Image of রমিজ উদ্দিন আহমেদ

নাম: রমিজ উদ্দিন আহমেদ

জন্ম তারিখ: ২৪ মে, ২০০৩

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ছাত্র, শাহাদাতের স্থান :কাওরান বাজার মেট্রোরেল স্টেশন

শহীদের জীবনী

রমিজ উদ্দিন আহমেদ ২৪ মে ২০০৩ সালে ঢাকাস্থ লালবাগ থানার বারইখালি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র ছিলেন। তার পিতা এ কে এম রকিবুল আহমেদ কাতার চ্যারিটি সংস্থায় একটি প্রজেক্টে চাকরি করতেন। ২০২৪ সালের মে মাস থেকে তার প্রজেক্টের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে তিনি বেকার অবস্থায় আছেন। তার মা রাবেয়া সুলতানা একজন গৃহিণী। তাদের নিজস্ব কোনো সম্পত্তি নেই। ঢাকার লালবাগে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তার একমাত্র বড় ভাই রেদোয়ান আহমেদ মানসিক এবং শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। মাঝে মধ্যে তার বাবা বাসা বাড়ি ও অফিসের টেকনিক্যাল কাজ করে সংসার চালান। শহীদ রমিজ উদ্দিন খুবই বিনয়ী ছিলেন এবং তিনি তার বড় ভাইয়ের প্রতি খুবই আন্তরিক ছিলেন। যেভাবে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে চাকুরীতে কোটা পদ্ধতি বহাল থাকার রায়কে কেন্দ্র করে জুলাই মাস থেকে শুরু হয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন। শিক্ষার্থীরা উক্ত কর্মসূচীতে প্রথম থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে সরকার ন্যায্য আন্দোলনকে দমন করার জন্য তার স্বৈরাচারী পুলিশবাহিনী, আওয়ামী লীগ এবং তার দোসরদের লেলিয়ে দেয়। ছাত্র আন্দোলন ধীরে ধীরে গণ আন্দোলনে পরিণত হয়। ছাত্র-জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলনে যোগদান করে। শহীদ রমিজ উদ্দিন রাজধানীর হাজারীবাগ এর বরইখালীর বাসা থেকে ৪ আগস্ট দুপুর ১১ টার দিকে বন্ধু শফিকুল ইসলাম প্রান্তকে নিয়ে আন্দোলনে যোগ দিতে বের হয়ে যান। যাওয়ার সময় মা রাবেয়া সুলতানা কে বলেছিলেন- ‘আম্মু, আমরা আন্দোলনে যাচ্ছি’। ছেলেকে বাধা না দিলেও অজানা এক আশংকায় কাঁপছিলো মায়ের বুক। শহীদ রমিজ উদ্দিন ও তার বন্ধু প্রান্ত ছোটবেলা থেকেই একসাথে বেড়ে উঠেছে। রমিজ উদ্দিন শুধু একা আন্দোলনে যোগদান করেনি বরং আগের দিন ফেসবুক গ্রুপে তার অন্যান্য বন্ধুদেরকেও আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। সারাদেশে কারফিউ চলমান থাকায় রাস্তায় একসাথে বের হওয়ার মত কোন পরিস্থিতি ছিল না। রমিজ তার বন্ধু প্রান্ত, মহিন ও আকাশের অদম্য ইচ্ছা ছিল শাহবাগে গিয়ে আন্দোলনে যোগদান করা। রাস্তার বিভিন্ন স্থানে পুলিশের বাঁধা অতিক্রম করে তারা শহরের অলিগলি দিয়ে পায়ে হেঁটে শাহবাগে পৌঁছে যান। দুপুরে শাহবাগ থেকে শিক্ষার্থীদের একটা বড় মিছিল বাংলামটর হয়ে ফার্মগেট এর দিকে যাচ্ছিল। রমিজসহ তার চার বন্ধু মিছিলের প্রথম দিকেই ছিলেন। সময় যতই গড়াতে থাকে আন্দোলন ততই জোরদার হয়ে ওঠে। বিকেল চারটার দিকে ফার্মগেট এসে স্বৈরাচারীর পুলিশ বাহিনী ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। চতুর্দিক থেকে উপর্যুপরি টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, ছররা গুলি, গ্রেনেড এমনকি হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোরা হয় আন্দোলনকারীদের উপর। এমনকি উচু ভবন থেকেও নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-জনতাকে টার্গেট করে গুলি ছোড়া হয়েছিল। আন্দোলনকারী ছাত্র জনতা দিক বেদিক হয়ে এদিক-সেদিক দৌড়াতে থাকে। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ গোলাগুলি চলতে থাকে এবং অনেকেই আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে। রমিজ এবং তার বন্ধুরা কারওয়ান বাজার মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে অবস্থান নেন। সেখানেও থেমে থেমে সংঘর্ষ হচ্ছিলো সন্ত্রাসী বাহিনীর সাথে। এদিকে তার মা ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানের সংঘর্ষের ঘটনা শুনে তার ছেলেকে বারবার ফোন করেছিলেন। ভয়ানক সেই পরিস্থিতির মধ্যে মায়ের ফোন ধরে শহীদ রমিজ বলেছিলেন, "গন্ডগোল চলছে, পরে কথা বলবো"। কিন্তু হায়! কে জানতো এটাই হবে মায়ের সঙ্গে তার শেষ কথা! বিকেল পাঁচটা বিশ মিনিটের দিকে মেট্রো রেল স্টেশনের নিচে ডান চোখে গুলিবিদ্ধ হয় রমিজ। বিপর্যয়কর এমন পরিস্থিতিতে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে সাথে সাথেই পার্শ্ববর্তী পদ্মা ক্লিনিকে নেয়া হয়। আঘাত মারাত্মক হওয়ায় সেখানে কর্মরত চিকিৎসকেরা তাকে ফিরিয়ে দেন। তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিকেলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যা ৬ টা ২০ মিনিটের দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। শহীদ সম্পর্কে স্মৃতিচারণ শহীদ রমিজ উদ্দিন ও তার বন্ধু প্রান্ত ছোটবেলা থেকেই একসাথে বেড়ে ওঠে। ছোট থেকে আন্দোলন পর্যন্ত তারা একসাথেই ছিলেন। তার বন্ধু প্রান্ত জানান ‘তারই হাতের ওপর মৃত্যু হয়েছে রমিজের। বন্ধুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রান্ত অঝোরে কান্না করে ফেলেন। তিনি বলেন ‘’রমিজ শুধু আমার বন্ধু না, ভাইও। ভাইকে বাঁচাতে পারলাম না। ওর স্মৃতি ভুলতে পারছি না আর কখনো ভুলতেও পারবো না’’। একনজরে শহীদ রমিজ উদ্দিন আহমেদ নাম : শহীদ রমিজ উদ্দিন আহমেদ, পেশা: ছাত্র, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি পিতা : এ কে এম রাকিবুল আহমেদ মাতা : রাবেয়া সুলতানা, পেশা: গৃহিণী ভাই : রেদওয়ান আহমেদ, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী আহত হওয়ার তারিখ ও স্থান : ৪ আগস্ট ২০২৪, কাওরান বাজার মেট্রোরেল স্টেশন শাহাদাতের তারিখ ও স্থান : ৪ আগস্ট ২০২৪, বিকাল: ৬:২০ মিনিট, পদ্মা ক্লিনিক স্থায়ী ঠিকানা : বরাই খালী, রোড নং ১৩, ইউনিয়ন: শিবপুর, থানা: লালবাগ, ঢাকা

শহীদ সম্পকির্ত কুরআনের আয়াত

আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে কখনোই মৃত মনে করো না; বরং তারা জীবিত এবং তাদের রবের কাছ থেকে তারা জীবিকা-প্রাপ্ত হয়ে থাকে। (সুরা আল-ইমরান ৩:১৬৯)

শহীদ সম্পকির্ত হাদিস

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “শহীদদের আত্মা সবুজ পাখির পেটে থাকে।” (সহীহ মুসলিম ১৮৮৭)

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image
Image
Image
Image
Image
Image
Image
শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo