Image of মো: সুজন

নাম: মো: সুজন

জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ২০০০

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ট্রাকের হেলপার, শাহাদাতের স্থান : বেড়িবাধ

শহীদের জীবনী

অত্যন্ত গ্রাম অঞ্চল থেকে উঠে আসা তরুণ বীর সন্তান মো: সুজন। তিনি ভোলা জেলার বোরহান উদ্দিন থানার অন্তর্গত গ্রাম সিপাহীবাড়িতে ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই সুজন ছিলেন অত্যন্ত সাদাসিধে এবং পরিবারের প্রতি প্রতিশ্রুতবদ্ধ একজন নাগরিক। শহীদ মো: সুজন তার শৈশব কাটিয়েছেন গ্রামেই। সেখানেই তিনি স্থানীয় স্কুলে পড়াশোনা করেন। পরিবারের অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে তিনি স্কুল জীবন শেষ করতে পারেনি। শহীদ মো: সুজন পারিবারিক প্রয়োজনীয়তার তাগিদে ১৮ বছর বয়সেই ঢাকায় পাড়ি জমান। শহীদ সুজনের বয়োবৃদ্ধ পিতা সিরাজুল ইসলাম। শহীদ সুজনের মাতা রেনু বেগমও বয়োবৃদ্ধ। পিতা-মাতা এখনো পর্যন্ত জীবিত রয়েছেন। পিতা-মাতা, স্ত্রী, ও সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব শহীদ সুজনের কাঁধে এসে পরে। শহীদ সুজনের ১৪ মাসের ছেলে সন্তান রয়েছে। শহীদ সুজন জীবিকার তাগিদে পাঁচ বছর আগে ঢাকায় এসে দিনমজুরের কাজ করেন। তিনি ছিলেন একজন সাধারন ট্রাকের সহকারী। তার এই অতি সামান্য আয় থেকেই স্ত্রী, সন্তান ও পিতা-মাতাকে নিয়ে মোহাম্মদপুর বেড়িবাধের পাশে ছোট্ট একটি ভাড়া ঘরে বসবাস করতেন। শহীদ সুজন পারিবারিক চাহিদা মেটানোর জন্য একমাত্র এই কাজটিই করতেন। ছাত্রজীবনে শহীদ সুজন ছিলেন একজন মেধাবী, পরিশ্রমী ও মনোযোগী ছাত্র। যা তার শিক্ষকদের মধ্য থেকেই জানা যায়। ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবে স্বৈরাচার সরকার কর্তৃক নিহতদের মধ্যে শহীদ সুজন একজন। শহীদ সুজনের মৃত্যু শুধু তার পরিবারের জন্যই নয়, পুরো এলাকায় এক গভীর শোকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৪ মাসের ছেলে মোঃ শুভকে ইয়াতিম বানিয়েছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা। ঘটনা সংক্রান্ত বর্ণনা ২০২৪ সালে জুলাই মাসে শুরু হয় কোটা সংস্কারের প্রতিবাদে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ৫৬ পার্সেন্ট অযৌক্তিক কোটাকে সংস্কার করার দাবিতে ছাত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করতে থাকে। ১৪ তারিখে অবৈধ হাসিনা ছাত্রছাত্রীদেরকে রাজাকার বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। তখন আন্দোলনের মাত্রা আরো বেগবান হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিকেল তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জমা হয়। ১৫ তারিখে খুনি ওবায়দুল কাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে ছাত্রলীগকে বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে ছাত্রদেরকে দমন করার জন্য বলা হয়। পরবর্তীতে ছাত্ররা প্রতিবাদ সমাবেশ নিয়ে বের হলে, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ও টোকাই বাহিনী ভারী অস্ত্র নিয়ে ছাত্রদের উপরে আক্রমণ করে। ছাত্রদের পাশাপাশি অসংখ্য ছাত্রীদের কেউ প্রচন্ড পরিমাণে আঘাত করা হয়। এরপর পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে সরকার। হল থেকে প্রশাসনিক ক্ষমতায় বের করে দেন শিক্ষার্থীদের। সারাদেশে বন্ধ করে দেন ক্যাম্পাস সমূহ। ১৬ তারিখে হাসিনার লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ লীগ শহীদ আবু সাঈদ সহ ৬ জনকে শহীদ করে। এরপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী, যুবলীগের জঙ্গি বাহিনী, পুলিশের সশস্ত্র বাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীরাও নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে। তারা এই অপকর্ম গোপন করার জন্য দেশব্যাপী ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়। তাদের এই জঘন্য অপকর্মের জন্য আস্তে আস্তে ছাত্রদের সাথে যুক্ত হতে থাকেন অভিভাবক, আইনজীবী, সাংবাদিক ও সাধারণ জনতা। পুলিশ বাহিনী ও অন্যান্য বাহিনী মিলে শুধু সরাসরি সামনে থেকেই নয় বরং তারা আকাশ পথে হেলিকপ্টার এর মাধ্যমেও গুলি বর্ষন করেন। কোলের বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ নাগরিক, সকল স্তরের জনগণ শহীদ হয়। সারা দেশব্যাপী প্রায় এক হাজার ছাত্র-জনতাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া রাবার বুলেট, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেডের আঘাতে হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে আহত করে। আর এই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার পক্ষেই ছিলেন শহীদ সুজন। তিনি সব সময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন। তার সাহসী অবস্থানের জন্য সবার কাছে সম্মানিত ছিলেন। ২০২৪ এর ২০ শে জুলাই রাত আটটা ত্রিশ মিনিটে সুজন তার কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। মোহাম্মদপুরে বেরিবাধের কাছাকাছি পৌঁছানোর সময় বিক্ষোভ চলছিল। ছাত্র-জনতা কে লক্ষ্য করে পুলিশ মুহুর্মুহু গুলি চালায়। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে একটি গুলি তার পাঁজরের এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্যপাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। সাথে সাথেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সুজন। তার সঙ্গী আন্দোলনকারীরা দ্রুত তাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে নিয়ে যান এবং চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ও করণীয়: শহীদ সুজন ছিলেন একজন সাধারন ট্রাকের সহকারি। তিনি সেখান থেকে স্বল্প টাকাও উপার্জন করতেন। তার এই টাকা দিয়ে স্ত্রী একটি সন্তানও পিতা-মাতাকে নিয়ে ভালোভাবেই বসবাস করছিলেন। তাদের গ্রামের বাড়িতে কিছু পৈত্রিক সম্পত্তি থাকলেও তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। সামান্য আয়ের মধ্যেই পরিবারকে নিয়ে টিকে থাকতে হয়। একমাত্র কর্মকর্তার শাহাদাতের কারণে তাদের পরিবারে নেমে আসে দুঃখ কষ্ট। বর্তমানে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের পরিবার পরিচালনা করতে। ছেলের লেখাপড়ায় সহযোগিতা করা যেতে পারে। পরিবারের জন্য মাসিক সাহায্য প্রকল্প চালু করা যেতে পারে। এছাড়াও সময়ের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিতে সহায়তা করা যেতে পারে। শহীদ সম্পর্কে নিকট প্রতিবেশীর বক্তব্য শহীদ সুজনের জীবন ছিল সংগ্রাম আর সাদাসিধে আচরণের প্রতিচ্ছবি। তার প্রতিবেশী বলেন সে অনেক ভালো মানুষ ছিল তার কোন বদ নেশা ছিল না। সব সময় মানুষের সাথে ভালোভাবে মিশতেন। তার চাওয়া ছিল শুধুমাত্র পরিবারের জন্য কিছু করার -মোহাম্মদ শফি, প্রতিবেশী ব্যক্তিগত প্রোফাইল পুরো নাম : শহীদ মো: সুজন জন্মতারিখ : ০১/০১/২০০০ পিতার নাম, বয়স, অবস্থা : সেরাজুল ইসলাম, ৭০ বছর, বৃদ্ধ মায়ের নাম ও পেশা: : রেনু বেগম, ৬০ বছর, বৃদ্ধ পারিবারিক সদস্য : ৪ জন (পিতা, মাতা, স্ত্রী, ছেলে) ছেলে মেয়ে : একজন ছেলে, মো: শুভ, বয়স: ১৪ মাস স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: সিপাহী বাড়ি, ইউনিয়ন: দারুন বাজার, থানা: বোরহানউদ্দিন, জেলা: ভোলা বর্তমান ঠিকানা : বাসা/মহল্লা: ৭নং হাউজিং, এলাকা: ৭ নং মসজিদ হাউজিং বেড়িবাধ থানা: মোহাম্মদপুর, জেলা: ঢাকা ঘটনার স্থান : বেড়িবাধ আঘাতকারী : মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ আহত হওয়ার সময় কাল : মোহাম্মদপুর বেড়িবাধের কাছাকাছি নিহত হওয়ার সময়কাল, স্থান : স্পট ডেথ শহীদের কবরে বর্তমান অবস্থান : ভোলা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: সুজন
Image of মো: সুজন
Image of মো: সুজন
Image of মো: সুজন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: সোহাগ

রাকিব হোসেন

রিদোয়ান শরীফ রিয়াদ (জয়)

মারুফ হোসেন

মো: সাকিল

আবু ইসাহাক

সাইদুল ইসলাম ইয়াসিন

সোহেল মিয়া

 মো: ইসহাক জমদ্দার

আলাউদ্দিন

নুর হোসেন পিয়াস

মো: আসলাম

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo