জন্ম তারিখ: ২২ আগস্ট, ২০০৪
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা: ছাত্র, টঙ্গী সরকারি কলেজে, বিভাগ: ইংরেজি সাহিত্য, প্রথম বর্ষ শাহাদাতের স্থান : উত্তরা-৭ নং সেক্টর, হাউজবিল্ডিং সংলগ্ন
বাবা মায়ের অতি আদরের কনিষ্ঠ সন্তান। নাম তার রিদোয়ান শরীফ রিয়াদ (জয়)। নিজের কার্যক্রমের মধ্য দিয়েই বাবা-মায়ের দেয়া নামকে যেন তিনি স্বার্থক করে তুলেছেন। ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট তারিখে জন্মগ্রহণ করেন এই ক্ষণজন্মা বীরপুরুষ। পিতৃভূমি নওগাঁ জেলার বদলগাছি থানার শ্রীরামপুর গ্রামে হলেও বেড়ে উঠেছেন টঙ্গীর তুরাগ (কামারপাড়া) এলাকায়। দুই ভাইবোন, পিতা-মাতা এবং একমাত্র ভাগ্নেকে নিয়ে গঠিত জয়দের যৌথ পরিবার। স্কুল শিক্ষিকা বোন শাহনাজ আহমেদের স্বামী কর্মসূত্রে কাতার প্রবাসী। শহীদ জয়ের পিতা জনাব আহম্মদ উল্লাহ বাদল পেশায় ইলেক্ট্রিশিয়ান। মা রুপালী আক্তার বিউটি গৃহিণী। পাশাপাশি পরিবারের আয়ে ভূমিকা রাখার জন্য তিনি সেলাই কাজও করে থাকেন। শহীদ জয় কামারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। অতঃপর টঙ্গী সরকারি কলেজে ইংরেজি সাহিত্যে সম্মান প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। ব্যক্তিগত জীবনে শহীদ জয় ছিলেন ধর্মপরায়ণ এবং বাস্তববাদী মানুষ। অল্প বয়সে নিজের কাজ নিজে করতে অভ্যস্ত ছিলেন এবং মায়ের সেবা করতেন। শহীদ জয় বাল্যকাল থেকে কৃচ্ছতা সাধনে অভ্যস্ত ছিলেন; প্রয়োজনের অতিরিক্ত তিনি কখনোই দাবী করতেন না। অর্থ অপচয় ভেবে ব্যক্তিগত উদযাপনও এড়িয়ে যেতেন। ইসলামী ফাউন্ডেশনের কুরআন পাঠ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েও পুরস্কৃত হয়েছিলেন তিনি। সামগ্রিক ঘটনার বর্ণনা জুলাই ২০২৪ এর প্রথম সপ্তাহ থেকে চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলন পর্যায়ক্রমে প্রকট আকার ধারন করে। সমগ্র দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের পাশাপাশি প্রতিবাদে শরিক হন কৃষক, শ্রমিক, হকার, চাকরিজীবীসহ আবালবৃদ্ধবনিতা। সকল শ্রেনি পেশার মানুষের অংশগ্রহণে আন্দোলন বেগবান হওয়ায় ছাত্রজনতার উপর নেমে আসে স্বৈরাচারের নির্যাতন। পুলিশ-র্যাব-বিজিবির পাশাপাশি সরকার দলীয় যৌথ সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে ছাত্রজনতার উপর মুহুর্মুহু তাজা গুলি, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ইত্যাদি দিয়ে আক্রমণ শানানো হয়েছিলো। বিপ্লবী জনতা রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের প্রবল রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে স্বতস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদ জোরদার করতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় শহীদ জয় উত্তরা-৭ নং সেক্টরের হাউজবিল্ডিং এলাকায় বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগদান করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ১৯ জুলাই ২০২৪ রোজ শুক্রবার দেশব্যাপী ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ পালিত হয়। শহীদ রিদোয়ান জয় ১৯ জুলাই ২০২৪ বিকেল ৩ টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে আন্দোলনে অংশ নেন। তার মা মসজিদে দান করার জন্য কিছু টাকাও তাকে দিয়েছিলেন। শহীদ জয় টাকাগুলো মসজিদে দান না করে কিছু প্রয়োজনীয় ঔষধ কিনে ছাত্রদের মাঝে বিলিয়ে দেন। কেননা আগেরদিন অর্থাৎ, ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার এই এলাকায় অনেক ছাত্র আহত হওয়ায় তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজন পড়েছিলো। কিন্তু আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ঔষধ ও ব্যান্ডেজের গজ কাপড় না থাকায় আহত অনেকেই নানাবিধ সংকটের মুখে পড়েছিলেন। শহীদ জয় অবস্থান করছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের সামনে। ঐ সময় পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনীর যৌথ আক্রমণ ক্রমে বেড়ে চলছিলো। সাহসী যোদ্ধা শহীদ রিদোয়ান জয় আহতদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানপূর্বক বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণের চেষ্টা করেন। পাশাপাশি তিনি সহযোদ্ধা ছাত্রদের ব্যাগগুলো পাহারায় নিয়োজিত থাকেন। বিকেলে আছরের নামাজ পড়তে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজে প্রবেশ করলে বিরুপ পরিস্থিতিতে তা সম্ভব হয়নি। বিকেল ৫:৩০ মিনিটে মায়ের সাথে মোবাইল ফোনে তার শেষ কথা হয়। ঘটনার পরিক্রমায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম তার দলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী অনুসারীদেরকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গুলি করতে করতে এগুতে থাকলে ছাত্রজনতা তাদেরকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। ঘটনাস্থলে জাহাঙ্গীর আলমের সন্ত্রাসী দল পর্যুদস্ত হয়। তবে তাদের নির্বিচার গোলাগুলিতে অনেকে আহত ও নিহত হন। যুগপৎ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মাঝে ঘটনার আকস্মিকতায় রাত আনুমানিক ৮:৩০ মিনিটে সন্ত্রাসী ঘাতকের একটি গুলি রিদোয়ান জয়ের মাথার পিছনে এসে বিদ্ধ হয়। ঘটনাস্থলে তার বন্ধুও পেটে গুলিবিদ্ধ হন। আহত বন্ধুটি প্রাণে বেঁচে গেলেও রিদোয়ান জয় ঘটনাস্থলে শাহাদাত বরণ করেন। পাশ্ববর্তী বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শহীদের পিতামাতা এ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন এবং হাসপাতাল থেকে লাশ সংগ্রহ করেন। শহীদের জানাজা না করার জন্য প্রশাসন ও বিতর্কিত দল আওয়ামিলীগের নেতাকর্মীদের ব্যাপক হুমকি ও চাপ থাকা স্বত্ত্বেও পরদিন সকালে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং কামারপাড়া কবরস্থানে শহীদ মুগ্ধর পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। নিকটাত্মীয় ও সহযোদ্ধাদের অভিব্যক্তি: নিকটাত্মীয়ের বক্তব্য থেকে জানা যায়, শহীদ জয় টিনেজ বয়স থেকেই সব ধরনের বদঅভ্যাস থেকে মুক্ত ছিলেন। সৎসাহস এবং আত্মসংযম ছিলো তার উল্লেখযোগ্য দুটি বৈশিষ্ট্য। রমজানে সবগুলো রোজা তিনি রাখতেন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কুরআন পাঠ প্রতিযোগিতায়ও তিনি পুরস্কার প্রাপ্ত হন। প্রতিবেশীর অনুভূতি: টিনেজ হলেও জয় ভদ্র ও নম্র ছিলেন। আল্লাহ তাকে জান্নাত নসীব করুন। শহীদ মুগ্ধ ও জয়ের কবর পাশাপাশি অবস্থিত। শহীদ মুগ্ধ জাতীয় রাজনীতির আলোচনায় প্রাসঙ্গিক হলেও শহীদ জয়কে নিয়ে ততোটা আলোচনা হয় না। শহীদ জয়ের আলোচনা ও স্বীকৃতি প্রয়োজন। কারণ, দেশে আবার যুদ্ধ হলে জীবিত শহীদ জয় আবারও যুদ্ধে যেতেন। শহীদের নিজের স্বপ্ন শহীদ জয়ের এতিমখানা করার স্বপ্ন ছিলো। গ্রামের বাড়িতে মসজিদ প্রতিষ্ঠা এবং রাস্তা নির্মাণ করার ইচ্ছে ছিলো তার। ব্যক্তিগত পরিচিতি শহীদের নাম : রিদোয়ান শরীফ রিয়াদ (জয়) জন্ম তারিখ : ২২/০৮/২০০৪ জন্মস্থান : গ্রাম: শ্রীরামপুর, উপজেলা: বদলগাছি, জেলা: নওগাঁ বর্তমান ঠিকানা : বাসা: বাড়ি/২৭, রোড: ০৫, এলাকা: ব্লক-বি, রাজাবাড়ি থানা: তুরাগ (কামারপাড়া), জেলা: ঢাকা পিতার নাম : আহম্মদ উল্লাহ বাদল পিতার পেশা ও বয়স : ইলেক্ট্রিশিয়ান, ৬০ মাসিক আয় : ৩০,০০০/- মাত্র মায়ের নাম : রুপালী আক্তার বিউটি মায়ের পেশা ও বয়স : গৃহিণী, ৪৫ বোনের নাম : শাহনাজ আহমেদ বোনের পেশা : স্কুল শিক্ষিকা ঘটনার স্থান : বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ, হাউজ বিল্ডিং, উত্তরা, ঢাকা আক্রমণকারী : গাজিপুরের শীর্ষ সন্ত্রাস আওয়ামী কর্মী জাহাঙ্গীর(সাবেক বিতর্কিত মেয়র) ও তার দলবল আহত হওয়ার সময় : রাত ৮:৩০, ১৯ জুলাই ২০২৪ মৃত্যুর তারিখ, সময় ও স্থান : ১৯ জুলাই ২০২৪, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ, হাউজ বিল্ডিং, উত্তরা শহীদের কবরের অবস্থান : কামারপাড়া, ঢাকা প্রস্তাবনা : শহীদের পিতার জন্য একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দেওয়া