Image of মো: রাব্বি মাতব্বর (গোলাম রাব্বি)

নাম: মো: রাব্বি মাতব্বর (গোলাম রাব্বি)

জন্ম তারিখ: ৬ নভেম্বর, ২০১০

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র, প্রতিষ্ঠান : তালিমুল ইসলাম মাদরাসা শহীদ হওয়ার স্থান : মিরপুর ১৩

শহীদের জীবনী

মো: রাব্বি মাতব্বর ওরফে মোহাম্মদ গোলাম রাব্বি নামের ভেতর যেন এক কোমলতা, নিষ্পাপ একটি মুখ, আর ভবিষ্যতের আলো মাখানো এক কিশোর। বয়স? বড়জোর ১৪ কিংবা ১৫, এই ভগ্ন পৃথিবীতে বয়সের হিসেবটা কি এতই জরুরি? অনেক বড়রাও তো মানুষ হতে পারে না, অথচ রাব্বি শিখে গিয়েছিল মানুষ হওয়ার চর্চা। যেদিন সে শহীদ হয়, তার শরীরে কোনো রাজনৈতিক পতাকা ছিল না, মুখে কোনো স্লোগান ছিল না, ছিল না কোনো সংগঠনের পরিচয়পত্র ছিল কেবল একটা নিষ্পাপ হৃদয়, যেটা দেখতে পেয়েছিল মিছিল নামক জীবন্ত বিবেককে, আর সেই দেখায় তার ভিতর নড়ে ওঠে কিছু। খেলার ফাঁকে রাব্বি থেমে দাঁড়িয়েছিল, তালিমুল ইসলাম মাদ্রাসার নিচে, চোখের সামনে দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছিল একদল ছাত্র, চোখে আগুন, মুখে স্লোগান, পায়ে বিপ্লবের শব্দ। সে দাঁড়িয়েছিল নিঃশব্দে, হয়তো প্রথমবারের মতো মানুষকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিল, যেমন শিশুরা প্রথম আকাশ দেখে থেমে যায়। রাব্বির জন্ম পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার একটি অজপাড়াগাঁ বাশবাড়িয়া, কলা গাছিয়া। নদীর পাশের সেই মাটি তখনও জানত না, এই গ্রামের ছেলে একদিন শহীদ হবে রাজধানীর রাজপথে, ইতিহাসের একটি ব্যথাতুর অনুচ্ছেদ হয়ে। পরিবারটি ছিল সাধারণ পিতা মো. জুয়েল মাতবর, একজন কন্ট্রাক্টর; মা মোসা. ফিরোজা আক্তার, একজন সাদামাটা গৃহিণী; দুই বড় ভাই, রিয়াদ ও রিফাত যাঁরা জীবিকার তাগিদে চায়ের দোকান চালান। ছোট বোন জুঁই, শেরেবাংলা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী এখনও জানে না ভাইয়ের মৃত্যু কীভাবে হৃদয় ছিন্নভিন্ন করে। আর রাব্বি? সে তো আলেম হওয়ার স্বপ্নে বুক বেঁধেছিল। বেহেশতের রাস্তা খুঁজে বেড়াতো হাদিসের পাতায়, কোরআনের আয়াতে। তবু সেই স্বপ্ন আজ থেমে গেছে। রাব্বি আর আলেম হবে না। কপালে তিলক নয়, আজ তার কপালে রক্তমাখা কাপড়, মাটির নিচে অনন্ত ঘুম। সে কি জানত রাষ্ট্র তাকে ভয় পাবে? সে কি জানত ভালোবাসা আর সততার শপথ নেওয়া একটি ছেলেও হতে পারে রাষ্ট্রদ্রোহী? না, সে এসব কিছুই জানত না। তার দোষ ছিল সে দাঁড়িয়েছিল মানুষের পাশে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নয়, চোখে চোখ রেখে নয়, শুধু চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল, তার শিশু হৃদয়ের বিস্ময় নিয়ে। আর তাতেই রাষ্ট্র ভয় পায়, ভয় পায় নিষ্পাপ হৃদয়ের শক্তিকে। তাই গুলি চলে, আর এক ছেলেটি পড়ে থাকে রাস্তায় নির্বাক, নিথর, নির্বিচারে নিহত। রাব্বির মৃত্যু কোনো দৈনিকের শিরোনাম হয়নি। টকশোতেও আলোচনা হয়নি। কোনো রাজনৈতিক ব্যানার তাকে শহীদ বলে স্বীকৃতি দেয়নি। অথচ তার মৃত্যুই বলে দেয়, এই আন্দোলন ছিল নিঃস্ব, কিন্তু নির্মল; রাজনীতিহীন, কিন্তু ন্যায়ের দাবিতে উজ্জ্বল। রাব্বি হয়ে ওঠে আমাদের বিবেকের আয়না যেখানে আমরা নিজের মুখ দেখতে পাই, প্রশ্নের মুখোমুখি হই। আজ তার পরিবারে আর স্বপ্ন নেই, কেবল স্মৃতি, আর অসহ্য এক শূন্যতা। কিন্তু সেই শূন্যতাই আমাদের কানে কানে বলে এই মৃত্যু মিথ্যে নয়, এই শহীদ বেঁচে আছেন, মানুষের ভেতরে, প্রত্যেক প্রতিরোধের লড়াইয়ে। মোহাম্মদ গোলাম রাব্বি এক নাম, এক নিঃশব্দ বজ্রনিনাদ। আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই, শুক্রবার রাত আটটা। রাজধানীর আকাশ তখন কেবল গাঢ় ধোঁয়ার নয়, এক জাগ্রত জাতির গর্জনে কেঁপে ওঠা এক অনির্বচনীয় ঘোরের। কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্রদের ছোট্ট মিছিল এক লাফে পরিণত হয়েছে এক সর্বাত্মক বিদ্রোহে যার ভাষা ছিল না কেবল পোস্টারে, ছিল না কোনো রাজনৈতিক ঘোষণায়, ছিল সরাসরি চোখে চোখ রেখে বলা সত্যে, বুকে বুকে বহন করা দীর্ঘ নিঃশ্বাসে। মিরপুর, মোহাম্মদপুর, শাহবাগ প্রতিটি চৌরাস্তা তখন ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ের জন্মঘণ্টা বাজাচ্ছিল। ঠিক এই সময়েই, তালিমুল ইসলাম মাদ্রাসার নিচে, পৃথিবীর বিক্ষোভ-আক্রান্ত মানচিত্র থেকে কিছুটা দূরে, এক কিশোর খেলছিল। নাম তার মোহাম্মদ গোলাম রাব্বি ১৪ থেকে ১৬ এর মাঝে কোনো এক নিষ্পাপ বয়স। চোখে ছায়া-ভরা স্বপ্ন, পায়ের ধুলায় স্কুল, মাদ্রাসা, মাঠ আর ঘামের গন্ধ। রাজনীতি বোঝার মতো বয়স হয়নি তার, ফ্যাসিবাদ শব্দটা উচ্চারণ করতেও জানত না। তবু তার নিয়তি তাকে একদিন সেই কথার এক নিঃশব্দ প্রতিচ্ছবি করে তুলবে সে জানত না। তার দোষ একটাই সে সামনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। জমজমাট আন্দোলনের মাঝ দিয়ে হঠাৎ এগিয়ে আসে সাঁজোয়া বাহিনী। স্লোগান আর ধোঁয়ার মাঝে ভেসে আসে বুলেটের হিসাব যেখানে মানুষের প্রাণ মানে কেবল একটি লক্ষ্যবস্তু। মডেল ডিক্রির সামনে দিয়ে রাব্বি দাঁড়িয়ে ছিল। হয়তো কোনো কৌতূহলে, হয়তো কেবল দাঁড়িয়ে থেকেই বুঝতে চাইছিল পৃথিবী এত অশান্ত কেন। তখনই ছুটে আসে একটি বুলেট, বিদ্ধ হয় তার কোমরে কিডনি ছিঁড়ে, মেরুদণ্ড ভেদ করে শরীরের আরেক প্রান্ত দিয়ে বেরিয়ে যায়। এই ছিল তার স্বাধীনতার মূল্য। রাব্বি তৎক্ষণাৎ লুটিয়ে পড়ে। কেউ দৌড়ে আসে না, কেউ কাঁদে না কেননা সেখানে কাঁদার অধিকার নেই। আশেপাশে শুধু ধোঁয়া আর কুকুরের মতো গর্জে ওঠা রাষ্ট্রযন্ত্রের নিঃশ্বাস। ৩০ মিনিট পর খবর পায় পরিবার। বড় ভাই ছুটে আসে, মাটিতে পড়ে থাকা রক্তে ভেজা দেহ দেখে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলে। ডাক্তার তখনও কিছু বলেনি, তবু মায়ের বুক তখনই বুঝে যায় তার ছেলে আর ঘরে ফিরবে না। সবচেয়ে লজ্জাজনক ছিল এরপরের পর্ব। পুলিশ বলছে ছেলেটি নাকি গ্রেনেড ছুঁড়েছিল! চায়ের দোকান চালানো দুই ভাই, আলেম হওয়ার স্বপ্নে বড় হওয়া কিশোর রাব্বি তার গায়ে এমন তকমা? রাষ্ট্র এমন বানোয়াট গল্প লিখে দেয়, যেন মরার পরেও তার আত্মার ঘুম না আসে। এই মৃত্যু ছিল শুধু এক কিশোরের না, এই ছিল হাজারো স্বপ্নের এক নিষ্ঠুর গলাকাটা। এই রাব্বির মৃত্যু আমাদের শেখায় এই দেশে নিঃশব্দ দাঁড়ানোও অপরাধ, আর ভালোবাসা-ভরা চোখে তাকানোও রাষ্ট্রদ্রোহ। সে মরে গেছে হয়তো, কিন্তু তার রক্ত এখন আমাদের চেতনায় মিছিল করে। প্রশ্ন রেখে গেছে, দায় রেখে গেছে আমরা কি সেই দায় শোধ করবো, নাকি আগামী রাব্বিদের জন্যও শুধু কফিনের পর কফিন গুনবো? যেভাবে শহীদ হন এবং পরবর্তী নির্মমতা রাব্বি শহীদ হয়েছিলেন এক অনাহুত সন্ধ্যায়, এক অচেনা গুলিতে, এক অনভিপ্রেত যুদ্ধে। কিন্তু যে যুদ্ধ তার দেহ থামিয়ে দিয়েছিল, তা তার পরিবারের জন্য ছিল কেবল শুরু। শহীদের রক্ত তখনো শুকায়নি, তখনো জনতার ঢল ঢাকায় বয়ে চলেছে। অথচ তার পরিবার, এক কোণঠাসা ঘরের কোণে, জীবন বাঁচানোর জন্য, সম্মান রক্ষার জন্য, প্রিয়জনের মরদেহ নিয়ে যেন নতুন এক যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে পড়ে। রাব্বির নিথর দেহ প্রথমে নেওয়া হয় আজমল মেডিকেলে। ডাক্তার চেয়ে দেখে, মাথা নাড়ায় মৃত ঘোষণা করেন। সেই মুহূর্তেই যেন সময় থেমে যায়। মা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, ভাইরা বোবা হয়ে যায়, আর ঘরের বাতাসে ভেসে বেড়ায় একটি শব্দ “শেষ”। কিন্তু না, মৃত্যু এখানে চূড়ান্ত নয়, বরং রাব্বির শহীদ হওয়ার পরে যা শুরু হয়, তা এক দীর্ঘশ্বাসে চলমান রাষ্ট্রীয় নির্মমতার রূপকথা। যখন পরিবার জানাজা ও দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখনই হাজির হয় এক বেসরকারি হুকুম কাউন্সিলরের ভাই, যিনি তাদের বাসার মালিক, রক্তশীতল কণ্ঠে বলেন, “তাড়াতাড়ি দাফন করেন, না হলে লাশ পাবেন না।” শোকাহত পরিবার তখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারে না এই দেশে কি মৃতদেরও জিম্মি করা হয়? তাদের চোখে তখন কেবল ভয়, হাতে কেবল লাশ। এরপর আসে পুলিশের পালা। মৃত ছেলের বাবাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। দুই ঘণ্টা ধরে বসিয়ে রাখা হয়, আর সাদা কাগজে জোর করে লিখিয়ে নেওয়া হয় এক অবিশ্বাস্য বাক্য: “আমার ছেলের মৃত্যুর জন্য পুলিশ দায়ী নয়।” যেই বুলেটটি রাব্বির দেহের পাশে পড়ে ছিল যা তার মৃত্যুর নীরব সাক্ষী হতে পারত তাও তুলে নেয় রাষ্ট্র, যেন প্রমাণও আর জীবিত না থাকে। যেন ইতিহাস শুধু যারা বন্দুক ধরে, তারাই লিখবে। এরপর শুরু হয় চরিত্র হননের অধ্যায়। আওয়ামী লীগের নেতারা, পুলিশের অস্পষ্ট চেহারায় ছদ্মবেশী মানুষ, এসে বলতে থাকে: “তোমার ছেলে ছাত্রলীগ করত। পুলিশের ওপর বোমা ছুড়েছিল।” যেন শহীদের মৃত্যুতে দায় এড়ানোর জন্য, নতুন এক নাটক রচনা করা হচ্ছে। অথচ রাব্বি কোনোদিন মিছিলে যায়নি, কোনো দলের ব্যানারে হাঁটেনি। তার জীবনের একমাত্র রাজনীতি ছিল নীরব ভালোবাসা আর সত্যের প্রতি স্নেহ। কিন্তু সে সত্য রাষ্ট্রের গায়ে লাগে। ফলতঃ একের পর এক হুমকি পুলিশ সহ যাদের নামে মামলা হয়েছে, তারা রাতভর ফোনে, দিনে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে যায়: “চুপ থাকেন, নইলে পরিণতি ভালো হবে না।” এমনকি দোকান মালিক বলে, “এই ঘটনার পর আপনারা থাকলে সমস্যা হবে।” বাড়িওয়ালা চাপ দেয়, “বাসা ছেড়ে দিন।” একে একে জীবনযুদ্ধের প্রতিটি আশ্রয় কেড়ে নেওয়া হয়। একজন শহীদের পরিবারকে কেবল হত্যা করা হয় না তাদের প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে ভেঙে ভেঙে নিঃশেষ করে দেওয়া হয়। যেন রাব্বির মৃত্যু কেবল একটি দেহ থামানো নয়, একটি গরিব পরিবারের আশা, স্বপ্ন, বাসস্থান সবকিছু ছিন্নভিন্ন করে ফেলা। রাষ্ট্রের বুলেট যাকে হত্যা করে, রাষ্ট্রের বুলেটের ভয়ে তাকে কবর দিতে হয় গোপনে। এই কোনো স্বাধীন দেশ নয়, এই এক আধুনিক গ্যাসচেম্বার যেখানে দম বন্ধ করে বাঁচতে হয়, আর শহীদের পরিবারের পরিচয় হয়ে যায়: ‘বিপদ’। পরিবারের অনাহার, অবমাননা ও আবর্জনায় বেঁচে থাকা আজ মিরপুর ১৩ নম্বরের একটি জীর্ণ বাসায়, তীব্র আতঙ্ক আর থমথমে নীরবতার মধ্যে পড়ে আছে একটি পরিবার। সেই ঘরে এখন আলো আসে না, জানালার বাইরে থেকেও কেউ আর ডাক দেয় না। রাব্বির মা ফিরোজা আক্তার যার কোলের উষ্ণতা ছিল রাব্বির জীবনের প্রথম মাদ্রাসা, আজ তিনি নিজেই পঙ্গু হয়ে বসে থাকেন, হাহাকারে ভরা হৃদয়ে। তার পিঠ বাঁকা, চোখে সব ঝাপসা, আর গলার স্বর যেন কষ্টে সিক্ত হয়ে রুদ্ধ হয়ে আসে। বারবার বলেন, “ওরে আলেম বানাইতে চেয়েছিলাম। এখন শুধু কবরে গিয়া বলি বাবা, তুই ক্ষমা করিস।” পিতা মোঃ জুয়েল মাতবর, এক ভেঙে পড়া মানুষ। আগে যিনি কন্ট্রাক্টর হিসেবে দিন চালাতেন, এখন তিনি হাঁটেন না, শুধু কাঁপেন। কথা বলেন না, তাকান না কারো চোখে। কেবল কখনো কখনো রাব্বির একটা পাঞ্জাবি বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। মনে হয়, ঘরে কেউ নেই, শুধু একটা শোক হাঁ করে বসে আছে। দুই ভাই রিয়াদ আর রিফাত যাদের জীবন এক চায়ের দোকানের ওপর দাঁড়িয়ে ছিল, আজ তারা দুলে ওঠে হুমকির ঝড়ে। সেই ছোট দোকান যা ছিল সংসারের একমাত্র রুটির যোগানদাতা আজও টিকে আছে, কিন্তু কতদিন টিকবে, কেউ জানে না। স্থানীয় দলীয় ক্যাডাররা, পুলিশের ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকা মুখোশধারীরা, রোজ এসে জিজ্ঞেস করে, “তোমরা থাকো এখনো এখানে? সাহস কই পাইছ?” মনে হয়, একটা লাশ দাফন হয়, কিন্তু তার গন্ধ জীবিতদের ঘিরে রাখে। সেই গন্ধই আজ ভয়, আতঙ্ক, অভুক্তি আর অপমান হয়ে চেপে আছে। রাব্বির ভাইয়ের মুখ থেকে এই কথাগুলো বের হয় থেমে থেমে, চোখ ভিজে: “আমি আর বড় ভাই লেখাপড়া করতে পারি নাই। শুধু চেয়েছিলাম রাব্বি আলেম হোক। ওরে সব দিছিলাম। খাওয়াইছি, পরাইছি, বাইচা থাহছি যাতে ও পড়তে পারে। এখন ও নাই, স্বপ্নও নাই।” এ পরিবার এখন আর জীবন চায় না তারা চায় মাথা গোঁজার ঠাঁই, নিরাপদ দোকান, আর একটি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি যাতে অন্তত বলা যায়, তাদের ছেলের মৃত্যু ব্যর্থ ছিল না। আজ এই পরিবার কোনো দল চায় না, কোনো শ্লোগান চায় না তারা চায় শুধু ন্যায়বিচার, একটু শান্তি, একটু রুটি, একটু ঘুম। যদি এই রাষ্ট্র যার পতাকা রাব্বি নিজের রক্তে রাঙিয়েছে এই পরিবারটির পাশে না দাঁড়ায়, তবে “শহীদ” শব্দটি একদিন হয়ে উঠবে এক ঠান্ডা, নির্জীব কাগজের টুকরো। কেবল এক ফ্রেমে আটকানো ভুয়া সম্মান যা দেয় কিন্তু দায়িত্ব নেয় না, কথা রাখে না, চোখের জল মোছায় না। রাব্বির মৃত্যু শুধু তাদের নয়, আমাদেরও। কারণ তার রক্ত লেগে আছে আমাদের নির্লিপ্ত বিবেকের গায়ে। তার না-পাওয়া গুলোর ভার আমাদের কাঁধে। সে মৃত নয়, সে এখন রাষ্ট্রের প্রশ্নপত্র যার উত্তর আমরা দিতে না পারলে, সব লজ্জা আমাদেরই। পরিবারের ভাষ্য পরিবারটিকে বিভিন্ন দিক থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছে, যেমন সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া এবং বাসা ও দোকান ছাড়তে চাপ দেওয়া হয়েছে। পরিবারটি অর্থনৈতিকভাবে খুবই নাজুক অবস্থায় আছে। গোলাম রাব্বি শহীদ হননি শুধু গুলিতে, তিনি শহীদ হয়েছেন এক জাতির মিথ্যে বিবেকের মুখে। তাঁর লাশের পাশে দাঁড়িয়ে যদি কেউ চুপ থাকে, তবে আগামী প্রজন্মও জানবে না কাদের রক্তে লেখা হয়েছিল তাদের পথ। এক নজরে শহীদ পরিচিতি নাম : মো: রাব্বি মাতব্বর জন্ম : ৬/১১/২০১০ জন্মস্থান : গলাচিপা, পটুয়াখালী পিতা : মো: জুয়েল মাতবর মাতা : মোসা: ফিরোজা আক্তার ভাই : রিয়াদ মাতবর (২৫ বছর), রিফাত মাতবর (১৬ বছর) বোন: জুঁই আক্তার মিম (১৩ বছর) বর্তমান ঠিকানা : ৩৫ নং বাসা, রোড ৪, ব্লক সি, কাফরুল, মিরপুর ১৩, ঢাকা শহীদ হওয়ার তারিখ ও সময় : ১৯ জুলাই ২০২৪, রাত ৮টা শহীদ হওয়ার স্থান : তালিমুল ইসলাম মাদ্রাসা, মডেল ডিক্রির সামনে, মিরপুর ১৩ গুলিবিদ্ধ হওয়ার স্থান : কিডনির ওপর, যা শরীর ভেদ করে বেরিয়ে যায় কবরস্থান : মিরপুর ১৩ শিশু কবরস্থান মৃত্যুর কারণ : পুলিশের গুলিতে আঘাত ঘটনার বিবরণ : রাব্বি তালিমুল ইসলাম মাদ্রাসার নিচে খেলছিলেন, যখন পুলিশের এলোপাতারি গুলিতে : তিনি আহত হন এবং ঘটনাস্থলেই মারা যান। প্রস্তাবনা ১. প্রথমত, শহীদ রাব্বির মৃত্যুতে তাঁর পরিবারকে অপরাধীর মতো নির্যাতন বন্ধ করা হোক। পরিবারকে হুমকিমুক্ত করতে হবে। ২. দ্বিতীয়ত, শহীদের ভাইদের দোকানপাট পুনঃস্থাপন করে একটি স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ৩. কাউন্সিলরের দাপট, স্থানীয় সন্ত্রাসীদের হুমকি সব রাষ্ট্রীয় নীরবতায় পুষ্ট। সেই নীরবতাই রাব্বির দ্বিতীয় মৃত্যু।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: রাব্বি মাতব্বর (গোলাম রাব্বি)
Image of মো: রাব্বি মাতব্বর (গোলাম রাব্বি)
Image of মো: রাব্বি মাতব্বর (গোলাম রাব্বি)
Image of মো: রাব্বি মাতব্বর (গোলাম রাব্বি)
Image of মো: রাব্বি মাতব্বর (গোলাম রাব্বি)
Image of মো: রাব্বি মাতব্বর (গোলাম রাব্বি)
Image of মো: রাব্বি মাতব্বর (গোলাম রাব্বি)

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: শাহ জামাল ভূঁইয়া (জামাল)

মো: সরোয়ার হোসেন শাওন

রাকিব হাওলাদার

মো: মিজানুর রহমান

মো: বাহাদুর হোসেন মনির

মো: আখতারুজ্জামান নাঈম

মো: আবুল বাশার

মো: ওমর ফারুক

মো: বাচ্চু

 মো: আরিফুর রহমান রাসেল

মো: নয়ন

মামুন খন্দকার

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo