জন্ম তারিখ: ১ আগস্ট, ১৯৮৯
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা: রিকশা চালক শাহাদাতের স্থান : বেরি বাধ তিন রাস্তার মোড
হোসেন ও তার দূর্বিষহ পরিবার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বেড়ে ওঠা দরিদ্র পরিবারের সন্তান শহীদ মো: আকতার হোসেন। তিনি নিজ জেলা ভোলায় ১৯৮৯ সালের আগস্ট মাসে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই শৈশবকাল অতিবাহিত করেন। পিতা মোহাম্মদ বজলুর রহমান এবং মাতা পারুলের অতি আদরের সন্তান পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকলেও পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। নিজে পড়াশুনা করার স্বপ্ন পূরণ করতে না পারলেও তার ছেলে এবং মেয়ের স্বপ্ন পূরণে তিনি কখনো পিছিয়ে ছিলেন না। তাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে ইতোমধ্যে তাদেরকে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিয়েছেন। খেটে খাওয়া পরিশ্রমী রিকশাচালক আক্তার ছিলেন অত্যন্ত চরিত্র ও নিষ্ঠাবান। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ভদ্র ও মিশুক প্রকৃতির ছেলে। তার সাথে ছিল প্রতিবেশী ও স্বজনদের মানবিক সম্পর্ক। সর্বদা খোঁজখবর রাখতেন। রিকশা চালিয়ে উপার্জনের অর্থ দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে তার। সেজন্য তিনি ঢাকায় তার স্ত্রী আকলিমাকে সঙ্গে নিয়ে এক রুমের একটি ছোট্ট রুমে ভাড়া থাকতেন। তার স্ত্রী মাঝে মধ্যেই অন্যের বাসায় গৃহস্থলির কাজ করে স্বামীকে সহযোগিতা করতেন। শহীদ সম্পর্কে সামগ্রিক বর্ণনা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। ২০১৪ সালের জুলাই মাস ব্যাপী এই আন্দোলন চলতে থাকে। প্রথম পর্যায়ে শুধুমাত্র ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন শুরু করলেও এক পর্যায়ে ছাত্র জনতা ও অভিভাবক সমাজ রাস্তায় নেমে পরে। ১৮ জুলাই রোজ বৃহস্পতিবারে শিক্ষার্থীরা সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি দেন। এদিকে ঢাকাসহ সারাদেশ অচল হয়ে পরে। সরকারি বাহিনী ছাত্র জনতার উপরে নির্মমভাবে নির্যাতন এবং হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করে। সরকার মানবতা বিরোধী অপরাধকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়। ১৯ জুলাই রোজ শুক্রবার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কমপ্লিট শাটডাউন অর্থাৎ সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচিকে ঘিরে রাজধানীসহ সারাদেশে আওয়ামী পুলিশ বাহিনী ও সরকারের মদদপুষ্ট আওয়ামী লীগ যুবলীগের সন্ত্রাসীরা ছাত্র জনতার উপরে হত্যাযজ্ঞ চালায়। ইতোমধ্যে সারাদেশে অসংখ্য ছাত্র নিহত হন এবং আহত হন শত শত। আক্তার হোসেন অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে বেলা বারোটার সময় ছাত্র জনতার সাথে যুক্ত হন। তিনি বেড়িবাধ তিন রাস্তার মোড়ে অবস্থান নেন। সেসময় পুলিশ ও যুবলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী সাধারণ ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে টিয়ারসেল, রাবার বুলেট ও গুলি ছুড়ছিল। ২টা ৩০ মিনিটের সময় চারপাশ থেকে পুলিশ ও যুবলীগের হামলায় আকতার হোসেন আটক হন। পুলিশ শুরুতে তাকে লাঠিপেটা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে এক ঘাতক পুলিশ কাছে এসে তার বুকে ঠাস ঠাস করে গুলি করতে থাকে। যার ফলে আক্তার হোসেন রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। মুহূর্তের মধ্যেই কালো রাস্তাটি যেন রক্তিম হয়ে গেল। সন্ত্রাসী পুলিশ বাহিনী এতটাই ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে যে কেউ তাকে উদ্ধার করতে সাহস করেনি। পরবর্তীতে নিথর দেহকে রেখে পুলিশ চলে গেলে সাধারণ জনতা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তার আগেই তিনি মারা যান। পুলিশ বাহিনীর এই নিষ্ঠুরতা তার পিতা-মাতা, স্ত্রী ও স্বজনদের গভীরভাবে ব্যথিত করেছে। নিকটাত্মীয়দের বক্তব্য ‘আক্তার হোসেন ভদ্র ও মিশুক ছিলেন। তিনি আমাদের প্রতিবেশী ছিল। সব সময় আমাদের খোঁজখবর নিতেন। আমাকে খালা বলে ডাকতেন।’ -জহুরা (৩৫), প্রতিবেশী,ঢাকা। পরিবারের বর্তমান অবস্থা শহীদ আখতার হোসেন রিক্সা চালিয়ে সংসার চালাতেন। ঢাকার মধ্যে হাওয়ায় তিনি মাসিক প্রায় বিশ হাজার টাকা উপার্জন করতেন। আক্তার হোসেনের স্ত্রীও গৃহস্থলীর কাজের মাধ্যমে তার স্বামীকে সহযোগিতা করতেন। শহীদ আক্তারের স্ত্রী আকলিমার পক্ষে তার দুটি সন্তানের দায়িত্ব গ্রহণ কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগত প্রোফাইল পুরো নাম : শহীদ আক্তার হোসেন জন্মতারিখ : ০১-০৮-১৯৮৯ পিতার নাম, বয়স, অবস্থা : মো বজলুর রহমান, ৬০, কৃষক মায়ের নাম : মৃত পারুল পারিবারিক সদস্য : চার জন ছেলে মেয়ে : ১ ছেলে ১ মেয়ে ১. নাম:লামিয়া,বয়স : ১৩, পেশা: শিক্ষার্থী, প্রতিষ্ঠান: হাফিজিয়া মাদ্রাসা ২. নাম: শাহাদাত, বয়স : ৭, পেশা: শিক্ষার্থী, প্রতিষ্ঠান: প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: পং গাইসা, ইউনিয়ন: গজাইরা, থানা: লালমোহন, জেলা: ভোলা বর্তমান ঠিকানা : বাসা: সোনা মিয়ার টেক, এলাকা: চাঁদ উদ্যান, থানা: মোহাম্মদপুর, জেলা: ঢাকা ঘটনার স্থান : বেরি বাধ তিন রাস্তার মোড আঘাতকারী : স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশ আহত হওয়ার সময় কাল : ১৯ জুলাই দুপুর ২: ৩০ মিনিট নিহত হওয়ার সময়কাল, স্থান : ১৯ জুলাই ২০২৪, দুপুর ২ টা ৩০ মিনিট বেরিবাধ শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : ভোলা নিজ গ্রামে