জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ১৯৮০
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা :কাপড় বিক্রেতা, শাহাদাতের স্থান :হাউজ বিল্ডিং নর্থ টাওয়ার সংলগ্ন, উত্তরা, ঢাকা।
“ঘরে খাবার জোটাতে কাজে গিয়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলেন” শহীদ মোহাম্মদ নুরু ১ জানুয়ারি ১৯৮০ সালে শরীয়তপুর জেলার ডামুড্ডা উপজেলার কুলকারি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আলী উল্লাহ এবং তার মাতার নাম আছিয়া খাতুন। তরুণ বয়সেই মোহাম্মদ নুরুর পিতা মারা যান। বাবার মৃত্যুতে পরিবারে দুঃখ নেমে আসে। জীবিকা নির্বাহের জন্য অল্প বয়সে ঢাকা শহরে পাড়ি জমান শহীদ নুরু। কাপড়ের দোকানে কাজ করে নিজের এবং পরিবারের খরচ নির্বাহ করতে থাকেন। পরবর্তীতে ভ্যান গাড়িতে নিজেই কাপড় বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। স্ত্রী জহুরা গার্মেন্টসে চাকরি করেন। জীবনমানের উন্নতি করতে বছরখানেক আগে ৩ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিল বিদেশ যাওয়ার জন্য। স্ত্রী জোহরা এবং ২২ বছরের ছেলে মোঃ ইমনকে নিয়ে ভালোই কাটছিল তার জীবন। হঠাৎ কোটা আন্দোলন শুরু হলে শহীদ হন মোহাম্মদ নুরু। দুবেলা দু মুঠো খাবার জোটাতেই যাদের পায়ের জুতা ক্ষয় হয়ে যায় তাদের দেশের রাজনীতি নিয়ে চিন্তা করাটা বিলাসিতা ছাড়া কিছু নয়। দেশের পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে যে তাদের জীবন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আন্দোলনের কারনে তার বেচাকেনা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দিন শেষে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়। দুবেলা খাবার ও জোটে না ঠিক মত। এদিকে আন্দোলনে পুলিশ নির্বিচারে মানুষ হত্যা করতে থাকে। তবুও পেটের দায়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে রাস্তায় বের হতে হয় নুরুকে। রাস্তায় এসেই আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন শহীদ নুরু। গুলি বিদ্ধ হয়ে জীবন হারাতে হয় নুরুকে। এ যেন জীবন বাঁচাতে এসে জীবন বিসর্জন। পারিবারিক অবস্থা ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়ে জীবন সংগ্রামে নেমে পড়েন শহীদ নুরু মিয়া। বাবার কোন অর্থ সম্পদ না থাকায় জীবন চালানো কষ্টকর হয়ে যায়। জীবিকার উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসেন। পরিবার নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় উঠেন। তাঁর স্ত্রী গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। আর তিনি একটি কাপড়ের দোকানে কর্মী হিসেবে যোগ দেন। কিছুদিন পর নিজেই একটি ভ্যান গাড়ী নিয়ে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন্। কিন্তু সংসারের অভাব অনটন কোনভাবেই পিছু ছাড়ছিল না। তাইতো বেকার ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর জন্য ৩ লক্ষ টাকা ঋণ করেন। তার মৃত্যুতে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। পাওনাদাররা এসে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এই মুহুর্তে তাদের ঋণ পরিশোধ করার সামর্থ নেই। নুরু মিয়ার ছেলে এখনো বেকার। পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব আপাতত তাঁর স্ত্রী বহন করছেন। তাঁর মাসিক বেতন মাত্র আট হাজার টাকা। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে তার পরিবার খুব কষ্টসাধ্য জীবন যাপন করছে। শহীদ হওয়ার ঘটনা ১৯ জুলাই ঢাকার সবগুলো পয়েন্টে ছাত্রদের সাথে পুলিশ বিজিবি ও র্যাবের সদস্যদের সংঘাত চলে। আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র জনতার উপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি করে। ঘাতক পুলিশ, আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্র-জনতাকে টার্গেট করে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, ছররা, ফাঁকা গুলি, গ্রেনেড, বোমা ইত্যাদি নিক্ষেপ করে। সেদিন রাজধানীর উত্তরা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ সাজোয়া যান ও আধুনিক অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেয়। শুধু তাই নয় স্বৈরাচারের হেলিকপ্টার ও উঁচু ভবনের উপর থেকে আধুনিক অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। প্রতিদিনের মত সেদিনও উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এলাকায় নর্থ টাওয়ারের পেছনে যখন কাপড় বিক্রি করছিল শহীদ মোহাম্মদ নুরু। ঠিক সে সময়ে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের ধাঁওয়ার শিকার হন শহীদ নুরু। আশেপাশের সকলের দৌড়াদৌড়িতে মোহাম্মদ নূরুও ভয় পেয়ে যান। কাপড়ের ভ্যান রেখেই দৌড় দেন শহীদ নুরু। দৌড়ে পুলিশের সামনে পড়ে যান তিনি। আওয়ামী সরকারের পোষ মানানো পেটোয়া পুলিশ বাহিনী মো: নুরুকে সামনাসামনি গুলি করে। মাথায় গুলি করে মাথার খুলি উড়িয়ে দেওয়া হয়। এক চিৎকারে ঘটনাস্থলেই পড়ে যান তিনি। সন্ত্রাসী পুলিশ নিথর দেহের উপরে আরো তিনটি গুলি চালায়। পরবর্তীতে তার মৃতদেহ উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ততক্ষণে তিনি আর বেঁচে নেই। দাফন-কাফন শহীদ মোহাম্মদ নুরুর জানাজার নামাজ গাজীপুরের কুনিয়া এলাকায় ২০ তারিখ সকাল আটটায় অনুষ্ঠিত হয়। একনজরে শহীদ মো: নুরু নাম : শহীদ মোহাম্মদ নুরু পেশা : কাপড় বিক্রেতা জন্ম তারিখ : ০১-০১-১৯৮০ বয়স : ৪৪ বছর পিতা : মৃত আলী উল্লাহ মাতা : মোসা: আছিয়া খাতুন শাহাদাতের তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪ শাহাদাতের স্থান : হাউজ বিল্ডিং নর্থ টাওয়ার সংলগ্ন, উত্তরা, ঢাকা। স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: কুলকুরি, ইউনিয়ন: ৫ নং ওয়ার্ড, থানা: ডামুড্ডা সদর জেলা: শরিয়তপুর বর্তমান ঠিকানা : কুনিয়া, গাছা, গাজীপুর প্রস্তাবনা ১. শহীদ পরিবারে সহযোগিতা করা যেতে পারে ২. শহীদ সন্তানের কর্মসংস্থান করে দেয়া যেতে পারে ৩. ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করা