জন্ম তারিখ: ২ মার্চ, ১৯৯৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা : এমব্রয়ডারী শ্রমিক, শাহাদাতের স্থান : আদাবর
জুলাই আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। এই সর্বাত্মক আন্দোলনে শ্রমজীবী মানুষের অংশগ্রহণ ছিল অগ্রগামী ভূমিকায়। মালিক পক্ষের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছিল একটা জীবন মরণ সিদ্ধান্ত। এই আন্দোলন যে যার জায়গা থেকে উচ্চকিত করে প্রতিবাদের বজ্র ধ্বনি। শ্রমে ঘামে অর্থ উপার্জন করা মেহনতি মানুষেরা আওয়ামী দুঃশাসনে ছিল সমানভাবেই নিষ্পেষিত। তাদের মানবিক মর্যাদাটুকু কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। অথচ একাত্তরের ১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথতলা গ্রামে যে ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ পঠিত হয়, তাতে ‘বাংলাদেশের জনগণের জন্য সমতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সার্বভৌম জনগণের প্রজাতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকার প্রকাশ করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকার কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললেও কখনোই তারা সেটা ধারণ করেনি। চেতনার ধোঁয়া তুলে তারা শোষণ করে গেছে। অন্যায়ভাবে জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের হত্যা, জেল, জুলুম, হুলিয়া, ভয় ভীতি দেখিয়ে একটি মাফিয়া স্টেট গড়ে তোলে। যারপরনাই শ্রমিক শ্রেণিও ছিল আওয়ামী রেজিমের প্রতি ক্ষুদ্ধ। এমন একজন বিক্ষুব্ধ শহীদ ছিলেন শহীদ মো: জাকির হোসেন (২৯)। বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানার কবাই গ্রামে ১৯৯৫ সালের ২ তারিখের মার্চ মাসে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মো: ইউসুফ শিকদার একজন দিন মজুর। মাতা মাসুমা বেগম একজন গৃহিণী। বিয়ের পর বাবার সাথে মনোমালিন্য হলে সস্ত্রীক ঢাকায় এসে এমব্রয়ডারীর শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তার এতিম দুই সন্তান বড়জন জাবেদ মাত্র ৪ বছর বয়সে এবং ছোট ছেলে আবদুলের বয়স ৭ মাস। যেভাবে শহীদ হয়: শহীদ জাকির হোসেন আদাবরের একজন সচেতন যুবক ছিলেন, যিনি সবসময় বৈষম্য এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার মানসিকতা পোষণ করতেন। ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেও, সমাজের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তার ভাবনা ছিল স্পষ্ট। বৈষম্যের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেখানে তিনি অন্যতম অগ্রভাগের সৈনিক ছিলেন। ৫ আগস্টের সেই আন্দোলনের দিন, জাকির তার মতাদর্শ এবং আদর্শিক অবস্থান নিয়ে উপস্থিত ছিলেন। আদাবর থানা এলাকার সামনে হাজারো ছাত্র ও যুবকের সাথে তিনি বৈষম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন। সেদিন দুপুর থেকে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বিকেল গড়ানোর সাথে সাথে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে চায়, কিন্তু আন্দোলনকারীরা তাদের দাবি নিয়ে দৃঢ়ভাবে অবস্থান করছিল। এই সময় পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। জাকির গুলিবিদ্ধ হন এবং সেখানেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আন্দোলনকারীরা জাকিরকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলেও, তার জীবন আর রক্ষা করা যায়নি। চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জাকিরের লাশের সাথে আরও কিছু অজ্ঞাত লাশ ছিল, ফলে তা সঠিকভাবে শনাক্ত করতে কিছুটা সময় লাগে। পরদিন, ৬ আগস্ট তার মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায় এবং সেখানে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়। জাকিরের এই মর্মান্তিক মৃত্যু তার পরিবারের জন্য বিশাল শূন্যতা তৈরি করেছে। তার মৃত্যুতে স্ত্রী ও দুই সন্তান এখন অসহায়। পরিবারটি ঢাকায় থাকলেও, নিয়মিত আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের জীবন কাটানো আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি তার পিতামাতার কাছেও আর্থিক সাহায্য পাঠাতেন, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বর্পূর্ণ ছিল। কিন্তু এখন সেই সাহায্য আর নেই, ফলে পুরো পরিবারটাই সংকটে পড়েছে। শহীদ জাকিরের মৃত্যু শুধু তার পরিবারের জন্য নয়, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা যুব সমাজের জন্যও একটি বড় ধাক্কা। তার গ্রামের বাড়িতে পাকা বাড়ি রয়েছে, কিন্তু পারিবারিক টানাপোড়েনের কারণে তিনি ঢাকায় স্ত্রী এবং দুই সন্তান নিয়ে বাস করতেন। শহীদের পিতা তার বিবাহিত স্ত্রীকে মেনে না নেওয়ায়, জাকির পরিবারসহ ঢাকায় বসবাস করতে বাধ্য হন। ঢাকায় থাকলেও, তিনি তার পিতামাতার প্রতি দায়িত্বশীল ছিলেন এবং প্রতি মাসে তাদের ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা পাঠাতেন। তার এই অকাল মৃত্যুতে পরিবারটির অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : মো: জাকির হোসেন (২৯) শহীদের পেশা : এমব্রয়ডারী শ্রমিক পিতার নাম : মো: ইউসুফ শিকদার (৬০) পিতার পেশা : দিনমজুর মাতার নাম : মাসুমা বেগম (৫০) মাতার পেশা : গৃহিণী পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ০৪ জন স্থায়ী ঠিকানা : কবাই, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল ১ম সন্তান : মো: জাবেদ (০৪) ২য় সন্তান : আবদুল (৭ মাস) যেভাবে সহযোগিতা করা যায় ১) পরিবারের ভরণপোষণ ২) সন্তানদের পড়ালেখার দায়িত্ব গ্রহণ ৩) স্ত্রীর কর্মসংস্থান/ বিবাহ