Image of মো: রবিউল ইসলাম

নাম: মো: রবিউল ইসলাম

জন্ম তারিখ: ১৭ অক্টোবর, ১৯৯৭

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ইলেকট্রনিক্স ব্যবসা, শাহাদাতের স্থান : যাত্রাবাড়ী

শহীদের জীবনী

স্বৈরাচারের ঐরাবত তাড়াতে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেওয়া এক শহীদি নাম রবিউল ইসলাম। মা-বাবার অন্দর আলোকিত করে এই ধরাধামে তার আগমন ঘটেছিল বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে ১৯৯৭ সালের ১৭ অক্টোবর। তার জন্মস্থান বাংলার ভেনিস খ্যাত কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী জেলা বরিশালে। এ জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার ফোরকানিয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত শাকবুনিয়া গ্রামে কৃষক পিতা আব্দুল লতিফ ফরাজী ও গৃহিণী মাতা দেলোয়ারা বেগমের ঘর উজালা করে তার আগমন ঘটে। পরিবারের দ্বিতীয় সন্তানের আগমনে সেদিন রবিউলের পরিবারে আনন্দের ঢেউ খেলে যায়। বাবা-মায়ের দুই সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। ছোট্ট রবিউল হেসে-খেলে আদরে-আহ্লাদে মায়ের কোলে গ্রামের বাড়িতেই বেড়ে উঠতে থাকেন। শহীদের নজরানা ১৯ জুলাই, ২০২৪; ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকা। সন্ধ্যার কালোছায়া নেমে এসেছে ঢাকার বুক জুড়ে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ তখন উত্তাল কোটা সংস্কার আন্দোলনে। যাত্রাবাড়ী এলাকাও তখন ছাত্রদের আন্দোলনে আন্দোলিত। সন্ধ্যার কালো ছায়া ধীরে ধীরে ঘনীভূত হচ্ছে। হঠাৎ ঠাস ঠাস শব্দে পুলিশের গুলি আন্দোলনরত ছাত্র জনতার উপর। একটা বুলেট এসে তীব্র গতিতে আঘাত হানল রবিউলের দেহে। লুটিয়ে পড়লেন তিনি। সময় তখন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা। ধরাধরি করে গুলিবিদ্ধ রবিউলকে নেওয়া হলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু মাত্র ৩০ মিনিটের ব্যবধানে সন্ধ্যা ৭টায় মাত্র ২৭ বছর বয়সে ইহকালের সফর সমাপ্ত করে রবিউল উড়ে গেলেন জান্নাতের সবুজ পাখি হয়ে অনন্ত জীবনের পথে। স্বৈরাচারের বুলেটে বুক ঝাঁঝরা হয়ে লেখা হলো আরেকটি নাম— শহীদ রবিউল ইসলাম! শহীদ রবিউল ইসলাম সম্পর্কে বিস্তারিত শহীদ রবিউল ইসলাম যৌবনে পদার্পণ করে কাজের খোঁজে চলে আসেন রাজধানী ঢাকায়। ঢাকার নবাবপুরে নিয়োজিত হন ইলেকট্রনিক ব্যবসায়। এর আগে তিনি গ্রামে কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। নিজেদের ১ একর (১০০ শতাংশ) জমিতে ধান চাষ করে পরিবারের ব্যয়ভার নির্বাহ করতেন। পাশাপাশি ঢাকার নবাবপুর এলাকায় ইলেকট্রনিক সামগ্রীর ব্যবসা চালিয়ে জীবনের উন্নতি করতে চেষ্টা করছিলেন। তার ব্যবহার, কর্মনিষ্ঠা এবং অনুপম ব্যক্তিত্ব দ্বারা তার গ্রামের মানুষের কাছে তিনি ছিলেন সুপ্রিয় এবং সুপরিচিত। ছাত্রজীবনে রবিউল ইসলাম বরিশালের বাকেরগঞ্জের স্থানীয় স্কুলে পড়াশোনা করেন। স্কুল এবং কলেজ জীবনে তিনি সর্বদা একজন সৎ, নিষ্ঠাবান ও আদর্শ শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। রবিউল রাজনীতি সচেতন ছিলেন এবং নিজ এলাকার মানুষের অধিকারের জন্য সবসময় সোচ্চার থেকেছেন। যদিও সরাসরি রাজনৈতিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন না, তবুও সমাজের সঠিক উন্নয়নের জন্য তার মধ্যে প্রচন্ড দায়িত্ববোধ কাজ করতো। তিনি বিশ্বাস করতেন সঠিক ও সৎ রাজনীতি দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে পারে। তার সেই বিশ্বাস এবং চিন্তা-চেতনা থেকে ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করতে এসেছিলেন যাত্রাবাড়ীতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে। কিন্তু যাত্রাবাড়ির সেই ভয়ানক কালো সন্ধ্যায় স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার অসুস্থ রাজনীতির শিকার হয়ে পুলিশলীগের গুলিতে তার জীবনের সবটুকু আলো দপ করে নিভে যায়। শহীদ রবিউল ইসলামের অকাল মৃত্যুতে তার পরিবারে নেমে আসে এক সীমাহীন শোকের ছায়া। বাবা-মা, একমাত্র ভাই আর প্রিয়তমা স্ত্রী শোকে স্তব্ধ হয়ে যান। বিশেষ করে বড় আঘাতটা লেগেছিল তার স্ত্রী তানিয়া বেগমের! কেননা গর্ভে ছিল তার অনাগত সন্তান, যে কিনা কিছুদিনের মধ্যেই দেখবে পৃথিবীর মুখ, জন্মদাতা পিতার মুখ! অথচ! শহীদের পরিবারে এলো নতুন অতিথি রবিউল ইসলাম শহীদ হওয়ার দেড় মাসের মাথায় ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী জন্ম দেন ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! মাত্র কদিন আগেই পিতাকে তার খুনি হাসিনা এই দুনিয়া থেকে পাঠিয়ে দিয়েছে পরপারে। এই মুহূর্তে যার বাবার আদর পাওয়ার কথা, সে পৃথিবীতে এসেছেই এতিম হয়ে! এই মুহূর্তে যে বাবার তার সন্তানের গালে চুমু দেওয়ার কথা, সেই বাবা আজ মাটির অন্ধকার ঘরে! কন্যা সন্তানের জন্মে রবিউলের পরিবারে একদিকে যেমন খুশির ঢেউ, অন্যদিকে সেই পরিবারের সবার চোখে স্বজন হারানোর ব্যথাতুর অশ্রুজল! এ যেন এক নিষ্ঠুর বেদনানন্দ! রবিউল ইসলামের অকাল মৃত্যুর শোকের ঢেউ আছড়ে পড়ে তার এলাকা বাকেরগঞ্জ থেকে ঢাকার নবাবপুর পর্যন্ত। এলাকাবাসী আর সহকর্মীরা একজন সৎ, পরিশ্রমী যুবকের মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে যায়। রবিউলের এই সাহসিকতা ও আত্মত্যাগ আমাদের শিক্ষা দেয় অন্যায়-অবিচার, সন্ত্রাস-দুর্নীতি আর স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে রুখে দাঁড়ানোর; জালিমের মসনদ কাঁপিয়ে সমাজ ও দেশকে রক্ষা করার। রবিউলের এই আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরাও নিশ্চয়ই সমস্ত অপশক্তি রুখে দিতে আন্দোলন-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে পিছপা হবো না, ইনশাআল্লাহ! এক নজরে শহীদের সংক্ষিপ্ত প্রোফাইল নাম : মো: রবিউল ইসলাম জন্ম তারিখ : ১৭.১০.১৯৯৭ জন্মস্থান : বাকেরগঞ্জ, বরিশাল পেশা : ইলেকট্রনিক্স ব্যবসা কর্মস্থল : নবাবপুর, ঢাকা পিতার নাম : আব্দুল লতিফ ফরাজী (৬২) মাতার নাম : দিলওয়ারা বেগম (৫০) স্ত্রীর নাম : তানিয়া বেগম (২০) স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: শাকবুনিয়া, ইউনিয়ন: ফোরকানিয়া, থানা: বাকেরগঞ্জ, জেলা: বরিশাল পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৫ জন (বাবা, মা, ভাই, স্ত্রী ও নবজাতক কন্যা) পরিবারের আয়ের উৎস : ১ একর (১০০ শতাংশ) কৃষি জমি শহীদি স্থল : যাত্রাবাড়ী ঘাতক : পুলিশ গুলিবিদ্ধের সময় : সন্ধ্যা ৬:৩০ টা (১৯ জুলাই, ২০২৪) শহীদ হওয়ার সময় : সন্ধ্যা ৭ টা (১৯ জুলাই, ২০২৪) সমাধিস্থল : গ্রামের বাড়ি পারিবারিক গোরস্থান শহীদের পরিবারের প্রতি সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়া ২. ভাইয়ের জন্য চাকরি/ব্যবসার ব্যবস্থা করা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: রবিউল ইসলাম
Image of মো: রবিউল ইসলাম
Image of মো: রবিউল ইসলাম
Image of মো: রবিউল ইসলাম
Image of মো: রবিউল ইসলাম
Image of মো: রবিউল ইসলাম

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: সাইফুল ইসলাম

আকরাম খান রাব্বি

আলী হোসেন

এস. এম সারফুউদ্দিন

জাহিদুজ্জামান তানভীন

সাজিদুর রহমান ওমর

মো: সালাউদ্দিন সুমন

মো: সোহাগ

মোঃ মমিনুল ইসলাম রিদয়

মো: আবদুল মোতালেব

মো: সবুজ

মোঃ সোহেল

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo