জন্ম তারিখ: ৮ জুলাই, ১৯৯১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: রাজশাহী
পেশা : নাপিত, শাহাদাতের স্থান : বাইপাইল, সাভার
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে অনুষ্ঠিত স্বৈরাচার বিরোধী গণঅভ্যুত্থানের চূড়ান্ত বিজয়ের দিন ৩৬শে জুলাই, তথা ৫ই আগস্ট শহীদ হওয়া ছাত্রজনতার মধ্যে শহীদ বিপ্লব মণ্ডল অন্যতম। বিপ্লব মণ্ডলের জন্ম নওগাঁ জেলার নওগাঁ সদরের চণ্ডিপুর ইউনিয়নের শিমুলিয়া গ্রামে ১৯৯১ সালের ৮ই জুলাই এক দরিদ্র্য পরিবারে। বাবা-মার ৪ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন ২য়। বিপ্লব মণ্ডলের পিতার নাম মো: লুৎফর মণ্ডল (৬৫)। পেশায় তিনি দিনমজুর। তার মাসিক আয় ৮০০০ টাকা। মায়ের নাম মোছা. বিলকিস বেগম (৬০)। বড় বোন লতা আক্তার মেমি (৩৫) চাকরিজীবী। ছোটবোন বৃষ্টি খাতুন (২৬) গৃহিণী। ছোটভাই মো. ফিরোজ হোসেন (২৯) প্রেসে কাজ করেন। শহীদ বিপ্লব মণ্ডল থাকতেন ঢাকার সাভারের বাইপাইলে। পেশায় ছিলেন নাপিত। কাজ করতেন একটি সেলুনের দোকানে। তিনি বিবাহিত ছিলেন। তার স্ত্রী মোছা. আরিফা আক্তার (২৭) ছিলেন গার্মেন্টসকর্মী। তার আমেনা খাতুন নামে ৯ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। যেভাবে শহীদ হলেন বিপ্লব বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ক্রমান্বয়ে রূপ নেয় ছাত্রজনতার স্বৈরাচার পতনের গণআন্দোলনে। ৫ই আগস্ট ২০২৪ এই আন্দোলন চূড়ান্ত বিজয়ের দিকে অগ্রসর হয়। সকাল থেকে বেলা গড়ানোর সাথে সাথে বাড়তে থাকে ছাত্রজনতার উত্তাল ঢেউ। বাইপাইলে ছাত্র-জনতার মিছিলে যোগ দেন বিপ্লব মণ্ডল। বুকে তার স্বৈরাচার তাড়ানোর অসীম সাহস। বেলা ঠিক ১২:৩০টা। উত্তাল আন্দোলনে গণখুনি হাসিনার পোষা পুলিশ বাহিনী বেপরোয়াভাবে গুলি ছোড়ে। একটা গুলি এসে বিপ্লব মণ্ডলের গলা এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়। খবর পেয়ে তার স্ত্রী আরিফা আক্তার ঘটনাস্থলে ছুটে যান। কিন্তু সেখানে বিপ্লব মণ্ডলকে না পেয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে খুঁজে বেড়ান। সারাদিন খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে শোকাহত হৃদয়ে ফিরে যান বাসায়। পরদিন ৬ই আগস্ট শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতালে যান তিনি। সেখানে বেশ কয়েকটি মৃতদেহ থেকে তার স্বামী শহীদ মো: বিপ্লব মণ্ডলের লাশ শনাক্ত করেন। জানা যায়, ঘটনাস্থলেই শাহাদতবরণ করেন তিনি। শহীদ বিপ্লব সম্পর্কে আরো কিছু কথা বিপ্লবের জন্ম এক দরিদ্র পরিবারে। তারা ৪ ভাইবোনের কেউই অভাবের তাড়নায় বেশিদূর লেখাপড়া করতে পারেননি। পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় বিপ্লবকে অল্প বয়সেই সংসারের হাল ধরতে হয়। ২০১৩ সালে বিপ্লব মণ্ডল আরিফা আক্তারের সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের ১ বছর পর তাদের ঘর আলোকিত করে আসে এক কন্যা সন্তান। তার নাম রাখেন আমেনা খাতুন। বসতভিটে ছাড়া আর কোনো চাষযোগ্য জমি নেই তাদের। পরিবারের সবাই বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি ছিলেন পেশায় একজন নাপিত। নওগাঁ জেলার মাদার মোল্লা বাজারে অন্যের সেলুনে কাজ করতেন তিনি। ছোট ভাই করেন প্রেসের কাজ। বাবা করেন দিনমজুরি। মা এবং ছোট ভাইয়ের স্ত্রী বাড়িতে চরকির মাধ্যমে সুতা বুননের কাজ করেন। বিপ্লব স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন একটি মাটির ঘরে। তার বাবা আর ছোট ভাই মিলে যৌথভাবে তৈরি করেন ২টি আধাপাকা ঘর। বিপ্লব মণ্ডল তাদের সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বাড়তি আয়ের আশায় স্ত্রীসন্তানসহ ঢাকায় চলে যান। স্ত্রী আরিফা বেগম বাইপাইলের একটি গার্মেন্টসে কাজ নেন। শহীদ বিপ্লব মন্ডলের মৃত্যুতে তার পরিবারের সবাই খুব বেশি ভেঙে পড়েছেন। তার স্ত্রী আরিফা আক্তার স্বামীর বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। নিজেকে সামলাতে পারেন না। একমাত্র কন্যাকে নিয়ে কোথায় যাবেন, কী করবেন, তার ভবিষ্যৎ কী, এসব চিন্তায় তিনি অস্থির থাকেন। স্বামীর শোকে তিনি ঘুমাতে পারেন না। কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকেন, স্বামীর ভালোবাসার কথা, ঝগড়া হলে বেশিক্ষণ রাগ করে না থাকতে পারার কথা, কন্যার প্রতি স্বামীর আদর স্নেহ ভালোবাসার কথা। শহীদ বিপ্লব মন্ডলের একমাত্র সন্তান ৯ বছর বয়সি আমেনা খাতুন। ছোট্ট মনে বয়ে বেড়াচ্ছে পিতা হারানোর মতো পাহাড়সম যন্ত্রণা। বাবার কথা জিজ্ঞেস করতেই ডুকরে কেঁদে ওঠে সে। ছোট্ট এই মেয়েটির জন্য আজও বোধহয় তৈরি হয়নি সান্ত্বনার কোনো বাণী। এক নজরে শহীদ বিপ্লব মণ্ডলের প্রোফাইল পূর্ণনাম : মো: বিপ্লব মণ্ডল জন্ম তারিখ : ০৮.০৭.১৯৯১ জন্মস্থান : নওগাঁ জেলার শিমুলিয়া গ্রাম পেশা : নাপিত পিতা : মো: লুৎফর মণ্ডল মাতা : মোছা: বিলকিস বেগম স্ত্রী : মোছা: আরিফা আক্তার বর্তমান ঠিকানা : বাইপাইল, সাভার স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম-শিমুলিয়া, ইউনিয়ন-চণ্ডিপুর থানা-নওগাঁ সদর, জেলা-নওগাঁ শহীদ হওয়ার স্থান : বাইপাইল, সাভার ঘাতক : পুলিশ আঘাতের ধরন : গলায় গুলিবিদ্ধ গুলিবিদ্ধ ও শহীদ হওয়ার তাং ও সময় : ৫ আগস্ট ২০২৪, বেলা ১২:৩০টা সমাধিস্থল : গ্রামের কবরস্থান শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. শহীদের স্ত্রী আরিফা আক্তারের জন্য একটি কর্মসংস্থান অথবা নিয়মিত মাসিক সহযোগিতা প্রয়োজন ২. সন্তানের পড়াশোনার ভার বহন প্রয়োজন ৩. শহীদের পরিবারকে একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়া প্রয়োজন