জন্ম তারিখ: ২০ নভেম্বর, ২০০৬
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা: ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : যাত্রাবাড়ি
পিতা মাতার অতি স্নেহের সন্তান শহীদ মো: ইয়াসির সরকার। তিনি ২০০৬ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকার শনির আখড়ায় নিজ বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। শহীদ ইয়াসিরের পরিবার ঢাকার স্থায়ী বাসায় বসবাস করেন। তিনি ঢাকার বাড়িতেই লালিত পালিত হন ও বেড়ে ওঠেন। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জের সরকারি কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়ন করতেন। তার পিতা জনাব মো: মোফাজ্জল হোসেন পেশায় কাপড় ব্যবসায়ী এবং তার একটি টেইলার্সের ব্যবসা আছে। তবে বর্তমানে শহীদ ইয়াসিরের কারণে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রয়েছে। শহীদ ইয়াসিরের মা বিলকিস আক্তার পেশায় একজন গৃহিণী। ভাই-বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ তম। শহীদ ইয়াসিরের বাবা-মাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার কাজটি তিনিই করতেন। ছোট বোনকে মাদ্রাসায় আনা নেওয়া করতেন। পরিবারের বিভিন্ন কাজ তিনি খুবই আন্তরিকতার সাথে করতেন। তিনি ছিলেন পরিবারের মধ্যমণি। শহীদের বড় ভাই সফটওয়্যার কোম্পানিতে এবং মেঝ ভাই একটি বেসরকারি মাদ্রাসায় চাকরি করেন। এছাড়া ছোট দুই বোন পড়াশোনা করেন। তার বড় দুটি ভাই পেশাজীবী হওয়ার কারণে তাকেই সময় দিতে হয়েছে পরিবারে। সেই ছেলেটিকে কেড়ে নিয়েছে খুনি হাসিনার লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ বাহিনী। পরিবার তার সন্তানের শহীদি মর্যাদা কামনা করেন। ঘটনা সংক্রান্ত বিবরণ: শহীদ ইয়াসির সরকার দেশ প্রেমিক নাগরিক। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটা সংস্কার আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। দেশকে বৈষম্যের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ছিলেন সর্বদা সোচ্চার। ঢাকা বিশ্ববদ্যালয়ে জুলাই ২৪ এর কোটা সংস্কার আন্দোলনে ১৬ তারিখে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্রদের উপর হামলা চালায়। আহত হয় অসংখ্য নারী শিক্ষার্থীরাও। এরপরে আওয়ামী লীগের এমপি মন্ত্রীদের নির্দেশে ছাত্র জনতার উপরে হত্যার মিশন চালানো হয়। আবু সাঈদ থেকে শুরু হয় পুলিশের সরাসরি গুলি করার অভিযান। সারা দেশে প্রায় ১০০০ শিক্ষার্থীকে তারা গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে। আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবকে আন্দোলনরত ছাত্রদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন রূপ লাভ করে এক দফার। অর্থাৎ শেখ হাসিনার পতন। এই উপলক্ষে ৫ তারিখে মার্চ টু ঢাকা প্রোগ্রাম দেওয়া হয়। সারা দেশ থেকে বিক্ষুব্ধ জনতা ঢাকায় আসে। ঢল নামে ঢাকার রাজপথে। লক্ষ কোটি ছাত্র জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট হাসিনার লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসীরা সেদিনও অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে। ৩টা থেকে চলছিল বিজয় উল্লাস। অন্যদিকে চলছিল গুন্ডাবাহিনীর তাণ্ডব। হত্যা করছিল শতাধিক মানুষকে। বাদ যায়নি কৃষক শ্রমিক কেউই। ৫ আগস্টে শহীদ ইয়াসির সকাল দশটার সময় শনির আখড়ার বাসা থেকে বের হয়ে যান। তার মা তাকে আন্দোলনে যোগ দিতে নিষেধ করেন। তবুও কিছুটা বুঝিয়ে তিনি বেরিয়ে পরেন রাজপথে। তিনি শামিল হন মজলুম ছাত্র-জনতার কাতারে। সারাদিন আন্দোলন শেষে বেলা তিনটার দিকে গণভবনে যাওয়ার জন্য তিনি রওনা দেন। তখন হঠাৎই যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী এলাকায় ১০০ থেকে ১৫০ জন আওয়ামী লীগের লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকে। আশেপাশে থাকা অনেকেই গুলিতে আহত ও নিহত হন। সেখানে ইয়াসিরের বুকের দু পাশে দুইটা এবং পেটের নিচের অংশে একটি গুলি লাগে। এর মধ্যে বুকে দুটি গুলি পিছন দিক দিয়ে ঢুকে বের হয়ে যায়। সকালবেলা আন্দোলনে যাওয়ার সময় মায়ের কাছে বলে গিয়েছিল, মা আমি বাহিরে যাচ্ছি দুপুরে আসবো। দুপুরে তার বাবা বাসায় এসে ছেলেকে খোঁজ করলে তার মা জানান ইয়াসির এখনো বাসায় ফেরেনি। তিনটার দিকে সারা দেশে বিজয় উল্লাস ছড়িয়ে পড়লে তার পিতা ভাবেন যে ছেলে হয়তো গণভবনের দিকে গেছেন। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেও ছেলে বাসায় ফেরেনি । খোঁজ না পেয়ে সবাই তাকে খুঁজতে বের হন। তার বড় বোন হাফসা বুশরা (২০) ফেসবুকে সন্ধান চেয়ে ভাইয়ের ছবিসহ একটি স্ট্যাটাস দেন। কয়েকজন তার ফোনে কিছু ছবি পাঠান। রাত দশটার দিকে ঢাকা মেডিকেল থেকে একজন তার ইনবক্সে রক্তাক্ত একটি ছবি পাঠান এবং জানতে চান এটি তার ভাই কিনা? হাফসা ছবিটি দেখে কান্নায় ভেঙে পরে। সবাই কান্নার শব্দ শুনে জানতে চায় কি হয়ছে? তখন তিনি তার ভাইয়ের রক্তাক্ত ছবিটি দেখান। মুহুর্তে চারিদিকে শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবারের স্বজনদের অনুভূতি শহীদের বাবা বলেন: আমি বিভিন্ন ধরনের রোগে ভুগি। সবসময় সে আমাকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতো। তিনি আরো বলেন, আমি কাপড় এবং টেইলার্সের ব্যবসা করি কিন্তু বর্তমানে ছেলের শোকের কারণে ব্যবসা করছি না। শহীদের বড় বোন বুশরা বলেন, ইয়াসির আন্দোলন থেকে এসে আমাদেরকে গল্প শোনাতো। আমি তাকে নিষেধ করলেও সে বলতো যে, সবাই যদি ভয় পেয়ে বাসায় বসে থাকে তাহলে কীভাবে হবে? শহীদ পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা: শহীদ ইয়াসির এর বড় দুটি ভাই এর চাকরির টাকা দিয়ে ভালোভাবেই সংসার চলে। তারা দুজনে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা বেতন পান। তবে পিতা ক্যান্সার ও মা হাড় ক্ষয় রোগে ভুগছেন। উপার্জিত ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে শহীদ ইয়াসিরের পরিবার চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে পারছে না। ব্যক্তিগত প্রোফাইল পুরো নাম : শহীদ মো: ইয়াসির সরকার জন্মতারিখ : ২০/১১/২০০৬ পিতার নাম, বয়স, পেশা : মো: ইউসুফ সরকার, ৬০ বছর, কাপড়ের ব্যাবসা মায়ের নাম, বয়স, পেশা : বিলকিছ আক্তার, ৪৫, গৃহিণী পারিবারিক সদস্য : ৬ জন পরিবারের মাসিক আয় : ৩৫ হাজার টাকা ভাই বোন সংখ্যা : তিন ভাই, দুই বোন ১. বড় ভাই: মোহাম্মদ ইয়াকুব সরকার, সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকুরি করেন ২. মেঝ ভাই: মোহাম্মদ ইয়াহিয়া সরকার, বয়স :২৬, পেশা: শিক্ষক, প্রতিষ্ঠান: মাদ্রাসা ৩. বড় বোন: হাফসা বুশরা, বয়স: ২০, পেশা: শিক্ষার্থী ৪. শহীদ মো: ইয়াসির সরকার ৫. ছোট বোন: নুসাইবা, বয়স: ৬, পেশা: মাদ্রাসার ছাত্র স্থায়ী ঠিকানা : শনির আখড়া, ইউনিয়ন: দনিয়া, থানা: কদমতলী, জেলা: ঢাকা ঘটনার স্থান : শনির আখড়া, ইউনিয়ন: দনিয়া, থানা: কদমতলী, জেলা: ঢাকা আঘাতকারী : পুলিশ ও সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ আহত হওয়ার সময় কাল : বিকাল ৩.০০টা, যাত্রাবাড়ি নিহত হওয়ার সময়কাল ও স্থান : ৩.৪০টা, যাত্রাবাড়ী কুতুবখালী শহীদের কবরের অবস্থান : জনতাবাগ, পুলিশ ফাঁড়ি কবরস্থান