে চায়। আমরা হাসপাতাল গুলোয় খোঁজ নিয়ে কিছু অজ্ঞাত লাশের কথা জানতে পারি। লাশ গুলো ঢাকা মেডিকেলের মর্গে আছে। পরিবারটিকে সেখানে নিয়ে গেলে তারা অনেক লাশের মধ্যে একটি লাশকে চিহ্নিত করে। অবশেষে ১০ আগস্ট ঢামেক মর্গ থেকে লাশ বুঝে পায় পরিবার । কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ভাষ্য: ৫ আগস্ট সন্ধ্যার কিছু আগে লাশটা আসে। এরপর কোনো আইডেন্টিটি না পাওয়াতে গভীর রাতে লাশ ঢামেক মর্গে পাঠিয়ে দেই। তার শরীরে ৪ জায়গায় বুলেট এফোড় ওফোড় হয়ে বের হয়ে গিয়েছিলো। অর্থনৈতিক অবস্থা মো: আকাশের স্ত্রী লাকি আক্তার দুইটি বাসায় গৃহস্থালীর কাজ করে সন্তানদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করছেন। ঢাকা উত্তরায় ভাড়া বাসায় থাকেন। তার প্রথম সন্তান প্রতিবন্ধী। ছোট দুই মেয়ে স্কুলে লেখাপড়া করছে। গ্রামে কোন সম্পদ নেই। নিউজ লিংক : https://youtu.be/Afx2cAY5JZc?si=E8WrP8iRlg7YhnWz একনজরে শহীদ সম্পর্কিত তথ্যাবলি নাম : মো: আকাশ জন্ম : ০১ সেপ্টেম্বর ১৯৮৮ পেশা : রিকশাচালক পিতা : মো: আজিজ বেপারী মাতা : মোসা: সামরতো বান স্ত্রী : লাকি আক্তার সন্তান : ১. বাপ্পী (২২), শারীরিক প্রতিবন্ধী, ২. শারমিন আক্তার (১৫) ৯ম শ্রেণি, বিজ্ঞান বিভাগ, আবদুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয় বাউনিয়া, উত্তরা, ঢাকা ৩. শাহনাজ আক্তার, (১৪), ৮ম শ্রেণি, আবদুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়, বাউনিয়া, উত্তরা, ঢাকা স্থায়ী ঠিকানা : উত্তর দুধখালী, হাবিঙ্গ, মাদারীপুর বর্তমান ঠিকানা : বাউনিয়া, বটতলা, বাদালদী, তুরাগ, ঢাকা ঘটনার স্থান : ওভারব্রিজের নিচে, আজমপুর, উত্তরা, ঢাকা আক্রমণকারী : পুলিশ আহত হওয়ার সময় : ৫ আগস্ট, বিকেল ৬টা আঘাতের ধরন : হাতে, বুকে, পিঠে ও কোমরে গুলিবিদ্ধ মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ৫ আগস্ট, বিকেল ৬ টা, ওভারব্রিজের নিচে, আজমপুর শহীদের কবরের অবস্থান : বাউনিয়া বটতলা মসজিদের পেছনের কবরস্থান প্রস্তাবনা ১. মাসিক ও এককালীন ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা। ২. সন্তানদের শিক্ষা ব্যয় প্রদানে সহযোগিতা করা।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: মনোয়ার হোসেন

মো: মঈনুল ইসলাম

মো: জুয়েল রানা

মো: জিয়াউর রহমান

মো: রাসেল মাহমুদ

মো: মনির হোসেন

মো: মেহেদী হাসান

মো: তুহিন

আবদুল্লাহ আল রোমান

রুমান বেপারী

ছোবহান মুন্সি

মো: সামচু মোল্যা

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo